দোল পূর্ণিমার নিশি নির্মল আকাশ ।। রহিত ঘোষাল


 নিজেকে ভবিষ্যৎ বক্তা ভাবতে ভালো লাগে,
 নিজের ভবিষ্যৎবাণী ভুল প্রমাণিত হলেও ভালো লাগে।
বৃষ্টি কণা যে আশ্রয় পেয়েছে,প্রত্যেক ভাগ্যবতী সেই
একই ক্ষণিকের সুখ সমৃদ্ধির মোলায়েম পরশ পাক।
আবারো ক্ষণকাল নিয়ে এক ভবিষ্যৎবাণী।
ঠিক একই রকম দুঃসাহসী মন্তব্য ক্ষণজন্ম নিয়ে  কখনোই করতে পারিনা।

১৪ শিকের ভেতরে বসে একটা মুরগি,
ব্রয়লার মুরগি।
একই কারাগারে আর এক বন্দিকে গল্প করছে,
বৃদ্ধ কসাই যখন তাকে কাটবার আগে মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়েছেন,খদ্দেরের কাছে জানতে চেয়েছেন কত কেজি মাংস লাগবে তার,তখনই সেই মুরগি তুলে নিয়েছে ধারালো রক্তমাখা বঁটি,
কয়েক ঘা এদিক-
কয়েক ঘা ওদিক।
নিজের কসাই এর হত্যার দায় কারাবরণ।

যে গৃহশিক্ষক ছাত্রীর থাইয়ে হাত বোলায়,টেবিলের নিচে শ্লীলতাহানি,অপমান, থাকে,থাকে,থাকে।
তারপর জ্যামিতি বাক্স থেকে কাটা কম্পাস তুলে নিয়ে বসিয়ে দিতে পারে মধ্য বয়স্ক মাস্টারমশাইয়ের বা চোখে।
সঙ্গে সঙ্গেই প্রেক্ষাগৃহে হাততালি পড়ে যায়।

ঝড় বৃষ্টির রাতে প্রত্যন্ত গ্রামের শ্মশানের মতো
আমার বুকের ভেতরটা,যে পাটকাঠি গুলো এই মুহূর্তে কাদা জলে ভেসে আছে,কিছুক্ষণ আগেই এক 
সন্তানহারা পিতার শক্ত হাতের মুঠোর ভেতর 
শেষ কর্তব্য হয়ে জ্বলছিল ওগুলো।
একটু দূরে দামু পাগলার কোলে ছোট্ট শিয়ালের বাচ্চা,ওদেরও মুদ্রাদোষের মধ্যে খিদে,সিক্ত শরীরে
আগুনের তাপ বড় প্রয়োজন।ছাই ভস্মের
গঙ্গা প্রাপ্তি দেখে ওরা দুজন,এটাই ওদের একমাত্র বিনোদন।
তারপর ছোট্ট শিয়ালের বাচ্চাটা হয়ে যায় নেকড়ে বাঘ,দামু পাগলা প্রবেশ করে প্রেত পুরীতে,
আমিও তখন সবার ডেথ সার্টিফিকেটের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ি।

যে ছেলে গর্ভধারিনী মাকে দুমুঠো ভাত দেয় না,বাস রাস্তার সামনে এসে তার কাছ থেকে দেশলাই নিয়ে ধরিয়ে ফেলি সিগারেট। 
এক চোখ কানা মাতাল বাস ড্রাইভার অনেকক্ষণ ধরে একটাই বাঁকড়ি গান গাইছে।
এই গোটা শীতকালে একদিনও আমি গরম পোশাক পরিনি। ভেবেছিলাম মানুষ স্মৃতিতে যে হিম যুগ আছে তার ভেতরেই লম্বা লম্বা পা ফেলে এই জীবনকালেই ঢুকে পড়তে পারব।পারিনি।হিম যুগ আসেনি।উলি গন্ডার নেই।একশৃঙ্গ ঘোড়া নেই।
যারা অসীম কাল ধরে আগুনের কুণ্ডলী জ্বেলে প্রাচীন
লোকো গল্প বলতো এই গোলক পৃষ্ঠে,অনাদিকালের সেই সভ্যতার টুকরো টুকরো হাড়ের উপর দিয়ে আমরা একটু একটু করে আরো সাম্প্রদায়িক হয়ে উঠি।

এই মধ্যরাত্রে আমার ঘর হয়ে ওঠে লাশ কাটা ঘর,আমার প্রেমিকার লাশ,আমাদের অবাঞ্চিত ভ্রুনের লাশ,একটা বেজিতে খাওয়া শঙ্খচূড় সাপের লাশ।
স্তূপাকৃত।
মরা পচা গন্ধে ঝিমিয়ে ওঠে আমার ব্রহ্ম।
চুন ঘষা নোনতা দেওয়াল উপহাস ছুড়ে দেয়,লুফে নিতে যাই,আর ঠিক তখনি-ঠিক তখনই হা হা হা হা অট্টহাস্য।পর্দা নেমে আসে।ধর্মীয় গোঁড়ামি নেমে আসে।

টিমটিমে হারিকেনের আলোর তলায় পড়তে পড়তে আমরা কজন ভাই-বোন অনেক দিনই দেখেছি
 মায়ের চোখে জল।
তবু আমরা কেউ কখনো জানতে চাইনি 
'কারণ'।
মুখ ফুটে বলতে পারিনি কোনো কথা।তারপর ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত-রিন রিনে চুড়ি পরা হাতে মা মুখে তুলে দিয়েছেন গ্রাস।ওই চুড়িগুলো বোন নিয়ে গেছে শ্বশুর বাড়ি,দাদা অনেকদিন মানসিক হাসপাতালে,আমার পরে যে ভাই ছিল বিদেশ চলে গেছে,মার চোখের কোনে এখনো জল।ওই জল ফুটিয়ে এই শীতকালে চান করে আমি অফিস যাই,ওই চোখের জল দিয়েই ভিজিয়ে দেওয়া হয় তুলসী মন্ডল,ওই চোখের জলের ভেতরেই রাধা-মাধবের প্রতিবিম্ব,ওই জল দিয়েই এবার আবির গুলে রং ছিটাবো দোলের সময়।
আমার মা শুধু হাসেন রাস পূর্ণিমার দিন।।

রহিত ঘোষাল
ঠিকানা :বাঁশদ্রোণী ,সোনালী পার্ক কলকাতা ৭০

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।