আগের মতন করি আতিত আর নিন ধরে না গৌতমোক। বিয়ার পর জীবন সুখের হয় নাই! ভাল করি দুই বছর হয় নাই বিয়ার-- তাতে উয়ার বনুষ হৈমন্তী ডিভোর্স পেপারোত সই নিয়া গেইসে!
পরপর দুই আতি নিন না ধরাতে সেদিন সুরা পান করি খানেক নিন যাবার চেষ্টা করে গৌতম। সুরা পান করা উয়ার নিশা না হয়। কিন্তু দুশ্চিন্তার কবল থাকি খানেক মুক্তি পাবার বাদে এই প্রথম সুরা পান। হয়তো মানষি এংকরি একদিন-দুইদিন করিতে করিতে নিশায় অভ্যস্ত হয়।
সুরা পান করাতে ঝিমঝিম করি নিশা হইতে হইতে একটা সমায় বমিও করে গৌতম। তারপর সেই নিশাতে হুশ হারে কতক্ষণ যে চোখু বন্ধ করিসে-- সেই চোখু খুলিতে খুলিতে পরের দিন প্রায় সকাল দশটা বাজি গেইসে। উঠিয়া হাত-মুখ ধুইয়া ভাতের আকা ধরাইসে। বউ যেহেতু এলা নাই, সেহেতু বাড়ির যাবতীয় কাজ উয়াক নিজেকে করির নাগে।
ভাতের আকা ধরে দিয়া মোবাইলটা খুলাইতে কালে দেখা পায় ৩৩ টা মিসকল। সাথে একটা ম্যাসেজ-- ‘প্লিজ কল মি, মন্টির বাবা’। নাম্বারটা গৌতমের অচিনা। কিছুক্ষণ ভাবে-- ‘মইধ্য আতিত কার এমন দরকার পড়িসে যে এতবার মিসকল করিসে!’ সাথ সাথে কল নাগায়। ওপাশ থাকি কলটা রিসিভ হয়। পাতলা গলার স্বর একটা মহিলা, কান্দো কান্দো ভাব। গৌতম কথা না কইতে চিনি ফেলাইসে এইটা ঠিক উয়ার বনুষ হৈমন্তীর গলার স্বর। শুনিয়ায় গৌতমের চোখুর জল ছলছল হয়া টোপটোপে মাটিত পড়ির ধরিল। এই দুঃখ শুনিবার মতন মানষি নাই উয়ার! অনেক কষ্টে কান্দন আটকে তাও কইল, ‘হ্যালো...’
ওপাশ থাকিও একে কথা, ‘হ্যালো...’
গৌতম পুছিল, ‘কায়?’
কান্দ কান্দ স্বরে উত্তর আসিল, ‘মুই তোর হৈম, মন্টির বাবা।’... কথাটা শুনি গৌতমের ডুকুরি ডুকুরি কান্দন বিরাইল। এইবার আর কান্দন আটকের পাইল না উয়ায়!
‘আচ্ছা! তে এতো দিন পর কি মনে করি কল করিলু?’
‘কেনে! কল কি করা যাবে না?’
‘কেনে যাবে না! অবশ্যই যাবে। কিন্তু... আজি হঠাৎ কি মনে করি?’
কান্দ কান্দ স্বরে হৈমন্তী কইল, ‘তুই মোক এটে থাকি ধরি যা, প্লিজ মন্টির বাবা। মুই আর এই নরকোত এক মুহুর্ত্ব থাকির চান্দাং না!’
‘সেইটা ক্যাংকরি সম্ভব হয় হৈম!’...কথাটা হৈমন্তী কাড়ি নিল।
‘প্লিজ, এমন কথা কইস না তুই। অন্ততপক্ষে মন্টির মুখের ভিত্তি দেখি এই কথাটা কইস না, প্লিজ।’
‘ডিভোর্স পেপারোত সই নেওয়ার সমায় ভালোবাসা জাগে নাই তোর! মুই তো সই দিবার চান্দাং নাই, জোর-জবরদস্তি তুই নিজে সই নিলু! আজি কি এলা ভালোবাসা উথুলি পড়েছে?’
