ভয়াবহ সুন্দরী ও একটি রাতের কথা ।। তফিল উদ্দিন মণ্ডল


এ ঘরটায় কেউ কখনো থাকে বলে মনে হল না। যদিও একটি বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বলছে কিন্তু মাকড়সার জাল সে বাল্বের আলোর টুটি চেপে ধরে আছে। তেমন কোন আসবাবপত্র নেই। একটা খাট বিছানো। তার উপর রাজ্যের ধূলিরাশি আরামে ঘুমোচ্ছে। টেবিলের উপর দুটো বই। বই দুটো ধূলির আস্তরনে প্রায় চাপা পড়ে গেছে। তার মানে এ ঘরটি বহুদিন কোন সাফসুতরো করা হয় নি। আমাকে থাকতে দেয়া হল এরকম একটি ঘরে।আর তা হবে না কেন? আমি তো এ বাড়িতে  গেস্টের গেস্ট অর্থাৎ সাবগেস্ট।
   আমার নাকে এক ধরনের  গন্ধ পাচ্ছিলাম। সেটা যে কী রকম গন্ধ তা আন্দাজ করতে চেষ্টা করছিলাম। সব চেষ্টা যেমন সফল হয়না আমার চেষ্টাও সফল হল না।
   এরা আগের দিনের বনেদীলোক। এক সময় যে অত্যন্ত ধনবান ছিলেন তা তাদের ক্ষয়িষ্ণু বর্তমান দেখেই অনুমান করা যায়। বনেদীবাড়িতে বৈঠক ঘর থাকাটাও স্বাভাবিক। এদেরও আছে। তবে বৈঠক ঘরটি কতদিন থেকে যে অব্যবহৃত তা বলা মুশকিল।
   আর দশটি জোতদার পরিবারের মতই এদের আভিজাত্য এরা ধরে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করে চলছে।
    হাতের ব্যাগটা কোথায় রাখব বুঝতে পাচ্ছি না। টেবিলের উপর ধূলোর পলেস্তারা। অথচ আমার ফ্রেস হওয়া জরুরি। একটি জরুরি সরকারি কাজে আমি এসেছি। পথের ক্লান্তিতে শরীর ম্যাজম্যাজ করছে। এখন চাই শুধু একটু বিশ্রাম।
    দুটি মেয়ে ঝাড়ু হাতে ঘরে ঢুকল।আমাকে বলল, আপনি একটু বাইরে দাঁড়ান। আমরা ঘর ঝাড়ু দেব।
    আমি বারান্দায় দাঁড়ালাম। মেয়ে দুটো কোমরে ওড়না প্যাচিয়ে ঘরে ঢুকলো ঝাড়ু হাতে। আমি বারেন্দায় দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনছিলাম। এমন একটি ঘর ঝাড়ু দেয়া যে চৌদ্দ পুরুষের পাপের ফল সেটাই ওরা বলছিল। আমি ভাবছিলাম, আমার বোধ করি তিন চৌদ্দ বিয়াল্লিশ পুরুষের পাপ বিমোচনের জন্য এমন আতিথিয়েতা।
    মেয়ে দুটি বেরিয়ে এলো। কাজের ক্লান্তির চেয়ে বিরক্তির কালো মেঘ তাদের মুখ ছেয়ে আছে। আমার সাথে কোন কথা হল না। আমি ঘরে ঢুকলাম।
    ব্যাগটা টেবিলের উপর রেখেই বিছানায় শরীর ছেড়ে দিলাম। কখন যে দুচোখ জুড়ে ঘুম নেমে এসেছিল বুঝতে পারি নি। হঠাৎ কে যেন ডাকলো। ডাক শুনে ঘুম ভেঙে গেল। একটু বিরক্তির সাথেই বিছানায় উঠে বসলাম। দেখি সেই মেয়ে দুটি আমার জন্য রাতের খাবার নিয়ে এসেছে।  ওদের মধ্যে যে মেয়েটি মিশির মত কালো। ঝকঝকে দাঁত। গাঙচিলের মত জোড় ভুরু  সে বলল, রাত হয়ে গেছে খেয়ে নিন।
    আমি বললাম, তোমাদের বাড়িতে পুরুষ লোকজন কোথায়? কাউকে দেখছি না তো?
