বুদ্ধিবৃত্তির পুরাতন বিন্যাস: ছফা পাঠ।। নাহিদুল ইসলাম

পাকিস্তান আমলে যেসকল সাংবাদিক, শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক- এককথায় বুদ্ধিজীবীবৃন্দ দিনরাত পত্রপত্রিকায়, পাঠ্যকার্যক্রমে এবং সাহিত্যে পাকিস্তানের স্তুতি গেয়ে ছয়লাব করে ফেলতেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে দেখা গেল তারা একই সুরে বাংলাদেশের জয়গান গেয়ে পাকিস্তানী শোষণের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী মহলের উচ্চ আসনগুলো অলংকৃত করে বসেছেন। গিরগিটির মত রঙ পাল্টে ফেলে রাতারাতি আদর্শের ফেরীওয়ালায় রূপান্তরিত হওয়া এসব বুদ্ধিজীবীদের এহেন বিবর্তনের অন্তর্নিহিত অন্তঃসারশুন্যতা ও জাতীয় জীবনে তার প্রকট থাবার ভয়বহতা নিয়ে আহমদ ছফা ১৯৭২ সালে “বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস” নামে একখানা বই লেখেন। 

“বুদ্ধিজীবীরা যা বলতেন, শুনলে বাংলাদেশ স্বাধীন হত না”- এটি ছিল উক্ত বইয়ের প্রথম অনুচ্ছেদের অর্ধাংশ। এমন কি বলতেন বুদ্ধিজীবীরা, যা শুনলে বাংলাদেশ স্বাধীন হত না? আলোচনার শুরুতেই ধুরন্দর (ইনটেলেকচুয়াল) ছফা এই প্রশ্নের উত্তরে বুদ্ধিজীবীরা কি বলতেন তা নয়, বরং কি বলতে ব্যর্থ হয়েছিলেন, সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছেন এভাবে যে, বাংলাদেশ যে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে, এমনকি স্বাধীনতার একবছর আগেও কোন বুদ্ধিজীবীর কোন কথায়, লেখায় বা ভাষ্যে সেই ভবিষ্যতের ছিটেফোঁটাও আভাস পাওয়া যায়নি। 

যুগের হৃৎস্পন্দন অনুধাবন করে বাঙালির নবজাগরণের গভীরতা এবং এর চুড়ান্ত ভবিষ্যৎ গন্তব্যপ্রবাহ কোন বুদ্ধিজীবীই দেখতে পাননি।ছফা বলছেন, “বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরা প্রাক-স্বাধীনতাকালে তাদের সামাজিক দায়িত্ব পালন করেননি”। তারা কি করেছিলেন? তারা- “ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে সকলে আপনাপন গর্ত থেকে শেয়ালের মত বেরিয়ে সমস্বরে জয়ধ্বনি তুলেছেন।”

কেন এমন করেছিলেন তারা? একটি জাতি যখন পুরাতন সমাজের শেকল ছিঁড়ে নতুন সমাজ সৃজনের উন্মত্ততায় ফেটে পড়তে চাইছে, তখন তার মর্মবেগ সবার আগে বুদ্ধিজীবীদের আত্মায় এসে আঘাত করবে, সেটিই স্বাভাবিক।বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেন? প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। হয় তারা মাথা কাটা যাওয়ার ভয় পেতেন, অথবা কিছু বৈষয়িক সম্মান প্রতিপত্তির সামনে মাথা নত করেছিলেন, অথবা তারা ধারণাই করতে পারেননি যে দেশ পাকিস্তানের শাসন ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে যাচ্ছে। শেষের উত্তরটি সঠিক হলে আমাদের কিছু বলার নেই।

কাকে বলে বুদ্ধিজীবী? ধুরন্দর ছফার সংগা-ই নেয়া যাক, তিন মনে করতেন “ক্ষমতার সামনে দাঁড়িয়ে সত্য উচ্চারণ করা” বুদ্ধিজীবীর কাজ। পাকিস্তানী আমলে বাংলার কথিত বুদ্ধিজীবীরা ক্ষমতার সামনে দাঁড়িয়ে কি সত্য উচ্চারণ করেছিলেন তার একটা ফিরিস্তি ছফা এই বইতেই দিয়েছেন।