‘প্লিজ মন্টির বাবা, প্লিজ। সেদিনকার কথা ভুলি যা। সেদিনও মুই ডিভোর্স পেপারোত সই নিবার চান্দাং নাই। কিন্তু বাইধ্য হয়া...’
কথাটা গৌতম কাড়ি নিয়া কইল, ‘ঐন্য কথা থাকিলে কবার পারিস।’
‘প্লিজ মন্টির বাবা, প্লিজ তুই এমন করিস না!’
গৌতম কলটা কাটি দিয়া ভাতের আকাত জল ঢালি দিয়া বাঁশ তলাত যায়া এক ধান্দারি বসি নইল। চোখুর জল কুনোমতেই আর আটক হয় না উয়ার। একের পর এক ফম পড়েছে পুরানা স্মৃতিগিলা।
কিছুক্ষণ বাঁশ তলাতে বসি বিতি গেইল গৌতমের। হিদি ভোকের প্যাটোত অগুন জ্বলেছে, কিন্তু খাবার ইচ্ছা নাই। উয়ায় আরও কল করিল হৈমন্তিক। তাতে জানির পারে যে, উয়ার শাশুড়ি হৈমন্তীর আরও বিয়া ঠিক করিসে ঐন্যটে। আর মন্টিক নাকি কুনো একটা অনাথ আশ্রমোত দিয়া আসিবে। এই কথা শুনি গৌতমের মাথা ঠিক নাই, মানসিক অবস্থাও একে!
গৌতম আর হৈমন্তীর ঝগড়াটা ডিভোর্স পর্যন্ত আগাইল না হয়। খুব সামাইন্য একটা পারিবারিক ঝগড়ার কারণে আজি এই পরিস্থিতি। সেদিন রাগের মাথায় গৌতম হৈমন্তীর গালোত একটা চড় কষে দিসে। তাতে ঠোঁট ফাটি রক্ত বিরাইসে উয়ার। একিনা কথা হৈমন্তীও খুব বড়োসড়ো করি বানেচানে উয়ার মা'ক কল করি জানে দিসে।
ঘন্টা দুইয়ের মইধ্যে গৌতমের শাশুড়ি আসি উপস্থিত। আসিয়ায় যা শুরু করি দিসে তা গৌতম কল্পনাও করে নাই। গৌতমের কুনো কথাও শুনির চেষ্টা করিল না উয়ার শাশুড়ি! যেই শাশুড়িক উয়ায় নিজের মাওয়ের থাকি কুনো অংশে কম ভাবে না, সেই শাশুড়ি’ই আজি উয়ার সংসার ভাঙির বাদে তোরজোর করি নাগি পড়িসে! গৌতমের সাথে কুনো কথা না কয়া সোজাসুজি হৈমন্তীক কয়, ‘চলতো হৈম, তুই মোর সাথে চল। হাঁটেক। মুইও দ্যাখোং বেটার পাছিলাত কত ত্যাল হইসে!’
গৌতম বাধা দিয়া কয়, ‘তোমরা কি নাগাইলেন মা! কিসের কি তোমরা সমস্যার সমাধান করি দিবেন, তা না করিয়া তোমরা আসি হৈমকে সায় দ্যাছেন!’
‘খবরদার মোক মাও কয়া ডেকাবেন না, চামারের বেটা!’
এবারে গৌতমও উয়ার শাশুড়ির উপর রাগি যায়া কইল, ‘মোর পারমিশন ছাড়া এই বাড়ি ছাড়ি হৈম কুনোটে যাবে না। তোমার কি করির ক্ষমতা আছে, করো।’
উয়ার শাশুড়ি উয়ার কথাত কান না দিয়া আরও হৈমন্তীক কয়, ‘তুই হাঁটতো হৈম, মুই আছোং কায় কি করে দ্যাখোং।’
গৌতম এবার হৈমন্তীক কয়, ‘খালি এক পাও আগে বুঝেক তুই...’
