সৃষ্টিশীল চিরজীবী হুমায়ূন।। আসিফ আহমেদ


“জীবনটা আসলেই অনেক সুন্দর! এত বেশি সুন্দর যে, মাঝে মাঝে অসহ্য লাগে।" তার এই অসহ্য লাগা থেকেই হয়তো বিদায় ধ্বনি বেজে উঠেছিল।
১৯ জুলাই,২০১২। অন্য আর সকল সাধারণ দিনগুলোর মতোই ছিল দিনটা, আচমকা সংবাদ আসে গৃহত্যাগী জ্যোৎস্না আজন্ম অভিমানে ছেড়েছেন তার চেনা আঙিনা। পাড়ি জমিয়েছেন অচেনা দিগন্তে।হটাৎ আকাশে সীমাহীন শূন্যতা। হাহাকার ধ্বনি ছড়িয়ে পড়েছে পাঠক হৃদয়ে।নিন্দুকের মনেও যেন কালো মেঘের ঘনঘটা। 
বইয়ের পাতা থেকে বের হয়ে আসতে থাকে কল্পনার চরিত্রগুলো। হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে কোথা থেকে যেন এগিয়ে আসছেন হিমু, চোখের মোটা চশমা মুছতে মুছতে ছুটে আসছে শুভ্র,উত্তরের যুক্তি খুজতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন মিসির আলী,চায়ের দোকান ছেড়ে হাতে চেইন ঘোরাতে ঘোরাতে মজনুর বাইকে করে ছুটে আসছেন বাকের ভাই।গৃহত্যাগী জ্যোৎস্নার শবযাত্রায় পথে নেমেছে তার সকল কল্পনা।অথচ সে নিজেই ঘুরে বেড়াতো নিজের ইচ্ছেমতো। আজ সে অনুপস্থিত।


যুগ থেকে যুগান্তরের কলমের জাদুকর হুমায়ুন আহমেদ।তার প্রতিটি লেখা পাঠকদের করে তোলে মুগ্ধ। একটা বিস্ময় সৃষ্টি করে তোলে পাঠক সমাজে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম পেড়িয়ে যাবে কিন্তু তিনি থেকে যাবেন তার সৃষ্টির পাতায়। তিনি চলে গেছেন কিন্তু রেখে গেছেন হিমু,রুপা,শুভ্র,মিসির আলী,বাকের ভাই কে। যাদের মাঝে বেচে থাকবেন অনন্তকাল। তিনি চলে গেছেন, এই জন্য আমাদের সবারই মন খারাপ, আমিও জানি সেটা,তিনি চলে গেছেন ঠিকই, কিন্তু হিমুকে তো নিয়ে যান নিই। এই যে হিমু, তুমি যখন হলুদ পাঞ্জাবি পরে পুলিশের সঙ্গে ঝামেলা পাকাবে,তখন তিনি আড়ালে দাঁড়িয়ে হাসবেন।রুপা যখন হিমুর জন্য অপেক্ষা করবে, দেখবে তোমার পাশে সে দাঁড়িয়ে আছে।শুভ্র চশমাটা খুলে চোখ বন্ধ করলেই অনুভব করতে পারবে তিনি তোমার মাঝেও আছেন। তিনি বেচে থাকবেন আমাদেরই মাঝে।আজ কাল পরশু, বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ। তিনি তার শরীর ত্যাগ করেছেন তার সৃষ্টিকর্ম গুলো তাকে অমর করে রেখেছেন আমাদের মাঝে।তার সৃষ্টির বিশালত্বের কাছে হার মেনেছে তার ভুল-ত্রুটি।

মানুষ অমর নই, কিন্তু তার কর্মই তাকে অমর করে রাখবে।তিনি জগৎ সংসার ত্যাগ করে আকাশচারী হয়েছেন,কিন্তু তার সৃষ্টি বেচে থাকবে আজীবন।


"গভীর প্রেম মানুষকে পুতুল বানিয়ে দেয়।প্রেমিক প্রেমিকার হাতের পুতুল হয় কিংবা প্রেমিকা হয় প্রেমিকের পুতুল।দুজন একসঙ্গে কখনো পুতুল হয় না।" প্রতিটা প্রেমিক প্রেমিকার গল্পের মধ্যে তিনি একটা যায়গা জুড়ে আছেন। অদৃশ্য হয়ে থাকলেও সেই সম্পর্কের যোগসূত্র খুজতে গেলে পাওয়া যাবে হুমায়ুন কে।সাহিত্যের যে নতুন ধারা তিনি তৈরী করে দিয়ে গেছেন সেই পথে হাটছে বা হাটার চেষ্টা করবে তারই অনুজ সাহিত্যিকরা।কখনো সেই সব সাহিত্যের কলম ধরে,কখনো বা তার নিজের চরিত্রগুলোর মাঝে হেটে বেরাবেন হুমায়ূন আহমেদ। হুমায়ূন আহমেদ টিকে থাকবেন ততদিন যতদিন টিকে থাকবে বাংলা সাহিত্য, আমরা এই আলো নিভতে দেবো না।


আসিফ আহমেদ,
শিক্ষার্থী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ।

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post