জনসচেতনতাই করোনা মোকাবেলার প্রধান হাতিয়ার ।। ইমরান খান রাজ


Covid 19 বা করোনা ভাইরাস সম্পর্কে জানে না এমন লোক বর্তমানে পৃথিবীতে নেই বললেই চলে৷ এ ভাইরাস এমন এক মহামারী আকার ধারণ করেছে বিশ্বজুড়ে যে, বিশ্বের প্রায় সকল দেশের মানুষই এই ভাইরাসের ব্যাপারে অবগত হয়েছে। করোনা ভাইরাস এমন এক মহামারী পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে যে, শুরু থেকে বর্তমান হিসেব অনুযায়ী বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। ইউকিপিডিয়ার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে ১৮ কোটির বেশি মানুষ এবং মৃত্যুবরণ করেছে ৪০ লাখের-ও বেশি। 
আমাদের পাশের দেশ ভারতেও অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ভারতে ৪ লাখেরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুতে বাদ যায়নি আমাদের বাংলাদেশ-ও। বিবিসি বাংলার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৯ লাখেরও বেশি মানুষ এবং মৃত্যুবরণ করেছে ১৫ হাজারের উপরে৷ বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা হঠাৎ কমে যায় আবার তুলনামূলক ভাবে বৃদ্ধি পায়৷ যা সত্যিই উদ্বেগজনক। বাংলাদেশে করোনার ভ্যাক্সিনেশন প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থাতেই প্রতিদিন হাজারো মানুষ আক্রান্ত ও শত শত মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। এমতবস্থায় নিজেকে, পরিবারকে, সমাজ ও দেশের সকল মানুষকে করোনা থেকে বাঁচাতে সচেতনতার বিকল্প নেই। জনসচেতনতাই করোনা মোকাবেলার প্রধান হাতিয়ার। জনসচেতনতার মাধ্যমে আমরা নিজেকে ও সবাইকে করোনাভাইরাস এর সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারবো। 
ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সচেতনতাঃ অন্যকে সচেতন করার পূর্বে নিজেকে সচেতন হতে হবে। আমরা যদি সবাই যার যার স্থান থেকে সচেতন থাকি, সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করি তাহলে আমরা করোনা ভাইরাস থেকে দূরে থাকতে পারবো। ব্যক্তিগত সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। নিজে সচেতন হবার পাশাপাশি নিজের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সচেতন করতে হবে। করোনা সংক্রমণের বিস্তার রোধে পরিবারের সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে। আপনি যদি করোনায় আক্রান্ত হোন তবে আপনার পরিবার যেমন ঝুঁকিপূর্ণ থাকবে ঠিক একইভাবে আপনার পরিবারের কেউ আক্রান্ত হলে আপনিও ঝুঁকিতে থাকবেন৷ তাই করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে নিজে সচেতন হোন এবং পরিবারকে সচেতন করুন। 
সামাজিক সচেতনতাঃ করোনাভাইরাস মোকাবেলা করতে হলে সবাইকে সামাজিকভাবে সচেতন করতে হবে। সমাজের জ্ঞানী মানুষদের সমন্বয়ে একটা টিম গঠন করে মানুষের মাঝে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো যেতে পারে। আপনি যেই সমাজে বাস করেন সেটা আপনার নিজেরই সমাজ। আর সেখানে যারা বসবাস করে তারা সবাই আপনার ভাই, বন্ধু বা আত্নীয়স্বজন কিমবা শুভাকাঙ্ক্ষী। সুতরাং তাদের সুরক্ষায় কাজ করা আপনার দায়িত্ব। আপনার সমাজে একজন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হওয়া মানে আপনার নিজের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া। সামাজিকভাবে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ রোধে সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন। এছাড়া যারা সমাজের অসহায় ও দরিদ্র মানুষ রয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে সেসব মানুষকে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করার মাধ্যমেও সামজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা যায়। 
রাষ্ট্রীয় সচেতনতাঃ করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় রাষ্ট্রীয়ভাবে মানুষকে সচেতন করতে হবে। লিফলেট, পত্র-পত্রিকা বা টেলিভিশনে প্রচারের মাধ্যমে দেশের জনগণকে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সচেতন করা প্রয়োজন। জনগণের অবাধ বিচরণ বন্ধ করা, স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, নিয়মিত হাত পরিস্কার রাখা, যেকোনো সমস্যায় ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াসহ বিভিন্নভাবে জনগনকে সচেতন করতে রাষ্ট্রীয় ভূমিকা পালন করতে হবে। 
আমরা যদি যার যার অবস্থান থেকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে, সামাজিকভাবে ও রাষ্ট্রীয়ভাবে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সচেতন হতে পারি ও সচেতন করতে পারি তবেই আমরা বাংলাদেশকে করোনামুক্ত করতে পারবো। 

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।