    মেয়েটি ওর সাথের জনকে বলল, তুই গিয়ে কাকারে ডেকে নিয়ে আয়।
    আমি মুখহাত ধোয়ে খেতে বসলাম। খেতে খেতে বললাম,  আচ্ছা, এঘরে কেউ থাকে না?
    মেয়েটি বলল, থাকে আবার থাকেও না।
    এ আবার কেমন কথা?
    মানুষ জন থাকে না। তবে শুনছি ভুত পেত্নীরা রাত বিরেতে এখানে এসে থাকে। আমরা অনেক দিন সকাল বেলায়  দেখেছি ঢোরা সাপের মাথা আধা খাওয়া মাছ, উড়চোঙ্গা বারেন্দায় পড়ে আছে। সারারাত ভুত প্রেতরা ওগুলো নিয়ে এসে মচ্ছব করে।
    আমি ভাবলাম মেয়েটি হয়তো আমার সাথে ঠাট্টা করছে কিন্তু একজন অপরিচিত লোকের সাথে ঠাট্টাই বা করতে যাবে কেন?
    ঘরে প্রবেশ করলো মধ্যবয়সী এক দোহারা চেহারার ভদ্রলোক।  আমি খাওয়া অবস্থায় তাঁকে সালাম দিতে পারলাম না। তিনি আমার বিছানায় বসলেন। বললেন, তোমার আসার কথা মোফাজ্জল আমাকে জানিয়েছে। আমি একটা জরুরি কাজে বাইরে গেছিলাম। তা বাবা তোমার  কোন অসুবিধা হচ্ছে না তো?
    আমি বললাম,  না না। কী যে বলেন। অসুবিধা হবে কেন?
    টুকটাক আলাপের মধ্যে দিয়ে আমার খাওয়া শেষ হল। ভদ্রলোক বললো, তুমি তো অনেকটা পথ হেঁটে এসেছ এখন আর কথা বাড়াই না। সকালে কথা হবে ইনশাআল্লাহ।  তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। রাতে কোন প্রয়োজন হলে ডাক দিও। আমার পাতলা ঘুম তুমি ডাকলেই আমাকে পাবে।
    আমি হ্যারিকেনের আলোটা কমিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম। ঘুম আসছিল না। একবার ভাবলাম, ব্যাগ থেকে একটা বই বের করে পড়ি কিন্তু ইচ্ছে তেমন প্রবল হল না। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি তা বলতে পারব না।
    হঠাৎ যেন কার হাতের ছোঁয়া অনুভব করলাম মাথায়। সে হাত মানুষের হাতের মত তেমন নরম নয়। আমার কাছে মনে হচ্ছিল হাতটা একটু শক্ত। মাথায় একটু একটু লাগছিল। আমি ঘুম জড়ানো চোখে বললাম,  কে?
    কোন উত্তর নেই। আবার বললাম,  কে?
    উত্তর এলো, চোখ মেলে চেয়ে দেখ না।
    আমি চোখ খুললাম। হায় আল্লাহ!  এমন সুন্দরী মেয়ে মানুষ আমার এই চর্মচোখে কোনদিন দেখিনি। কাঁচা সোনার মত গায়ের রঙ। মাথাভর্তি  লম্বা চুল। সারা শরীর বেয়ে যৌবন ঝলসে পড়ছে। মেয়েটিকে দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। এতরাতে সে আমার কাছে কেন এসেছে?  ঘরের দরজা বন্ধ। সে এলো কি করে?
