কিশোর গ্যাং সমাজের জন্য হুমকি ।। মো. রেজওয়ানুল ইসলাম


আধুনিক বিশ্বের অসংগঠিত সমাজ ব্যবস্থায় দ্রুত শিল্পায়ন ও নগরায়নের নীতিবাচক ফল হলো কিশোর অপরাধ যার প্রধান শক্তি কিশোর গ্যাং পরিবার কাঠামোর দ্রূত পরিবর্তন শহর ও বস্তির ঝুকিপূর্ণ পরিবেশ সমাজ জিবনে বিরাজমান নৈরাজ্য ও হতাশা এবং সেই সাথে অপসংস্কৃতির বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ার কিশোর গ্যাং বৃদ্ধি ও সৃষ্টির প্রধান কারণ।যা বর্তমান সমাজের জন্য হুমকি।
রবীঠাকুর বলেছেন“তের চৌদ্দ বছরের মতো এমন বালাই নেই” এ সময় ছেলে মেয়েদের সামনে থাকে অদম্য আশা, জিবন জগৎ সর্ম্পকে থাকে নানা কৌতূহল। অনেক সময় প্রতিকূল পরিবেশের কারণে আশা ভঙ্গের বেদনায় হতাশার হাত ধরে অন্ধকারে পতিত হয় তাদের জীবন
মূলত বন্ধু থেকে সৃষ্টি হয় গ্যাংগুলো। অন্যদের হামলা থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য কয়েক জন্ বন্ধু একত্রিত হয়ে পরে এভাবেই ধীরে ধীরে বিস্তার করে নিজেদের সাম্রাজ্য গ্যাং এ যোগদান এর সংঙ্গা যদি দেওয়া যায় তাহলে বলা হবে পাড়া বা মহল্লায় যখন অভ্যাস প্রথা হয়ে দাঁরায় তখন পাড়ার সিনিয়রদের অনুকরণে কিশোরেরা গ্যাং এর সদস্য পদ লাভ করে।এবং পাশাপাশি অন্যদেরকেউ উৎসাহিত করে।পারিবারিক পরিবেশ ও দাম্ভিকতার পরিবেশ অনেকাংশেই এ সমস্যার পিছনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে।
সমাজ ব্যাবস্থা, পরিবার ,শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, সহচার্য, ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি নানাবিধি উপকরণ কিশোর গ্যাং কালচার সৃষ্টির উপকরণ।একই কমিউনিটিতে যখন একত্রে দরিদ্র শ্রেণী ও উচ্চবিত্ত বসবাস করে তখন উচ্চবিত্তের জীবন যাত্রা দরিদ্র শ্রেণীর সন্তানেরা নিজেদের ভাগ্যকে বঞ্চিতদের ভাগ্য এর সাথে তুলনা করে।বর্তমান সময়ে কিশোর গ্যাং সৃষ্টির অন্যতম বিশেষ একটি কারণ সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিনোদন মাধ্যমগুলো যেমন like, tiktok, vigo, fb, snek vedio এর মত মিডিয়া দীর্ঘদিন ধরে করনার কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ।আর্থিক অনাটনের কারণে পরিবাবের সদস্য যখন পরিবারের খাবার যোগাতে ব্যাস্ত কিশোরদের প্রতি খেয়াল রাখার সময় কম এমন সময় বিদেশী কিছু মমদ গোষ্টি জাতির মেরুদন্ড ভাঙ্গতে ব্যাস্ত। তারা জানে শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড যদি কোনভাবে আমরা ছাত্র সমাজকে যদি অন্যপথে পরিচালিত করতে পারি তাহলে তারা সামনে আর আগাতে পারবে না। তাই সামান্য কিছুর বিনিময়ে তারা তাদের বিপদগামী করে তুলছে। এই সব বিদেশী অ্যাপস চালাবার জন্য একাধিক কিশোরদের প্রয়োজন।কিশোররা তার ব্যহহার করছে যার দরূণ তাদের গ্রুপের প্রয়োজন হচ্ছে তা থেকে গ্যাং। দ্রুত এই সমূহ অ্যাপস বন্ধ নিশ্চিত করতে হবে । নইলে জাতি হুমকির মুখে।
আবার যখন পরিবারের পিতা-মাতা রোল মডেল হতে ব্যার্থ হয়, পিতা-মাতার কর্ম অদক্ষতা ও বেকারত্বের ফলে আর্থিক উপার্জনের জন্য এবং একাকীত্ব দূরকরণের লক্ষ্যে সন্তানদের মাঝে গ্যাং এ যোগ দানের প্রবণতা দেখা যায়।অন্যদিকে শিক্ষকদের ক্রমাগত বঞ্চনা, খারাপ ফলাফল,সহপাঠী দ্বারা বিদ্রুপের শিকার এর উপর বয়স যখন কিশোর তখন মনে দোলা দেয় উতলা হবার, হারিয়ে যাবার কোন এক রঙ্গিন স্বপ্নের দেশে।প্রেম করতে কিন্তু যখন তাতে বাঁধা পায় তখন মাদক ও অপরাধী চক্র এর সাথে জরিত হয়ে তৈরী করে নতুন এক গ্যাং। এতে তারা ক্রমাগত নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জরাছে।
20 জুন 2021 “যুগান্তর পত্রিকায়” বলা হয় শুধু রাজধানীতেই 78টি গ্যাং এ কমপক্ষে 2000 সদস্য রয়েছে যদি একটি শহরেই এতো সংখ্যক গ্যাং থাকে তাহলে সারা দেশে কত সংখ্যক গ্যাং আছে তা কিন্তু ভাবনার বিষয়।
যদি কিশোর গ্যাং এর বৈশিষ্টর কথা বলা হয় তাহলে বলা যায় তারা চিন্তা না করে আবেগের বর্শীভূত হয়ে অপরাধে জরাচ্ছে দিন কে দিন। উদ্দেশ্যহীন নাম না জানা পথে কৌতূহলবশত বা নিজেকে জনগনের সামনে প্রকাশ করার বা দাপট দেখানোর অদম্য ইচ্ছা নিয়ে যোগ দিচ্ছে বিভিন্ন গ্যাং এ।তাদের বৈশিষ্ট এর মাঝে অপরাধের তালিকাই বেশী যেমনঃ-
1.প্রতিকূল পরিবেশে সামাজিক কার্যক্রম এ তাল মেলাতে না পেরে সমাজ বিরোধী ও রাষ্টদ্রহীর মতো কাজে অংশ নেয়।
2.তারা নিজেদের নেওয়া সিদ্ধান্তকেই বেশি প্রাধান্য দেয়।
3. সামাজিক মূলোবোধ ও নিয়ম শৃংখলার বাহিরে কাজ করে।
4. তারা দলের সদস্য এর জন্য যে কোন পর্যায়ের কাজ করতে তোয়াক্কা করে না।
5. কলেজগামী ও স্কুলগামী ছাত্রীদের কুপ্রস্তাব দেওয়া তাতে রাজী না হলে এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষন এবং হত্যা এর মতো গৃহীত কাজ করে থাকে। ইত্যাদি

