মামার অভিনয় ।। এস এম নওশের



সন্ধ্যায় ফ্রেন্ড সার্কেলে আড্ডাবাজি করে রাতে  বাসায় ফিরতেই মনু মামার সাথে দেখা
হ্যাল্লো আমার প্রিয় ভাগিনা
আছিস কেমন রে?
জ্বি মামা ভাল
এত রাত করে ফিরলি যে ছিল কই?প্রেম টেম করিস নাকি
ছিহ কি যে বলেন মামা।
লজ্জায় আমি লাল
এই শোন আজ রাতে তোর মার অই সব ট্রাডিশনাল রান্না  খেতে হবে না।আজ স্পেশাল খাবার অর্ডার করেছি। একটু পরেই দিয়ে যাবে।ডেলিভারি  বয়ের সাথে কথা হল
রাতে খেতে বসে দেখি বিশাল রাজসিক আয়োজন। বাটার বান শিক কাবাব জালি কাবাব বিরিয়ানি  আস্ত মুরগির র‍্যস্ট রোস্ট রেজালা , খাসির লেগ রোস্ট
আবার চাইনিজ ও আছে চিকেন ফ্রাইড রাইস থাই স্যুপ অংথন চাউমিন
সেই সাথে ডেজার্ট হিসেবে  ফিরনি গোলাপ জামুন  আর আইস্ক্রিম     এর সাথে কোল্ড ড্রিংস তো আছেই
আমার বাবা খুব ই ভোজন রসিক।কিন্তু আমার স্বাস্থ্য সচেতন আম্মুর কারনে তাকে খুব খাদ্য শাসনে থাকতে হয়।
টেবিলে এত আয়োজন দেখে বাবার হাসি একেবারে দু কান ছাড়িয়ে গেল
কি ব্যাপার বড় কুটুম্ব তুমি কি তোমার বিয়ের খাবার এখানেই খাইয়ে দেবে নাকি?
আরে না দুলাভাই কি যে বলেন।
আমাদের এই মামাটি হলেন আমার মা খালা দের এক মাত্র গুনধর ভাই।তাদের সাত বোনের জন্মের পরে এই মামার জন্ম।যাকে বলা যেতে পারে সাত বোন চম্পা।ফলে সবার আদরে আদরে বড় হউয়া এই মামা  হয়ে গেছেন বিচিত্র  খেয়ালি। পয়ত্রিস টা বসন্ত পার করেছেন এখনো এনার পাত্রী পছন্দ হয় না।খাওয়া পরার চিন্তা নেই।সেই ব্যবস্থা আমার নানা জান তার বংশের একমাত্র বাতির জন্য ভালই রেখে গেছেন।
তা এই বিশাল আয়োজন কি উপলক্ষে সেটা কি এবার আমরা জানতে পারি শালা বাবু?
অবশ্যই দুলা ভাই।আমি সিনেমায় চান্স পেয়েছি।আমার বন্ধু ছোট্টুর কথা মনে নেই? সে এখন নাম করা ফিল্ম ডাইরেক্টর।অর রিকোয়েস্টেই আমি রাজী হয়েছি।
( আমার ধারনা মামা এই সিনেমায় পয়সা ঢালছেন তাই তার বন্ধু তাকে রোল দিয়েছে একটা)
ভাল। এটাই দেখা বাকি ছিল।
বিরক্ত হয়ে বললেন মা
তা কি সিনেমা মামা? আমাকে নেবে শ্যুটিং দেখতে? মহা উতসাহে বলল আমার ছোট বোন প্রীতি।
অ ইয়াহ হোয়াই নট।পরশুই ত আমার শ্যুটিং।তোরা যাবি সব।

আরে মনু তুই এসে গেছিস।ভালই হয়েছে একদম টাইম লি এসেছিস।
বলে মামা কে জড়িয়ে ধরলেন তার দোস্ত ছোট্টু।
নামের মতই ছোট খাটো গড়নের।পরনে জিন্সের প্যান্ট আর  লাল কটকটা রঙ এর টি শার্ট।তার উপরে অলিভ কালারের মাল্টি পকেট ভেস্ট। মাথায় একটা লাল ক্যাপ। এনাকে কেন জানি ডাইরেক্টর কম
 জোকার লাগছে বেশি।
 তা বন্ধু তুমি অমন ক্লিন শেভ হয়ে এসেছ কেন?  তোমাকে না শেভ না করে আসতে বলেছি।
এই স্বপন এদিকে আয়
স্বপন নামের  হোদল কুতকুত এক ছোকরা এল।
এই শোন আজ হেরোইনের সাথে খাবার টেবিলের যে সীন টা আছে সেটা উনি করবে।এনাকে সার্ভেন্টের মেকাপ দিয়ে আনো
আর আমাদের ড্রেস মেকার কই।এর জন্যে সার্ভেন্ট কস্টিউম দিতে বল। যাও কুইক।হেরোইনের  আসার টাইম হয়ে গেল