    আমি বললাম, তুমি কে? এতরাতে আমার ঘরে কেন এসেছ? আর এলেই বা কী করে? এখন যদি কেউ দেখে ফেলে তাহলে কি হবে ভেবেছ?
    মেয়েটি হাসলো। ওর হাসি দেখে আমার কলিজায় ইসরাফিলের বাঁশি বেজে উঠল। জীবনে এমন সুন্দরী মেয়ের এরূপ বিশ্রী কালো কালো লম্বা দাঁত কখনও দেখি নি। আমি ভয়ে বাকরুদ্ধ প্রায়। মনে মনে ভাবছি ভয় পেলে না কি ভুতপ্রেতরা আরও চেপে ধরে। তাই মনে সাহস সঞ্চয়ের চেষ্টা করছি।
    মেয়েটি তার ফ্যাসফ্যাসে কর্কশ কণ্ঠে বলল, উঠ। আমার সাথে আয়। আমার সাথীরা তোকে দেখার জন্য অপেক্ষা করছে।
    আমি উঠছি না বা উঠতে পাচ্ছি না। আমার হাত পা, সারা শরীর অসার হয়ে আসছে। ভয়, ভীষণ ভয় তার মাঝে কৌতূহলের ক্ষীণ রেখার দূর্বলতম ঝিলিক।
    আমি উঠছি না দেখে মেয়েটি আমার হাত ধরে হ্যাচকা টান দিল। বরফের মত শীতল হাত আর অসুরের মত শক্তি। মনে হল আমার ডান হাতটা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।  আমি টলতে টলতে এবং খানিকটা কাঁপতে কাঁপতে মেয়েটির সাথে চলতে শুরু করলাম। সে আমাকে হিঁচড়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আমি ওর সাথে হেঁটে পাচ্ছি না।
    বাড়ির পেছনে বিশাল দীঘি। দীঘিতে শানবাঁধানো ঘাট। চারদিকে গাছ গাছড়া লতা পাতায় আচ্ছাদিত। এমনিতে অন্ধকার তার মধ্যে এরূপ জঙ্গলাকীর্ণ জায়গায় অন্ধকার আবো বিশ্রী কালো হয়ে দেখা দিচ্ছে।
    মেয়েটি আমাকে সেই দীঘির ধারে জোর করে বসিয়ে দিল। তারপর সে দুর্বোধ্য ভাষায় উচ্চস্বরে আওয়াজ করল। সে এক ভীতিকর আওয়াজ। সেই আওয়াজ শোনে দীঘির জলে প্রলয় নাচন শুরু হল। কিছুক্ষণের মধ্যেই হালকা নীল আলোয় সমস্ত জায়গাটা আলোকিত হয়ে উঠল। আমি দেখলাম ছয় থেকে সাতটি কিম্ভূতকিমাকার দৈত্যরূপী প্রেত দীঘির জল ভেদ করে বেরিয়ে এলো। বিশাল তাদের দেহ কাঠামো। শ্যাওলা জমে শরীর সবুজ হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে ওরা হাটু জলে
দাঁড়িয়ে আছে।
    ওদের মুখে লম্বা লম্বা দাঁত ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না। উদরগুলো মর্জিনার বড় বড়বড় জালার মত। হাতে তিনটি করে বিশাল আকৃতির আঙ্গুল। তাতে নখগুলো কোদালের মত। দুচোখ দিয়ে যেন ঠিকরে
আগুন ঝরছে।
    ওরা একসাথে জলকেলি শুরু করলো। ওদের শব্দে আমার কানে তালা লেগে যাচ্ছে।  পৃথিবীর কোন শব্দই আমার কানে প্রবেশ করতে পাচ্ছে না।
