মাটির কলস ।। গোলাপ মাহমুদ সৌরভ


সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী জামিলা। তার রূপ,গুণ,নম্র ভদ্র এবং মেধা সব মিলিয়ে রূপবতী জামিলা। গরীব পরিবারে তার জন্ম। অভাব অনাটনের মধ্যেই বেড়ে ওঠা তার। অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকে,তেমন কোন বেশি চাহিদা ও নেই তার। বাবার সাধ্যের বাইরে কোন আবদার নেই। বাবা মা যা দিবে তা-ই খাবে যা পড়াবে তা-ই পড়বে। প্রতিদিন সকাল বেলা মায়ের সঙ্গে সংসারের টুকিটাকি কাজ করে তারপর স্কুলে যায়। মাঝে মধ্যে মা জামিলাকে ডিম বিক্রি করে এক দুই টাকা দেয় খরচ করার জন্য। জামিলা তা খরচ না করে মাটির ব্যাংকে জমা করে রাখে। বহুদিন পর ব্যাংক ভেঙে দেখে একশত টাকা হয়েছে, খুব খুশি জামিলা। পাড়ার মেয়েরা প্রতিদিন সকাল বেলা কলসি দিয়ে নদী থেকে জল আনতে যায়, সংসারের  কাজ করার জন্য, কিন্তু জামিলার কলস ছিলোনা ছোট্ট পাতিলা দিয়ে কয়েকবার করে নিয়ে আসতো,এতে তার খুবই কষ্ট হতো। অভাব মানুষকে কতোটা অসহায় করে তুলে অভাব না থাকলে বুঝা যায় না। মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা স্বপ্ন যেদিন বাস্তবে রুপান্তরিত হয় সেদিন মনের আনন্দ টা ভিন্ন রকম হয়। জামিলার বহুদিনের স্বপ্ন টাকা জমিয়ে মাটির কলস কিনবে আর তা দিয়েই সংসারের কাজ কর্ম করবে। রোজ সকালে পাড়ার মেয়েদের সঙ্গে মাটির কলস নিয়ে নদীর ঘাটে যাবে এবং হাসি আনন্দে জল আনবে। জামিলা একশত টাকা বাবার হাতে তুলে দিয়ে বললো, এই নাও বাবা একশো টাকা আমার জন্য একটা মাটির কলস আনবা।একশো টাকা পেয়ে বাবা যেন চিন্তা করতে লাগলো এতো টাকা ও কোথায় পেলো, আমরাতো কখনো জামিলার হাতে এতো টাকা দেইনি, কোথায় পেলো সে। তাহলে কি আমার জামিলা অন্যায় করে নিয়ে এসেছে। বাবার মনে নানান প্রশ্ন ঘোর পাক খাচ্ছে। অবশেষে জামিলা সকল প্রশ্নের অবসান ঘটিয়ে সত্য কথা বলে দিলো। বাবা একশো টাকার গল্প টা শুনবে তুমি তাহলে তোমার ধারণা পাল্টে যাবে। কিসের গল্প, টাকা কোথায় পেয়েছিস? শুন বাবা, মাঝে মধ্যে মা আমাকে ক্লাসে টিফিন খাওয়ার জন্য দুই এক টাকা দিতো আমি না খেয়ে জমিয়ে একশো টাকা বানিয়েছি। সত্যি কইতাছো মা আমি তোর হতভাগ্য বাবা অভাবের কারণে কখনো তর কোন সখ আল্লাদ পূরণ করতে পারি নাই। আমি কালই তোর জন্য মাটির কলস নিয়ে আসবো। গরীবের স্বপ্ন মাটির কলস তা-ই যেন সুখের উল্লাসে আবেগে আপ্লূত। পরের দিন বাবার গায়ে হঠাৎ প্রচন্ড জ্বর হয় বাজারে যাওয়ার মতো শক্তি পাচ্ছে না। বাবার অসুস্থতা দেখে জামিলার মাটির কলসের কথা ভুলে যায়। সময় এবং পরিস্থিতি এমন হয় যা আবেগ ও স্বপ্নের কাছে হার মানে। জামিলার মাটির কলস নিয়ে যে স্বপ্ন মনের মধ্যে লালন করে এসেছে আজ তা অপূর্ণ হতে পারে না। অসুস্থ শরীর নিয়ে বাবা বাজারে গেলো মাটির কলস আনার জন্য।  এদিকে জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে তবুও জামিলার স্বপ্ন পূরণ করতে বাজারে আসা। কলস নিয়ে বাড়িতে রওনা হচ্ছে, প্রচন্ড জ্বরে শরীর কাপছে, হাত থেকে পড়ে মাটির কলস চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেলো নিমিষেই জামিলার স্বপ্ন ধসে গেলো। চোখে জল আর মলিন চেহারা নিয়ে বাবা বাড়ি ফিরলো। কি হয়েছে বাবা, তোমার চোখে জল কেন? মা'রে তোর মাটির কলসের স্বপ্ন টাও পূরণ করতে পারলাম না। তা শুনতেই জামিলার চোখে জল এলো। মা'রে কাঁদিস না জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছিলো শক্তি পাচ্ছিলাম না কখন যে হাত থেকে পড়ে মাটির কলস চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেলো আমি বুঝতেই পারিনি। না বাবা, আমি মাটির কলসের জন্য কাঁদি না আমি কাঁদি তোমার কান্না দেখে, কারণ আমার চেয়ে তুমি বেশি কষ্ট পেয়েছো। অর্থাৎ আমার মাটির কলস এর স্বপ্ন থেকে তোমার বেঁচে থাকা আমার কাছে জরুরী।

1 Comments

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

  1. আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সম্পাদক মহোদয় কে

    ReplyDelete
Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।