আমাদের পার্শ্ববর্তী গ্রামে একটি ছেলে আছে নাম তার ফাহিম। ফাহিমের সাহসিকতা ও বুদ্ধির নামডাক শুধু যে তার গ্রামের সকলের মুখে মুখে ফেরে তা নয় বরং আশপাশের দশ গ্রামেও তার একই রকম নামডাক। সে সবেমাত্র ৮ম শ্রেণিতে পড়ে কিন্তু এ বয়সে সে এমন এমন কাজ করে সকলকে তাক লাগিয়ে দেয় যা কেউ ভাবতেও পারেনা। একদিন তাদের গ্রামে এক পাগল আসলো। দেখে পাগলের মতো লাগলো তাই তাকে সবাই পাগল বলা আরম্ভ করে দিলো। ফাহিম এ নতুন পাগল সম্পর্কে কিছুই এখনো জানে না তবু তার কেমন জানি মনে হলো এ লোক পাগল না। সে একটু ভাবুক টাইপের ছেলে তাই শুরু হয়ে গেলো তার ভাবনা। সে লোকটার কাছে গিয়ে, তাকে ভালো করে দেখতে লাগলো। লোকটার উস্কখুস্ক চুল, পরনে ময়লা কাপড়, চোখে ভাঙা চশমা, গলায় রুপার চেইন, হাতে একটি ঘড়ি। লোকটা রাস্তার ধারে একটা গাছের নিচে শুয়ে আছে। ফাহিম আস্তে আস্তে লোকটা আরো কাছে যেতে শুরু করলো।
সে লোকটাকে বললো, "আংকেল! আপনার নাম কি?"
লোকটা কিছুই বললোনা।
কোনো উত্তর না পেয়ে সে আবার জিজ্ঞেস করলো, "আংকেল! আপনি কোথা থেকে এসেছেন?"
লোকটা এবারও চুপ করে রইলো।
কিন্তু ফাহিম লোকটার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে আস্তে আস্তে বললো, আংকেল! আমি জানি আপনি পাগল না, আপনি নিশ্চয় কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে আমাদের গ্রামে এসেছেন।
লোকটা এবার বললো তুমি কি করে বুঝলে?
ফাহিম বললো, "আংকেল! আমি কিন্তু আপনাকে দেখা মাত্রই বুঝে গেছি।"
"আংকেল! আপনার যদি কোনো সাহায্য লাগে তাহলে আমাকে বলবেন, আমি আপনাকে সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকবো।" -ফাহিম বললো।
লোকটা এবার বললো, "তুমি আবার কাউকে বলবে না তো এ কথা?"
ফাহিম বললো, "আংকেল আপনি আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পারেন।"
লোকটা বললো ঠিক আছে তাহলে, এবার বলি শোনো, তোমাদের গ্রামে একজন মস্তবড় ডাকাত আছে যে তার নামটা যেনো কি?
ফাহিম বলে উঠলো, মানিক ডাকাত। লোকটা বললো, হ্যাঁ, আমি ঐ ডাকাত কেই ধরতে এসেছি। আমি একজন সিআইডি অফিসার। মানিক ডাকাতকে পুলিশ ধরতে পারেনি, তাই সিআইডি থেকে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ওই ডাকাতকে ধরার জন্য।
সে কোথায় থাকে তুমি জানো?
-লোকটি ফাহিমকে জিজ্ঞেস করলো।
ফাহিম বললো, হ্যাঁ, জানি তো। সে তো তার এক গোপন আস্তানায় থাকে। রাতে বের হয় ডাকাতি করার জন্য। আর তার ডাকাতির কারণে অতিষ্ট গ্রামের লোকজন। গ্রামবাসী সবাই চায় সে গ্রেফতার হোক। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি কোনো পুলিশ।
লোকটি ফাহিমকে বললো, তোমার বাড়িটি কি এখানে আশেপাশে কোথাও?
ফাহিম উত্তর দিলো হ্যাঁ, আজ রাতে আমি আপনার কাছে আসবো, আপনি কিন্তু এখানেই থাকবেন।
লোকটি হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ালো।
ফাহিম বললো, এখন আমি যাই তাহলে, কেউ দেখলে আবার সন্দেহ করতে পারে।
দেখতে দেখতে বিকাল পেরিয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলো। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকারে আর ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকে মুখরিত হয়ে উঠেছে সন্ধ্যার পরিবেশ।
লোকটা মনে মনে ভাবলো, এইতো আমার মিশন শুরু করার সময় ঘনিয়ে আসছে। লোকটা ফাহিমের আসার অপেক্ষায় রইলো। ফাহিম একটু গোয়েন্দা টাইপের তাই সে অনুসন্ধান করার জন্য বেরিয়ে গেছে। পথে মানিক ডাকাতের দলের এক সদস্যের সাথে দেখা হয়ে গেলো। সে লোকটি সম্পর্কে ফাহিমের পাশের বাড়িরই এক চাচা।
ফাহিম তাকে জিজ্ঞেস করলো, "চাচা! আজ কোথাও মিশনে যাচ্ছেন নাকি?"
লোকটি মাথা নেড়ে জবাব দিলো।
ফাহিমের বুঝতে আর অসুবিধা হলো না যে আজ মানিক ডাকাত ডাকাতি করার জন্য বেরোবে। তাই সে তড়িঘড়ি করে পাগল সাজা সেই সিআইডি আফিসারকে খবর দেয়ার উদ্দেশ্যে সেই গাছতলার দিকে হাঁটা শুরু করলো। তার হাতে একটি টর্চ লাইট, সাথে পকেটে একটি সাধারণ মোবাইল ফোন। কিছুদূর হাঁটার পরে সে ওই জায়গায় চলে গেলো। গিয়ে দেখে লোকটা শুয়ে আছে আর পাগলের মতো আনমনে গান গাইছে। ফাহিম লোকটাকে খবরটা দিতেই লোকটা উঠে বসে গেলো।
ফাহিমকে বললো, তুমি কিভাবে জানো আজ রাতে মানিক ডাকাত ডাকাতির জন্য বেরোবে?
ফাহিম তাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললো। লোকটা ফাহিমের কথা শুনে খানিকটা অবাক হলো আর ফাহিমের বুদ্ধির প্রশংসা করতে লাগলো।
ফাহিম বললো, "আংকেল, ইট ইজ দা প্রপার টাইম টু স্টার্ট ইউর মিশন"।
অফিসার সবকিছু শুনে এটা নিশ্চিত হলো যে মানিক ডাকাত আজ রাতে পাশের গ্রামে হামলা চালাবে, তাই অফিসার ফাহিমকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার একটা কার্ড দিয়ে পাশের গ্রামের পথের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। সেখানে যাওয়ার কিছু সময় পরে অফিসার দেখলো যে মানিক ডাকাত তার দলবল নিয়ে আসছে, অফিসার এর আগে ফোন করে আরও অফিসারদেরকে প্রস্তুত করে রেখেছিলো, তাই মানিক ডাকাত সহ তার বাহিনী মুহূর্তের মধ্যেই তাদের হাতে ধরা পড়লো। তখন অফিসার মনে মনে বলতে লাগলো এর সমস্ত কৃতিত্বই ফাহিমের।