কয়েক মাস আগে লালু রবিদাস একটি যৌথ পরিবারে বসবাস করতেন। লালুর যে দুর্ভাগ্য কপাল সেটা জানিয়ে দিলো সেই যৌথ পরিবারে কর্তা নির্মল রবিদাস। কর্তা ছিলো লালুর সহোদর। লালু রবিদাস তার পৃথক হওয়ার বিষয় টা জানতে পরে বেশ দূরচিন্তাযুক্ত। লালু বিশ্বাস করতো তার ভাই নির্মল রবিদাস তার সাথে এমন অবিচার করবেন না! লালুর বয়স এখন পঞ্চাশ বছর, তার একজন স্ত্রী আছে কিন্তু সন্তান নেই। ইশ্বর তাদের ঘড়ে কোন সন্তান দেননি।অবশেষে যৌথ পরিবার থেকে তাদের পৃথক করে দেয়া হলো।লালু রবিদাস একটি ছোট বাজারে রাস্তার পাশে বসে জুতা সেলাইয়ের কাজ করতো। যৌথ পরিবার থেকে আলাদা হওয়ার পর লালুর জীবনে আসলো এক কালো অধ্যায়। তিনি নির্মম ভাগ্যর পরিহাসকে বাস্তবতার সঙ্গে মেনে নিলেন।তার স্ত্রীকে নিয়ে একটি অর্ধভাঙ্গা ঘড়ে বসবাস করতে লাগলেন। এক বছরের বেশি সময় ধরে সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাস মহামারীতে পরিনত হয়েছে। বাংলাদেশ ও তার ব্যতিক্রম নয়। এদেশে করোনা ভাইরাস ছরিয়ে পরলো সকল জেলায় সেই সাথে বাংলাদেশ সরকার ধাপে ধাপে লকডাউন কার্যকর করা শুরু করলেন লকডাউন এর প্রভাব যে লালুর জীবন দশার উপর পরবে সে জানতো না। লালুর মতো বুদ্ধি-সুদ্ধি কম মানুষেরা লকডাউন কি সেই বিষয়ে ধারণা কম ছিলো। পড়ে সকল জেলা লকডাউন দেয়া হলো। লালু সেই ছোট বাজারে রাস্তার পাশে বসে আগের দিনের মতোই জুতা সেলাই এর কাজ শুরু করলেন। তিনি দেখলেন বাজারে মানুষ কম,অনেক দোকান বন্ধ আবার কিছু কিছু দোকান কিছুক্ষন কোলা আবার বন্ধ রাখে। পরে লালু রবিদাস বুঝতে পারলো লকডাউন কি? লকডাউন হলো প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া ঘড় থেকে বেড়ানো নিষেধ। কিন্তু লালুকে বাচঁতে হলে খাইতে হবে, তার পরিবারকে বাঁচাতে হবে। বাজারে মানুষ না আসলে তার কাজ কেমনে চলবে।শুরু হলো লালুর জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের পরীক্ষা।
না খেয়ে কি আর মানুষ বাচঁতে পারে?
সারাদিন দোকান করে দশ থেকে বিশ টাকার বেশি আয় হয় না, দোকানে বসে বসেই অবসর সময় পার করে লালু। আর সন্ধ্যায় ঘড়ে দূচিন্তা নিয়ে ঘড়ে ফেরে।এই সামান্য আয় নিয়ে তাদের দুজনের খাবারই জোটে না। মানুষ কতটা পাষাণ হলে এমনটি হয়। তার ভাই নির্মল রবিদাস ও তার খোজ খবর রাখে না। অনেকে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হচ্ছে আবার অনেকে মারাও যাচ্ছে, লালুর কর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই খবর থেকেও বেশি হতাশা তার কর্ম নিয়ে। লালু রবিদাসকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন এমন লোকের সংখ্যা নেই বললেই চলে, এমন কি কতৃপক্ষ ও না।
লালু রবিদাস লকডাউন থাকা সত্বেও জীবিকা নির্বাহের জন্য ঐ বাজারে যান, রাস্তার পাশে দোকান খুলে বসে থাকেন, লালু দেখতে পান বাজার জনমানবশূন্য। দেখতে পান পুলিশের গারি, পুলিশ জুতা সেলাই এর দোকান দেখে লালুকে কিছু বলতেন না।কিন্তু বাজারে মানুষ না থাকলে কি আর লালু রবিদাসের কর্ম হবে? এভাবেই প্রতিদিন হতাশা আর ক্ষুধা নিয়ে লালু রবিদাস বাড়িতে ফেরেন। যখন এভাবেই চলছে লালুর জীবন সেই সময়ে তার স্ত্রী ভুগছেন জ্বর,কাশি সহ অনন্য রোগে। স্ত্রীর এই অসুস্থতা সময় যখন ভাত জোটে না তখন তার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য টাকা কোথায় পাবেন লালু?
কয়েকদিন পড়ে বিনা চিকিৎসায় তার স্ত্রী মারা গেলেন। এলাকার মানুষ কানাকানি করে লালুর স্ত্রী নাকি করোনা ভাইরাস উপর্সগ নিয়ে মারা গেছেন। এই জন্য লালুর স্ত্রীর শেষ বিদায় জানাতে কেউ আসে নি। করোনা মহামারীতে এই লকডাউনে লালু রবিদাস তার কর্ম ও স্ত্রীকে হারিয়ে এখন নিঃস্ব।