নৈস্বর্গিক প্রেম ।। অন্তর চন্দ্র

 


জোছনার আলোয় ঝকমক করছে দীঘির জল। মানুষগুলো আরামে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। এদিকে ভোর হয়ে এলো পাখি গুলো চেঁচামেচি করে ডেকে ডেকে মানুষের ঘুম ভাঙাচ্ছে। ঊষার আলো ফুটলো বলে সকাল সকাল নির্মল পবন বায়। সঞ্জু খেলার সাথীদের নিয়ে রোজ রোজ ঘুরতে যায়। কখনো ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে কখনও বা বিশাল সবুজের সমারোহে বনে। সে ভীষণ ভালোবাসে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য। একদিন  সঞ্জু তার খেলার সাথী লক্ষ্মী, কাব্য, নিলয় এবং ছোট সবাইকে নিয়ে কাঞ্চন বনের দিকে র‌ওনা হলো । বহুদূর পথ অতিক্রম করে অবশেষে গন্তব্যে পৌঁছানো গেল। বাইরে থেকে দেখে মনটা অনেক ভালো হয়ে গেল। না জানি ভিতরে কি কি আছে! এক দৌড়ে সঞ্জু এবং তার সাথীরা বনের ভিতরে ঢুকে পড়লো। এমন ফল - ফুল এবং পাখি তারা কখনো দেখেনি। এ যেন এক রূপকথার রাজ্য। নিজেকে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে ‌। নিলয় বলে... ইচ্ছে করে  সারাটা জীবন এখানে থেকে কাটাই। অপরূপ মোহিত করা সৌন্দর্য দেখতে দেখতে তারা এতটাই মন মুগ্ধ হয়ে যায় যে, বাড়ি ফেরার কথা তাদের মনে ছিল না। প্রকৃতির অপরূপ লাবণ্য তাদেরকে ভুলিয়ে দিয়েছে । মন যেন এখানেই লেগে আছে। এদিকে সূর্য ডুবে সন্ধ্যা নেমে এলো। লক্ষ্মীর বেশ ভয় করছিল। নির্জন গভীর বন কখন জানি কি হয়! মা বলেছিল...  এই বনে রাত্রি হলে কেউ প্রবেশ করতে পারে না। কারণ জন্তু জানোয়ারের ভয় থাকে, দিনের বেলায়ও ঠিকমতো কেউ যায় না ‌ ‌। লক্ষ্মী সবাইকে বারণ করে দিল, কাব্য‌ও লক্ষ্মীর সাথে একমত হল‌‌। অন্য সবাই আগ্রহের সাথে বনের ভিতরের দিকে যেতে লাগলো। এদিকে সন্ধ্যার  ঘুটঘুটে অন্ধকার ছেঁয়ে গেছে। কথা ছিল সন্ধার আগেই বাড়ি ফিরতে হবে । যদি সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফেরা না হয় তবে বাবা - মা রাগ করবেন। কান মলা খাওয়ার‌ও ভয় আছে। এদিকে সন্ধ্যার ঘুটঘুটে অন্ধকারে অনেক দূরে, বনের অনেক গভীরে চলে এসেছি। এত গাছপালা লতাপাতা সবগুলো যেন আঁকড়ে ধরছে। বাইরে বেরোনোর পথ কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। চারদিকে শুধু ঘন সবুজের অরণ্য। অন্ধকারে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছেনা। সবাই মিলে ঘুরতে ঘুরতে এক ঝর্ণার কাছে এসে গেলাম। স্বচ্ছ জলের প্রবাহ অপরূপ তার লাবণ্য কিন্তু অত্যন্ত ভয়ংকর ভাবে জল পড়ছে। হঠাৎ করেই লক্ষ্মীর চোখ পড়ল ঝরনার নিচে থাকা একটা গুহার দিকে। মানুষের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। গা শিরশির করে উঠলো। এত রাতে এই বনে আমরা ছাড়া আর কে আছে ‌? হয়তো চোর-ডাকাত হবে। আর যদিও চোর - ডাকাত হয় তবে তারা এখানে আসবে কেন? এদিক দিয়ে তো কোন লোক যাওয়া-আসা করে না! ভীষণ ভয় করছিল। এতদিনে প্রকৃতি দেখার সাধ মিটে গেল। সঞ্জু অভয় দিয়ে বলেন... চিন্তা করিস না আমি তো তোদের সাথে আছি। চল এগিয়ে গিয়ে দেখি কে আছে ওখানে।
না, না,না আমরা ওখানে যাব না। সঞ্জু সবাইকে জোর করে নিয়ে গেলেন। আস্তে আস্তে দু-পা - এক-পা  করে ঝর্নার পিছনের দিকে চলছে। গুহার ভিতরে থাকা মানুষের গলার স্বর আরো যেন তীব্র হচ্ছে। 
কিন্তু কে ওখানে? 
গুহার মধ্যে প্রবেশ করতেই আরো তীব্র অন্ধকার হয়ে গেল। মনের ভয়গুলো গোপন রেখেই চলতে থাকলাম। সঞ্জু দেখতে পেল, সামনেই আগুনের এক জ্যোতি জ্বলছে , সেখানে কেউ একজন বসে আছে। লক্ষ্মী পায়ে হোঁচট খেয়ে পড়ল, ইস্! মরে গেলাম। আগুনের সামনে থাকা লোকটি বলে উঠলো কে ওখানে? এক্ষুনি এখানে এসো।
তাদের ভয় এখন আরোও বেড়ে গেল। ভয়ে ভয়ে সকলেই এগোচ্ছে। সামনে গিয়ে তারা দেখতে পেল এক সাধুবাবা বসে ধ্যান করছিল। মাথায় জটা, হাতে ত্রিশূল, কন্ঠে রুদ্রাক্ষের মালা তেজস্বী এক সাধু বাবা। মূর্খ, বাচ্চারা তোরা আমার ধ্যান ভঙ্গ করলি! ভীষণ রাগ হয়ে গেল। তখন দণ্ডায়মান হয়ে  আমাদের সমস্যার কথা জানালাম সাধুবাবাকে । তখন তিনি শান্ত হলেন  এবং আমাদের খুব খিদে পেয়েছে বুঝতে পেরে । তৎক্ষণাৎ আজব কিছু ফলমূল আমাদের সামনে নিয়ে আসলেন যা আমরা কখন‌ই দেখিনি। খুব আয়েশ করে খেলাম। সাধু বাবা বললেন... এবার তো পেট ভরেছে। 
হ্যাঁ, বাবা। 
চল , চল, প্রকৃতি দেখতে বেরোতে হবে তো! আমরা বললাম এখনো তো রাত । 
চল, না আমার সাথে,দেখবি চল।
সাধু বাবা তার মন্ত্র বলে চারিদিক আলোকিত করে রাখলেন ‌ । প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য আমাদের চোখের সামনে ফুটিয়ে তুললেন। এ যেন সত্যিই স্বপ্নের দেশ। কোন এক রূপকথার রাজ্য ‌।  মন ভরে দেখতে লাগলাম । দেখতে দেখতে ভয় যে কখন চলে গেছে বুঝতেই পারিনি। এদিকে সকাল হতেই সাধু বাবা কোথায় হারিয়ে গেল কেউ জানতে পারেনি। সেই গুহা, ঝর্ণা কিংবা অগ্নি কিছুই নেই চারিদিকে শুধু গাছপালার আস্তরণ। 

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।