সকাল সকাল গাটুর বনুস চৌধুরি বাবুর বাড়ি আসি হাজির। চৌধুরি বাবু সবেমাত্র চা’র কাপটা মুখোত দিবে, এমন সমায় গাটুর বনুসোক দেখি টোকটোকি খাইল। নানান-কিচিম প্রশ্ন উৎপাত করির ধরিল চৌধুরি বাবুর মাথাত! গাটুর বনুস তো সহজে কাহরো বাড়ি যায় না, তাহলে সকাল সকাল কি কারণে!
জেলে পাড়ার পশ্চিম কোনাত গাটুর বাড়ি। পূব পাখের থাকির ঘরটা টিনের ছাপড়া, আর পশ্চিম পাখে খ্যারের চালির আন্দন ঘরটা ছাড়া উত্তর-দক্ষিন দুই পাখে ডাংডাং-ফাংফাং। যুদিও দক্ষিন পাখে পাকার খুঁটি গাড়ি হাফওয়াল ঘরের ছক দিসে, কিন্তু ঘিরাঘারা কিছুই করা হয় নাই।
গরিব হবার পারে গাটু, কিন্তু মান-ইজ্জতের খুব পরোয়া করে। নাহলে এতদিনে বাড়িঘর টনটনা হয়া গেইল হয় অসাধু ব্যবসার কারবারে। জেলে পাড়ার অনেকে অসাধু ব্যবসা করে। চোর, ডাকাতি ছাড়াও আরও কত কি! সখে কাহ করে না, তবে প্যাটের দায়ে করিতে বাইধ্য হয়। যেহেতু সাংসারিক অভাব-- ইচ্ছা করিলে গাটুও সেই কাজোত যুক্ত হবার পারিল হয়। কিন্তু গাটুর কথা, “দেহাত যতদিন রক্ত আছে, কর্ম করি যাইম, তাও কুনোদিন কুকর্ম করিম না। সস্তায় আইসে নাই জীবনটা। মানষির উঁচা কথা শুনি, সন্মান নষ্ট করি বাঁচি থাকার চাইতে মরি যাওয়া অনেক ভাল।”
সেইবার মরণ বষ্যন। পদ্মার বুক ফুলি উঠিসে জলে! প্রথম দিনেই জেলে পাড়া ডুবিসে প্রায় এক হাঁটু জলের নিচত! ঘোলা, সোতাল জলের দপদপানিত চিনা যায় না রাস্তা ঘাট। জেলে পাড়ার সগায় ঠাকুরোক মানাচিনা করে ধুপ-ধুনায়। তিন দিনের দিন কমোড় পর্যন্ত জলের তলোত ডুবিল কয়েকটা গ্রাম! সরকারের নজর পড়ে নাই এই অভাগা-অসহায় মানষিগিলার উপর! সোস্যাল মিডিয়ার প্রচলনটা এলাকার মতন হইলে হয়তো মুক্তি লাভের একটা পথ থাকিল হয়। চৌধুরি বাবু গ্রামের পঞ্চায়েত। বিরোধী দলের প্রতিনিধি বুলি অঞ্চলের প্রধান পর্যন্ত আগবারে আইসে নাই সহযোগিতার হাত বাড়ে। আশেপাশে উঁচা জাগা নাই বুলি হরেকৃষ্ণ দাস আর মোতাব্বর আলীর ছাদখান লোকে লোকারণ্য। জেলে পাড়ার কদমতলা হাই স্কুলটা শও শও মানষির প্রাণ বাঁচে রাখিসে একজন কর্তব্যপরায়াণ অভাগী মাওয়ের মতন করি। আর বাকি লোকগিলা যায় যেটে উঁচা জাগা পাইসে, তায় সেটে ঠাঁই নিসে প্রাণ রক্ষার তাগিদায়।
