আমার ক্রাশ ।। মিনহাজুল ইসলাম


আমার সম্পর্কে অনেকেই মোটামুটি জানে। তবুও বলি...আমি মিনহাজ, ভদ্র টাইপের অভদ্র ছেলে আমি। হুম.. নিজেই নিজেকে খারাপ বলছি। আপনারা কি ভাবেন জানি না। তবে সত্যি একজন খারাপ ছেলে আমি। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া, বিশেষ কোনো কারণে বই পড়া, বাহিরে বাহিরে ঘোরা, ফেসবুকে একটু আকটু লেখালিখি করা আমার একটা রুটিন। এভাবেই আমার দিন গুলি ভালই কাটছিল, এমনি একদিন এক দোকানে বসে চা খাচ্ছিছিলাম। হঠাৎ একটা মেয়েকে  দেখে আমার দুনিয়াটা থমকে যায়! মেয়েটা আহামরি সুন্দরী না হলেও এতটা খারাপ না। কিন্তু তার চোখ দুটো দেখেই আমি ফিদা, এর নাম যদি হয় ক্রাশ? তাহলে আমি তাকে দেখে ক্রাশ খাইছি....কি আজব? আমি এখনও তার নাম জানতে পারিনি। প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার আসার সময় তার দেখা পাই। যখনি ভাবি আজ তার সাথে একটু কথা বলবো, তখন মনে এক অদ্ভুত আনন্দ জেগে উঠে। কিন্তু তার দেখা পাওয়া মাত্রই আমার সবকিছু স্তব্ধ হয়ে যায়। কিছু বলবো বলবো করেও কিছুই বলা হয় না। একদিন এই ফিলিন্স টা আমার এক বন্ধুর সাথে শেয়ার করলাম। সে তো শুনেই অবাক। সে বললো তোরে আগে কখনো কোনো মেয়ের দিকে তাকাতে দেখি নাই। আজ সেই তুই একটা মেয়ের প্রেমে পড়লি, আমাদের জানালি না? আসলে তোরা শরম দিবি বলে জানাই নাই। আচ্ছা আজ দেখাবি মেয়েটা কে? হুম... একটু পরে কোচিং থেকে আসবে। তখন দেখাবো।

আমার বন্ধুকে ঠান্ডা আনতে পাঠাইলাম, হঠাৎ দেখলাম মেয়েটা আসতেছে। তার সাথে একটা ছেলে ছিলো খেয়াল করিনি। ভাবছিলাম মেয়েটাকে ডাক দিয়ে একটু কথা বলবো। কিন্তু সাহস হয়ে উঠেনি। মেয়েটা আমাকে ক্রস করার পর আমার বন্ধুকে জোরে একটা ডাক দিয়ে ইশারায় দেখানোর চেস্টা করলাম। কিন্তু পাশের ছেলেটা তা দেখে ফেললো। মেয়েটা চলে যাওয়ার পর রাস্তার পাশে এক দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ মেয়েটা কখন আমার পাশে আসলো বুঝতেই পারিনি। তার দিকে চোখ পরাতেই আতকে দাঁড়িয়ে পরলাম। কিছু বুঝে উঠার আগেই সে আমায় একটা থাপ্পড় মারলো। আমি গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। আমার বন্ধু প্রতিবাদ করার আগেই তাকে আমি হাতের ইশারায় থামিয়ে দিলাম। আশেপাশে কিছু মুরুব্বি ছিল। তারা বলে উঠলো
তুমি ওকে মারলে কেনো?
সে আমার দিকে খারাপ ইশারা করেছে তাই। মেয়েটি বলল। আমি বললাম,
আপনি কি দেখেছেন?
না... আমার ভাইয়া বলেছে। (তখন বুঝলাম তার সাথের ওই ছেলেটা তার ভাই)
আজ অব্ধি ওকে কোনো মেয়ের দিকে তাকাতে দেখলাম না। আর তুমি বলছো তোমাকে খারাপ ইশারা করেছে? একজন মুরুব্বি বলল। আমি উপায়ন্তর না দেখে তারাতারি ব্যাপারটা মিটমাট করার জন্য মেয়েটাকে সরি বললাম। মেয়েটা আমার দিকে কিছুক্ষণ রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে চলে গেলো। আর মুরুব্বিদের দেখলাম অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তাই আমি মুরুব্বিদের বললাম কিছু কিছু ভুল না করেও তার জন্য ক্ষমা চাইতে হয়। তাই আমিও মেয়েটার সাথে কথা বাড়াতে চাইনি বলে তার কাছে ক্ষমা চাইলাম। দেখলাম মুরুব্বিরা আমার দিকে মুগ্ধের মত তাকিয়ে আছে। তাই পরিস্থিতি পরিবর্তণ করার জন্য সেখান থেকে চলে আসলাম। সেদিন এতটাই খারাপ লেগেছিল যে, তাকে ভোলার জন্য অনেক চেষ্টা করলাম। তবুও তাকে ভুলতে পারলাম না.... তার পর থেকে সেই মেয়ের দিকে কখনো তাকাইনি। একদিন আমি আমার বন্ধুর সাথে বসে ফেসবুকে চ্যাটিং করছিলাম। আমার বন্ধু আমার কানে কানে বললো,-দেখ ওই মেয়েটা তোর দিকে তাকাচ্ছে। আমি দেখলাম আমার ক্রাশ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে আমি খুশি হওয়ার আগেই ওই দিনের থাপ্পড়ের কথাটা মনে পরে গেলো। সাথে সাথে আমি চোখ নামিয়ে মোবাইলের দিকে ধ্যান দিলাম। তার পর আমার বন্ধু বললো.. -মেয়েটা চলে যাচ্ছে...  যা গিয়ে কথা বল। -না রে... যাক সে... যখন মায়া বারিয়ে লাভ নেই। তখন মায়া কাটাতে শিখতে হয়। তার পর থেকে মেয়েটার দিকে আর কখনো তাকাইনি। নিজের ভালবাসা নিজের কাছেই রেখে দিয়েছি। জানি এই ভালবাসার মুল্য কেউ দিবে না।

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।