সৈয়দ হকের সাথে আমার প্রথম পরিচয় এক যুগ আগে। ২০১০ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এলেন কুড়িগ্রামে। সরকারী কলেজ মাঠে বক্তব্য দিবেন। আগ্রহ নিয়েই বসে আছি টেলিভিশনের সামনে।
কিন্তু, শুরুতেই সৈয়দ হক মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়ালেন। স্বভাবগম্ভীর ভাবুকচিত্তে ভ্রু-কুঁচকে বক্তব্য দিলেন। কী সুন্দর কথা! প্রধানমন্ত্রীকে বললেন, “তোমরা হামার ব্যাটার বউ হন। তোমার ঠ্যান হামার ম্যালা কিছু চাওয়ার আছে”। দশ বছরের ছোকরা হয়ে একাগ্রচিত্তে শুনলাম। আগ্রহ নিয়েই বাবাকে জিজ্ঞেস করে পরিচয় জানলাম। ইনি সৈয়দ শামসুল হক। সব্যসাচী লেখক। আমাদের কুড়িগ্রামের সন্তান।
সেই থেকেই পরিচয়। সাথে একপাক্ষিক মুগ্ধতা। অমোঘ আকর্ষণ। তখন থেকেই আমার কাটাতারের ওপারের লেখকদের ছেড়ে এপার বাংলার কলমে আসক্ত হওয়া। ‘বৃষ্টি ও জলের কবিতা’ থেকে শুরু হলো যাত্রা। একে একে পড়লাম ‘বৈশাখে রচিত পঙ্কতিমালা’, ‘পরাণের গহীন ভেতর।’ মাটি, মানুষ আর ইতিহাসের তিন মোহনায় বূদ করে রাখলেন আমার পাঠকসত্ত্বাকে। ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদকে যে উচ্চতায় তুলে দিলেন, এই দুঃসাহসই বা ক’জনে দেখালো।
কবি, লেখক নাকি নাট্যকার এই প্রশ্নের অন্তর্দ্বন্দ্বে ভুগি নি কখনই। ভেবেছি সৈয়দ হক একজন শিল্পী। শব্দ দিয়ে শিল্পকর্ম বানানো অনুপম দক্ষতাসম্পন্ন শিল্পী। তিনি গদ্য ছন্দেও কবিতা বানান। কবিতার ঢঙ্গে নাটক লিখেন, কাব্যনাট্য। ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘নুরুলদীনের সারাজীবন’ পড়ে ইতিহাস সচেতন হয় নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, অনুবাদ। সাহিত্যের সকল শাখায় ছিলেন সাবলীল। লিখেছেন, সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা সাহিত্যকে। চলচ্চিত্রে অবদানের গল্পগুলো তুলে রাখা যাক আগামীর দায়িত্বে।
মহাকালের সাহিত্যের স্রোতে কত কিছুই তো ভাসিয়ে দিলেন। কবি এখন বিশ্রামে। দূর আকাশের তারার সাথে সখ্যতা গড়েছেন। নিশিথ পেরোনো ভোরের শুকতারা হয়ে আমাদের দেখেন। হয়তো মুচকি হেসে সেই চিরাচরিত বাচনভঙ্গিতে বলেন, “আমি কে তা নাইবা জানলে। আমাকে মনে রাখবার দরকার কি আছে? আমাকে মনে রাখবার? ......... আমি এসেছি, দেখেছি, কিন্তু জয় করতে পারিনি।”
সহ-সম্পাদক
বর্ণপ্রপাত
জন্মদিনে বিনম্র শ্রদ্ধা সব্যসাচী।
ReplyDelete