    এই ভয়াবহ দুঃসময়েও আমি এক ধরনের মজা অনুভব করছি। জীবনে এমন দৃশ্য আর দেখি নি।
    দৈত্যের মত পিশাচগুলো কুদন্তী ভয়ানক সুন্দরী মেয়েটিকে কী যেন ঈশারা করল আর সাথে সাথেই মেয়েটি আমাকে পাঁজা কোলা করে খুব জোরে
পিশাচগুলোর দিকে  ছুড়ে মারলো। ওরা দু তিনজনে আমাকে ঘপ করে ধরে ফেললো। আমাকে হাতে পেয়ে ওদের কেলানো বিশ্রী দাঁতের হাসির শব্দে মর্ত্য অন্তরীক্ষ চৌচির হবার উপক্রম।
    আমাকে জলে চুবানো হল। তারপর আমাকে নিয়ে
    শুরু হল জলকেলি।  একজন ছুড়ে মারে আরেক জনের কাছে আরেকজন আবার আরেক জনের কাছে। আমাকে দিয়ে ওরা ওয়াটার পোলো খেলছে।  ভীতি আর এখন কাজ করছে না। এখন আমার শারীরিক যন্ত্রণা বিষমতর হয়ে উঠছে। কেননা মূর্খ পিশাচগুলোর হাতে এমনিতেই তো কোন মাংস নেই তার উপর কেমন গতিতে যে ছুড়ে মারতে হয় সে আন্দাজও নেই। আমার দশা এখন চল্লিশা।
    এভাবে অনেকক্ষণ ওয়াটার পোলো চলল। তারপর আমাকে নিয়ে দীঘির ঘাটে বসলো। আমাকে ঘাটে।শোয়ানো হয়েছে। আমার সংজ্ঞা তখনও লুপ্ত হয় নি। আমি পিটপিট করে চেয়ে দেখছি। মেয়েটি আমার শিয়রে বসা। গজদন্তী হলেও যতক্ষণ না হাসে ততক্ষণ তাকে খুব সুন্দর দেখা যায়। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও তাকে দেখে মনে লাম্পট্যের লিপ্সা জাগে। তবে আমি এদের খপ্পর থেকে মুক্ত হব কী করে তা ভাবতে পাচ্ছি না।
    ঠেলায় না পড়লে বিলাই গাছে উঠে না এ প্রবাদ বাক্য সত্য প্রমাণিত হল। জীবনে ভুলেও ঈশ্বরকে কখনো স্মরণ করি নি কিন্তু  এখন মনে মনে বলছি হে ঈশ্বর!  এই সংকটকালে তুমিই একমাত্র পরিত্রাণের মালিক।
    সদাশয় ঈশ্বর আমার ডাক শুনতে পেলেন। হৈ হৈ রৈ রৈ করে পিশাচগুলো উত্তর দিকে আচমকা দৌড়াতে শুরু করলো। দীঘির ঘাটে রইলাম আমি আর সেই কৃষ্ণ বক্রদন্তী ভয়াবহ সুন্দরী পিশাচিনী।
    মেয়েটি ফ্যাসফ্যাসে গলায় আমাকে বলল, তোর এই অবস্থা কেন হয়েছে জানিস?
    আমি বললাম,  না
    মেয়েটি বললো,  কার্তিক মাসের অমাবস্যারাতে প্রেতযোনি মর্ত্যগামী হয়। আর সে সময় নরজাতির কোন অসদাচরণ প্রেতকুল সহ্য করে না। জানিস তো প্রেতযোনি নরকাগ্নি বিশেষ।
    অগ্নির কথা শোনে এমন বিপদেও আমার বিড়ির নেশা চাগাইয়া উঠলো। বেয়াদব মনকে দমন করে রেখে বললাম,  তো আমি কী অসদাচরণ করেছি।
    মেয়েটি বলল, ওরে হারামির বাচ্চা, এখন বলছিস কী করেছিস? কার্তিক মাসের অমাবস্যার রাতে শেওড়া গাছের ডালে বসে মূত্রত্যাগ করিস নি?
