অতঃপর আমি ।। আতিক মেসবাহ্ লগ্ন



পকেট থেকে দশ টাকা বের করে রিক্সাওয়ালাকে দিয়ে সোজা দৌড় দিলাম। 
আগস্টের শেষ সপ্তাহ। মাস খানেক হলো, বর্ষা বিদায় নিয়েছে। তবুও আকাশ কাঁদছে। প্রচুর বৃষ্টি পড়ছে।
ছাতা আনতে ভুলে গেছি। আমার আবার টনসিলের সমস্যা। মাথায় পানি পড়লেই গলা ব্যাথা।

বইয়ের দোকানে যাবো। প্রেসক্লাব ভবনের নিচতলায় অনেকগুলো বইয়ের দোকান। ছোট বোনের ভর্তি পরীক্ষার জন্য সাধারণ জ্ঞ্যানের বই কিনব। নিজের জন্য চাই জব সল্যুশনস।

লাইব্রেরীর সামনে গিয়ে পকেট থেকে রুমাল বের করে মাথার পানি মুছেই, প্রকাশ দাদাকে বলতেই বই খোঁজা শুরু করলেন।
-দাদা,সব বই কি আছে?
-দুটো বই গোডাউন থেকে আনাতে হবে। আপনি দাঁড়ান; আমি নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছি।
-দাদা, কতোক্ষণ সময় লাগবে?
- ড্রেইনের কাজ চলছে, উত্তর দিক দিয়ে ঘুরে যেতে হবে।  মিনিট বিশেক তো লাগবেই, আপনি বরং ভেতরে বসেন।

কিছু না বলে ভেতরের রুমটায় গিয়ে বসলাম। বইয়ের দোকান হলেও, ভেতরে একটা ঘর আছে। স্থানীয় লেখকরা বসে লেখালেখি ও প্রকাশনার কাজ করে থাকেন। মাসিক স্বপ্নছায়া ম্যাগাজিন । কারেন্ট এফেয়ার্স আর চাকরীর খবরের জন্যে এদিকে আমার বেশ আসা-যাওয়া। 

কমবেশি সব লেখক, সম্পাদকের সাথে আমার কিঞ্চিত দহরম-মহরম। সামনের চারটি চেয়ারই ফাঁকা। ভেতরের চেয়ারটিতে সদ্য আঁঠারো পেরোনো তরুণ বসে। দেখে মনে হলো, বিত্তশালী পরিবারের কেউ হবে। ধুসর রঙের টিশার্ট পড়া। হ্যাংলা-পাতলা। ঝাঁকড়ানো চুল। চোখে কাঁঠালি রঙ্গের ফ্রেমে বড় চশমা। বই পড়ছে। দূর থেকে মনে হলো কোন অনুবাদ বই-ই হবে।

আমার দিকে চোখ তুলে তাঁকিয়ে আবার বইয়ে চোখ রাখল। মানুষকে নিয়ে আমার আগ্রহটা বেশি। মিনিট দুয়েক পর নিযে থেকেই কথা বললাম।
-আপনাকে বোধয় নতুন দেখছি..
-আমি নতুন নই, নব্বইয়ের দশকে আমার জন্ম।
-তা হতে পারে। এখানে তো নতুন। কি করা হয়?
-পেশায়, পাঠক।
-পাঠক! এ আবার পেশা হয় নাকি?
-হ্যাঁ। এ পেশায় মনুষ্যত্ব ধরা দেয়।

মনে হলো, মাথার স্ক্রু ঢিল আছে।কথা বলে মন্দ লাগছে না। মজা নেয়ার জন্য কথোপকথন সচল রাখলাম।

-আপনি কি অমানুষ?
-বললেও বলতে পারেন। আপনি নিশ্চই এখানে নিয়োমিত না।
- না মানে আমিও লেখক।
-আপনি মিথ্যা বলছেন!
-কিভাবে বুঝলেন?
-আপনার হাতের তালু ভাঁজ ছিল, তাই আপনি সত্যি বলেন নি।
-বা রে, সত্য বলতে গেলে হাতের তালু দেখাতে হয়?
-আলবৎ। এই বইটা পড়তে পারেন।

বলেই, এলান পীসের লেখা "বডি ল্যাঙ্গুয়েজ" বইটা বের করে আমার হাতে দিলো। 
আত্মউন্নয়নমূলক বই।আমার কাছে, বেকারদের জন্য এসব বই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো মনে হয়। 
তবুও বললাম,
-লাগবে না। ধন্যবাদ।
আপনি ঠিকই বলেছেন। তবে, আমি মাঝেমধ্যে প্রবন্ধ লিখি;নাসুম আহমেদ নামে।

