ভাস্কর, আজকের যুগের এক শিক্ষিত ছেলে। সদ্য ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করেছে বাণিজ্য বিভাগে। অর্থনীতিতে দখল ভালই। সব কেনা বেচার মধ্যে ও আয় ব্যয়কে অনুধাবন করে । প্রতি ঘটনাতেই লাভ লোকসানের হিসাব নিকেশ করে। তাই ওর দেহে বাণিজ্য যেন তার রোমকূপে বিদ্যমান। পড়া শেষে হাতে সার্টিফিকেট নিয়ে ঘুরছে ভালো চাকরির আশায়। বাড়ির আর্থিক পরিস্থিতি তেমন ভালো নয়। যেখানেই যায় জিজ্ঞেস করে অভিজ্ঞতার কথা। শেষে বিরক্ত হয়ে ধরল গৃহ শিক্ষকতার কাজ। একদিন তার এক বন্ধু বললে একটা মেয়ের পড়াশুনার দায়িত্ব নিতে পারবে কি না। মাসে ডের হাজার করে দেবে। কিছু না ভেবে ভাস্কর রাজি হয়ে গেল। কিছুদিন পড়ানোর পর ভাস্কর লক্ষ করল তার নতুন ছাত্রীটি অবাক হয়ে চেয়ে আছে। যেন কিছু বলতে চাইছে। পড়া থামিয়ে জিজ্ঞেস করল সে কি কিছু বলতে চায়। মেয়েটা চুপ করে রইল। মেয়েটা কলেজের ছাত্রী। ভাস্করের দায়িত্ব ছিল অর্থনীতি আর হিসাব শাস্ত্র পড়াবার। বিষয় দুটোতে ভাস্কর মনযোগ সহকারে পরাতে চাইলেও মেয়েটির চাঞ্চল্য তাকে তার কাজে বাধা দিত।
একদিন পরাতে এসে দেখে মেয়েটি খুব সুন্দর করে সেজেছে। বাড়িতে সেদিন কাজের লোক ছারা আর কেউ ছিল না। সাধারণত মেয়েটির ঘরে ওর মা বাবা ছারা কেউ ঢুকত না। সেদিন ওর সৌন্দর্য দেখে ভাস্কর মোহিত হয়ে যায়। মেয়েটি তাকে তার মনের কথা প্রকাশ করে। এবং দুজনে একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে লিপ্ত হয়ে যায়। ভাস্কর সেদিন নিজেকে হারিয়ে ফেলে তার রূপের মোহে।
এরপর থেকে ভাস্কর আর নিশার মধ্যে চলে গভীর প্রেম। সময়ের সাথে সাথে নিশা কলেজের প্রতি পরীক্ষাতে ভালো ভাবে পাশ করে। অন্য কেউ পড়তে চাইলেও ও সময় দিত না। চাকরি খোঁজার দিনও শেষ। ওর বাণিজ্যে পাণ্ডিত্য দেখে নিশার বাবা নিজের ফার্মে একটা কাজের ব্যবস্থাও করে দেয়।
একদিন নিশা ভাস্করকে বলে বিয়ের কথা। ভাস্কর নিশাকে জিজ্ঞেস করে তার বাবার কাছ থেকে আশীর্বাদ তারা পাবে কি করে । নিশা সরল এক মেয়ে। সে জানায় তার বাবা তার পছন্দকে কোন দিন অস্বীকার করবে না। শুনে ভাস্কর খুশি হল ঠিক। কিন্তু তার মালিকের দুর্বলতা তার কাছে আজানা নয়।
অন্য দিকে ভাস্করের বাড়িতে উঠল প্রবল ঝড়। সে তার বিবাহ যোগ্য ছেলের জন্য একটি কন্যা দেখেছে। ভাস্কর শুনে সব কিছু জানায় সে। ভাস্করের বাবা সব জেনে মেয়েটাকে একদিন নিয়ে আসতে বলে। শুনে ছেলে খুশি হয়।
কথা অনুযায়ী ছেলে নিশাকে নিয়ে আসে বাড়িতে। পরনে শাড়ি থাকলেও আধুনিকতার একটা ছাপ রয়েই যায়। সেই দিকে দৃষ্টিপাত করে ভাস্করের মা ও ছোট বোন। বৃদ্ধ ভদ্রলোক মেয়েটির হাত গণনা করে। এবং কিছু অশুভ লক্ষণ দেখতে পায়।
নিশাকে বাড়িতে পৌছে দিয়ে আসার সময় নিশার বাবা তাদেরকে ডাকে। এবং সত্যিটা জানতে চায়। নিশা খুলে বলে সব কিছু। শুনে নিশার বাবা খুব খুশি হয় এবং পরের দিন খুব তারাতারি অফিসে আসতে বলে।
বাড়িতে ফেরার পর ভাস্করকে মেয়েটির হাত গণনার কথা জানায় তার বাবা। এবং তাকে বলে ওই মেয়েটাকে ভুলে যেতে। ভাস্কর শুনে রেগে যায় এবং সারা রাত অনিদ্রায় কাটায়।
পরের দিন অফিসে ঢুকেই সে চলে যায় সোজা তার বসের ঘরে। নিশার বাবা, মিস্টার দাস তাকে বলে মেয়েকে ভুলে যাবার জন্য। এবং তাকে কাজ ছেড়ে চলে যাবার চিঠিও তার হাতে ধরিয়ে দেয়। চিঠি নিয়ে ভাস্কর অফিস থেকে বেরিয়ে নিশাকে ফোন করে জানায়। নিশা জানায় তার বাবা তার জন্য আমেরিকায় অবস্থিত এক সম্ভ্রান্ত ছেলের সাথে বিবাহ বহু বছর আগেই ঠিক করে রেখেছে। যার বাবার টাকায় তার আজকের ব্যবসা।
সব শুনে ভাস্কর বাড়িতে ফিরতেই শুনল দিন তিনেকের মধ্যে তার বিয়ের রেজিস্ট্রেশান। সকল ব্যবস্থা পাকা। যেদিন বিয়ে সেদিন রাতের অন্ধকার থাকতেই ভাস্কর পারি দিল চেন্নাইয়ের উদ্দেশ্যে। আর নিশা বাঁধা পড়ল বিয়ের সাত পাকে। ভাস্করের বিয়ের প্রস্তাব এলেও সে গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। এখন ভাস্করের বয়স পঞ্চাশ।