একজন মধ্যবিত্তের গল্প কথক হুমায়ূন আহমেদ ।। জরীফ উদ্দীন



কিছু মানুষের জন্ম হয় আশ্চর্য রকম ক্ষমতা নিয়ে। যে ক্ষমতাবলে ক্ষণিকেই আপন করে নেয় অন্যদের। প্রভাব বিস্তার করে মনেপ্রাণে। এমনি একজন হুমায়ূন আহমেদ। তিনি বাংলা সাহিত্যে এক উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। মধ্যবিত্তের হাসি কান্না আনন্দকে পুঁজি করে  অতিসাধারণ ভাষায় লিখে অনেক রকম আনন্দ-দুঃখ, ভালোবাসার কথা সাজিয়ে দখলে নেন পাঠকের হৃদয়। হয়ে উঠেন জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক। তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার , নাট্যকার, গীতিকার এবং নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক। তার সৃষ্টি চরিত্র হিমু, মিসির আলী, শুভ্র, আনিস, জামসেদ, মির্জা সাহেব, কুসুম, রুপা, মুনা, জরি, নিতু, মাজেদা খালা, বাকের ভাই ইত্যাদি চরিত্র গুলো যেন আমাদেরই চিরচেনা অতি আপন লোক।

হুমায়ূন আহমেদ জন্মগ্রহণ করেন ১৩ নভেম্বর ১৯৪৮ সালে ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত নেত্রকোণা মহুকুমার কেন্দুয়ার কুতুবপুরে। তাঁর পিতা শহিদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা ফয়েজ।

তিনি বগুড়া জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ঢাকা কলেজে থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে প্রথম শ্রেণীতে বিএসসি (সম্মান) ও এমএসসি ডিগ্রি লাভ করে। পরে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পলিমার রসায়ন বিষয়ে গবেষণা করে পিএইচডি লাভ করেন।

১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। লেখালেখিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় একসময় তিনি অধ্যাপনা ছেড়ে দেন৷

সত্তর থেকে দু’হাজার বারো, টানা চার দশকে প্রায় তিনশ বই লেখে স্থান করে নেন বাংলা সাহিত্যে। তার রচিত উল্লেখযোগ্যতা বইগুলো হল নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, জোছনা ও জননীর গল্প, দেয়াল, আজ হিমুর বিয়ে, দেবী, আমিই মিসির আলি, দারুচিনি দ্বীপ, নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ, আমার আছে জল, সম্রাট, সাজঘর, আকাশ জোড়া মেঘ, এইসব দিনরাত্রি, অয়োময়, জনম জনম, বহুব্রীহি, আশাবরী, কোথাও কেউ নেই,  কৃষ্ণপক্ষ, মন্দ্রসপ্তক, আমার আপন আঁধার, আমি এবং আমরা, শ্রাবণ মেঘের দিন, গৌরীপুর জংশন, পেন্সিলে আঁকা পরী, কবি, ফেরা, মহাপুরুষ, অপেক্ষা, অন্ধকারের গান, মেঘ বলেছে যাবো যাবো, দূরে কোথাও, চৈত্রের দ্বিতীয় দিবস, ইস্টিশন।

হুমায়ুন আহমেদ তাঁর সৃষ্টি কর্মের জন্য জন্য নানা পুরস্কারে ভূষিত হন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য; বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৮১), শিশু একাডেমী পুরস্কার, একুশে পদক (১৯৯৪), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (শ্রেষ্ঠ কাহিনী ১৯৯৪, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ১৯৯৪, শ্রেষ্ঠ সংলাপ ১৯৯৪), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), মাইকেল মধুসুদন পদক (১৯৮৭), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮), হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০) জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদক।

মলাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ নয় মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ২০১২ সালে আজকের এইদিনে অর্থাৎ ১৯ জুলাই  এই মহান ব্যক্তি নিউ ইয়র্কের বেলেভ্যু হসপিটালে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে গাজীপুরের নুহাশ পল্লী তে দাফন করা হয়। তাঁর মৃর্তুতে বাংলা সাহিত্য ও চলচিত্রাঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া।

মরেও অমর হয়ে আছেন বাংলা সাহিত্যাকাশে নন্দিত লেখক একজন মধ্যবিত্তের গল্প কথক হুমায়ূন আহমেদ।

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।