পারমিতা ।। বিপুল রায়



সবে মাত্র ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ। অনেক স্বপ্ন ছিল পারমিতার-- বড়ো মাপের একজন ইঞ্জিনিয়ার হবে। কিন্তু পরিস্থিতি যুনি বিমুখ হয়া দাঁড়াইল। অল্প বয়সে গ্রহ, নক্ষত্র, আরও যা কিছু শাস্ত্রবিধি আছে সব কিছু মানি নিয়া খুব ধুমধাম করি বিয়া হইল পারমিতার। যুদিও এত কম বয়সে উয়ার বিয়া করির কুনো ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু বাপের কথারও অবাইধ্য হবার পারিল না। শ্যাস-ম্যাস বাইধ্য হয়া বিয়ার পিড়িত বসিল।

পারমিতার বাপ সুধাংশু বর্মন বিশাল জমিদারের বেটা। বিয়ার প্রায় ছয় বছর পরেও কুনো ছাওয়া-ছোট নাই। কবিরাজি চিকিৎসা বিশ্বাস করে নাই বুলি অনেক ডাক্তারি চিকিৎসা করিসে, কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয় নাই। ডাঃ এ.কে. ব্যানার্জি সুধাংশু বাবুর অনেক টাকা ঝড়াইসে, বহুদিন যাবৎ চিকিৎসাও করিসে। কিন্তু শ্যাসে হার মানি কয়, “সরি সুধাংশু বাবু, আর পারিলুং না। যেটে ভগবান সহায় নাই, ওটে মুই আর কি করিম! যতটা সম্ভব চেষ্টা করার ততটা তো মুই করিলুং। কিন্তু...”

সুধাংশু বাবুর মন খুব খারাপ। পাড়ার লোকে মুখের আগত না কইলেও পাঁচগোতরে আটখুরা কয়। “বংশের বাতি কি এই পর্যন্তয়!”... এই ভাবি সুধাংশু বাবুর নিন হয় না। কবিরাজি চিকিৎসাকও অন্ধবিশ্বাস বুলি মানে। বিজ্ঞানের যুগোত যেটে স্বয়ং ডাক্তারে কিছু করির পারে নাই, সেটে কবিরাজ আর কি বাঙিখান ফাটাবে?

একবার সোনাখালি ওরশ মোবারকের সমায় এক পীরবাবা আইসে সুধাংশু বাবুর বাড়ি। সুধাংশু বাবুর দুঃখের কথা শুনি পীরবাবা কয়, “তোমরা এক কাজ করেন বারে, ধূপগুড়ির কামার পাড়ার আয়েশা বিবিরটে একবার কবিরাজি চিকিৎসা করি আইসো। বেচারির চিকিৎসা করার হাত খুবে ভালো। আর দরবেশ বাবার আশুর্বাদে তো সব ঠিক হয়া যাবে।”... সুধাংশু বাবু দরবেশ বাবার গুনাগুনের কথা শুনিলেও কামার পাড়ার আয়েশা বিবির গুনের কথা কুনোদিন শুনে নাই।
সুধাংশু বাবু পীরবাবাক কইল, “ধৈন্যবাদ তোমাক। হামরটা হামরা বুঝিমু। তোমার যুদি অসুবিধা না থাকে, তাহলে উঠির পারেন।”... কোনেক হইলেও সুধাংশু বাবুর রক্তত জমিদারি ভাবটা আছেই।
“মোর কথাটা অবহেলা করেন না বাবা। আর দরবেশ আসিবেন কিন্তু-- নিমন্তন থাকিল।”

দিন বিতি গেইলে সুধাংশু বাবু ব্যপারটা নিয়া ভাবনা-চিন্তা করে। শর্মিলাক ড্যাকেয়া কয়, “অনেক তো ডাক্তারি চিকিৎসা করিলি, কিছুই হইল না! পীরবাবার কথা মতন কি আয়েশা বিবিরটেই একবার চিকিৎসা করি নাকি?”
“মুই আর কি কইম-- যা ভাল বুঝেন করো।”
“দরবেশ তো শনিবার, আর আজি হইল সোমবার। কালি চল, আয়েশা বিবিরটে যাই। আর শনিবার সোনাখালি যায়া দরবেশ বাবার আশুর্বাদ নিয়া আসিমু।”
“মানষিগিলা কয়, দরবেশ বাবার আশুর্বাদ নাকি ফলে।”
“মুইও তো ওইমনে শুনিসুং। চলতো এইবার হামরাও যাই।”