প্রায় সপ্তাহখানেক পর থামিল পদ্মার পাগলামী! অনেকের বাড়ি-ঘর ভাঙি সোলার মতন ভাসিতে ভাসিতে চলি গেইল দূর থাকি দূরান্তর! খালি বাড়ি-ঘর ভাসি গেইলে কুনো কথা ছিল না, বাড়ি-ঘরের সাথে ভাসি গেইসে অনেক তাজা তাজা প্রাণও! প্রায় শ্মশানে পরিনত হইল কয়েটা গ্রাম। দুঃখ-দুর্দশার সীমা রাখিল না রাইক্ষসী পদ্মা! অভাবের কালা দাগটা দেখা দিল সগারে ঘরে ঘরে। ফসল ডুবি নষ্ট হইল বানার জলোত! কাহরো বা জমি ভাঙি পড়িসে পদ্মার বুকোত! গাটুর সাধের নৌকাখানকও গিলি খাইসে রাইক্ষসী পদ্মায়! এমন দুর্দশা ইয়ার আগোত কুনোদিন হয় নাই! সরকারী সহযোগীতা পাওয়া তো দূরের কথা, গন্ধকেনাও পায় নাই কাহ! নয়া করি মাথা চাড়ে উঠির বাদে মেল্লা সমায় দরকার এলা।
পরাজয় স্বীকার করে নাই গাটু। ঋণ-ধার করি আরও নয়া নৌকা গড়াইল। নাম দিল ‘পদ্মারাণী’। বেশ বড়ো মাপের নৌকা-- নাম-ডাকও ভালে আছে।
পরের বার বাইষ্যার শুরুতেই দশ হাজার টাকায় ভাড়া চান্দাইসে ছবিরাম। বৈশাখ থাকি আষাঢ় মাস পর্যন্ত, তারপর গাটুর নৌকা আরও গাটু ফিরি পাবে। কিন্তু দশ হাজার টাকায় তিন মাস দিনাতিপাত করা মানে বাঁচা-মরা সমান কথা। গাটু যুদি নিজে পদ্মারাণীর সাথে থাকে তাহলে হয়তো ঋণ-ধার শোধ করি, আরও কিছুদিন নিশ্চিন্তে কাটেবার পাবে। বাইষ্যার বানাতে যে ক্ষয়-ক্ষতি হইসে, তার বাদে অনেক ঋণে জর্জরিত হয়া আছে বেচারা।
ভগবানের অভিশাপে ছবিরামের নজর নাগিল পদ্মারাণীর উপর। একদিন-দুইদিন না হয়, প্রায় কয়েকদিন নৌকার বাদে ছবিরাম পাক পারিসে গাটুর বাড়ি। কুনো কুনোদিন গাটু বাড়িত থাকে না, অথচ উয়ার খোঁজত আইসে ছবিরাম। গাটুর বনুস আর উয়ার বেটি নিরুপমা বিরক্ত হয়া কয়, “ঘাটের পার গেইলে তো দেখা পান!”
নিরুপমার দেহার বান আছে। কালা কিচকিচা দেহার গরন না হইলে চেংড়া-ছোড়ার চোখুর নিন যে কাড়ি নিল হয়-- তা নিঃসন্দেহে কওয়া যায়। এমনিতেই এই কালা চেহারার বাদে অনেক চেংড়ায় গাটুর বাড়ির আগে-পাছে সারাক্ষণ ঘুরঘুর করে। ছবিরাম নৌকার বাদে না আসিলেও নিরুপমাক দেখির বাদে যে প্রায় ঘুরঘুর করে, তা উয়ার চোখুর নজর দেখিলেই বুঝা যায়। নির্লজ্জ, বেহায়া, কামুক নজরটা নিরুপমার পাখ থাকি সরে না এক মুহুর্ত্বেও। অস্বস্তিবোধ করে নিরুপমা! সমনে কাকা হয় বুলি হুটকরি কিছু কবার সাহসও পায় না!
