মে মাসের দ্বিতীয় রোববার পালিত হয় বিশ্ব মা দিবস।ঠিক তেমনি প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার পালিত হয় বিশ্ব বাবা দিবস।
এই বিশেষ দিনে আমরা মা বাবার প্রতি সম্মান জানানো শ্রদ্ধা জানানো কিংবা ভালোবাসা নানান ভাবে প্রকাশ করি ।
দশ মাস দশ দিন মা তার সন্তান কে গর্ভে রাখেন ।একজন মানুষ সর্বোচ্চ ৪৫+ইউনিট ব্যথা সহ্য করতে পারে কিন্তু একজন মা সন্তান জন্ম দেয়ার সময় ৫৭+ ইউনিট ব্যথা সহ্য করে যা নাকি এক সঙ্গে ২০ টি হাড় ভেঙ্গে যাওয়ারে সমান ।
তাহলে একজন মা তার সন্তানের জন্য কতটা মায়া মমতা দরদ নিজের ভেতর লালন করে তা শুধু একজন মা জানেন।
এবার বাবার কথায় আসি মা যেমন তার সন্তানকে নিজের থেকেও বেশী ভালবাসে ঠিক তেমনি বাবাও । বাবা নিজে সারা দিন রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করে ,বাবার পিঠে ফোসকা পড়ে যায়,হাতুরির আঘাতে হাতে ফোসকা পরে,খাবার খাওয়ার সময় হাত টা যেন জ্বলে যায় তবুও বাবা সহ্য করে নেয়,মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করে দিনের পর দিন। সন্তানের ভবিষ্যৎের কথা বিবেচনা করে নিজে প্রাণ পণ চেষ্টা করে। তবুও কখনো সন্তানকে কষ্ট পেতে দেয় না দিতে চায় না। নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে সন্তানের শখ পূরণ করে।
বাবা ছেড়া শার্ট নিয়ে দিব্যি চলে অভিযোগ থাকে না কোন অভিমান থাকে না যখন সন্তানের মুখে হাসি থাকে।
তবে হ্যাঁ বাবা-মাকে ভালোবাসতে মাকে শ্রদ্ধা জানাতে কিংবা মায়ের প্রতি নিজের ভেতর পুষে রাখা ভালোবাসা গুলো বাবা মায়ের কাছে প্রকাশ করতে কি বিশেষ দিন ই যতেষ্ট ?
হ্যাঁ এটা ঠিক যে এই বিশেষ দিনটিগুলো আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় মায়ের ত্যাগের কথা বাবা মায়ের ত্যাগের কথা। তবে এই ত্যাগ শুধু বিশেষ দিনে মনে রাখতে হবে তা নয় বাবা মায়ের ত্যাগ মনে রাখতে হবে প্রতিটা দিন প্রতিটা মহুর্ত।
ছোট বেলায় যখন আমাদের ভাল মন্দ বোঝার বোধ ছিল না তখন মা ছিলেন প্রথম শিক্ষক । তারপর বেড়ে উঠা আর বেড়ে উঠার সময়টাতে মা-বাবা যেন সেরা মটিভেশনাল স্পিকার । আমারা যখন কোন বিষয়ে হতাশ হয়ে পড়ি ভেবে নেই হয়তো আর কাজ টা আমার পক্ষে করা আর সম্ভব না মা-বাবা ঠিক আমাদের বুঝিয়ে দেয় ।যখন পরীক্ষায় খারাপ করি মা বলে এবার খারাপ হয়েছে তাতে কি সামনে ভালো হবে । যখন সন্তান ভেঙে পরে বাবা অনুপ্রেরণার কথা বলে।দিনের পর দিন মা বাবা আমাদের এভাবে অনুপ্রেরণা দেয় আজ আমরা ইউটিউবে মোটিভেট হওয়ার ভিডিও দেখি অথচ আমাদের ঘরে আমাদের মা বাবা কত বড় মোটিভেশনাল স্পিকার তারা আমাদের ফ্রীতেই কত ভাবে মোটিভেট করেন আমরা কখনো ভাবি না কখনো হয়তো কল্পনা করি না।
বিশ্ব বাবা দিবস উপলক্ষে সামাজিক মাধ্যমে কত ছবি ভিডিও আপলোড করা হবে।কত উপায়ে বাবা মায়ের প্রতি ভালেবাসা প্রকাশ করা হবে আমরা চাইবো এই ভালবাসা শুধু নির্দিষ্ট দিন নির্দিষ্ট সময়কে কেন্দ্র করে যেন না হয় এই ভালবাসা প্রতি মহুর্তে জেগে থাকুক।
কিন্তু বিশ্ব বাবা দিবসে একটা প্রশ্ন মনে জাগে
আমরা বাবা-মা যদি এতটাই ভালোবাসি তাহলে বৃদ্ধাশ্রম গুলো কেন তৈরী হয় ?
কখনো কখনো ফ্লাটে বৃদ্ধ মা-বাবার জায়গা হয়না জায়গা হয় বৃদ্ধা শ্রমে । কিন্তু কেন?
বৃদ্ধ বয়সে যখন বাবা মা বাবার ভরণ পোষণের দায়িত্ব একজন সন্তানের নেয়া উচিত তখন তারা সব ভুলে যায় তারা আধুনিক হতে হতে এতটাই আধুনিক হয়ে যায় যে নিজের মা বাবার জন্য বৃদ্ধাশ্রম টাকে উপযুক্ত মনে করে ।
তারা বৃদ্ধ বয়সে বাবা মাকে মনে করে বোঝা । ছোট বেলায় যখন মায়ের হাত ধরে ভাইয়ে ভাইয়ে টানা টানি করতো আমার মা, আমার মা, কিংবা বাবার বেলায় বলতো আমার বাবা, আমার বাবা, তারাই বৃদ্ধ বয়সে মা কে দূরে ঠেলে দেয় ।
মা বাবা কে দূরে ঠেলে দিয়ে তারা বেছে নেয় সুখী পরিবার কিংবা ছোট পরিবার বাহ কত টা আধুনিক আমরা!
আমাদের হাতের পাঁচটা আঙুল যেমন সমান নয় হয়তো সবাই এক নয় অনেকেই আছে যারা বৃদ্ধ মা বাবাকে অনেক ভালোবাসে।
আসুন আমরা সবাই মায়ের প্রতি যত্নশীল হই । বৃদ্ধ মা বাবার প্রতি আমাদের দায়িত্ব কর্তব্য গুলো পালন করি ।যেভাবে ছোট কালে মা বাবা আমাদের আদর যত্ন করে মানুষ করেছে তাদের কে বৃদ্ধ বয়সে;আমরা ঠিক সেভাবে সেবা যত্ন করি ।
বাবা মাকে খুশি করার জন্য নামি;দামি;ব্রান্ডের জিনিস প্রয়োজন হয় না ।
দিন শেষে ঘরে ফিরে কিংবা দূর থেকে ফোন করে
বাবা মা কেমন আছে?
বাবা খেয়েছে কি না ? মা খেয়েছে কি না ?
তারা ওষুধ ঠিক ঠাক খাচ্ছে কি না ?এতটুকু খোঁজ নিলেই তারা সুখী ।
আমরা শুধু নির্দিষ্ট দিনকে কেন্দ্র করে নয় প্রতিটা দিনকে বাবা দিবস মা দিবস ভেবে তাদের ভালবাসি ।
বাবা মায়ের পাশে থাকি'
বাবা মাকে খুশি রাখি ।
উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ ,
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ।