কাকগন্ধ ।। দেবব্রত রায়

 


" আপনি বিশ্বাস করবেন কি-না জানিনা, গতকাল সন্ধ্যার সময় ঠিক এই রুম-ফ্রেসনারের গন্ধটাই আমার নাকে ভেসে আসছিল। তারপর মাথার ভিতরে সেই ঘোর-ঘোর ভাবটা জমাট বাঁধতেই দেখলাম,আপনার চেম্বারে আমি এরকমই বসে আছি !" কথাগুলো বলার পর ডাক্তারবাবুকে মৃদু হাসতে দেখে তপোময় বিষণ্ণ গলায় বললো, আমার কথাগুলো আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না,তাই না স্যার !              

ডাক্তারবাবু তপোময়ের কথাটা এড়িয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,তা আপনি আমার অ্যাড্রেসটা পেলেন কোত্থেকে ?                            

তপোময় বললো,ওই যে বললাম স্যার,স্বপ্নের ভিতরে ! আপনার এই চেম্বার,রাস্তা-ঘাট এমনকী, আপনাকেও পর্যন্ত আমি সেই স্বপ্নটার ভিতরেই দেখতে পেয়েছিলাম !                                        ডাক্তারবাবু বললেন, হুম !                                  

" স্যার,এটা কি কোনো মেন্টাল-ডিজিজ !" তপোময় খুবই অসহায়ভাবে ডাক্তারবাবুকে কথাগুলো জিজ্ঞেস করল। ডাক্তারবাবু এবার প্রেসক্রিপশনে খস খস করে কয়েকটা ওষুধ লিখে দিয়ে বললেন, "দেখুন এখনই অতকিছু ভাবতে যাবেন না। " তারপর,প্রেসক্রিপশনটা তপোময়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, চারটে ওষুধ লিখে দিলাম। এগুলো নিয়ম করে এক মাস খান। আশাকরি,সব ঠিক হয়ে যাবে ! ... তারপর বরং,সময় করে এসে একবার চেকআপ করিয়ে যাবেন।                               

ইদানীং,তপোময় তার বিছানায়,ঘরে এমনকী, আসেপাশে যেখানেই যায়,সেখানেই প্রায় ও একটা কাক-গন্ধ পায়। যদিও সে কাকের গন্ধ চেনেনা কিংবা, কাকেদের আদৌ নিজস্ব কোনো গন্ধ আছে কিনা, তাও তপোময়ের জানা নেই। তবু গন্ধটা কেন যেন কাকের বলেই মনে হয় ওর। 

গত সপ্তাহে তপোময়ের বউ অণিমা পোয়াতি অবস্থাতে, "ভীষণ মন খারাপ লাগছে !" বলে কয়েকদিনের জন্যে বাপের বাড়ি গেছে।সেই থেকে তপোময়ের যেন আর-কিছুই ভালো লাগছে না । বাড়িতে বিধবা বুড়ি মা। রান্নাঘর আর, ঠাকুরঘর ছাড়া তিনি কোনো সাতেপাঁচেই থাকেন না। পরিবেশটা এতটাই সুনসান যে গ্র্যান্ডফাদার ক্লকের খচখচ শব্দটাও-পর্যন্ত বাড়িময় শিলনোড়ায় মশলা বাঁটা আওয়াজের মতোই শোনা যায় । দুপুরবেলা খাওয়াদাওয়ার পর অণিমাবিহীন বাড়িতে ভীষণই একা-একা লাগছিল তপোময়ের ! অন্যসময় হলে সে ইশকুলেই ব্যস্ত থাকত।কিন্তু এই করোনা-প্রিয়ডে তারও উপায় নেই ! তপোময় অণিমার আলমারিটা খুলে প্রাণভরে ওর শায়া-শাড়ি, ব্লাউজ,পারফিউমের গন্ধ শুঁকতে লাগল। তপোময় ভাবল, অণিমার অবর্তমানে ওর একটা শাড়ি বালিশের পাশে নিয়ে শুলে বোধহয়, এই একাকীত্বভাবটা কেটে যাবে। তপোময় আলমারির থেকে অণিমার একখানা শাড়ি টেনে বের করতেই,সেটার ভেতর থেকে ভাঁজ করা একটা কাগজ ঠুক করে মেঝেতে ছিটকে পড়ল। কাগজটার ভাঁজ খুলতেই তপোময় দেখলো, সেটা আসলে একটা চিঠি। 

ঘরের বাতাসে কাক-গন্ধটা আবারও জমাট বাঁধতে শুরু করল!অণিমার কোনো-এক সুমন্ত  নামের প্রেমিক অণিমাকে ভালোবাসা ভরা চিঠি লিখে ওর পেটের বাচ্চাটার পিতৃত্ব সম্মন্ধে নিশ্চিন্ত হতে চেয়েছে !

তপোময় চিঠিটা হাতের মুঠোয় নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে একেবারে চিলেকোঠায় গিয়ে উঠল। সেখানেও গন্ধটা তীব্র ! তপোময় চিলেকোঠার দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরের অন্ধকার এককোণে বসে অণিমাকে লেখা ওর প্রেমিকের চিঠিটা মুঠোর মধ্যে তালগোল পাকাতে পাকাতে খুব ধীরে ধীরে ডেকে উঠলো, কা ! 

দেবব্রত রায়


Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।