হৈমন্তীও উয়ার মাওয়ের পক্ষপাতি হয়া গৌতমোক কইল, ‘যাইম মুই। দম আছেতে আটক করি দেখা। আর আজি যুদি মুই এটে থাকি যাবার না পাং তে তুই মোর মরা মুখ দেখিবু-- ছাওয়ার মাথাত হাত দিয়া কছোং।’... হৈমন্তী যেই অবস্থায় ছিল, সেই অবস্থায় মাওয়ের হাত ধরি মন্টিক কোলাত নিয়া বিরি পড়িল বাড়ি ছাড়ি। আশ-পড়শীরও কুনো কথাত কান দিল না উয়ায়। গৌতমও আর কিছু কইল না। আটকেবারও চেষ্টা করিল না হৈমন্তীক-- যেহেতু মন্টির মাথাত হাত দিয়া কিরা খাইসে উয়ায়। শাশুড়ির পাখে রক্তচোখু করি চায়া ভাবেছে-- ‘দেউনিয়া শাশুড়ি থাকিলে বেটির সুখের সংসার ভাঙিতে আর কতক্ষণ!’
সেদিন হৈমন্তী আর উয়ার মাও বাড়ি ফিরিবার আগোত থানা যায়া নারী নির্যাতনের কেজ করিসে গৌতমের নামে। স্বোয়ামীর কথা একবারের জইন্যেও ভাবিল না হৈমন্তী। উয়ার দেউনিয়া মাওয়ের সাথে একে সুরে তাল মিলাইল উয়ায়ও!... আর কি-- এই তো অশান্তি শুরু!
গৌতম কিন্তু থানা আর কেজের ব্যপারে একেবারেই অজানা। আতিতে একদল পুলিশ আসি খোঁজ করে গৌতমের। খাবার বসিসে মাত্র, এমন সমায় হিরহির করি পুলিশের দলটা উয়ার ঘর ঢুকিল। পুলিশোক দেখি তো গৌতম অবাক! হা করি চায়া নইল পুলিশের মুখের ভিত্তি। একজন পুলিশ জিজ্ঞাসা করিল, ‘তোমরা কি মিস্টার গৌতম?’
গৌতম থোতবোত হয়া কইল, ‘হ্যাঁ, মুইয়ে গো..গৌতম। কেনে স্যার?’
‘খায়া ন্যাও আগোত, পরে শুনেন-- কেনে?’
‘খাওয়া হয়া গেইসে।’... এই কথা শুনা মাত্র একজন পুলিশ লম্বা নাটিটা দিয়া পারাশ-পারাশ করি দুইটা মাইর বসে দিয়া গৌতমের জামার কলার ধরি ধ্যাদেরে টানি নিগাইল গাড়িখানের পাখে। গৌতম বিষের চোটে সোসাইতে সোসাইতে গাড়িত চড়ি বসিল।
থানাত যায়া জানির পারে যে উয়ার বনুষ আর উয়ার শাশুড়ি নারী নির্যাতনের কেজ দিসে উয়ার নামে। গৌতমের মাথাত কিছুতেই খেলাইল না ব্যপারটা! ‘সামাইন্য একটা চড়ের বাদে নারী নির্যাতন কেজ! তাও আরও নিজের বনুষ এই কান্ড করে নাকি!’ থানা আসির আগোত যুদিও গৌতম ব্যপারটা নিয়া কিছু মনে করে নাই। ভাবিসে-- রাগ করি আর কয়দিন বাপের বাড়িত থাকিবে হৈমন্তী। রাগ থামিলে আপনে বাড়ির ঘাটা ধরিবে। কিন্তু... হিতে বিপরীত হইল! যা কুনোদিন কল্পনাও করে না কুনো মানষি-- তা'ই হইল!
