বোধ বিভ্রাট ।। তফিল উদ্দিন মণ্ডল


বলিতে পারো ইদানিং আমার বোধ শক্তি কেন কমিয়া যাইতেছে।আমি সহজ কথা সহজে বুঝিতে পারি না।ক্রমেই জটিল হইয়া যাইতেছি। আমি আলবোলার নল ধরিয়া কল্কিতে আগুন দিতেছি আর সকলে তাম্বাকু সেবন করিয়া যাইতেছে।

আমি আমাকে চিনিবার বহু কোশেশ করিতেছি কিন্তু গতকল্যের আমার সহিত অদ্যকার আমাকে মিলাইতে পারিতেছি না।তাহাতে বহুবিধ বিপদের সম্মুখীন হইতেছি।আমার চারি পার্শ্বের সুহৃদ সজ্জন আমার এই অবোধজগতে অধপাতের হিসাব কষিতেছে কিন্তু কোনই সুরাহা করিতে পারিতেছে না।

  আমি নিজেও বুঝিতে নানাবিধ প্রচেষ্টার ত্রুটি করিতেছি না।বিষয়টি লইয়া যখন অতিশয় অস্থিরতায় দিগভ্রান্ত তখন আমার নিদান কালের বন্ধু  নইমুদ্দিন আসিয়া কহিল,আরে বোকা,ইহা কেন সমস্যাই নহে।আমি হাতে হাতে ফল না পাইয়া তাহার কথায় আশ্বস্ত হইতে পারিলাম না।তাহাকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করিতে বলিলাম।

  নইমুদ্দিন বলিল,তুই বুঝিস না তাহা সত্য নহে।তোর বোধ শক্তি হ্রাস পাইতেছে তাহা নহে।সকলই বুঝিতেছিস।সমস্যা হইতেছে তুই যে বিষয় যে ভাবে বুঝিতেছিস তাহা খাঁটি হইলেও তাহা মুখ ফুটিয়া বলিতে পারিতেছিস না। আর পারিবি কী করিয়া? নীতি নৈতিকতার কষ্টি পাথরে যাচাই করিবার দিন চলিয়া গিয়াছে।

  বলিলাম খুলিয়া বল।সে বলিল,একটি মাত্র উদাহরণ দিলেই তোর বোধ শক্তি ফিরিয়া আসিবে। যেমন ধর,তোর প্রতিবেশি উমেদ আলি বারো বছর আগেও নেশা করিবার জন্য বিড়ি ক্রয় করিবার সামর্থ্য ছিল না।অপরের পরিত্যক্ত বিড়ির অবশিষ্টাংশের জন্য চাতক পাখির ন্যায় চাহিয়া থাকিত।শুধু তাহাই নহে।উহার নেশাকে কেন্দ্র করিয়া লোকমুখে একটি সরস গল্প প্রচলিত আছে।তাহা বলিয়া বিষয়টি খোলাসা করিতেছি।

একদা উমেদ আলি রাস্তার ধারে বসিয়া আছে।এমন সময় দেখিল এক ব্যক্তি বিড়ি টানিতে টানিতে আসিতেছে। উদগীরিত ধূম্রজাল দেখিয়া উমেদ আলির চিত্তচাঞ্চল্য ঘটিল।সে আর স্থির থাকিতে পারিল না।ধুমপায়ী ব্যক্তির দিকে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড় দিল।ধুমপায়ী ব্যক্তি অকস্মাৎ এমত অবস্থা দেখিয়া ভীত ত্রস্তে উল্টাদিকে দৌড়াইতে লাগিল।সে ভাবিতেছিল,উমেদ আলি তাহাকে আক্রমণ করিতে আসিতেছে।

   দৌড়াইতে দৌড়াইতে ক্লান্ত ধুমপায়ী ভূমিতে লুটাইয়া পড়িল।উমেদ আলি তাহার পাশে গিয়া দাঁড়াইল।ধুমপায়ী ব্যক্তি কহিল,ভাই আমি তো আপনার কোন ক্ষতি করি নাই।আপনি আমাকে মারিতে চাহেন কেন? উমেদ আলি হাঁফাইতে হাঁফাইতে কহিল,ভাই আপনাকে মারিব কেন।আমি তো আপনার বিড়ির মুথাটির জন্য দৌড়াইতেছি।ধুমপায়ী ব্যক্তি আশ্বস্ত হইয়া বলিল,সে কথা আগে বলিবেন না।উমেদ আলি বলিল,আপনি বলিবার সুযোগই তো দিলেন না।ভদ্রলোক মনে মনে বলিল,আর সুযোগ!আপনার যে হিংস্র মূর্তি দেখিয়াছি।

যাহা হউক,সেই উমেদ আলি রাজনীতির ব্যবসা করিয়া কয়েক বৎসরের মধ্যেই বহুতল আলিশান উমেদ টাওয়ার তৈরি করিল। কেহই জিজ্ঞাসা করিল না যে তুমি এত টাকা কোথায় পাইলে।

  নইমুদ্দিন বলিল,বন্ধু তুইও বুঝিতে পারিতেছিস, যে উমেদ আলির টাকা এবং বলের উৎস কী।কিন্তু তোর ঘাড়ে কয়টি মাথা আছে যে তাহাকে গিয়া জিজ্ঞাসা করিবি।এই খানেই তুই বোধবুদ্ধি হ্রাস পাইবার সহিত স্বাধীনভাবে বলিতে না পারিবার যন্ত্রণা একত্রে গুলিয়া ফেলিয়াছিস।

ভাবিলাম, নইমুদ্দিন কথাটি মন্দ কহে নাই।আমি তাহার মুখের দিকে তাকাইয়া রহিলাম।সেও মুচকি হাসি হাসিয়া কহিল,কিছুই হয় নাই বন্ধু। কলিকাতা আছে কলিকাতাতেই।

ময়মনসিংহ। 

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।