বিদেশী কিছু গোষ্টি, সংস্থা কিশোর দের টার্গেট করে তাদের দিয়ে তারা যেমন রাষ্টদ্রহী কাজে উৎকে দিচ্ছে তেমনি তাদের কাজে সহযোগীতা করে তাদের রক্ষা করে জাতির মূল কে উৎত্তলোন এর তৎপরতা চালাচ্ছে।
আজকের কিশোর-কিশোরীরা আগামীদিনের ভবিষ্যৎ তাই কিশোর অপরাধ, কিশোর গ্যাং নিজেদের জীবন ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কেউ নিজের অজান্তে নষ্ট করে চলেছে। তাদের এই মূল্যবোধের অবক্ষয়, বয়োজ্যেষ্ঠদের অবাধ্যতা ও অশোভন আচরণ সর্বপরি জাতিকে হুমকির সম্মখীন করে তুলছে।
কিশোর অপরাধের ভয়াভয়তা ইতিমধ্যে আমরা উপলব্ধি করেছি। তাই তা রোধ করতে আমাদের সকলের উচিৎ তাদের অন্ধকার জগৎ হতে আলোর পথে ফিরিয়ে আনা।এই সমস্থ কিশোর গ্যাং সামাজের জন্য হুমকি। তাদের এই কর্মকান্ডের জন্য তারা শুধু একাই দায়ী নয়। এই পরিবর্তনশীল সমাজব্যাবস্থা, অর্থনৈতিক অবস্থা ও পরিবার দায়ী। তাই এর বিস্তার রোধে আমাদের সকলকে একত্রে এগিয়ে আসতে হবে।এর প্রতিরোধ হিসাবে যে সমস্থ ব্যাবস্থা নেয়া যায় বলে আমি মনে করি…
কিশোরদের সুষ্ঠ আবেগীয় ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে যত্নবান হতে হবে।
সুবিধা বঞ্চিত শিশু ও কিশো্রদের জন্য সু-শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
কিশোর সময়কাল মানসিক বিকাশের বয়স তাই তার বিকাশের প্রতি বিশেষ যত্নবান হতে হবে।
তাদের সামাজিকরণের জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে হবে।
তাদের কার কার সাথে উঠা-বসা তার ব্যাপারে নজর দিতে হবে।
রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সর্বপরি বলা যায় মানুষ তখনোই পরিপূর্ণ মানুষ যখন সে শিক্ষা-দীক্ষায় পরিপূর্ণ হয়। প্রত্যেকে কোন না কোন পরিবারের সন্তান।স্কুল কলেজে তা সর্বদা শিক্ষা দেওয়া হয় দীক্ষার কাজ কিন্তু পরিবারের তাই আমরা প্রত্যেকে সচেতন হলেই তা রোধ করা সম্ভব।
সর্বশেষে বলতে চাই কিশোরকাল ভবিষ্যৎ গঠনের সময় এসময় মানুষ অনেক আশা ও স্বপ্ন নিয়ে পরিপূর্ণ জীবন গড়ে তুলতে শুরু করে। কিন্তু বর্তমান সময়ের ত্রুটি পূর্ণ সমাজব্যাবস্থা ও ঝুকিপূর্ণ পরিবেশ সে আশাকে ব্যাহত করে জাতিকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করছে। এর কারণে প্রতি মূহর্তে সুপ্ত প্রতিভা অঙ্কুরে বিনষ্ট হচ্ছে। এভাবে যদি এর প্রবণতা বৃদ্ধি থেকে বৃদ্ধিত্তর হয় তাহলে আমাদের জাতি কখনোই উন্নত হতে পারবে না ।কিশোরদের সু-শিক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমেই এই কিশোর গ্যাং রোধ করা সম্ভব।

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।