আতিক মিসবাহ্ লগ্ন'র গল্প স্বর্ণিলা ।। বর্ণপ্রপাত


গোধূলি লগ্নে রসের অন্বেষণ করতে উঠে পড়লাম পদ্মরাগ এক্সপ্রেসে। যাব নাটোর। বনলতার দেশে। আমি জীবনানন্দ নই যে জীবনের সব আনন্দ সেভাবে লুটে নিব। খর্বকায়,কৃষ্ণাঙ্গ দেহের ভিতরে এ আত্মা কিন্তু প্রাণবন্ত।

দশ পাঁচ ভাবতে ভাবতে যেন উড়ে যাচ্ছি এই লোহার খাঁচায়। আহা!খাঁচা বলছি কেন।আমি তো মুক্ত পাখি।কত আগ্রহই না আমার মনে। দক্ষিণমুখী ট্রেন আর দক্ষিণা হাওয়ায় মিতালি তো অনুভূতিটাকে প্রাণবন্ত করে তুলছে।
ঝকঝকাঝক ট্রেন চলছে..
ট্রেনের বাড়ি কই!!!
আচ্ছা, শামসুর রাহমান কেন এটা লিখলেন? উনি কেন শিশু সাহিত্যিক বনে গেলেন!

হাজারো প্রশ্ন নিজের মস্তিষ্কে কোল্ড ওয়্যার এ মগ্ন তখন চোখ দুটি জমে গেল।হাড়িয়ে গেলাম ঘুমের রাজ্যে।
সন্ধ্যা সাতটা। ঘুম ভাঙ্গল। সান্তাহার স্টেশনে ট্রেনটা দাঁড়িয়ে...
আচ্ছা,আকাশে চাঁদ উঠবে তো? একটু পড়েই তো চলন বিলের মাঝ দিয়ে পানি সাঁতরায় যাবে আমাদের ট্রেন।

অকালকুষ্মাণ্ডটার কোন প্রেয়সী থাকল না যে,মধুচন্দ্রিমা উপভোগ করবে।ইশ! আমি যদি দিঘাপাতিয়ার রাজা হতাম!

ভাবনার শেষ খুঁজে পাওয়ার আগেই....

-ভাইয়া, ক টা বাজে....
মাথাটা ডান দিকে ৯০ ডিগ্রী কোণে ডানে ঘুড়ালাম। অজান্তেই হাতে চিমটি কেটে, না তো বাস্তবেই আছি ....
-জ্বী,মানে আমাকেই বললেন?
-হ্যাঁ!
-পৌনে সাতটা বাজল বোধহয়।
-পৌনে সাঁটা মানে?।।।।।
-জ্বী সাতটা পনেরো।
-হি হি হি...আপনি...হি হি...মা শুনলে পৌনে সাতটা মানে নাকি সাতটা পনেরো। হাসিতে যেন ডুবিয়ে রাখল নিজেকে।
দু গোছা চুল কপাল বেয়ে চোখ অবধি নেমেছে।সোনালী মুখের রূপের ক্ষেতে নীল রঙ্গের টিপ যেন সোনায় সোহাগা ঢেলে দিয়েছে।
ও অবিরত হেসে যাচ্ছিল।
-বাবা,কিছু মনে করো না।ও একটু চঞ্চল। এক আন্টি বলে উঠল।সম্ভবত ওর মা হবে। মা মেয়ের চেহারার অগাধ মিল। ও অনবরত হেসেই চলেছে।
--না আন্টি,আমি কিছুই মনে করি নি।
আসলে আমার পৌনে আর সোয়া'র হিসেবটা চুকতে একটু গোল পেঁকে যায়।
-ওই স্বর্ণিলা থাম!!!থাম এবার।
"স্বর্ণিলা!!"
আহা...চূড়ায় উপর ময়ূর পাখা আসছে ক্যান! একাদশে বৃহস্পতি আসছে বৈ কি। নামটা যেন নিউরনের এনজাইম হয়ে গেল।

ও নীল রঙ্গের একটা জামা পড়ে ছিল।কাকতালীয় ভাবে আমার গায়ে ছিল হলুদ রঙ্গের ফুল হাতা শার্ট। হিমু রুপার মধ্যে কিই বা ফারাক থাকল। বিশ্বাসীলাম হুমায়ূন আহমেদ স্যার আমাকে দেখলে তার হিমুর ভাণ্ডার অনেক বেশি সমৃদ্ধ হত। ব্যাগ থেকে হিমুর রূপালী রাত্রী বইটা বের করে পড়া শুরু করে দিলাম।রূপাবধের মন্ত্র পেলে দোষ কি! পড়তে পড়তে ৭১ পৃষ্ঠায় চলে এলাম, নিজেকে আরও ছন্ন ছাড়াই লাগল।মন্ত্রের ম ও পেলাম না।নাকি ভাগ্যদেবতা মন্ত্রের বদলে রূপা জয় নামের ষড়যন্ত্র করছে!!

