আমরা ছোটবেলায় অধ্যয়নকালে অনেকেই “বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ” নামক প্রবন্ধ রচনা পড়েছি ও পরীক্ষার খাতায় লিখেছি। তবে কি সেই শ্রেনীবদ্ধ প্রবন্ধ গুলো পড়ে নিজেদের মেধাকে বিকশিত করতে পেরেছি ? সিলেবাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে, পরীক্ষার খাতায় ১০ মার্ক পাওয়ার আশায় মুখস্ত করে আয়ত্ব করেছি অনেকে। বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ প্রবন্ধটি মুখস্ত বিদ্যায় না ভাসিয়ে যদি বুঝে পড়তাম এবং বাকী শিক্ষাজীবন টাকে কাজে লাগাতাম, তাহলে আজকের এই দিনটি দেখতে হতোনা বলে মনে হচ্ছে। কারন, আমাদের সমাজে আমরা এই প্রবন্ধ থেকে শিক্ষা টাকে নিতে পারিনি কারন বিজ্ঞানের তৈরী মোবাইল ফোন আমাদের জীবনে আশীর্বাদ হিসেবে আসলেও আমরা নিজেদের ভুলে নিজেরাই অভিশাপ হিসেবে ব্যবহার করছি এবং অন্যকেও করছি।
উপরিউক্ত বাক্যালাপ করার একটাই কারন, আপনি কি লক্ষ্য করেছেন আপনার স্নেহের সন্তান টি দিনরাত ২৪ ঘন্টা সময়ের মধ্যে ঠিক কতো ঘন্টা ব্যয় করছে মোবাইল ফোন নামক আধুনিক যন্ত্রটির পিছনে ?
উত্তরটা হয়তো খুজে পেয়েছেন তাই এখানে উল্লেখ করলাম না। তবে আপনার ধারনার থেকেও বেশী মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্ত হয়ে আছে আপনার ভালোবাসার সেই সন্তান।
যেমন, সারাদিন মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকা ছেলেটি হয়তো আপনার সাথে এক টেবিলে রাতের খাবার শেষ করেই নিজ কক্ষে চলে যায় অতঃপর কক্ষের দরজা বন্ধ করে, বাতি বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে। আপনি ভাবলেন আপনার সন্তান ঘুমে আচ্ছন্ন। তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। কারন, আপনার সন্তান প্রতিটাদিন আশীর্বাদ নামক যন্ত্রটি দিয়ে নিজেদের জীবনে অভিশাপ ডেকে আনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
যেমনঃ ম্যাসেন্জার, ইন্সট্রাগ্রাম, ইন্টারনেট ব্রাউজার ইত্যাদির সাথে বর্তমান সময়ের আসক্তিমুলক মোবাইল গেমস্ পাবজি ও ফ্রী ফায়ারস নিয়ে মাতোয়ারা ছেলেটি রাত ৩টা বা ভোর ৪টায় ঘুমাতে যায়।
এটা আপনার সন্তানের জীবনে আপনার অগোচরে চোখের আড়ালে প্রতিদিন ঘটছে।
তাই সন্তানের পাশে থাকার চেষ্টা করুন, সন্তানকে ভালোবেসে বন্ধু ভেবে নিজের মতো করে আগলে রাখুন। তাকে আপনার জীবনে বাল্যকালের শ্রেণী থেকে পাওয়া শিক্ষাটা শিখিয়ে শিক্ষিত করুন। বলুন, বিজ্ঞানের তৈরী যন্ত্রাদি আমাদের জন্যই আবিষ্কার হয়েছে তবে সেটা আমাদের ভালো কাজের জন্য। কিন্তু আমরা তার খারাপ ক্ষতিকর দিকটা ব্যবহার করছি।
আপনার সন্তানকে বলুন, যে বন্ধুদের সাথে রাত জেগে ম্যাসেজিং করছে, চ্যাটিংয়ে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে সেই বন্ধুগুলো একদিন সবাই হারিয়ে যায়, কেউ পাশে থাকে না। তাই এই আবেগী, অনিষ্টকারী সময়গুলো থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।
আরো বলুন, ইন্টারনেট খরচ করে বর্তমান সময়ের আসক্তিমূলক মোবাইল গেমস্ পাবজি ও ফ্রি ফায়ার নিয়ে প্রতিযোগীতায় মত্ত হয়ে আছে। যে প্রতিযোগীতা কোনদিনই কাজে আসবে না বরং প্রকৃত মেধা বিকাশে সময় চুরি করছে ও বাধা দিচ্ছে।
বর্তমান প্রতিযোগীতাময় যুগে একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাবার সময়ে, অন্যের থেকে নিজেকে মেধাবী ও শিক্ষায় গড়ে তোলার সময়। ঐসব আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সন্তানকে বুঝিয়ে বলুন, আধুনিক যুগে মোবাইল ফোন দিয়ে চমকপ্রদ ভালো কাজ ও শিক্ষনীয় কাজগুলো করা যায়। ইউটিউব দেখে অনেক শেখার আছে, মোবাইল ফোন ইন্টারনেটযুক্ত হিসেবে ব্যবহার করুক, তবে সেটা থেকে অভিজ্ঞতা লাভ করুক, শিখুক। তাই বলে পাবজি, ফ্রি ফায়ার বা অন্যান্য আসক্তিমূলক গেমস্ কক্ষনো নয়।
আমার লেখাটি হয়তো তরুণ প্রজন্মের প্রিয় ভাইবোনদের জন্য বিরক্তিকর ও অপছন্দের হতে পারে। তবে প্রিয় তরুণ প্রজন্ম তোমাদের বলছি, জীবনটাকে বাস্তবে রুপ দিতে চেষ্টা করো। মোবাইল গেমস খেলে বিজয়ী হয়ে Booyah স্ক্রীনশর্ট মাই ডে তে দিলেই প্রকৃত অর্জনের বিজয় নয়, এটা সময় অপচয়, এটা সময় অপচয়কারী শত্রু।
তাই পাবজি, ফ্রি ফায়ার ইত্যাদি আসক্তিমূলক গেমসগুলো পরিহার করে নিজের জন্য পরিবারের জন্য নিজেকে তৈরী করো। দেখবে পরবর্তীতে এই দেশটার জন্য তথা পুরো পৃথিবীর জন্য নিজেকে তৈরী করে ফেলেছো।
ভালোবাসা রইলো তেমাদের জন্য। তোমাদের বোধগম্য চিন্তা চেতনাকে সম্মান জানাই, তোমাদের মানসিক পরিবর্তনের অপেক্ষায়।