ভাষা আন্দোলনের কথা দিয়েই শুরু করা যাক। পাকিস্তান সৃষ্টির শুরুতেই এইসব বুদ্ধিজীবীরা চাটুকারিতা, সুবিধাবাদ, ইসলামী রাষ্ট্রব্যঞ্জনা ইত্যাদি আবেষ্টনীতে এমন এক আবহাওয়া সৃষ্টি করেছিলেন যে পশ্চিমারা কোন চিন্তাভাবনা না করেই উর্দূকে রাষ্ট্রভাষা করার দুঃসাহস করেছিল। ছফার মতে, “বিনা কথায় যা পাওয়া উচিৎ, তার জন্য রক্ত দিতে হল।”

১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর জিয়াউদ্দীন আহমদ(বুদ্ধিজীবী) ভারতের হিন্দীর মত উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব দিলে তার বিপরীতে ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ দৈনিক আজাদ পত্রিকায় একটি প্রতিউত্তর লিখে রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নের নানা সমাধানের দিকে আলোকপাত করেন। তবে তার মধ্যে অনেক জটিলতা ও পরস্পরবিরোধীতা ছিল। বদরুদ্দীন উমর তার “পূর্ববাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি” বইতে ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র উক্ত প্রবন্ধ সম্পর্কে লিখেছেন- “এ জটিলতা এবং পরস্পরবিরোধী চিন্তা তার মধ্যেই শুধু ছিল না। সমসাময়িক রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ এবং জনসাধারণের চিন্তার মধ্যেও তা যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যমান ছিল।”

ভাষা আন্দোলনের জোয়ার আসার পর বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতিতে একটি ব্যাপক পরিবর্তন রূপ নিতে শুরু করেছিল। এসময় অনেক তরুণ লেখক, সাহিত্যিকদের স্পর্ধিত আবির্ভাব ঘটেছিল। বাঙালি চেতনার নববিকাশের সাংস্কৃতিক রূপান্তর ঘটে চলছিল সমাজের ভেতর। কিন্তু যুক্তফ্রন্ট সরকারের পতনের পর তার গতি লোপ পায়। ছফা মন্তব্য করছেন যে, সংস্কৃতি ও রাজনীতির মেলবন্ধন না হয়ে তা দুই দিকে ধাবিত হতে থাকে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যে যুগসচেতনতার অগ্রগতি ব্যাহত হয়।অবশেষে জঙ্গীলাট আইয়ুব খান ক্ষমতা দখল করেন।

এসময়কার বুদ্ধিজীবীরা মহামান্য আইয়ুব খানের শাসনের সামনে নিজেদের চিন্তারসংস্কৃতিকে বিকিয়ে দিয়েছিলেন। আইয়ুব খান শিক্ষক, সাংবাদিক ও সাহিত্যিকদের মধ্যে কিছু সুবিধাবাদী মানুষ বাছাই করে তাদের বাড়ি, গাড়ি, মাইনে, ভ্রমণ ইত্যাদির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। যেমন, সাংবাদিকদের জন্য আইয়ুব খান “প্রেস ট্রাস্ট” জন্ম দিয়েছিলেন। যাদের সাংবাদিকতায় মানুষের শ্রদ্ধাবোধ ছিল, যাদের কলমগুলো ছিল ধারালো, তাদেরকে তিনি কিনে নিয়ে নিজের দালালীতে নিযুক্ত করেছিলেন।দেশ স্বাধীন হবার পরেও তাদের সে অভ্যাস জারী ছিল। ছফা বলছেন যে, “তারা আজ কি করে, কিসের বলে স্বাধীন বাংলাদেশের রাতারাতি মস্ত দেশপ্রেমিকে পরিণত হলেন তা ভাববার বিষয়।”