-ধন্যবাদ? এ ধন্যবাদ তো উপকারে আসবে না।
 এজন্যই, জাতি হিসেবে আমরা ২০০ বছর পিছিয়ে।
-আপনি নিজে এগিয়ে তো?
-আমি ২০ দিন এগিয়ে, তবে মানুসিক মহামারীতে আছি।
-মানুসিক মহামারী? এটা আবার কি? 
-এ মহামারী তথ্য প্রযুক্তির নেটোয়ার্কের সাথে ছড়ায়।
-আপনি যে কিসব বলেন, মাথার উপর দিয়ে যায়। আপনার বন্ধুরা নিশ্চই আপনাকে খুব উপভোগ করে?
-বন্ধু? আমার কোন বন্ধু নেই। 
-কেন?
-ধ*র্ষকের আবার বন্ধু থাকে?
- সে কি? আপনি ধ*র্ষক?
-হ্যাঁ।আমি ধ*র্ষক।

আসার পর থেকেই দেখছিলাম, ফোন ভাইব্রেট করছে। দেখেও না দেখার ভান করছেন। খুব চাঁপা স্বভাবের।
জিজ্ঞেস করলাম,
-ফোনটা ধরছেন না?
-নাহ্। নিচতলায় প্রেসমিট আর মঞ্চনাটক হবে। আর্টিস্টরা ফোন দিচ্ছে। ফেসবুক ওদের নাট্যমঞ্চ। স্থির ও সচল চিত্র আকারে প্রকাশিত হবে।
লাইক কমেন্ট আর শেয়ারে ওদের নাম সবার মুখে আসবে। অভিনয়ে থাকবে সাধুবেশী ধ*র্ষক। সকালে আন্দোলন করে, বিকেলে প্রেমিকাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।

-ধর্ষক? ওরা তো ধর্ষণের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করছে। ওরা কোনসুত্রে ধ*র্ষক?
-যে সুত্রে আমি ধ*র্ষক। আপনার প্রেমিকা আছে?

খানিকটা ইতস্ততবোধ করলাম।
-হ্যাঁ। আছে।
-কথা হয়?
-জ্বি। হয়। ফোনকলেই হয়। কিন্তু, এ প্রশ্ন কেন?

-আষাঢ়ে গল্প করলাম আর কি। পৃথিবীতে কেউ-ই ধ*র্ষক হয়ে জন্মায় না। পৃথিবীতে আমার মতো হাজারও ধ*র্ষক আছে যারা ঘোড়ার লাগাম ধরে মূল্যবোধ নিয়ে খেলছে।
-ধর্ষকের আবার মূল্যবোধ থাকে নাকি?
-গতকাল ধ*র্ষণ অপরাধে গ্রেফতার হওয়া সৈয়দ আবির আমার রুমমেট।
জানেন, বন্ধুমহলে, একমাত্র ওরই প্রেমিকা ছিল না। আর ম্যাথে ও ছিল সুপার টপার। বান্ধবী রেহানার সাথে প্রেমটা আমরাই করিয়ে দিয়েছি। আর ব্রেক-আপ তো আরেক গল্প। 
-তাতে আপনি ধ*র্ষক কেন?
- রাত জেগে যখন প্রেমিকার সাথে প্রেমালাপে মজতাম, পাঁচ-তাঁরকা হোটেলে বসে খাওয়ার ছবি দিতাম, আবিরের চোখে কোন কিছুই এড়িয়ে যেতো না। 
আমাদের উচ্চাভিলাষী, মানুষ দেখানো শখ আজ ধ*র্ষক তৈরি করছে। ধ্বংস করছে আবিরের মতো হাজার হাজার নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মেধা আর সম্ভাবনাকে।

-ক্লিয়ার করেন..
-নাসুম ভাই, ধ*র্ষকের বিচারের দাবিতে সবাই মহাব্যস্ত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কম্পিত। কিন্তু, ধ*র্ষকের ধ*র্ষক হওয়ার পেছনের গল্প নিয়ে কেউই ভাবে না। যদি ভাবত, হয়তো ধ*র্ষণ রোধে এ দেশ অনেক এগিয়ে যেতো। 

-ভাই, নিতে পাচ্ছি না আর। উঠি আজ...
-একটু দাঁড়ান। অনেক বকলাম। আমার অনুরোধে, নতুন একটা প্রবন্ধ লিখবেন?
-কি বিষয়ে?
-"মানুষ কেনো ধ*র্ষক হয় ?"

[বিঃদ্রঃ সাইটের নিরাপত্তাজনীত কারণে কিছু শব্দের মাঝে তারকা চিহ্ন দেয়া হল ]

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।