তালুকদার সাহেব বড়ো ব্যবসায়ী। ভারত-বাংলাদেশের মইধ্যে একটা সেতুবন্ধন গড়ি তুলিসে ব্যবসার মাইধ্যমে। গাটুর নৌকা ভাড়া ন্যায় তালুকদার সাহেব। প্রায় প্রতিদিন মালপত্র পদ্মার এপার-ওপার যাতায়ত করিবে পদ্মারাণীর কোলাত। কথায় কয়, “ম্যাঘ নাই দেখিতে জল!”... এমনে হইল। গাটু স্বপ্নেও কল্পনা করে নাই, এতবড়ো একটা কাজের ভাড় পাবে কুনোদিন। ভাইগ্য এতদিন সহায় ছিল না, কিন্তু এলা ভাইগ্যের চাকা ঘুরি গেইসে উয়ার। মাইয়া-ছাওয়ার আশা-আকাঙ্খা পুরোন হওয়ার দিন আগে আসিসে-- তালুকদার সাহেবের কৃপায়।
প্রথম দিনে নৌকা চালে গাটু উপলব্ধি করিসে, পাল তুলি দিলেও একেলায় তার পক্ষে এত মাল ধরি পদ্মার বুকোত যাতায়ত করা সম্ভব না হয়। অঘন মাসের শ্যাস সমায় জলের ত্যামন পাগাল নাই, অথচ একেলায় নৌকা সামল দেওয়া খুব মুশকিল! তালুকদার সাহেবেরটে, আর একজন হেল্পার চায় গাটু। তালুকদার সাহেবও সায় দ্যায়। ছবিরামকে হেল্পার হিসাবে কাজোত নিবে বুলি ঠিক হয়।
বাইষ্যাত পদ্মারাণীক ভাড়া নিবার পায় নাই বুলি ছবিরাম মনত দুঃখ পুষি আছে। হিংসা করে গাটুর উপুরা। গাটু যেহেতু নিজে কাজের খবর আনিসে, কাজটাও হাতছাড়া করির চায় না ছবিরাম। নিকর্মা হয়া থাকার চাইতে অন্ততপক্ষে কর্মত মন দেওয়া অনেক ভাল।
পরের দিন মাল নিয়া দুইজনে নৌকা চালাইতে কুনো অসুবিধা হইল না। মনানন্দে মইধ্য নদীত গালা ছাড়ি গান করে গাটু--
“চল রে মাঝি চল তুই দূর-দূরন্তরে
কি লাভ হবে দুঃখ পুষি এই অন্তরে
কাজের বেলা হেলা নাই
হাত নোড়ালে ভাত পাই
দুঃখ না হয় দূর মাঝি ঔষধ-মন্তরে
কি লাভ হবে দুঃখ পুষি এই অন্তরে... ”
মাস কয়েক বিতি গেইল। গাটু বাড়ি-ঘর ঘিরিসে তালুকদার সাহেবের কৃপায়। ছবিরামও অনেক টাকা জমাইসে। তাও মনে মনে হিংসা করে গাটুর উপুরা। পদ্মারাণী যুদি উয়ার নিজের হইল হয়, তাহলে সারাবছর আরও বেশী টাকা কামাই করিল হয়-- গাটু য্যামন কামায়।
গাটুর বেতন আরও বাড়াইল তালুকদার সাহেব। একেবারে সোনায় সোহাগা। ভগবান বুলি যুদি কাহ থাকে, তাহলে তালুকদার সাহেব নিশ্চয় ভগবানের থাকি কুনো অংশে কম না হয় বুলি মনে করে গাটু। মনে মনে নয়া পরিকল্পনা করিল-- আপাতত সংসার তো দিব্যি চলেছে। অতিরিক্ত যে মাইনা বাড়াইসে তালুকদার সাহেব, সেই টাকা জমাইলে নিশ্চিন্তে আর একখান নৌকা গড়া যায়-- পদ্মারাণীর থাকিও বড়ো। আর, সেই নৌকার মাঝি হিসাবে থাকিবে ছবিরাম।
আচমকা যে এমন একটা অঘটন ঘটিবে-- সেইটা আর কায় জানে! কুনো একজন বড়ো মাপের নেতা পদ্মার পারোত খুন হইসে বুলি রাস্তা-ঘাট সব বন্ধ। হাটে-ঘাটে, মাঠে-ময়দানে সব জাগাতে পুলিশ চৌকি। আগাদিনে সাঞ্ঝেরক্ষণ গাটু আর ছবিরাম পদ্মার ওই পার গেইসে তালুকদার সাহেবের মাল ধরি। ফিরিতে অনেকটা আতি হবে বুলি বাড়ি ফিরির পারে নাই! নৌকাতে আতি কাটে, পরের দিন আরও মাল নিয়া বাড়ির পাখে ঘাটা ধরিল দুইজনে। ঠিক ঘটের পার পৌঁছাইতে কালে ঘিরি ধরিল একদল পুলিশ! পুলিশের বড়োকর্তা আগে আসি দুইজনেরে মুখের পাখে দেখি পুছিল, “নৌকা কার ?”
