জীবন হচ্ছে সমুদ্রের মতো তরঙ্গবহুল। খুবই সতর্কতার সহিত সাঁতার কাটতে হয়। মানব জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত। সংক্ষিপ্ত জীবনে লড়াই সংগ্রামটা অনেক বেশি। লড়াই সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হলে জীবনে চাওয়া-পাওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই কথাটি আমাদের অস্বীকার করার উপায় নেই। জীবন মানেই অনিশ্চিত ভ্রমণ। জীবন আমাদের ইচ্ছাধীন নয়। জীবন তার নিজস্ব গতিতে চলে। জীবনকে বেঁধে রাখা যায়না। জীবন গতিশীল। জীবন এক জায়গায় কখনও স্থির থাকেনা। গতিতে জীবন,স্থিতিতে মৃত্যু।
জীবনে বেঁচে থাকার জন্য অনেক কিছুর প্রয়োজন। জীবনে কি প্রয়োজন আর কি অপ্রয়োজন তা সবার কাছে একরকম হয়না। তবুও সবার জীবনে কিছু কমন চাওয়া-পাওয়ার ব্যাপার রয়েছে। যেটা জীবনধারণের জন্যই খুবই প্রয়োজনীয়।
মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোই কমন চাহিদা। মৌলিক চাহিদার পাশাপাশি অন্যান্য চাহিদাও থাকতে পারে। চাহিদা মনস্তাত্ত্বিক একটি বিষয়। চাহিদার পরিমাণ বেশি হলে চাওয়া-পাওয়ার লাগাম টেনে ধরাটা কঠিন। চাওয়া-পাওয়ার গন্ডি সীমিত পর্যায়ে রাখাটা খুব জটিল ও কঠিন কাজ। নিজের সমস্ত চাহিদাকে সীমিত পর্যায়ে রেখে কঠোর সাধনার মাধ্যমে নিজেকে নির্লোভী প্রমাণ করার সংগ্রাম আজীবন করে যেতে হয়।
জন্মগতভাবে মানুষ অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা। মানুষের মধ্যে ছয়টি রিপু সব সময় কাজ করে। লোভ,ক্রোধ,হিংসা বিদ্বেষ শুধুমাত্র মানুষের মাঝেই দেখা যায়। জগৎ সংসারে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যার লোভ নেই। লোভের বশবর্তী মানুষ সব সময় চাইতেই থাকে। অর্থ চাই,গাড়ি চাই,বাড়ি চাই। তাদের জীবনে চাওয়া-পাওয়ার শেষ থাকেনা। তারা প্রাপ্তির মাঝেই সুখ খুঁজে। লোভ নামক রিপু তাদেরকে পরিচালিত করে। অতিরিক্ত লোভ মানুষকে পাপাচারে লিপ্ত করে। মানুষের মনু্ষ্যত্ববোধকে নষ্ট করে দেয়। যেটা পরবর্তীতে নিজের জন্য অসম্মান বয়ে নিয়ে আসে। পারিবারিক সুখ শান্তি নষ্ট করে দেয়। অতিরিক্ত চাওয়া-পাওয়া,বিলাসী জীবনযাপন আপাতদৃষ্টিতে হয়তবা কিছুটা সম্মানের। কিন্তু মহান সৃষ্টিকর্তার আরাধনার জন্য বিলাসী জীবন পরিত্যাগ করাই বাঞ্চনীয়। মহান সৃষ্টিকর্তাকে পেতে হলে চাওয়া-পাওয়াকে শূন্যের কৌটায় নামিয়ে আনা প্রয়োজন।
নদীতে স্রোত আসে তাই নদী বেগবান,জীবনে দ্বন্দ্ব আছে,তাই জীবন বৈচিত্র্যময়। বৈচিত্রময় জীবনে সুখ দুঃখ,হাঁসি কান্না থাকবে,চাওয়া থাকবে,আবার পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাও থাকবে। সব সময় আমরা যদি চাইতেই থাকি সেটা সুখী জীবন নয়। আবার না পাওয়ার বেদনাও মেনে নেওয়া খুব কষ্টকর। এজন্য চাওয়া এবং পাওয়ার মধ্যে সঙ্গতি থাকা প্রয়োজন।
জীবন খুবই ক্ষণস্থায়ী। ক্ষণস্থায়ী জীবনে পূর্ণতা প্রাপ্তির জন্য আমাদের কাজটাকেই প্রাধান্য দিতে হবে। আবার ক্ষণস্থায়ী জীবনটাকে উপভোগ করাও প্রয়োজন। উপভোগ্য জীবন মানে শুধু চাওয়া-পাওয়া নয়। শুধু ধন সম্পদ অর্জন করে জীবনকে উপভোগ করা যায়না।। উপভোগ্য জীবন হলো পরিবার ও সমাজের মানুষদেরকে নিয়ে মিলেমিশে থাকা। প্রীতি প্রেমের বন্ধনে নিজেকে আবদ্ধ রাখা।
মানুষ তার শারীরিক গঠন,সৌন্দর্য্,মেধা,বুদ্ধি ও মানবিকতার মত গুণাবলির জন্য সকল প্রাণী থেকে আলাদা।আবার মানুষের মধ্যেই অমানবিক গুণাবলি কাজ করে।অন্যান্য প্রাণী কখনও লোভ করেনা।নিজের প্রয়োজন মাফিক খাদ্য সংগ্রহ করে।সেই খাদ্য আবার সবাই মিলেমিশে ভক্ষণ করে।মানুষ ব্যতিক্রমী একটি প্রাণী যার চাহিদার কোন শেষ নেই।
জর্জ ম্যাকডোনাল্ড বলেছেন“ চাহিদার অন্ত নাই, কিন্তু জীবনের সব চাহিদাই যে পূরণ করতে হবে তার কোন অর্থ নেই।”
প্রভাষক, লাউরফতেহ্পুর ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদ কলেজ
নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।