ট্রেনে জরুরী চেকিং চলছে। একটু পর
--বাবা,একটু আসবে?
স্বর্ণিলার মায়ের কণ্ঠ। জ্বী আআন্টি...তোতলানো স্বভাব কই থেকে এলো...হার্টবিট টা বেড়ে যাচ্ছিল... 
--বলেন আন্টি ...
স্বর্ণিলা,ট্রেন জার্নিতে অভ্যস্ত নয়।ট্রেনের ক্রোসিং হবে।তুমি একটু ক্যান্টিন থেকে নিয়ে আসবে এই পাগলি টাকে....
আচ্ছা!!!মেঘ না চাইতে বৃষ্টি এলো কোথা থেকে?
--আসেন,.....
--ক্যান্টিন কোন দিকে?
-- চলেন বাইরে খুঁজে দেখি...
--হারাবেন না তো....
--কি মনে হয়?
--সময়টাই তো বলতে পারেন না...হি হি
--মশকারা আমার অপছন্দ
--সরি।জাঁহাপনা
--আমি রাজা নই
--ওকে প্রজা!
-- আচ্ছা,বাঁচাল তো আপনি....
--আপনার কি তাতে?বাঁচাল না হয়ে কি আপনার মতো .... হি হি

না পেরে চুপ করে বসে রইলাম।
ক্যান্টিনে একটা ড্রাই কেক নিল...আর কিছু চকলেট নিল...

--তাড়াতাড়ি সেরে নিন ট্রেন ছেড়ে যাবে...
--আমার হাতে একটা টম ক্যান্ডি দিয়ে বলল,
চকলেট খান। সেটা নিলাম।
নিজেকে সত্যিই মহাপুরুষ মনে হচ্ছিল।আমি হিমুর থেকে তো ক ধাপ এগিয়ে। আমি রূপার সাথে কথা বলবাস সাহস টুকু জমাতে পেরেছি....
ট্রেনে ফিরে হেডফোন টা মাথার উপর দিয়ে কানে গুঁজে, গান গুনছিলাম।ইন্টারব্রেই­কে ক্যারাওকির ফাঁকে একটা সুমধুর কণ্ঠ ঘন্টি বাজালো...

আজি এ লগ্নে কত ফুল ফোটে, কত পাখি গায়........
বুঝলাম সে শুধু সুভাষিণী, সুহাসিনী, সুকেশিনী নয়,সুকন্ঠীও বটে। গানটা বন্ধ করে,আমার রুপার গানই গুনছিলাম।
হঠাৎ গাইতে,শুরু করল জহির রায়হানের হাজার বছর ধরে'র "তুমি সুতোয় বেধেছ শাপলার ফুল নাকি গলার মালা...."
একদম মুগ্ধ,বাকরুদ্ধ করে দিল।সত্যি হৃদয়ের শান্ত সরোবর যেন কল্লোলিত হলো প্রেয়সীর কণ্ঠ প্রতিভায়.....
সত্যি আজ প্রাণ খুলে বলতে ইচ্ছে করছিল, 
প্রিয়তমা,আজ পেয়েছি তোমার ঠিকানা...

গানের সুরে,রোমান্টিকতার আদৌলতে চোখ বাবাজি জিরিয়ে কখন ঘুমের রাজ্যে হারালাম বলতেই পারি না।ঘুম জেগে দেখি ডান পার্শ্বে সিটে এক বৃদ্ধ দাদু....বসে...

হায়!!!স্বর্ণিলা.....­..
থমকে দাঁড়ালাম!!!কোথায় গেল??

কোন স্টেশনে নেমে গেল?
আচ্ছা,ঘুম এতো নিষ্ঠুর ক্যানো?
পঞ্চশর প্রজাপতি কি অহিনকুল?
ক্যানো এমন হলো?
আমি কি স্বপ্ন দেখছিলাম?.......
ক্ষনিকের ভালোবাসা কি আমাকে ধোঁকা দিল....

জানালার পানে চেয়ে চেয় তাঁরা গুনছিলাম।আচ্ছা আকাশের অগণিত তাঁরার মাঝে তো একটাই চাঁদ।তবে অগণিত মেয়ের মাঝ থেকে ক্যানো স্বর্ণিলাকে পাবো না!

সেইইইইই কি তবে আমার নাটরের বনোলতা?

এ,বাবা!!!অনেক লিখে ফেললাম!!
জিরিয়ে নিই.....
খানিকটা... ও একটু দাঁড়ান ..
আজও কিন্তু স্বর্ণিলার স্বর্ণ মুখের দর্শণতৃষ্ণা আমাকে উদ্যোত করে নাটরে যেতে...
তেরোটি বছর গেল...
আজও কি সে আমার আছে?
নাকি তাকে এক গল্পের শব্দে আর ভাবেই রাখব?

আপনার লেখা ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, ইতিহাস-ঐতিহ্য, রম্যরচনা, ভ্রমণ কাহিনী, উপন্যাস, সাহিত্যিকের জীবনী, সাক্ষাৎকার, সাহিত্যের খবর বর্ণপ্রপাতে প্রকাশ করতে চাইলে ইমেইল করুন ju94.bd@gmail.com।


Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।