কর্পোরেট এই সময়ে আমরা ব্যস্ত নানামুখী কাজে। তাই বলে আশেপাশের মানুষজনের সমস্যা যে অজানা তা কিন্তু নয়। কাউকে বিমর্ষ দেখলেই কিংবা কেউ তার ভেতরের অনুভূতি প্রকাশ করতে এলেই বিজ্ঞের মতো পরামর্শ দেওয়া শুরু করি। বাদ দে এগুলো, ছেড়ে দে, ভুলে গেলেই হয়, মুভি দেখ কিংবা বই পড় -কতশত পরামর্শের পাহাড়। কিন্তু আমরা কি কখনো তাকে শুনি, সে কি বলতে চায়। তার দমবন্ধ হওয়া চাপা আর্তনাদ শুলোকে প্রকাশ করবার সুযোগ দেই? হয়তো নয়। খুব সহজে একজন মানুষ আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নেয় না। সে হয়তো বিরাজমান সমস্যা থেকে পরিত্রানের চেষ্টা করে। কিন্তু সেই সময়টায় যদি কেউ তার কমফোর্ট জোন হয়ে উঠতে পারে, পরিবার, ফ্রেন্ডসার্কেল বা যেকেউ। সমাধান সম্ভব নাও হতে পারে তবে মনযোগ দিয়ে শোনা তো যেতে পারে। ভরসার একটা হাত তো কাঁধে রাখা যেতে পারে। এটুকুই হয়তো কাউকে বেঁচে থাকার রসদ যোগাবে।
তবে এক্ষেত্রে প্রত্যেককে নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। পরিবার কিংবা প্রিয় এবং কাছের মানুষের কাছে নিজের অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ করবার মানসিকতা রাখতে হবে। প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব একটা ভালো লাগার যায়গা থাকে। যাপিত জীবনে এতো ব্যস্ততার ফাঁকফোকরে একটু সময় বের করে মাঝেমধ্যে নিজের সেই ভালো লাগায় হারিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। সৃষ্টিকর্তার দেওয়া অমূল্য উপহার হচ্ছে এতো সুন্দর জীবন। সেই জীবনকে শেষ করে দেওয়া কখনোই সঠিক সমাধান হতে পারে না। চারপাশের সবাই হয়তো আপনার সাথে খারাপ কিছু করছে কিন্তু এই পৃথিবী তো নির্মল বায়ু, বেঁচে থাকার সমস্ত উপাদান সরবরাহ করছে। এজন্য প্রকৃতির প্রতি, সৃষ্টিকর্তার প্রতি সকলের কৃতজ্ঞতা বোধ থাকা উচিত।
তবে সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে এ বিষয়ে প্রচারমাধ্যম গুলোর সচেতনতা সবথেকে বেশি জরুরি। সিনেমা নাটক কিংবা যেকোনো ভিডিওতে ছোটখাটো সমস্যা হলেই আত্মহত্যাকে হিরোয়িজম স্বরূপ না দেখিয়ে এটাকে নিরুৎসাহিত করার মতো মেসেজ দেওয়া উচিত। নিজে যেমন নিজেকে ভালোবাসা প্রয়োজন, নিজের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রাখা প্রয়োজন। তেমনি আমাদের প্রত্যেকের অবস্থান থেকে চারপাশের সকলের প্রতি সহানুভূতিশীল মানসিকতা রাখা প্রয়োজন। সর্বস্তরে জনসচেতনতাই পারে আত্মহত্যার মতো সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে।