দেখতে দেখতে নতুন বছর চলে এল। তারও কয়েকটা দিন পার হয়ে গেছে। এবছর শীতকাল আসলেও প্রথম কয়েকদিন ঠান্ডার প্রকোপ তেমন টের পাওয়া যায় নি। এ নিয়ে কতই না কথা বলেছি যে এবার শীত নেই, জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে শীত তার উপস্থিতি ঠিক বুঝিয়ে দিলো একটু দেরি করে হলেও। পৌষ মাসের মাঝামাঝি এসে শীতের তান্ডব দেখছি। তবে শীত আসলেই সব কিছুর থেকে বেশি অপেক্ষা থাকে শীতের পিঠার। পৌষ সংক্রান্তি বা পৌষ মাসের শেষের দিন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পিঠা উৎসব পালন করে। আমাদের বাঙালিদের মধ্যে কিন্তু এই উৎসব পালনে হিন্দু মুসলিম ভেদ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। শীতকাল এলেই প্রায় প্রতিটি বাঙালি পরিবারে পিঠা উৎসব শুরু হয়। পুরো শীতকাল জুড়ে চলে এ উৎসব। হেমন্তকালে শীতের আগমণী বার্তা পাওয়া মাত্রই শহরের বিভিন্ন জায়গায় মানুষ ব্যবসা হিসেবে পিঠার দোকান খুলে বসে। সন্ধ্যা হলেই রাস্তার পাশে দেখা যায় মাটির পাত্রে ভাপা পিঠা আর চিতই পিঠা তৈরি করে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব দোকানে মানুষের ভিড়ও জমে খুব। শহর জুড়ে যেন পিঠের উৎসব চলতে থাকে শীতকাল ব্যাপী। ঠান্ডার দিনে গরম গরম পিঠা আর তার সাথে গরম চা পেলে যেন স্বর্গীয় অনুভূতি জাগে বাঙালির মনে। ছোটোবেলায় মামা বাড়ি যেতাম এই শীতের দিনে পিঠে খেতে। বিশেষত গ্রাম্য এলাকায় পৌষ সংক্রান্তির দিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে হিন্দু রমনীরা গোবর দিয়ে বাসার উঠান লেপেন। তারপর স্নান করে সাদা পিঠা না চিতই পিঠা তৈরি করে তা প্রথমে অগ্নি দেবতাকে অর্পন করেন তারপর নিজেরা খান। শীতকালীন সময়ে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় শহুরে মানুষ নিজের শিকড় মানে গ্রামে ছোটেন। সেখানে সবাই মিলে পিঠে উৎসব পালন করেন। তবে এখন শহরও মেতে ওঠে পিঠা উৎসবে। বাসায় নানা ধরনের পিঠা তৈরি করে আত্মীয় স্বজনদের নিমন্ত্রন দিয়ে সবাই মেতে উঠেন এই উৎসবে। তবে কাজের চাপে সময়ের সীমাবদ্ধতা থাকায় পিঠা বানানো সম্ভব হয় না , তাই এখন রেস্টুরেন্টে বা অনেকে হোম ডেলিভারি ব্যবসা হিসেবে বিভিন্ন ধরনের পিঠা বানিয়ে বিক্রি করেন। এতে একদিকে আর্থিক উন্নতির নতুন পথ খুলে যায় আবার আনন্দও পাওয়া যায়। পিঠা বিভিন্ন ধরনের হয়। কতগুলো জনপ্রিয় পিঠার নাম হলো চিতই পিঠা, ভাপা পিঠা, পাটিসাপটা, পুলি পিঠা ইত্যাদি। শীতকালে ঠান্ডার প্রকোপে অত্যাচারিত হয়েও মানুষ এই শীতকালের জন্য অধীর অপেক্ষায় থাকে পিঠা উৎসবের জন্য। বাঙালির মধ্যে যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি খুব গভীর ভাবে বিদ্যমান তার প্রমান এই উৎসব। হিন্দু হোক মুসলিম হোক বা অন্য কোনো ধর্মের মানুষ হোক, বাঙালি মাত্রই পার্বন প্রিয়। বাংলা নববর্ষ, নবান্ন উৎসব, পিঠা উৎসব ইত্যাদি উৎসবই তো বাঙালির বাঙালিত্বের অন্যতম পরিচায়ক। এভাবেই এগিয়ে যাক প্রিয় বাংলা, আনন্দে মেতে থাকুক বাঙালি স্রষ্টা কাছে এই প্রার্থনা রইল।
লেখক: সেঁজুতি মুমু
বাংলা বিভাগ, ১৩ তম আবর্তন
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।