কয়েক মাস বিতি গেইল জেলের ভিতিরাত। ইয়ার মাঝোত হৈমন্তী কুনোদিন আসি একটা খবর করে নাই গৌতমের।
ছাড়া পাইল গৌতম। উয়ার দূর-সম্পর্কের কুনো এক উকিলা মামা জাবিন করি আনিসে। জেল থাকি বিরি উয়ায় সোজা হৈমন্তীক আনির ঘাটা ধরিল। যায়ায় হৈমন্তীর দেখা পায়া কয়, ‘চল, বাড়ি চল।’
হৈমন্তীও গৌতমের কথা শুনি বাড়ি যাবার বাদে প্রস্তুত। এমন সমায় উয়ার শাশুড়ি ঘর থাকি বিরি আসি কইল, ‘হৈম আর কুনোদিন ওটে যাবে না।’
গৌতমও রাগি যায়া কইল, ‘আটকেবার চেষ্টা করেন না মা। সংসারোত অগুন নাগেয়াও কি তোমার আত্মাটা শান্তি হয় নাই! হামার দুই জনের মাঝোত আসির চেষ্টা করেন না কয়া দিলুং।’
হৈমন্তী উয়ার মা’ক কিছু কবার বারণ করে। উয়ার ভুলটা উয়ায় বুঝিসে। সবকিছু ভুলি যেহেতু উয়ার স্বোয়ামীও আরও উয়াক ফিরি নিগির আসিসে-- কাজে উয়াও যাবার বাদে প্রস্তুত। কিন্তু হৈমন্তীর মাও আরও চ্যাঁচে উঠি কয়,‘হৈম আর যাবে না...’ কথাটা শ্যাষ হয় নাই। হয়তো আরও কিছু কইল হয়, তাতেই গৌতম ঠাস করি উয়ার শাশুড়ির গালোত একটা চড় কষে দিল। ঘটনটা আরও গরমাগরম পরিস্থিতির পাখে আগে গেইল।
মাওয়ের গালোত চড় কষা দেখি হৈমন্তীও ক্ষেপি গেইল। উয়াও গৌতমোক ডাঙের বাদে হাত ওঠাইসে। কিন্তু হাতটা আরও নামায়। গৌতম মন্টিক কোলাত নিয়া হৈমন্তীর হাতটা ধরি কয়, ‘চল...’
হৈমন্তী এক ঝটকায় হাতটা খুলি নিয়া কয়, ‘খবরদার। আর একটা কথাও তুই কবু না। মাওয়ের মতন শাশুড়ির গাত হাত তুলিস লইজ্জা নাগে না! জ্ঞান-কান্ড আছে তোর! য্যাংকরি আসিসিস, ত্যাংকরি ফিরি যা। এটে আর কুনোদিন আসির চেষ্টা করিস না তুই! ভাবি নিস মুই মরি গেসুং।’... গৌতম আর কিছু না কয়া সেলায় ফিরি আইসে।
কিছুদিন পর সকাল সকাল হৈমন্তী মন্টিক ধরি ফিরি আসিল গৌতমের এটে। গৌতমও খুব খুশি হৈমন্তীক ফিরি আসির দেখি। পুরানা কথা যে মনত ধরি’ই থাকিবে-- এমন মানষি না হয় উয়ায়। মন্টিক কোলাত নিয়া খুব আদর করে। মন্টিও ‘বাবা-মা’ করি ড্যাকের শিখিসে। বেটির মুখোত ‘বাবা’ কথাটা শুনি গৌতমের মরুভূমির মতন বুকখান যুনি কোনেক জলের নাগাল পাইল। বাপ-বেটির ভালোবাসা জুলজুল করি চায়া নইল হৈমন্তী। গৌতম পাড়ার একটা চেংড়াক দিয়া খাসির মসোং আনি ন্যায় বাজার থাকি। তারপর নিজে হাতে ভাত-শাকের আকা ধরায়।
গৌতমের ছটফটি দেখি হৈমন্তী নিজে আগে যায়া কয়, ‘দে মুই আন্দোং, মন্টির বাবা।’
