ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ।
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন্ আসমানী তাগিদ।
জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের এই কালজয়ী গানটি সেই ছোট্ট সময় থেকেই রোজার শেষের দিকে-
রেডিও টেলিভিশনে বাজাতো। কিশোর মন তখন ঈদের আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠতো।
আমার শৈশব-কৈশোরের সোনালী-রুপালি স্মৃতিতে আজও সেই আনন্দঘন দিনগুলির ভেসে উঠে বার বার।
আমার জন্ম মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চান্দহর ইউনিয়নের ছোট্ট একটি গ্রামে।গ্রামের নাম সিরাজ পুর — সেখানেই আমার বেড়ে উঠা। সেই গ্রামীণ পরিবেশেই আমার শৈশব, বাল্য ও কৈশোর। সেই স্মৃতিময় স্বপ্নিল পরিবেশেই আমি আমার বাল্য ও কৈশোর স্কুলজীবন অতিবাহিত করেছি।
সে সময়ের অনেক স্মৃতিই আমাকে এখনো হাতছানি দিয়ে ডাকে। জীবনের গোধূলিলগ্নে এসে আজ মনে পড়ে, বাল্যকালের অনেক ঘটনা, অনেক মধুর স্মৃতি। এই স্মৃতিচারণে কত না পরিচিত মুখ বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠে। মধুর স্মৃতিতে চিরভাস্বর হয়ে আছে আমার শৈশব-বাল্য-কৈশোরকালের রমজানের ঈদ উদযাপন।
“ঈদ মানেই অনাবিল আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি। ঈদ মানেই সকল বেদনা দুঃখ কষ্ট ভুলে এক চিলতে হাসি। ঈদ মানেই যেন আলোর ঝর্ণাধারা, ঈদ মানেই সকলকে একসাথে কাছে পাওয়া।
“ বাংলাদেশ গ্রাম প্রধান দেশ।তার প্রত্যেকটি গ্রাম যেন প্রকৃতির এক অপূর্ব রঙ্গশালা। যেদিকে চোখ যায়-অবারিত সবুজ মাঠ, ফুলেফলে ভরা গাছপালা, তৃন গুল্মশোভিত বন-বনানী ও শ্যামল শস্যেক্ষত- এই অনুপম রূপসুধা পান করে সকলের হৃদয়ে এক অভিনব আনন্দের শিহরন জাগে।
ঈদের আগের রাত (চাঁদ রাত) কতই না মধুময় ছিলো!
পালা করে হাতে মেহেদী লাগানো!
ফুপুরা মেহেদি পাতা পিষে হাতের তালুতে আর নখে লাগিয়ে দিতো। হাতে দীর্ঘক্ষন মেহেদি রাখতে হতো। অনেক সময় মেহেদি হাতে নিয়েই শুয়ে পড়তাম। বিছানার চাদরে, কাপড়ে কিংবা বালিশে হাতের মেহেদি লেপ্টে লালচে রং হয়ে যেতো। আম্মার বকুনি খেতাম। ওইদিন রাতে ঘুম আসতো না।
নানান স্বপ্নে মন আন্দোলিত হতো। খুব ভোরে সজাগ হয়ে দেখতাম মা-চাচী আর আপুরা উঠুন ঝাড়ু দিচ্ছে। বাড়ির দক্ষিণ মিয়া বাড়ির পুকুরে গিয়ে- ছাই হাতে দাত মেজে পুকুর পাড়ে বন্ধুদের সাথে গোসল করতাম মা এসে বকুনি দিয়ে গায় সাবান লাগিয়ে দিতেন।
চোখে সাবানের ফেনা যেতো। কান্না করতাম। এদিকে ঘনিয়ে আসছে ঈদের নামাজের সময়। দাদী, মা/চাচীরা রাতেই পিঠা প্রস্তুত করে রাখতেন। পিঠা খেয়ে নতুন জামা গায়ে হাতে আতর মাখিয়ে নিতাম। শীতল পাটি হাতে করে হাজির হতাম মসজিদের আঙিনায় সিরাজ পুর ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহে।
মসজিদের হুজুরের মুখে আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর ধ্বনি যেন ঈদের দিনের বিশেষ তাৎপর্যের কথাই স্মরণ করিয়ে দিতো। আমরাও সুর মিলাতাম। নামাজ শেষ। এখনো খুতবা শেষ হচ্ছেনা!
দীর্ঘ মুনাজাত। বিরক্তির উদ্রেক হতো। অতঃপর ঈদের নামাজ শেষে বড়দের কুলা কুলি চলাকালিন আমরা বাড়ি ফিরতাম।
সকালে ঈদের সালামি যা উঠতো তা নিয়ে বন্ধুর সাথে সিনেমা দেখতে যাওয়া আরও কত কি।
সেসব না হয় অন্য সময় আাবার লিখবো।
জীবনের গোধূলি লগ্নে এসে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলছি-
আজ সমাজ ভাগ হয়ে গেল।এক সময় আটিপাড়া ইসলাম পুরের একটা অংশ অর্থাৎ তিন গ্রামের সিংহভাগ মানুষ আমাদের সিরাজপুর ঈদগায় নামাজ পড়তো।তারা অনেক আগেই আমাদের সান্নিধ্যে ছেড়েছে।
ছোট থেকে সুখে-দুঃখে যারা একসাথে বেড়ে উঠেছি তাদের দুদিকে নামাজ পড়তে যাওয়া বড়ই পরিতাপের বিষয়। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয় মনে পিড়া দেয় কিন্তু কে বুঝবে অন্তরের কষ্টের আকুলিবিকুলি?
কাকে দোষ দিব?
কেউই ছাড় দিতে রাজীনয়।ইগো মানষকে প্রতিহিংসা পরায়ন করে তুলে।আল্লাহর কাছে প্রার্থনা-
মানুষকে তুমি উদার করো!
বিচ্ছিন্নতা নয় ঐক্যবদ্ধ হতে সাহায্যে কর!
হিংসে বিদ্বেষ নয় মানুষের মধ্যে ভালো বাসার সেতুবন্ধন তৈরি হোক।
ঈদ হোক আনন্দময়! দুঃখ কষ্ট আর খুশি যেন আমরা ভাগকরে নিতে পারি সেই যোগ্যতা আমদের দাও হে প্রভূ।
দেশ ও বিদেশে সকল বন্ধু শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি ঈদের অগ্রীম শুভেচ্ছা। ঈদুল ফিতর সকলের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ ও খুশী।