    তখন আমার সে রাতের কথা মনে পড়ল।
    সাজুর সাথে আমার গভীর প্রেম ছিল। আমরা প্রতিরাতে ওদের বাড়ির পেছনে নির্জন ঘন জঙ্গলে অভিসার করতাম। প্রতিরাতের মত সে রাতেও অভিসারে গিয়েছি। সাজুও সময় মত এসে হাজির। আমরা দুজন দুজনকে ধরে কেষ্টলীলায় মত্ত। ঠিক  এমন সময় কয় চোর গেরস্থের তাড়া খেয়ে জঙ্গলে এসে ঢুকছে। ঘটনার আকস্মিকতায় আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ়।  আমি সাজুকে বললাম,  বাড়ি যাও। ওকে পাঠিয়ে দিয়ে আমি অন্ধকারে শেওড়াগাছে উঠে ঘনপাতার আড়ালে গিয়ে বসলাম।
    চোর বেটারা হৈ হল্লা থেমে গেলে কেটে পড়ল।
     বিপদে পড়লে মূত্রতাড়না প্রবল হয়। আমারও হয়েছিল কিন্তু ত্রাসে ত্রস্ত মূত্রাবেগ নালীতে বেগ দিতে বিস্মৃত হয়েছিল। এখন তা চরম মাত্রায় ঠেলতে লাগল। আমিও গাছের ডালে বসে আরামসে মূত্রত্যাগ করতে লাগলাম।
     মেয়েটিকে বললাম,  হ্যা মনে পড়েছে। তো তাতে আমার দোষ কী?
     -- দোষ হল আমরা গাছের নিচে বসে উড়চোঙা খাচ্ছিলাম আর তুই উপরে থেকে কী একটা খারাপ ছড়া কাটতে কাটতে আমাদের উপর মূত্রত্যাগ করছিলি। এখন বলতো, ছড়াটি কী ছিল।
আমি বলতে চাইছিলাম না। সে দাঁত কড়মড় করে বলল, বল বলছি।
আমি বললাম,  বলছি
গাছের ডালে বসিলাম
বসে বসে মুতিলাম
ভুতের মা রে---(বাকিটুকু বলা যাবে না)
যে ভুত ধরবে
পেট ফুলে মরবে।
সুন্দরী অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ল। হাসতে হাসতে বলল, এখন দেখ কে পেট ফুলে মরে।
আমি বিনয়ের সাথে বললাম,  আমি তো তোমাদের দেখি নি। দেখলে এমন অপকর্ম কি কেউ বাপের জন্মে করে? তা আবার তোমার মত সুন্দরীর মাথায়।
শুনেছি তৈলে না কি ঈশ্বরও সিক্ত হয় আর এতো পেত্নী।  রূপের প্রশংসা করতে করতে তাকে  বিশ্ব সুন্দরীর পর্যায়ে নিয়ে গেলাম। বাংলাদেশের মানুষ আমি। তৈলমর্দনে আমাকে পেছনে ফেলবে এমন সাধ্য কার। তবুও রাজনীতিটার ধারে কাছে যাই নি বলে তৈলমর্দনে কাঁচাই রয়ে গেছি।

বুঝতে পারলাম পিশাচিনীর মনটা একটু নরম হয়েছে। আর হবেই না বা কেন?  তৈলমর্দন তো আর কম হয় নি। তাছাড়া আমিও তো সুশ্রী কম নই। একেবারে কার্তিকের মত সুদর্শন। তা দেখে হয় তো পেত্নী মহোদয়ার মনটা নরম হয়ে থাকবে।
সে বলল, আমরা তো অশরীরী।  কাউকে দেখা দিলেই কেবল সে দেখতে পায়। যেমন আজ তুই দেখতে পেলি।
আমি বললাম,  এখন আমাকে নিয়ে কী করবে? আমি খুবই ক্লান্তিবোধ করছি।
ভয়ানক সুন্দরী হাসতে হাসতে বলল, তোকে খেয়ে ফেলব।