গৌতম কয়, ‘ধুর। তুই বসি বসি আড়াম কর। এতখান ঘাটা আসিলু। মুই নিজে আন্দেছোং, তুই খায়া দ্যাখ মোর হাতের আন্দা ভাত-শাক ক্যামন মজা হয় এলা।’... হৈমন্তী একটা মুচকি হাসি দিয়া পিড়াখান নিয়া গৌতমের বগলোতে একপাখে বইসে। আকার পারত বসি কতদিনের কত দুঃখের গল্প ভাগবাটা হয় দুই জনেরে।
দুপুরে খাওয়া-দাওয়া হয়। হৈমন্তী গৌতমের আন্দা ভাত-শাকের প্রশংসা করে। গৌতমও হাসি হাসি কয়, ‘আরে পাগলি, মুই তো এমনি মজাক করি কলুং। কালি থাকি না তুইয়ে আন্দিবু।’
চোখুর জল ছলছল করি হৈমন্তী কয়, ‘সেইটা আর হবে না মন্টির বাবা।’ ...কথাটা কয়া শাড়ির আঞ্চলখান দিয়া মুখ চিপি ধরি ডুকুরি ডুকুরি কান্দি উঠে হৈমন্তী।
গৌতম কয়, ‘কেনে হবে না হৈম! পুরানা সবকিছু কি ভুলি যাবার পারিস না তুই?’... হৈমন্তী কিছু না কয়া ডিভোর্স পেপারখান নিকিলি গৌতমোক সই দিবার কয়।
গৌতম আরও কয়, ‘তোর মাথা ঠিক আছে তো হৈম!’
‘মোক আর কিছু কইস না তুই, মন্টির বাবা। হয়তো ভগবান হামার এই সম্পর্কটা মানি ন্যায় নাই!’
‘ভগবান না হয় হৈম-- ক বোলে তুই নিজে মানি নিবার পাছিস না!’
‘সইটা তাড়াতাড়ি দিলে মুইও তাড়াতাড়ি চলি যাবার পাং, মন্টির বাবা।’
‘ভালো করি ভাবিসিস তো হৈম?’
‘তুই সইটা কি দিবু?’... গৌতমও আর কিছু না কয়া সইটা দিয়া দ্যায়। তারপর মন্টিক বুকোত নিয়া আদরের চুমা দিয়া হৈমন্তীর কোলাত ফিরি দ্যায়। হৈমন্তীও মন্টিক কোলাত নিয়া চোখুর জল মুছিতে মুছিতে উয়ার দেউনিয়া মাওয়ের ওটে যাবার ঘাটা ধরিল আরও।
ইয়ার পর প্রায় ছয়খান মাস বিতি গেইল। কুনোমতনে পাগলার মতন দিন যাপন করি চলেছে গৌতম। সদায় ফম পড়ে হৈম আর মন্টির কথা। কুনো কুনোদিন সারা আতি নিন ধরে না দুশ্চিন্তায়। এংকরি দিন কাটিলে একটা ভাল মানষিক পাগলা হইতে বেশিদিন সমায় নাগির না হয়।
এই দুশ্চিন্তার কারণে পরপর দুই আতি নিন হয় নাই গৌতমের। কাজে সেদিন সুরা পান করি থাকিসে, আর হৈমন্তীও তাকেতালে সেদিনকেনায় কল করিসে উয়াক।
হৈমন্তীও গৌতমোক কল করার পাছিলাত কারণ আছে। উয়ার দেউনিয়া মাও আরও ঐন্যটে বিয়া ঠিক করিসে উয়ার! আর মন্টিক নাকি একটা অনাথ আশ্রমোত দিয়া আসিবে। কিন্তু হৈমন্তী কুনোদিন সেইটা হবার দিবে না। বাপ-মাও থাকিতে ছাওয়াটা কেনে অনাথ আশ্রম যাবে!... এই কারণে উয়ায় গৌতমোক কল করি উয়াক আরও ফিরি নিগিবার আব্দার জানায়। গৌতমও রাগের মাথায় প্রথমে ‘না’ করি দিলেও কিন্তু কথাটা মন থাকি কয় নাই। কাজে কলটা কাটিয়া কিছুক্ষণ পরে আরও কল করে হৈমন্তীক। সেলা গৌতম কয়, ‘হামার তো ডিভোর্স পেপারোত সই হয়া গেইসে হৈম! কুন মুখখান ধরি, কুন সাহসে তোক আরও ফিরি আনির যাম মুই!’