পরের দিন পীরবাবার কথা মতন সুধাংশু বাবু শর্মিলাক ধরি আয়েশা বিবিরটে যায়। আয়েশা বিবি পূব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিন সবপাখে বন্দনা করি শর্মিলার হাত নাড়ি কয়, “দূষি আছে বারে! তোমরা এতদিন যে কি করিসেন, কায় জানে! আর কিছুদিন গেইলে তো ফলটায় নষ্ট করিলেন হয়। চিন্তা করেন না, মোরটে যেহেতু আসিসেন-- তোমার সমস্যার সমাধান হবেই। দুইটা ফল আছে, নষ্ট হবার দ্যান না।”... আয়েশা বিবির কথা শুনি দুইটা মানষিয়ে টস খাইসে। তবে যতটা না টস খাইসে, তার থাকি বেশী খুশি হইসে।
সুধাংশু বাবু কয়, “তোমরা চেষ্টা করো বারে, যুদি কাজ হছে-- তাহলে যা চান্দাবেন, তাই পাবেন।”
“মুই আর কি চান্দাইম বারে, সবে তো আল্লার দয়ায়।”... আয়েশা বিবির বাড়ি থাকি ফিরার পথে দুইটা মানষিয়ে বাস থাকি নামিয়া দরবেশ বাবাক মানা-চিনা করি আইসে।

আয়েশা বিবিরটে শর্মিলার চিকিৎসা করি আর দরবেশ বাবার আশুর্বাদ নিয়া বছর ঘুরি নাই আসিতে সুধাংশু বাবু বেটির বাপ হইল। বেটির নাম রাখিল পারমিতা। আনন্দ যুনি উথুলি পড়ে জমিদারের বাড়িত। কথায় কয়, ‘বাপেরও বাপ থাকে’। সেই মতনে কবিরাজি চিকিৎসাও যুনি ডাক্তারি চিকিৎসার থাকি ভালে কাজ দিল। কবিরাজি চিকিৎসা যে ফ্যালে দেওয়া-- তা কিন্তু একেবারেই না হয়।... আয়েশা বিবি নিজের মজুরিকেনা ছাড়া আর কিছু আব্দার করে নাই সুধাংশু বাবুরটে। তাও সুধাংশু বাবু খুশি হয়া নিজে এক বিঘা জমি আয়েশা বিবির নামে করি দ্যায়।

দুই বছর পর সুধাংশু বাবু বেটার বাপ হইল। “বংশের বাতি আর নিভিবে না”-- এই ভাবি সুধাংশু বাবু একটা স্বস্থির নিক্কাশ ছাড়িল।

ছোট থাকি পড়াশুনাত খুব ভালো পারমিতা। ভালো রেজাল্ট করি মাধ্যমিক পাশ করিসে। সায়েন্স নিয়া উচ্চা মাধ্যমিকও পাশ করিল। স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার-- কাজে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়িল। কিন্তু সুধাংশু বাবু ইঞ্জিনিয়ার আর হওয়ার দিল কোটে! স্বপ্ন পুরোনের পালা আসিলে একটা ভালো ঘর দেখি পারমিতার বিয়া দ্যায়।

পারমিতার স্বোয়ামীর বাড়ির কয়েকটা মানষিয়ে খুব ভালো। গোটায় পাড়াত উমার নাম-ডাক শুনা যায়। পারমিতার স্বোয়ামী হরিদাস রায় হাই স্কুলের মাস্টার।

পারমিতার স্বপ্ন পুরোন না হওয়া পর্যন্ত হরিদাস উয়ার গাত হাত পর্যন্ত নাগাবে না, কথা দিসে। আসলে শিক্ষিত, জ্ঞানি-গুনি মানষি স্বপ্ন পুরোনের কষ্টটা জানে। কাজে পারমিতার স্বপ্ন যাতে পুরোন হয়, তার ব্যবস্থাও করি দিল হরিদাস।

আর অল্প কিছুদিন গেইলেই পরমিতার স্বপ্ন পুরোন। এর মইধ্যেই যে জীবনের সব থাকি বড়ো একটা দুঃস্বপ্ন ঘিরি ধরিবে-- সেইটা আর কায় জানে। হরিদাস স্কুল থাকি ফিরার পথে বাস এক্সিডেন্ট হয়া মারা গেল।