সেসব নিয়ে ভাববার সময় অবশ্য আমাদের নেই। তবে আইয়ুব খানের কেরামতির শেষ ছিল না। তিনি শিক্ষকদেরও ছাড়েননি। ছফার খেদ এখানে একটু বেশিই। প্রাইমারি স্কুলশিক্ষক যারা একবেলা খেতে পায় না, বেসরকারি স্কুলশিক্ষক যার বেতন নেই, সেই যুগে কতিপয় কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ফুলে-ফেঁপে উঠতে লাগলেন। ধুরন্দর ছফা এ কার্যক্রমকে ক্ষয়রোগের সাথে তুলনা করেছেন। 

লেখকরা কেন পিছিয়ে থাকবেন? খান সাহেব লেখকদের নিয়ে বানালেন “লেখক সংঘ”। সাহিত্যের লাইসেন্স দেয়া হত সেখানে। ছফার ভাষায়, “বাহান্ন সালের রক্ত থেকে যাদের জন্ম, সে সকল তরুণেরাও এসে সুযোগ সুবিধার জন্য এই পাকিস্তানবাদী সাম্প্রদায়িক বুদ্ধিজীবীদের সাথে হাত মেলালেন... লেখকরা কি ভাববেন, কি চিন্তা করবেন, কি লিখবেন, কিভাবে লিখবেন জঙ্গীলাট নির্দিষ্ট করে দেবেন... তাদের জন্য আদমজী পুরস্কার, ঘন ঘন বিদেশ যাওয়া ইত্যাদির ব্যবস্থা করলেন।”

উদাহরণ হিসেবে ছফা পয়ষট্টির ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কথা টেনেছেন। সকলেই জানেন, এটি ছিল সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ। পশ্চিমবাঙলার প্রায় আশিজন বুদ্ধিজীবী এই যুদ্ধের প্রতি সমর্থন না দিয়ে কারাবরণ করেছিলেন। অথচ তৎকালীন পুর্ব পাকিস্তানী বুদ্ধিজীবীরা তখন ভারতকে গালি দেয়ায় ব্যস্ত ছিলেন। ধুরন্দর ছফা অবশ্য যুদ্ধের মধ্যে হিন্দু-মুসলিম লেখকদের সৃজনশীল সাহিত্যকে টেনে না এনে সৃষ্টিশীলতাকে এসব থেকে দূরে রাখার কথা লিখে কিছুদিন পালিয়ে বেড়িয়েছিলেন। 

এমনকি নগন্য কিছু ব্যতিক্রম বাদে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরা মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে গিয়ে নিজেদের আখের গোছানোতেই ব্যস্ত ছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন ছফা। এমনকি কয়েকজন লেখক ভারতে বসে ছদ্মনামে লেখালেখি করতেন বলে ভাষ্য দিচ্ছেন তিনি। অবশ্য এর পেছনর যুক্তি দিতে ভোলেননি তিনি। যদিবাংলাদেশ স্বাধীন না হয়তাহলে ছদ্মনামের প্রয়োজনীয়তা আছে বৈকি! দেশ স্বাধীন হবার পরে অবশ্য তারা মুক্তি সংগ্রামী হিসেবে বেশ দাপট দেখিয়েছিলেন, সেটাও ছফা উল্লেখ করতে ভোলেননি। 

এমনকি সপরিবারেবঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পরে এদেশে একজন বুদ্ধিজীবীও প্রতিবাদ করে একটি বাক্যও রচনা করতে পারেননি কেন? ছফার উপরের আলোচনার মধ্যেই তার জবাব অনুধাবন করা যাবে।

একটি নতুন রাষ্ট্রের নির্মাণে লেখক-সাহিত্যিকদের ভূমিকা আদতে কেমন হওয়া উচিৎ? ছফা বলছেন, “কবি, সাহিত্যিক, লেখকেরা গর্ভিণী নারীর মত। তারা জাতির গড়ে ওঠার, বেড়ে ওঠার, বেঁচে থাকার ভ্রূণকণা অন্তর্লোকে ধারণ করে থাকেন। জাতীয় জীবনে যা ঘটে গেছে অতীতে, তারা ভাবের আবেশে সামনের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে বলে ফেলেন- এই-ই হতে যাচ্ছে এবং এই-ই হবে।”