মামা তুমি ঘামছ কেন? নার্ভাস লাগছে?  পানি খাবে? এত হাটা হাটি ই বা করছ কেন?
আরে নাহ।প্রথম দিনেই অত বড়  বিখ্যাত হেরোইন পরীবানুর সাথে আমার সীন হবে বুঝিস ই ত।
বুঝেছি মামার উত্তেজনার পারদ লিমিট ক্রস করেছে
মামা কে  সিন বুঝিয়ে দেয়া হল । মহা বদরাগি হেরোইন তার বাড়ির খাবার টেবিলে খেতে বসেছে।সে কি যেন ভাবছে আর খাবার খুটছে।
মামা পাশ থেকে বলছে আফা মনি আফনে কিছুই লইলেন না।মুরগিটা উট্টু লন।
এগিয়ে দিতে যেয়ে মামার চামচ থেকে একটু ঝোল পড়বে হেরোইনের জামায় আর হেরোইন প্রচন্ড রেগে মামা কে দেবে এক থাপ্পর। হেরোইন জাস্ট  মামার  গালের কাছে হাত টা নেবে আর অমনি ডাইরেক্টর বলবে কাট। ব্যস এ টুকুই।
এর মধ্যে হই হই পুরা শ্যুটিং ইউনিট জুড়ে।
হেরোইন চলে এসেছে।
 বিখ্যাত পরী বানু।
আরে এ তো তেমন ফরসা নয় দেখি যেমন টা একে  সিনেমায় দেখায়।শ্যামলাই বলা যায়।গালে দেখি এখানে ওখানে ব্রনের দাগ।গর্ত ও আছে।
একে ত এত দিন স্ক্রিনে দেখেছি এখন সামনা সামনি দেখছি।এসেই গিয়ে মেকাপ রুমে ঢুকলেন।
এদিকে মামা এক মনে ডায়লগ মখস্থ করে আউড়াচ্ছেন সমানে
এক ঘন্টা পরে মেকাপ নিয়ে বেরুলেন নায়িকা।
আরে বাহ একে ত দেখি চেনাই যায়না
অবশ্য মামা কেও চেনা যাচ্ছেনা
ফর্সা চেহারা কে কালো করে দেয়া হয়েছে।খুচা খুচা দাড়ি লাগিয়ে দেয়া হয়েছে মুখে
চলে তেল লেপ্টে একদম সমান করে দিয়েছে।একটা আধ ময়লা পিরান আর দেয়া হয়েছে কস্টিউম হিসেবে। এটা পরে যখন গলায় গামছা দিয়েছেন একদম পুরাই আমাদের ঘরের  চাকর  সলিমুদ্দির  মত লাগছিল।প্রীতির খুব কস্ট হচ্ছিল মামাকে দেখে হাসি চাপতে।আমি চোখ পাকিয়ে তাকালাম।
এমনেই মামা নার্ভাস তার উপরে আমরা যদি হাসি তাহলে মামা সব ভন্ডুল করে দিবে। যদিও আমার  নিজেরো ভীষন কস্ট হচ্ছিল হাসি চাপতে।
এলো সেই মাহেন্দ্র ক্ষন। নায়িকা বসেছে খাবার টেবিলে।অনেক খাবার সাজানো।শ্যুটিং এর পরে সবাই এই টেবিলেই লাঞ্চ করবে
ডাইরেক্টর জোর গলায় বললেন
লাইটস
স্টার্ট সাউন্ড
রোল ক্যামেরা 
একশন
মামা কাপা কাপা গলায় ডায়লগ  দিলেন।
তারপর যেই না হেরোইন কে বাটি থেকে কিছু দিতে যাবেন অমনি হাত কাপতে কাপতে পুরা বাটি ই ফেলে দিলেন হেরোইনের  উরুর উপরে
ও মাগো চিৎকার করে উঠল হেরোইন।সেই সাথে প্রচন্ড জোরে মারল এক চড় মামা
কে
মামা ছিটকে পড়লেন
এদিকে ডাইরেক্টর কাট কাট কাট
বলে শশব্যস্ত হয়ে  এগিয়ে এলেন কী হয়েছে  কী হয়েছে ম্যাম বলতে বলতে।
কোথেকে এই সব অপদার্থ লোক আনেন আপনারা? পুরা গরম ঝোল আমার উপরে ঢেলে দিয়েছে।জলদি ডাক্তার ডাকুন।
এই ডাক্তার ডেকে আন ডাক্তার ডেকে আন
পুরা ইউনিট হই চই।
আমি এদিকে মামাকে রেস্কিউ করতে গেলাম
মামা তুমি ঠিক আছ?
 দাত মনে হয় একটা পড়ে গেছে রে 

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।