খবরটা শুনি মুহুর্তেই ঝেমড়ি গেল পারমিতা। কত ভালোবাসা থাকিলে একজন স্বোয়ামী তার বনুসের স্বপ্ন পুরোনের চেষ্টা করে। নিজের কাম-বাসনা সুপ্ত রাখে।... স্বোয়ামী-সোহাগ পর্যন্ত পাইল না পারমিতা, তাতেই স্বোয়ামী ছাড়ি চলি গেল।

পারমিতার মন খারাপ। স্বোয়ামী চিন্তায় শরীল ভাঙি গেইসে। টুসটুসা সুন্দরী একজন ভরযুবতী নয়া কইনা স্বোয়ামী-সোহাগ না পাইতে বিধুয়া হইল। পারমিতার শশুড় ভাবিসে, বৌমা হয়তো বংশের বাতি জ্বলাবে। কিন্তু বছর দুই বিতি গেইলেও সেই মতন কুনো সুখবর নাই। কাজে উয়ার শশুড় ঠিক করিল, বিয়াইর সাথে যুক্তি করি ওইন্য কুনোটে পারমিতার বিয়া দিবে।

ততদিনে পারমিতা একজন বড়ো মাপের ইঞ্জিনিয়ারও হইসে। হরিদাস যুদি সহায়তা না করিল হয়, তাহলে হয়তো পরমিতার স্বপ্ন স্বপ্নয় থাকিল হয়।

পারমিতা নিজের যৌবন বয়সোকে বা কতদিন শান্তনা দিয়া রাখে। একজন শান্ত-শিষ্ট, নম্র-ভদ্র চেংরার প্রতি আকৃষ্ট হইল। খবর নিয়া দেখিল, সেই চেংরা পাকরিতলাত দোকান চালায়। পারমিতা নিজে প্রেমের প্রস্তাব দ্যায়। নিজের অতীত জীবন সম্পর্কেও সবকিছু খুলি কয়। চেংরা সবকিছু শুনার পরেও রাজি হয়। ... দিন বিতি গেইলে প্রেমের গভীরতা এতটায় বাড়ে যে, বিয়া পর্যন্ত আগে আইসে।

পারমিতা ব্যপারটা বাড়িত জানের সাহস পর্যন্ত পায় না। কায় মানি নিবে এই অবৈধ সম্পর্ক। তাছাড়া উয়ায় একজন বিধুয়া বউ। ঘটনাটা যুদি ফল্যাও হয়, তাহলে মান-সন্মান কোটে থাকিবে! বাপ-মাও, শশুড়-শাশুড়িকে মানষি কি কবে! দুনিয়ার দুশ্চিন্তা ঘুরে মাথাত।

একদিন পারমিতার শাশুড়ি কয়, “বৌমা, একেনা কথা কং, মনত কিছু ন্যান না।”
পারমিতার ধুকপুকি উঠি গেইসে। ভাবেছে সেই চেংরাটার কথা শুনে নাই তো ফির! তাও ভয়ে ভয়ে কইল, “কি কথা মা?”
“এংকরি আর কতদিন থাকিবেন! তোমার শশুড় তোমাক নিজের বেটির মতন করি সাজে-পাড়ে বিয়া দিবার চান্দাছে।”
পারমিতা এমন ভান করি শাশুড়ির সাথে কথা কইল যে, উয়ায় রাজিয়ে নাই, “তোমরা কি কন মা!”
“পাগলামি না করেন বৌমা। গোটায় জীবনটা এলাও পড়ি আছে তোমার।”... কথাটা শুনি পারমিতা মনে মনে খুব খুশি। তাও শরম খাওয়ার ভান করি নাকত শাড়িখান চাপা দিয়া ওটে থাকি চলি গেল।

পারমিতার শশুড় পারমিতার বাদে এবারেও একটা ভালো ঘরের খবর আনিল। কিন্তু পারমিতার পছন্দ হইল না। তাছাড়া প্রেমে যে হাবুডুবু খাছে-- সেইটাও শশুড় বাড়িত কওয়া যাছে না। যতয় বড়ো মাপের ইঞ্জিনিয়ার হউক না কেনে উয়ায়-- শ্রোদ্ধা-ভক্তি বুলি একটা জিনিস আছে। তাছাড়া বিধুয়া বউয়ের প্রেম সহজে মানি নিবার না হয় এই সমাজ, খারাপ নজরে দেখিবে।

