আদমজী ও দাউদ পুরস্কার ।। মাস্টার দা

 


কী-কেন-কোথায়, কে-কাকে-কারা-কখন__জাতীয় প্রশ্নগুলো সেই নামেমাত্র লুঙ্গি পরে গরু চরানোর সময় থেকেই সপ্তাহ তিনেকের বাছুরের মতো তাড়িয়ে নিয়ে বেড়িয়েছে। কিছু প্রশ্ন তার উৎপত্তির গোয়ালে গিয়ে দাঁড়াতে পারলেও যেগুলো পারে নি সেগুলো এখনো বুনো ষাঁড় হয়ে এ মাঠ ও মাঠ করে বেড়াচ্ছে।

আদমজী পুরস্কার আর দাউদ পুরস্কার তেমনি দুটো গোয়াল ছাড়া বেয়াড়া প্রশ্ন! আগেও অনেক খুঁজেছি পড়ার সময়। পাইনি...। তাই আজ যখন আবার সেই পুরনো প্রশ্নের পর্ব খুলে গেল তখন আর যেন-তেন ভাবে ছেড়ে দিতে মন সায় দিল না। তারপর মাঠ-ঘাট ঘুটে যেখানে যতটুকু যা পেলাম, তার সার অনেকটা এরকম__

তৎকালীন পাকিস্তানে সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে জাতীয় আদর্শ সমন্বিতকরণ ও বিকাশের লক্ষ্যে গঠিত হয় "পাকিস্তান লেখক সংঘ (Pakistan Writers’ Guild)" নামে পুব ও পশ্চিমের পাকিস্তানের প্রধান প্রধান লেখকদের একটা সংগঠন। সেটা ১৯৫৯ সালের জানুয়ারির শেষদিনের কথা।

বাংলা ও উর্দুর সমান ১১ জন করে (পাঞ্জাবি, পশতু এবং সিন্ধির ১ জন করে) প্রতিনিধি নিয়ে মোট ২৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি ছিল সেই সংঘের। ইব্রাহিম খাঁ, গোলাম মোস্তফা, জসীমউদ্দীন, আবদুল কাদির, আবুল হোসেন, মুহম্মদ আবদুল হাই ও সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, মুনীর চৌধুরীর মতো লেখকরা ছিলেন সেই কমিটির সভ‍্য।

তো.. সেই লেখক সংঘ থেকে কয়েকটি পুরস্কার চালু করা হয়। দাউদ পুরস্কার (১৯৬৩), ন্যাশনাল ব্যাংক পুরস্কার (১৯৬৮), President’s Award for Pride and Performances এমনি কিছু "চেনা মুখের মতো" পুরস্কার।

যার মধ‍্যে একটি ছিল, পাকিস্তানের লেখকদের শ্রেষ্ঠ কর্মের মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে, সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন‍্য। নাম "আদমজী সাহিত্য পুরস্কার।" লেখক সংঘ প্রবর্তিত প্রথম পদক-পুরস্কার ছিল সেটা।

পাকিস্তানের ডন পত্রিকার আর্কাইভস বলছে__ পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জনাব আইয়ুব খান ১৯৫৯-৬০ সালের বিজয়ীদের জন্য তার সরকারি বাসভবনে জমকালো এক অনুষ্ঠান করে বিজয়ীদের হাতে প্রথমবারের মতো আদমজী পুরস্কারের পদক ও নগদ অর্থ তুলে দেন ১৯৬০ সালে। পুরস্কারের অর্থ ছিল সে সময়কার ৫০০ রূপি!