ইয়ার আগোত পুলিশের পাল্লাত কুনোদিন পড়ে নাই গাটু। কাজে, উত্তরকেনা দিবার আগোতে বুকের ধুকপুকি উঠি গেইল। গাটুর পাখে হাত দ্যাখেয়া ছবিরাম নির্ভয়ে উত্তর দিল, “গাটু দা’র নৌকা।”
“নৌকাত কি আছে? তাছাড়াও এত লোড কেনে নৌকা?”
ছবিরাম চুপচাপ থাকিলে গাটুও ভয়ে চুপচাপ থাকে।
বড়োকর্তা আরও জোর গালায় পুছে, “কি আছে নৌকাত?”
একে গাটুর অবস্থা খারাপ, তার উপুরা জোর গালায় বড়োকর্তার প্রশ্ন! গাটুর হাত-পাও এমন গটগট করি কাঁপি উঠিল যে, মনে হয় যুনি মাঘ মাসিয়া ঠান্ডাত জলের উপুরা দাঁড়ে আছে বেচারা। একটা ঢোক গিলি থতমত করি উত্তর দিল, “তা তা তালুকদার সাহেবের মালপত্র।”
“কি মাল আছে?”
“মা মা মাল দেখা হয় নাই বাবু।”
“দেখা হয় নাই মানে! মালের স্লিপ দেখাও।”
গাটু এতদিন মাল নিগা-আনা করিসে, কুনোদিন স্লিপের দরকার হয় নাই। তাছাড়া, স্লিপ তো তালুকদার সাহেব নিজে পকেতোট রাখে। আজি হঠাৎ যে স্লিপের দরকার পড়িবে, সেইটা আর কায় জানে! “ছিলিপ! ছিলিপ তো নাই বাবু! তালুকদার সাহেবেরটেই মালের ছিলিপ আছে।”
বড়োকর্তা ক্ষেপি যায়া কইল, “তালুকদার সাহেব! তাড়াতাড়ি স্লিপ ধরি আসির কও এটে।”
তালুকদার সাহেব সচরাচর বাড়িত থাকে না। এই সমায় উয়ার খোঁজত গেইলে যে বেকার যাওয়া হবে-- তা ভালো করি জানে গাটু। ব্যবসায়ি মানষি। কুন সমায় কোটে থাকে, তার কি কুনো হাদিস আছে! গাটু আরও থতমত হয়া কইল, “তা তা তালুকদার সাহেব তো এলা বাড়িত নাই, বাবু!”
বড়োকর্তা গাটুর উপুরা সন্দেহ করা শুরু করিল-- এই বেটা নিশ্চয় অসাধু ব্যবসার সাথে যুক্ত আছে। তা না হলে এত মিছা কথা কবার কুনো মানেই হয় না। “ইয়ার্কি করেছেন মোর সাথে! সাধন বাবু, অ্যারেস্ট হিম।”
সাধন বাবু গাটুক হাতকড়া প্যান্দের বাদে আগে গেইলে ছবিরাম নেটা নাগার মতন করি কয়, “বিতা কয়েক বছর থাকি গাটু দা হামারলার চোখুর আড়ালোত চোর-ডাকাতি করি বেরাছে, বাবু। প্রাণের ভয়ে মুখের উপুরা কাহ কিছু কবার সাহস পায় না! আজি হাতে-নাতে ধরা পড়িসে না। বিশ্বাস যুদি না হয়, আরও কাহকো পুছি দ্যাখো।”
ছবিরামের কথা শুনি গাটু খোং খোং হয়া চায়া নইল! উয়ায় যে এতটা বেইমানি করিবে, গাটু স্বপ্নেও কল্পনা করে নাই কুনোদিন। কথায় কয়, ‘উপর পাখে ছ্যাপ ফেলালে নিজের মুখোত পড়ে’-- সেই মতনে হইল, যেলা বড়োকর্তা পুছিল, “তোমরা কায়?”
ছবিরাম ম্যাও ম্যাও বিলাইর নাখান উত্তর দিল, “মুই ছবিরাম, বাবু। এই তো এটে বাড়ি”। কয়ায় হতের ইশারা দিয়া বাড়ি দ্যাখে দিল।
“তোমরা এই নৌকাত কি করেন?”
