সমাজ কারে বলে! কোথায় এডা থাকে কে বা জানে।
সমাজের মাঝে আজ ২২ কিংবা ২৩ বছর থাইকাও এর সন্ধান আমি পাই নাই৷ তা পাওয়ার আশাতেও আমি আর নাই৷ তবে কিছুর সন্ধানে যে আমি আছি তা অস্বিকার করার জো আমার নাইকা। আচ্ছা, সমাজ কোনগুলা? এডা একবচন নাকি বহুবচন? এডার সংজ্ঞা কী? এডায় কারা থাকে? তারা কী অভিভাবক? কত্ত প্রশ্ন অসমাপ্ত, ক্ষীণ হইয়াই থাইকা গেলো৷ উত্তর যে একটারও নেই আমার কাছে, তা না৷ কৌতূহলে একবার পাড়ার মস্ত বড় অধ্যাপক চাচ্চুকে জিগ্যেস করছিলাম, ❝চাচা সমাজ কই থাকে, আমি সমাজের কাছে গেলে আমারে সিঙারা দিবে?❞ সে এক গাল হাসি নিয়ে হেসে বলেছিলো,❝ সমাজে তোকে আশ্রয় দিবে রে মা। ❞ছোট্ট আমি আশ্রয় না বুঝলেও সেথায় গেলে ঈশ্বর পামু এমন অলীক কল্পনায় আষ্টে পিষ্টে সে আমিডাকে ভাঙতে বছর ২ এর বেশি সময় লাগলো না।
বয়স বারো কি তের ছুঁই ছুঁই।
বৃষ্টির পানিতে উঠোনে নাইবার সময়ে বাবার গলগলে রক্ত উঠোনে নাইলো৷ সমাজকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে হিংস্র খুনীগুলো ভয়হীন,উচ্ছ্বাস। সেবারের মতো মা বুঝালো সমাজ বড়লোকদের। টিনের চালের ফাঁকে শক্তির আঁধার রোদের উঁকি দেওয়ার সময় হলেও সমাজের সে সময় কুলাবে না। মাকে কদিন পরে মক্ষীরাণীর বেশে বসতে দেখতেও সমাজকে খুঁজছিলাম, সেই আশ্রয় টারে। পাশ থেকে কত্তা হেসে বলে, ❝মাইয়াগো আবার সমাজ কী রে মাগী? মাইয়া হইয়া সমাজ খুঁজোস? কুত্তার মতো ছিঁইড়া খাবার লাইগ্যা উত্ পাইতা থাকে শুয়োরের বাচ্চাগুলা। সমাজ মাইয়াগোর লেইগ্যা না রে আমার কেয়া মা। তুই পালায় কহন যাবি?
বহুত দূরে যাবি, যেইনে সমাজ তোরে ধরতে পারবো না মা। পালায় যা। ওহনই যাবি মাগী। মার আচল ছাইড়া দাঁতে দাঁত লাগাইয়া দৌড় দিবি। যা, যা কইতাসি। ❞ সেই এক দৌড়ে কেয়া মেয়ের অধ্যায় শেষ করে সন্ধানী হয়ে এখনো সমাজরেই খুঁজি আমি। সমাজ মেয়েদের না সেটা আর বুঝতে আমার বাকি নাই। সমাজ নাকি পোলাদের। কিন্তু যে বাড়িতে কাজ পাইলাম সেই বাড়ির ছেলে নাকি সমাজের চাপে পড়াশোনায় ব্যর্থ হয়ে গলায় দড়ি নিলো। দাদাবাবুর জন্য কষ্ট লাগলেও সমাজের কাছে বললাম আমাকেও পড়ান, পড়ার চাপ দেন। আপনারা নাকি পড়ার চাপ দিতাছেন? পড়ার বই দেন, এডা শখের গ্রন্থ দেন।
মুই তহন ক্লাস সেভেন পড়সিলাম। বাপে খুনে মরলো আর পরীক্ষা দিবার পাইলাম না। ওরা হাসলো। পড়া নাকি পোলাদের। গ্রন্থের স্বাদ ভুইলা গেলাম। হাতে শুধু এক ছোট্ট কুকুর ছানা পেলাম। ওরে শখ করে নাম রাখলাম গ্রন্থ। ওর লগে পিরিত আমার বেশ জমলো। খোলা আকাশের নিচে শূন্য মাটিতেই গ্রন্থ আমারে দেহে,আমি গ্রন্থরে দেখি। এতেই আমাগোর সুখ। সেই সুখে ছাই পড়লো। পাড়ার বড়লোকি পোলাপানের খেলাই যেনো রাস্তার অসহায় নির্বাক প্রাণীদের অত্যাচার করা। এই খেলার কবলে আমার গ্রন্থের ৪ ছানা মাইরা গেলো। ওগো কেউ মরলো গরম পানিতে ফোসকায়, কেউ মরলো আগুনে পুইড়া। কেউ আবার ছুরির খোঁচায়। এই নির্বাক প্রাণীদের আর্তনাদ পৃথিবীরে দুলাইলেও আমাগোর সমাজেরে দুলাইতে কী আর পারবে? পারেই না। আমি না মেয়ে না ছেলে না বোবা প্রাণী, কারো বেলাতেই সমাজরে পেলাম না। ভাবলাম সমাজ বুঝি বড়লোকদের। যে বাড়ি থেকে বেতন নিয়া নামতাছি সে বাড়ির মালিক বিশাল বড়লোক। কত্ত টাকা-পয়সা তার। সেও হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় । সমাজের হাজারো কটু কথায়,বিশ্বাসঘাতকতায় অসুস্থ হইয়া যে দাদারে দেখলাম সবার বিপদে থাকতে, তার খারাপ সময়ে সমাজে রে দেখলাম না কুনোদিন। যে মানুষ হারাদিন খুন-খারাবি করলো তার ভালো হয়ে সঠিক হইবার সময়েও দেখলাম না সমাজ। তাইলে সমাজ কী?
সমাজ তুমি শুধু ঘাড়ের খাড়ার উপর খাড়া আঘাত। সেডা শুধু ভুক্তভোগীরে আরো ভুগাইতে বেলায় সন্ধান মেলে। আমার সবুজ উড়না বাতাসে উইড়া গাছের সাথে নাচে। আর ছুডু গ্রন্থ শেষ সময় কাডাইতাসে আমার হাতে। গরম জলের ফোসকায় ওর মাথার উপরের অংশু গাইলা গেছে। ঈশ! কেমন রক্ত মাংসল বাইর হইয়া যাইতাসে। তুই ছানা এহন আমারে রাইখা যাবি, গেলিও গা? কথা হুইনাও গেলি না রে বাপ। গেলিডা কই? হেই কালা আসমানে চকচক চান্দে নাকি তারায়? তুই কী এহন সমাজের কাছে রে ছানা? পাইলি আশ্রয়? কী গো চান্দ, কী গো তারা? তোমগোর কাছে সমাজ আছে? কত করে বেচো গো? হাজারে মিলবো?সত্যি কইরা কইবা হেইনে কী আশ্রয় মিলে!!