দেশ স্বাধীন হবার পরে বুদ্ধিজীবী হিসেবে লেখকদের ভূমিকা কি ছিল? ছফা বলছেন, “কাগজগুলো খুললেই দেখা যাবে লেখক কবিরা সকলে পরামর্শ করে কলস কলস অশ্রু বিসর্জন করছেন, যেন স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে লম্বা টানে বিলাপ করাটাই সবচেয়ে করণীয় কাজ। বিলাপ একটি জীবন্ত সম্ভাবনাময় জাতির সবচেয়ে বড় শত্রু। কারণ, যে জীবন্ত, তার অতীতের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে খেদ করার খুব একটা বেশি সময় নেই। অতিতের চেয়ে তার কাছে ভবিষ্যৎটাই মূখ্য। আমাদের কবি সাহিত্যিকদের হালফিল প্রকাশিত রচনায় ভবিষ্যতের ইশারাটি কোথায়?”

হাসান আজিজুল হক তার “জীবনের জঙ্গমতাঃ লেখকের দায়” প্রবন্ধে আমাদের লেখকদের রচনা সম্পর্কে সেই খেদোক্তিই করেছেন, “বড় বড় ঘটনা ঘটলেই কি বড় সাহিত্য সৃষ্টি হয়? বোধ হয়, তা নয়। অন্তত আমাদের অভিজ্ঞতা উল্টো কথাই বলছে। মুক্তিযুদ্ধের পরেই বাংলাদেশের সাহিত্যে হৈ-হৈ কলরব প্রচুর শুনতে পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু সেসব এখন থেমে গেছে।”

এসকল ঐতিহাসিক ব্যাপার-স্যাপারের দিকে তাকালে একটি সন্দেহ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। মনে হতে পারে যে শাসক-শোষকদের সীমাহীন শোষনযন্ত্রের বিষদাঁতকে আরও ধারালো করে তুলে সেই ব্যবস্থাকে দীর্ঘায়িত করে তুলতেই বুঝি বুদ্ধিজীবী শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। সমাজের গণমানুষের ভাবাবেগ সর্বাগ্রে বুদ্ধিজীবীদের মর্মে এসে লাগে, মানুষের দীর্ঘশ্বাসের হাওয়া যার গায়ে লাগে না, তাকে আর যা-ই হোক, বুদ্ধিজীবী বলা চলে না। 

সেটা চলুক বা না চলুক, তাতে বাস্তবতার কোন পরিবর্তন হয় না। বুদ্ধিজীবীদের নির্লিপ্ততা দুভাবে সমাজমানসের অগ্রগতিকে রোধ করে রাখতে ভূমিকা রাখে। একদিকে তারা যেমন শাসকের সকল শোষণকার্যের প্রকৃত চেহারাকে আড়াল করার কাজে সহায়তা করে, অন্যদিকে জনমানুষের চেতনাকে প্রাগ্রসর করে তুলে সমাজকাঠমোর সঠিক নির্মাণে এগিয়ে যাবার পথকে ধোয়াশাচ্ছন্ন করে রেখে শোষণযন্ত্রকেই দীর্ঘায়িত করার পথ সুগম করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে মুক্তিযুদ্ধের উপর রচিত উৎকৃষ্ট সাহিত্যের সংখ্যার দিকে তাকালেই বোঝা যায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুদ্ধিজীবীদের মানসে কোন আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রচিত সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বরূপ ও তার আলোকে বাংলাদেশের সমাজকাঠামো নির্মাণের কোন পথ নির্দেশিত হয়নি।

বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর এখানকার বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশের সমাজকাঠামোর বৈপ্লবিক পরিবর্তনে কোন ভূমিকা রাখতে পারেননি। তাদের চিন্তাচেতনার বৈকল্য এবং দাস মনোভাবই এর কারণ। ব্যাপকভাবে সমাজের ভেতরকার আবেগকে নাড়া দিয়ে নিজেদের সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক চেতনাকে জনজীবনের গভীরে প্রবাহিত করে দিয়ে পথচলাকে সঠিক দিকে নিয়ে যেতে তারা কোনরকম প্রভাব রাখতেই ব্যর্থ হয়েছেন। ছফার মতে এতে করে, “নতুন চিন্তা, নতুন কল্পনা এবং বুদ্ধিবৃত্তির নতুন প্রকরণেরও বিরোধীতা” করে গিয়েছেন তারা। 

এসবের ফল খুব স্পষ্ট। বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবিদের চিৎকারকে ধর্তব্যের মধ্যেই নেয়া হয় কিনা তা বুদ্ধিজীবীবৃন্দই বলতে পারবেন।সমাজের গভীরে ওৎ পেতে থাকা অসঙ্গতিকে উপড়ে ফেলার জন্য জনমানস এবং নীতিনির্ধারকদের উপর কোন চাপ তারা তৈরী করতে সম্পূর্ণ অপারগ। ছফা সে কথাই বলছেন, “বাংলাদেশের আজকের দিনে লেখকেরা কবিরা সামাজিক দিক দিয়ে সম্মানহীন জীব।... সমাজে লেখকদের কোন ইমেজ নেই বললেই চলে।”

বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস বইটি লিখে ছফা অনেকের রোষানলে পড়েছিলেন। বলাবাহুল্য, সেই অনেকের মধ্যে বুদ্ধিজীবীশ্রেণীভুক্ত মানুষজন-ই মুখ্য ছিলেন। ১৯৯৭ সালে বইটি পুণরায় প্রকাশের সময় নতুন ভূমিকায় ছফা লিখেছেন,  “মাঝে মাঝে এমন চিন্তাও আমার মনে আসে, লেখাটি যদি না লিখতাম, হয়ত আমার জীবন অন্যরকম হতে পারত... অদ্যাবধি আমি জীবনে স্বস্তি কি বস্তু তার সন্ধান পাইনি।” 

আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশে তার মত একজন ছফা জন্মেছিলেন বলেই হয়ত আগামীর বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় বুদ্ধিবৃত্তি চর্চার ক্ষেত্রে নতুন নতুন চিন্তাদিগন্তের পথ প্রসারিত হবে। বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস বইয়ের প্রথম অনুচ্ছেদটি এখানে উল্লেখ করেই শেষ করা শ্রেয়- “বুদ্ধিজীবীরা যা বলতেন, শুনলে বাংলাদেশ স্বাধীন হত না। এখন যা বলছেন, শুনলে বাংলাদেশের সমাজ কাঠামোর আমুল পরিবর্তন হবে না।”


দোহাইঃ

১। আহমদ ছফাঃ বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস; (আহমদ ছফা রচনাবলি; ৬ষ্ঠ খন্ড; খান ব্রাদার্স এন্ড কোম্পানি; প্রথম প্রকাশ ১৯৭২)

২। আহমদ ছফা সাক্ষাতকারঃ বাংলার গত তিন হাজার বছরে ইতিহাসে তার (শেখ মুজিব) তুলনা নেই; (আহমদ ছফা রচনাবলি, উত্তরখন্ড; খান ব্রাদার্স এন্ড কোম্পানি; প্রথম প্রকাশ ১৯৯১)

৩। বদরুদ্দীন উমরঃ পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি; (সুবর্ণ প্রকাশ, ফেব্রুয়ারি ২০১২; প্রথম প্রকাশ ১৯৭০)

৪। হাসান আজিজুল হকঃ নির্বাচিত প্রবন্ধ; (অনন্যা; ফেব্রুয়ারি ২০০৮)


নাহিদুল ইসলাম

শিক্ষক,জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ।


সূচিতে ফিরুন


Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।