জীবনে চলার পথে সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমেই জীবন সুন্দর হয়। সুসময় এবং দুঃসময় মানুষের জীবনের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে। সুসময় এবং দুঃসময় কোনটাই মানুষের জীবনে চিরস্থায়ী হয়না। সুসময়ের পরে দুঃসময় আসবে,আবার দুঃসময়ের পরে সুসময়ও আসবে। প্রকৃতির নিয়মে সময়ের আবর্তন ঘটবে। জীবন আলো আঁধারের খেলা। আঁধার যত ঘনীভূত হোকনা কেন আলো আসবেই। আবার আলোও একসময় অন্ধকারের কাছে মিলিয়ে যাবে। সময় আমাদেরকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সময় আমাদেরকে সঠিক গন্তব্যের দিকেই নিয়ে যাবে। শুধু আমাদেরকে সময়ের কাজটা সময়ে করতে হবে। আমরা উল্টো পথের যাত্রী। সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতে সদা ব্যস্ত।
নিজেকে সুখী করার জন্য মানবতা বিবর্জিত সকল কাজে আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করে নিজের ভোগ বিলাসী জীবনযাপন করাই জীবনের মূল লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। যেকোন উপায়ে অর্থ উপার্জন করতেই হবে। অর্থ ছাড়া সব কিছুই আমাদের কাছে অর্থহীন হয়ে পরেছে। শিক্ষা দীক্ষা এবং জ্ঞান অর্জন আজ আর কারো কাছেই সম্পদ নয়। এই সম্পদ অর্জন করে নিজেকে কেউ সম্মানিত বোধ করেনা। অসংখ্য মানুষ শিক্ষা দীক্ষা অর্জন করে নিজেকে অসহায় মনে করে। এখন সময় অনেক বদলে গিয়েছে। সময়ের ধর্মই হলো বদলে যাওয়া। সময় কখনই এক জায়গায় স্থির থাকেনা। সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল,আবার বিকেলের পরেই নামে সন্ধ্যা। সন্ধ্যার পরেই নামে রাতের আধাঁর। রাতের আকাশেই উঁকি দিয়ে উঠে সন্ধ্যা তারা,শুকতারার মত অসংখ্য গ্রহ নক্ষত্র। মানুষের জীবন সময়ের মতই পরিবর্তনশীল।
সুখ এবং দুঃখ একসাথে হাত ধরাধরি করে চলে। সুখ এবং দুঃখ কোনটাই চিরস্থায়ী হয়না। মানব জীবনে কিঞ্চিৎ দুঃখ কষ্ট আসবেই। সাময়িক দুঃখ কষ্টকে আমরা মেনে নিতে পারিনা। মেনে নিতে অনেক কষ্ট হয়। সুখের সান্নিধ্যে আসার জন্য আমরা মনুষ্যত্বকে ভুলে গিয়ে অসৎ কাজের প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়ে যায়। যৌবনে আমরা সুখ চাই,বৃদ্ধ বয়সে শান্তি চাই। সুখের জন্য ধন সম্পদ চাই। ধন সম্পদ অর্জনের জন্য আমরা সকল নীতি আদর্শকে ভুলে যাই। যৌবনে পাপাচারের মাধ্যমে অর্জিত ধন সম্পদ আমাদেরকে বৃদ্ধ বয়সে শান্তিতে থাকতে দেইনা।
অর্থের কাছে প্রেম ভালোবাসা আজ তুচ্ছ। সব জায়গাতে অর্থের জয়জয়কার। মনে হয় অর্থ ছাড়া জীবন অর্থহীন। জীবন ধারণের জন্য অর্থের প্রয়োজন এটা সত্য। কিন্তু কতটুকু প্রয়োজন? এটার কি কোন মাপকাঠি আছে? আর্ন্তজাতিক বা রাষ্ট্রীয় কোন মাপকাঠি আছে বলে মনে হয়না। অর্থই কি সুখের একমাত্র পরিমাপক। অর্থ অনর্থের মূল কারণ এই ভাব-সম্প্রসারণ ছোটবেলায় আমরা সকলেই পড়েছি। মুখস্থ করেছি,পরীক্ষায় খাতায় লিখে ভালো নম্বর পেয়েছি। কিন্তু এই ভাব সম্প্রসারণের মূল ভাবার্থ কি আমরা বুঝতে পেরেছি? এই ভাব-সম্প্রসারণের মূলভাবার্থ ভুলে গিয়ে আমরা সবাই একই স্রোতে ভেসে চলেছি। এই স্রোতের প্রতিকূলে আমরা কেউ চলতে চাইনা। সমাজ যেভাবে চলছে আমরা অধিকাংশ মানুষ সেদিকেই ছুটে চলেছি। প্রতিকূলতাকে জয় করার কোন লক্ষ্য আমাদের নেই। সমাজের প্রতি,দেশের প্রতি আমাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই। দেশ এবং দশের কল্যাণের চিন্তা আমাদের কাছে চতুর্থ বিষয়ের মত হয়ে গিয়েছে।
জন কেবল বলেছেন-“সৌন্দর্য শক্তি এবং তারুণ্য হচ্ছে ফুল। সময়ে বিবর্ণ হয়ে যায় কিন্তু কর্তব্য,বিশ^াস এবং ভালোবাসা হচ্ছে শিকড়,তাই এরা চিরসবুজ।”
জীবনে সুখের জন্য প্রয়োজন প্রেম,ভালোবাসা। আপনজনদের পাশাপাশি দেশ ও জনগণের ভালোবাসা। যে ভালোবাসা জীবনকে করতে পারে গৌরবময় এবং মহিমান্বিত।
প্রভাষক, লাউর ফতেহ্পুর ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মাদ কলেজ
নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।