অদৃশ্য ভালবাসা ।। মাহিন মাহমুদ


জুম্মার নামায শেষে দুপুরের খাবারের পর নীলভ্র শুয়ে পড়ল | তারপর ফোনটা হাতে নিয়েই ডাটা অন করল | আসলে এটা নীলভ্রর প্রতিদিনের রুটিন | মেস লাইফ মানেই একটা রুটিনের মধ্যে থাকা | যারা মেসে থাকে তারা ভালই জানে | প্রতিদিনের মতই ফেসবুকে ম্যাসেজ ও নটিফিকেশনস দেখার পর নিউজ ফিডে প্রথমেই দেখতে পেল একটা স্ট্যাটাস | জরুরি বিজ্ঞপ্তি - ও পজেটিভ রক্তের প্রয়োজন | স্থান - রংপুর মেডিকেল কলেজ | বেড- ২০৩ | একটি নাম্বারও  দেওয়া আছে সেখানে | নীলভ্রর রক্তের গ্রুপ ও পজেটিভ | তিন ঘন্টা আগের স্ট্যাটাস তাই ভাবল হয়তো রক্ত ম্যানেজ হয়ে গেছে | তবুও নীলভ্র সিউর হওয়ার জন্য একবার ফোন দিল | ওপাশ থেকে একটি মেয়ের কন্ঠ ভেসে আসল | নীলভ্র বলল আমি আপনার স্ট্যাটাস থেকে নাম্বারটা পেলাম | মেয়েটি কান্না জড়িত কন্ঠে বলল 'আসলে আমার ওই রক্তটা খুবই প্রয়োজন।' নীলভ্র বুঝতে পারল যে এখনও রক্ত ম্যানেজ হয়নি। মেয়েটির কথা শুনে নীলভ্র থাকতে পারল না | নীলভ্র বলল আমি রক্ত দিতে চাই |  বলে রাখা ভাল নীলভ্র নিজেই একটি রক্ত সংগঠন এর সাথে কাজ করছে অনেক দিন থেকে | তাই ফোনটা কেটে দিয়ে নীলভ্র বেরিয়ে পড়ল। মেস থেকে বেড়িয়ে দেখল পুরা রাস্তা ফাঁকা | শুক্রবার সাধারনত গাড়ি একটু কমই পাওয়া যায় | তাই ৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর একটি সি এন জি পেল | কিন্তু সিএনজিতে উঠতেই ঘটল বিপত্তি | কোথা থেকে যেন একটা মেয়ে দৌড়ে এসে বলল, 'ভাইয়া,আমাকে জরুরি এক জায়গায় যেতে হবে | তাই আমি সিএনজি'টা নিচ্ছি |' নীলভ্র রীতিমত ভদ্রতায় বলল, 'আপু আমার ব্যাপারটা আরও জরুরি । আমাকে এখনই যেতে হবে না হলে অনেক বিপদ হয়ে যাবে। ' কিন্তু কেউ ছাড়তে রাজি হচ্ছে না । নীলভ্র বলল তাহলে চলেন একসাথে যাওয়া যাক | কিন্তু মেয়ে মানুষ একটু ভাব বেশি | সে নাকি এক সাথে যাবে না |নীলভ্র এবার এক প্রকার জেদ করেই বলল,"আমি গাড়ি থামিয়াছি তাই আমাকেই যেতে হবে।" তারপর সে সিএনজি নিয়ে মেয়েটিকে ফেলে চলে গেল। মেয়েটাও একটু ক্ষোভ প্রকাশ করে বিড় বিড় করে বেশ কিছু যেন বলল। নীলভ্র সে সব কানে তোলেনি। তারপর আরও ৩০ মিনিট পর একটা রিক্সা পেয়ে মেয়েটিও রওনা দিল | মেয়েটি যতক্ষণে হাসপাতালে পৌঁছাল ততক্ষণে রক্ত দেয়া হয়ে গেছে নীলভ্রর | মেয়েটি হাসপাতালে গিয়েই ওর বাবা মা কে বলল," আমি তো রক্ত পেলাম না | কি হবে ফুফুর? আসলে মেয়েটির ফুফুর অপারেশন হয়েছে তাই রক্তের প্রয়োজন | ওর বাবা বলল,"মা তুই টেনশন করিস না | রক্ত ম্যানেজ হয়েছে | একটা ছেলে এসে রক্ত দিয়েছে।"  মেয়েটি শুনে খুশি হল | তারপর বলল, "বাবা,ছেলেটি কোথায়? বাবা বলল পাশের রুমে বিশ্রাম নিচ্ছে। এবার মেয়েটি দৌড়ে গেল পাশের রুমে | এরপর যা দেখল তা কখনও ভাবেনি মেয়েটা | আরে এই তো সেই ছেলে যাকে সে অনেক কথা শুনিয়েছে। নীলভ্রও একটু চমকে উঠল মেয়েটা কে দেখে । এবার মেয়েটা একটু লজ্জাবোধ করল। যে ছেলে তার ফুফুর জন্যই রক্ত দিল তাকে সে ভুল বুঝেছিল | তার সাথে খারাপ আচরণ করেছিল |  মেয়েটার নিজেকে ছোট মনে হচ্ছে | কি বলবে বুঝতে পারছে না | তারপর বলল," স্যরি ভাইয়া আমি আসলে বুঝতে পারিনি।" এবার নীলভ্র ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল ইটস ওকে | আমার ব্যবহারের জন্য আমিও দুঃখিত। তারপর মেয়েটি নিজে থেকেই বলল আমি নীলাদ্রি | সে বলল আমি নীলভ্র | অনেক কথা হল দুজনের | নীলাদ্রির খুবই ভাল লাগল নীলভ্রকে | হয়তো একটু ভালবেসেও ফেলেছিল | তারপর নীলভ্র চলে গেল তার চিরচেনা গন্তব্যে | নীলাদ্রির এই প্রথম কারও জন্য খারাপ লাগছিল | নীলাদ্রি ভাবছে এভাবেই বুঝি ভালবাসা সৃষ্টি হয় | কিন্তু তার এই অদৃশ্য ভালবাসার কোনো ভবিষ্যত নেই ।  হয়তো কখনও বলা হবে না ভালবাসি তোমায় | অন্য কোন নীলভ্র এসে হয়তো নীলাদ্রিকে ভালবাসবে | কিন্তু আজকের এই নীলভ্রর জন্য ভালবাসাটা না বলাই থেকে যাবে |

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।