আমি বললাম,  তোমার মত সুন্দরী যদি আমাকে খায় সে তো আমার সৌভাগ্য।
সে আবার হাসলো।
হাসতে হাসতে বলল, তোকে যা শাস্তি দেবার তা হয়ে গেছে। এখন তুই চলে যেতে পারিস। খবরদার, আর কখনও গালিগালাজ করে মূত্রত্যাগ করিস না। করবি তো মুণ্ডু থেতলে দেবো।
   আমি উঠার চেষ্টা করলাম কিন্তু উঠতে পারলাম না। আমার শরীর অবশ হয়ে আসছে। পেত্নী রানী যতই অভয় দিক না কেন আমার মন থেকে ভয় কিছুতেই সরছে না।
   আমি যে উঠতে পাচ্ছি না  সেটা সে বুঝতে পেরেছে। আমাকে বলল, আয়, তোকে তোর ঘরে রেখে আসি। বলেই সে আমাকে কোলে তুলে নিল। মুহুর্তেই আমি আমার বিছানায় নিজেকে প্রত্যক্ষ করলাম।
   আশ্চর্য হয়ে দেখছি সে নেই। আমি ডাকছি,  সুন্দরী ও সুন্দরী।
   ভয়াবহ সুন্দরী আমার কথার জবাব দিচ্ছে।  আরে আমি আছি তোর কাছেই। এখন থেকে তুই আর আমাকে দেখতে পাবি না।
   আমি বললাম, তোমার জন্য আমার মনের কোণে এক ধরণের মায়ার মেঘ জমে উঠেছে। এখন থেকে তোমার সুন্দর মুখখানা দেখতে ইচ্ছে করবে। মনে মনে বলছি ইস্ সুন্দরী  না বান্দরী! তুই গেলে বাঁচি। শালী পেত্নী কোথাকার।
   পিশাচিনী বলল, আমিও তোকে ভালবেসে ফেলেছি। এই নে।
   বলার সাথে সাথে একটি তালাচাবি আমার সামনে ঝপ্ করে পড়ে গেল। আমি কিছু বুঝতে পাচ্ছিলাম না।
   সে বলল, যখনই আমাকে কাছে পেতে মন চাইবে তখনই এই চাবিটা দিয়ে তালাটা খুলবি। আমি সাথে সাথে তোর কাছে হাজির হব। ওটা এখনই সামলে রাখ।
   আমি আচ্ছা বলে চোখ বুজলাম।  ঘুমে চোখ ঢুলুঢুলু  করছিল। তন্দ্রার মাঝে টের পেলাম কে যেন আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
   ঘুম থেকে যখন উঠলাম তখন সকাল আটটা বাজে। যে মেয়ে দুটো আমাকে ঘর পরিস্কার করে বিছানা পেতে দিয়েছিল তারা নাশতা নিয়ে এসেছে। ওরা আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। আমি অবশ্য তার কারণ জানি কিন্তু কিছু বলছি না।
   কালো মেয়েটি বলল, রাতে কোন অসুবিধা হয় নি তো? আমি বললাম, অসুবিধা কেন হবে। যে আরামের বিছানা পেতে দিয়েছিলে তাতে ঘুম না হয়ে উপায় আছে? সারারাত কীভাবে কেটে গেছে বুঝতেই পারি নি।
   ওরা বিস্ময় নিয়ে ফিরে গেল। আমিও আমার কাজে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলাম।
   কেবল মনে মনে ভাবছি, একরাতের এই গল্প ভুলেও কাউকে বলা যাবে না। বললে সবাই ভাববে বেটা হয় গাঁজা খেয়েছে নয়তো হেড অফিসে বড় ধরণের গোলমাল আছে।

১০/৮/২০২৩
ময়মনসিংহ। 

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।