প্রথমবার পুরস্কার পেয়েছিলেন বাংলা ও উর্দু ভাষার ২ করে মোট ৪ জন সাহিত‍্যিক। উর্দু ভাষায়... ছোট গল্পকার গোলাম আব্বাস (যার ছোট গল্প "মান্দি" নিয়ে শাবানা আজমী অভিনিত বলিউডি মুভি আছে) আর "God's Own Land" ও "Jangloos" উপন‍্যাসের লেখক শাওকত সিদ্দিকী।
আর বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন‍্য সৈয়দ আব্দুল সাত্তার ও রোশান ইয়াজদিনি মনোনীত হয়েছিলেন (উনাদের সম্পর্কে তথ‍্য নাই আর)।

যাইহোক, তখনকার পাকিস্তানের বিখ‍্যাত শিল্পপতি ও শিক্ষা সংস্কৃতির অকৃত্রিম পৃষ্ঠপোষক "স‍্যার আদমজী হাজী দাউদ বাওয়ানী"র নামে সাহিত‍্যকদের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে এ পুরস্কারের প্রথা প্রবর্তিত হয়। মূলত 'আদমজী পরিবারের আর্থিক সহায়তা'য় এমনি কিছু উৎসাহ ব‍্যঞ্জক পুরস্কারের প্রচলন হয়েছিল সেই সময়। যা প্রথমবারের মতো পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে লেখক সংঘের প্রথম সাধারণ সম্পাদক কুদরতুল্লাহ শাহাবের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠে।

ডনের উদ্ধৃতিটি এমন, “The Pakistan Writers’ Guild is grateful to the House of Adamjee for being the pioneers in providing this incentive to literary activity in our country. We hope that other people of wealth will also see something good in this example to follow.”
(দেশের সাহিত্যকর্মে উৎসাহ দানে পথিকৃতের ভূমিকায় অবতীর্ণ আদমজী পরিবারের প্রতি পাকিস্তানের লেখক সংঘ জ্ঞাপন করছে গভীর কৃতজ্ঞতা। সেই সাথে সাথে এই আশাবাদও ব‍্যক্ত করছে যে, দেশে আরো যারা এমনি সামর্থ্যবান আছেন তারাও সবার সামনে এমনি করে অনুকরণীয় আরো নিদর্শন স্থাপন করবেন।"

পাকিস্তানের ব‍্যাংকিং সেক্টরেও ১৮৮০ সালে গুজরাটে জন্ম নেয়া স‍্যার আদমজী হাজী দাউদের অতুল অবদান ছিল। মি. জিন্নাহর ঘনিষ্ঠ ও পাকিস্তানের একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন এই ব্রিটিশ নাইট পাওয়া ব‍্যবসায়ী। তাই তো আর্থিক খাতের দেউলিয়া ঠেকাতে মি. জিন্নাহর SOS পেয়ে বার্মার ব‍্যবসা ছেড়ে পাকিস্তানে চলে আসতে দ্বিধা করেননি। পাকিস্তানের স্টেইট ব‍্যাংক, কলকাতা জুট মিলসহ, নিজ খরচে M.A. Ispahani, The Muslim Commercial Bank Ltd. and the Orient Airways Ltd. প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

এবার আসা যাক দ্বিতীয় পুরস্কার সম্পর্কে। দাউদ পুরস্কার সম্পর্কে তেমন কোন তথ‍্য আমার কাছে নেই। গরু খোঁজা কম করিনি, কিন্তু এ বিষয়ে লেখা নেই বললেই চলে। যদিও লেখক সংঘ কর্তৃক প্রচলিত পুরস্কারগুলো আদমজী পরিবারের আর্থিক সহায়তায় দেওয়া হতো। আর "স‍্যার আদমজী হাজী দাউদ বাওয়ানী"র নামের 'দাউদ' শব্দ থেকে অনুমান... উনার নামেই ১৯৬৩ সালে লেখক সংঘ প্রবর্তন করে 'দাউদ পুরস্কার।'


সূচিতে ফিরতে ক্লিক করুন

2 Comments

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

  1. আপনার মূল বক্তব্য কি বোঝা গেলো না !!

    ReplyDelete
  2. বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও আজীবন সদস্য জগলুল হায়দর আফরিক রচিত অনন্য ভ্রমণ কাহিনী "সিন্ধু নীলাব দেশে" ১৯৬৩ সালের আদমজী দাউদ সাহিত্য পুরষ্কার লাভ করে।

    ReplyDelete
Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।