বিজয় দিবসের ভাবনা ।। তফিল উদ্দিন মণ্ডল


ভাবছিলাম বিজয় দিবস সম্পর্কে আমার মনের ভাবনা গুলো আঁখরে এঁকে দেবো।কিন্তু লিখতে বসে বুঝলাম,আমি যা লিখি তাতে আমার মনোভাবের প্রতিফলন ঘটে না।কী যেন হাবিজাবি নিজের অজান্তেই লেখা হয়ে যায়।

মনে মনে আমার একটি স্থির প্রতিমূর্তি দাঁড় করলাম।প্রতিমূর্তি কে সমস্যাটা বুঝিয়ে বললাম।প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুতগতিতে জবাব পেলাম।
ওহে!তুমি প্রকৃতিস্থ হলেও অকুতোভয় নও।কেননা,বিজয়ের মূলে রয়েছে যাঁরা অকুতোভয়  তাঁদের ত্যাগ ও আত্মদান।আজ পঞ্চাশ বছর পর অকুতোভয় বীর সৈনিকদের কাঙ্খিত মাতৃভূমির সাথে আজকের বাস্তবচিত্রের যে আকাশ পাতাল ব্যবধান তোমার মনোভাব বিভ্রান্তির সেটাই বড় কারণ।যে দেশে তুমি বাস করছো সে দেশে এখন তুমি কথা বলে যাও বাংলায়। সে কথা অনুদিত হয়ে বেরোয় ইংরেজিতে। তাহলে বুঝো,তুমি মনে ভাবো  ১৯৭০,১৯৭১ আর তোমার লেখায় তা বেরিয়ে আসে ২০২০-২১ হয়ে।কারণ তোমার ৫০ বছর আগে দেখা এখন অনুদিত হয়ে বেরোচ্ছে  তোমার লেখায়, বিজাতীয় ভাষায়।
  আরও সত্য কথা হলো,যাঁদের আত্মত্যাগে বিজয় নিশ্চিত হয়েছিল তাঁদের কাছে বিজয় মানে একটি মানচিত্র কে দখল করা ছিল না।তাঁদের কাছে বিজয়ের মানে ছিল একটি আদর্শ। যে আদর্শ ঔপনিবেশিক, নব্য ঔপনিবেশিক শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট একটি জাতির বুকের উপর থেকে দুঃশাসনের পাথর নামিয়ে ফেলা,অসমতার জঞ্জালকে সরিয়ে সমতার বীজ বুনা এবং জাতীয় সৌভ্রাত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করা।
  বাস্তবতা এখন সম্পূর্ণ  তাঁর বিপরীত। এখন তাঁদের আদর্শ বোলচালের ঘোরটোপে ঘেরা।বছরে একদিন আড়ম্বরের তীব্র স্রোতে তা ভেসে আসে অনুষ্ঠানাদির উপকূলে, সাড়ম্বরে বর্ষিত হয় কুম্ভীরাশ্রু।তারপর সূর্যাস্তের পর জগত যেমন নিমজ্জিত হয় আঁধারের পাষাণতলে বিস্মৃতির অতল তলে তলিয়ে যায় আদর্শ।
  তুমি তোমার মাতৃভূমিতে সমতার চিত্র দেখতে চাও? দেখো সমতার ছবি।একদিকে একদল মানুষের হাতে সম্পদ লুটোপুটি খাচ্ছে, তারা সংখ্যায় যৎসামান্য আর একদল সংখ্যাধিক তারা নিত্যই খাবি খাচ্ছে জীবন যুদ্ধে।এখানে স্বপ্ন ছিল রাষ্ট্র হবে ন্যায়ভিত্তিক।মানুষে মানুষে ভেদাভেদ কমবে,রাজকর্মচারী জনগণের সেবক হবে,শিক্ষা স্বাস্থ্য, বাসস্থান,সহ সকল মৌলিক চাহিদা পূরণ হবে সহজলভ্য, সুবিচার নিশ্চিত হবে।রাজনৈতিক অসূয়া পরম্পরার চির নির্বাসন হবে।মানুষের মানসভূমিতে উপ্ত হবে মানবতার বীজ।কিন্তু তা কি হয়েছে?না,হয়নি।বরং মানুষের চিত্তে কুৎসিত ক্ষুধার লালন প্রবলতর হয়েছে।ন্যায়বিচার প্রলম্বিত বা অধরা হয়েছে।রাষ্ট্রের সেবকেরা অবতীর্ণ হয়েছে মালিকের ভূমিকায়।ক্ষুধার্ত গৃধিনীর মত লুটেপুটে খাচ ্ছে রাষ্ট্রের সম্পদ।অবশ্য নিরুপায় সৎ সেবক যে এর মাঝে নেই তা নয়।তারা সৎ এজন্য যে অসৎ হওয়ার সুযোগ তারা পায় নি।
   তোমার দেশে বিজয়ের আদর্শ ছিল স্বজন তোষণের নিরাময় করা।আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মত পবিত্র উচ্চ স্থানের উপাচার্যকেও নামতে দেখা যাচ্ছে ঊনিশ শতকের হব্যান্নগ্রাহী ভট্টাচার্যের স্তরে।এ হচ্ছে স্বজনতোষণের কিঞ্চিচ্ছটা।
   আমি আমার প্রতিমূর্তি থেকে এবার মুখ ফিরালাম।তার কথাগুলো বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে নির্বাক।মনে মনে শুধু বিজয়ের বেদীমূলে প্রাণ বিসর্জনকারীদের উদ্দেশ্য  বলতে চাইলাম। তোমাদের আদর্শের বুলি আওড়িয়ে তোমাদেরই অপমান করছি প্রতিনিয়ত। 

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।