কথায় কয়, “নিজে বাঁচিলে বাঁপের নাম”-- এমনে কান্ড হইল। গোল্লায় যাউক সমাজ। পারমিতার বিয়া নিয়া বাড়িত যেলা খুব উমধুমি চলেছে, সেলা উয়ায় সেই প্রেমিক চেংরার হাত ধরি চম্পট দিল। মাখরাপাড়া মন্দিরত বিয়া করিল। “কায় কি কয় কউক-- নিজের জীবনের সুখ-দুঃখ নিজেকে ভোগ করির নাগিবে। সমাজ কুনোদিন আগে আসিবে না!”... এই ভাবি পারমিতা এইমন কান্ড করিল।

নয়া স্বোয়ামীর হাত ধরি পারমিতা যেলা বাপের বাড়ি আসিল, উয়ার বাপ তো জ্বলি-পুড়ি ছাঁই। পাড়া-প্রতিবেশীও ঘিন্নার চোখুত দ্যাখেছে ব্যপারটা। সুখেন অধিকারী পারমিতাক কয়, “জাত-পাত, নিয়ম-নীতি, শাস্ত্রবিধি সবকিছু ভুলি গেলু পারমিতা?”
পারমিতা বুক ফুলি বাঘিনীর মতন জবাব দিল, “কুন জাত-পাতের কথা কন অধিকারী কাকা! যেই জাত মানষির বিভেদ সৃষ্টি করে! আর কুন শাস্ত্রের কথা কছেন?”
“পারমিতা, বেশি বাড়াবাড়ি হছে না?”
“বাড়াবাড়ির কি হইল কাকা?”
“কি হইল মানে!”
“যার জীবন নষ্ট হয়-- যন্ত্রনাটা তো তায়ে একমাত্র বুঝে কাকা।”
“বিধির বিধান মানি নিবার নাগে পারমিতা। উপরওয়ালা যা কিছু করায়, ভালোর জইন্যে করায়।”
পারমিতা এবার কাঁপা কাঁপা গালায় কইল, “উপরওয়ালা কি ভালো করায় কাকা! কি ভালো করায়? কি এমন দোষ করিসুং মুই, যে মোর জীবনটা শুরু না হইতেই শ্যাস হইল! কুন শাস্ত্রবিধির কথা কছেন কাকা? যেই শাস্ত্রবিধি মানি বিয়া করি মোর কপালের সেন্দুর মুছি গেল-- সেই শাস্ত্রবিধি? কুন গ্রহ-নক্ষত্রর কথা কছেন হাঁ-- যেইলার রীতিনীতি মানি নিয়া আজি মোর এই অবস্থা, সেই গ্রহ-নক্ষত্র!”
“গ্রহ-নক্ষত্র, শাস্ত্রবিধি না মানেক, কিন্তু জাত-পাত তো দেখিবু, নাকি!”
“জাত-পাত! হামরা জাতি-ধর্মের গোন্ডি কাটি বায়রাত গেইলেই যত দোষ, অধিকারী কাকা! সেলব্রিটিগিলা যেলা ধর্মের গোন্ডি কাটি বায়রা বিরায়, সেলা তো কাহ দোষারোপ করেন না। উমুরা কি মানষি না হয়? উমার কি জাত-পাত নাই? ধর্ম-অধর্ম কিছুই নাই?”
পশ্চিম টাড়ির বিমলেন্দু সিংহ কয়, “তুই মান-ইজ্জত সব শ্যাস করিলু পারমিতা! এতটা শিক্ষিত হসিস, কিন্তু জ্ঞান-লাভ করির পালু না!”
“কুন মান-ইজ্জত দাদা? তুই মান-ইজ্জত থুসিস? নিজে যেলা প্রেম করি, রসিয়ার টাড়িত মাইর খায়া বৌদিক গালাত বান্দি আসিলু, সেলা তোর মান-ইজ্জত কোটে ছিল?”... লইজ্জাতে মাথাটা নিচা হয়া গেলা বিমলেন্দুর।
 নিবারণ ঘোষাল কয়, “মানষিক সরাসরি এংকরি কইতে তোর মুখোত জল বান্দে না পারমিতা? নিজের জাতিটার ভিত্তি তোর একবার দেখার দরকার ছিল।”
“আরও ওই একে কথা! জাতি! ফম পড়ে সেদিনের কথা কাকা, যেদিন তুই মুই আর কাকি শিলিগুড়ি থাকি বাড়ি ফিরিছি-- সেদিন যেলা সেবক ব্রিজের গোরত দাঁড়ালি...”
নিবারণ ঘোষাল এবার মাথা নিচা করি চুপচাপ ভিড়ের মইধ্য থাকি বিরি চলি গেল। আর একটা কথাও কইল না। জানে আজি যুদি আর কিছু কয়, তাহলে পারমিতা উয়ার পুরানা ইতিহাস ঘাটিবে। নিবারণ ঘোষালেরও কুনো ছাওয়া ছিল না। বহুদিন রোগ ভোগের পর সেদিন নিবারণ ঘোষালের বনুস শিলিগুড়ি মেডিকেল থাকি ছুটি পাইসে। আর তাতেই সেবক ব্রিজের গোরত একেনা ফুটফুটা ছাওয়া পাইসে। নিজের ছাওয়া নাই বুলি নিবারণ ঘোষালের বনুস ছাওয়াটাক বুকোত টানি নিসে। সেলা কুনো জাতি-ধর্মের কথা ফম পড়ে নাই নিবারণ ঘোষালের। সেই কথাটা পারমিতা ছাড়া পাড়ার আর কাহ জানে না। আজি যুদি রাগের মাথায় সগারে আগত ফল্যাও করি দ্যায়, তাহলে...। এই ভয়ে নিবারণ ঘোষাল আগতে সাইট কাটিল। যুদিও পারমিতা আর কিছু কইল না হয়।