হৈমন্তী কয়, ‘ডিভোর্স পেপারোত খালি সই হইসে, মন্টির বাবা। এলাও ডিভোর্স হয় নাই। আরও অনেক কিছু নিয়ম-নীতি বাকি আছে। এলাও হামরা একসাথে সংসার করি খাবার পারি, মন্টির বাবা।’
‘সেইটায় যুদি হয়া থাকে, তাহলে মুই তোক এলায় যায়া ধরি আইসেছোং হৈম। কার হিম্মৎ আছে আটকায় মুইও দ্যাখোং।’
সেলাও কান্দি কান্দি হৈমন্তী কয়, ‘তুই মোক ধরি যা, মন্টির বাবা।’
গৌতম হৈমন্তীক সাহস দিয়া কয়, ‘তুই নিশ্চিন্তে থাক হৈম। কান্দিস না। মুই আছোং তো।’... আরও বহুক্ষণ কথা-বাত্রা হয় দুইজনেরে। গৌতমের প্যাটের ভোক ততক্ষণে ছাড়ি পালাইসে। বাঁশ তলা থাকি বাড়ি আসি ফটাফট সাজি-পাড়ি সোজা বিরি পরে হৈমন্তীক ফিরি আনির উদ্দেশ্যে।
গৌতম ওটে পৌঁছির আগোতে হৈমন্তী সাজি-পাড়ি তৈয়ারি হয়া বসি আছে। উয়ায় পৌঁছালে হৈমন্তী কাপড়ের ব্যাগ নিয়া স্বোয়ামীর হাত ধরি বাড়ির ঘাটা ধরে। উয়ার মাও আগে আসি বাধা দিলে হৈমন্তী কুনো বাধা শুনে না। বরঞ্চ স্বোয়ামীর হয়া সেলা উয়ার মাওয়ের মুখের উপুরা কয়, ‘মা-- তুই এই “মা” কথাটার মর্ময় বুঝিস না। যুদি বুঝিলু হয়, তাহলে আজি নিজের বেটির সংসারটাত অগুন নাগের বুদ্ধি দিলু না হয়!’
উয়ার মাও সেলাও বুঝির পারে নাই যে বেটির বাড়ির ছোট্ট একটা সাংসারিক ঝগড়া আজি একমাত্র উয়ার তানে ডিভোর্স পর্যন্ত আসি দাঁড়াইসে। সেলাও কয়, ‘তুই যাইস না হৈম। ঐ চামারের বেটার সাথে থাকিলে তুই কুনোদিন সুখি হবার পাবু না।’
‘সুখের মর্ম তুই আর কি বুঝিস মা! তোর মুখোত এই কথাটা মানায় না। স্বোয়ামী কাক কয়-- যুদি বুঝিলু হয়, তাহলে হয়তো আজি বাবাও ছাড়ি গেইল না হয় মা।’... আর কিছু না কয়া হৈমন্তী গৌতমের হাত ধরি হিরহির করি বিরি আইসে ভাঙা সংসারটাক আর একবার নয়া করি জোড়া নাগেবার বাদে।
তারিখ: 06.02.2021