বড়োকর্তার কথার পাল্টা জবাব খুব ভদ্রভাবে দিল ছবিরাম, “গাটু দা'র হেল্পারি কাজ, বাবু।”
“আচ্ছা, আচ্ছা!”... বড়োকর্তা আর একবার সাধনোক ড্যাকে কইল, “সাধন বাবু, ইয়াকও ওঠাও গাড়িত। চোরের ঘরোত সাধুর থান!”
গাটু তো ভয়ে চুপচাপ হয়া খোং খোং করি চায়া আছে পুলিশের মুখের পাখে। ছবিরামেরও আর কুনো কথা শুনিল না বড়োকর্তা। দুইজনোকে ধরি চলি গেইল থানা।
পরের দিন ভোরে উঠিয়ায় নিরুপমা আর উয়ার মাও তালুকদার সাহেবের বাড়ি রওনা দ্যায়। শুনা পায়-- তালুকদার সাহেব বাড়িত নাই বিতা কয়েকদিন থাকি। ফিরিবে যে কুনদিন-- তারও হদিস নাই! ব্যর্থ হয়া ফিরি আইসে মাও-বেটি দুইজনে। তারপর সকাল সকাল গাটুর বনুস চৌধুরি বাবুর বাড়িত হাজির।... গোটায় ঘটনাটা শুনি চৌধুরি বাবু দুঃখ প্রকাশ করে। গাটুর মতন একজন সৎ-চরিত্রবান লোকের সাথে এমন দুর্ব্যবহার করাটা ঠিক হয় নাই বড়োকর্তার। চৌধুরি বাবু আশ্বাস দ্যায়-- যে কুনো প্রকারেই হউক থানা থাকি গাটুক জাবিন করি আনিবেই।
গাটুর বনুস বাড়ি ফিরি আইসে।
ঠিক দুপুরা সমায় চৌধুরি বাবু একখান দরখাস্ত ধরি থানাত যায়া হাজির। থানার বড়োকর্তার সাথে চৌধুরি বাবুর পারিবারিক একটা সুসম্পর্ক আছে। বড়োকর্তা নিজে চৌধুরি বাবুক বসির কয়া, চা বিস্কুটের ব্যবস্থা করে। কিছুক্ষণ পর দরখাস্ত জমা নিয়া গাটুক জাবিন দ্যায়। বেচারা ছবিন মাউরিয়া ছাওয়ার মতন জুলজুল করি চায়া থাকে চৌধুরি বাবুর পাখে। গাটু ছাড়া পায়া কয়, “চৌধুরি বাবু, বেচারা ছবিরামও যে নিদূষি-- উয়ার কি জাবিন হবে না?”
যেহেতু এক ব্যপারে সন্দেহবসত দুইজনকে গ্রেফতার করা হইসে-- কাজে বড়োকর্তা নিজে ছবিরামক ছাড়ি দিয়া কয়, “তালুকদার সাহেবোক একবার দেখা করির কন, চৌধুরি বাবু। দরকার আছে।”
চৌধুরি বাবু মাথা নড়ে কয়, “ঠিক আছে।”
থানার বায়রা বিরাইলে দেখা পায় তালুকদার সাহেবও আসি উপস্থিত। প্রথমেই দুঃখ প্রকাশ করে গাটুর আগোত। তারপর চৌধুরি বাবুর কথা মতন তালুকদার সাহেব বড়োকর্তার সাথে দেখা করির যায় থানার ভিতিরা। গাটু, চৌধুরি বাবু আর ছবিরাম একসাথে ফিরি আইসে।
পরের দিন থাকি গাটু আরও তালুকদার সাহেবের কাজোত যোগদান করে। মালের স্লিপও সাথে নিসে নিজে। মুকুন্দর বেটা অয়ন গাটুর হেল্পারি কাজ পাইসে। বেচারা ছবিরাম ঘাটের পার আসি জুলজুল করি চায় অপরাজিত সৈনিক গাটুর পাখে। নিজের ঠ্যাঙোত নিজে কুড়াল চটে কপাল আছেরে মরে বেকার জীবনের পাখে ভবিষ্যৎবাণী করি।
তিন মাস পর গাটু আর একখান নৌকা গড়াইল-- পদ্মারাণীর চাইতে অনেকটায় বড়ো। একাদশীর দিন নৌকার কাজ শ্যাষ হইসে বুলি নাম রাখিল ‘একাদশী’।
তারিখ: ১১.০৬.২০২১