খবর পায়া ততক্ষণে পারমিতার শশুড় বাড়ির লোকও আসি হাজির। সুধাংশু বাবু ভয়ে গটগটে কাঁপির ধরিল। না জানে বেটির কপালোত কি দুঃখ আছে! পারমিতাও চুপচাপ খারা হয়া নইল। উয়ার শশুড় কইল, “তোমরা এইটা কি কান্ড করিলেন বৌমা?”
মাথাটা নিচা করি দাঁড়েয়া পারমিতা কইল, “ভুল হইসে বাবা।”
“একবারও ভাবিলেন না হামার মান-সন্মানের কথা! হামাক একবার জানেবার প্রয়োজন বোধও করিলেন না!
“আসলে বাবা...”
“থাউক, আর কবার নাগিবে না। যা করিসেন-- ঠিক করেন নাই।”
“বাবা, মোক তোমরা ক্ষমা করি দ্যাও।”
“তোমার হিসাবে তোমরা হয়তো ঠিক করিসেন বৌমা। কিন্তু, তোমার ভুল একটায়-- তোমরা হামাক জানালেন না কেনে ব্যপারটা?”
পারমিতা কাঁপা কাঁপা গালায় কইল, “না বাবা, মুইতো কবার চান্দাসুং। কিন্তু...”
“ঠিক আছে বৌমা, যাও তোমরা নিজের মতন করি বাঁচো। যেহেতু এই রাস্তায় বেছি নিসেন, হামার আর করার কি আছে! যুদিও করার আছে, করিয়ায় বা কি লাভ! যাও, যুদি কুনো অসুবিধা হয়, হামাক জানাবেন-- যতকেনায় পারোং সহযোগীতা করিম। তোমরা হামার নিজের বেটি।”... বিয়াই মশাইর এমন কথা শুনি সুধাংশু বাবু একটা স্বস্থির নিক্কাস ছাড়িল। পারমিতাও জিউখান ফিরি পাইল।

পারমিতা বাপ-মাও, শশুড়-শাশুড়ি সগাকে ভক্তি দিয়া আর একবার নয়া জীবনের পথে যাত্রা শুরু করিল। যাইতে যাইতে মনে মনে কয়, “হায় রে জাতি-ধর্ম! তোর আগত মানবতা, প্রেম-ভালোবাসা তুচ্ছ, খুবই তুচ্ছ! যতদিন তোর রাজত্ব থাকিবে ততদিন মানষির বিবেক-বুদ্ধি তোরটে হার মানিবে!”

তারিখ: ১১.০৭.২০২০

সূচিতে ফিরতে ক্লিক করুন


আপনার লেখা ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, ইতিহাস-ঐতিহ্য, রম্যরচনা, ভ্রমণ কাহিনী, উপন্যাস, সাহিত্যিকের জীবনী, সাক্ষাৎকার, সাহিত্যের খবর বর্ণপ্রপাতে প্রকাশ করতে চাইলে ইমেইল করুন bornopropat@gmail.com

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।