উগ্রবাদ প্রতিরোধে দরকার প্রগতির শিক্ষা ।। মো. সাজ্জাদ হোসেন


উগ্রতা হলো উচ্ছৃঙ্খলতা। উগ্রবাদ কোন বিশেষ মতবাদ নয়। উগ্রবাদ কোন দর্শনও নয়। মানুষের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য। উগ্রতা ব্যক্তির  আচরণিক বৈশিষ্ট। সব মানুষের মধ্যে উগ্রতা কাজ করেনা। অসংখ্য কারনে মানুষের মধ্যে উগ্রতা কাজ করতে পারে। খাদ্যাভ্যাস,পারিবারিক ও বংশগত,আবহাওয়া,সামাজিক নিয়ম কানুন ইত্যাদি কারণে মানুষের মাঝে উগ্রতা কাজ করতে পারে। উগ্র মানুষের স্বাভাবিক বোধ বুদ্ধি থাকেনা। উগ্রতা স্বাভাবিক বোধ বুদ্ধিকে নষ্ট করে দেয়। উগ্রতা পরিবার ও সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা নষ্ট করে দেয়। উগ্রতা পরিবার ও সমাজের গন্ডি পেরিয়ে রাষ্ট্রের শান্তি শৃঙ্খলাও নষ্ট করে দিতে পারে। উগ্রবাদী মানুষের কারণে রাষ্ট্র ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে। রাষ্ট্রকে অকার্যকর রাষ্টের তালিকায় নিয়ে যায় উগ্রতা। উগ্র মানুষ জিঘাংসা পরায়ণ। জিঘাংসার জন্য খুন,ধর্ষণ ও জীব হত্যার মত জঘন্য কাজে লিপ্ত হতে পারে উগ্র মানুষ। উগ্রতাকে বিশেষ  মতবাদ বলা গ্রহণযোগ্য নয়। উগ্রতা শুধুমাত্র ব্যক্তির আচরণ। তবে উগ্রতা ব্যক্তি থেকে পরিবার,পরিবার থেকে সমাজ এবং পুরো রাষ্ট্রকেই কলুষিত করতে পারে। উগ্রতা ব্যক্তি থেকে নিজস্ব সম্প্রদায়ের মধ্যেও ছড়াতে পারে। উগ্রতা ব্যক্তি থেকে যখন নিজস্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পরে তখন মতবাদিক প্রশ্ন উঠতে পারে। 
একটি দেশের অভ্যন্তরে বসবাসকারী ও একই কৃষ্টি কালচার যারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে তারা সবাই ভাই ভাই। মা বাবার ভিন্নতা থাকতে পারে। মা বাবার ভিন্নতা থাকলেও দেশ মাতৃকা নিজের সন্তানকে কখনই আলাদা করেনা। ধনী,গরীব,সাদা,কালো,ধর্ম,বর্ণ কোন ভেদাভেদ মায়ের কাছে থাকেনা। সবাই দেশ মাতৃকার সন্তান। সবার মা বাংলা মা। বাংলা মা কখনও তার সন্তানকে আলাদা করে দেখেনা। 

রাষ্ট্র সবার জন্য সমান। কোন বিশেষ শ্রেণিতে কাউকে বিভক্ত করাটা রাষ্ট্রের পাশাপাশি সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব হতে পারেনা। রাষ্ট্রের সচেতন নাগরিক হয়ে কাউকে বিশেষ শ্রেণিতে বিভক্ত করে কোন বিশেষ নামে ডাকাও সমীচিন হবেনা। রাষ্ট্রের সকল নাগরিক ভাই ভাই। সকলের রক্তের রংই লাল। কোন রক্তকেই জাতি বা সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে আলাদা করা যায়না। কোন সম্প্রদায়ের যদি রক্ত ঝরে তাহলে রাষ্ট্রের সকল নাগরিকই রক্তাক্ত হয়। সচেতন নাগরিক হিসেবে সবার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে সকল নাগরিকের অধিকার সমান। অনেক সময় স্বাধীন রাষ্ট্রে সবার সমান অধিকার দেখা যায়না। রাষ্ট্র তার নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেলে। সাধারণ জনগণের পাশাপাশি রাষ্ট্রের কর্তা ব্যক্তিরা জাতি ও সম্প্রদায় ভেদে বিভক্ত হয়ে পরে। রাষ্ট্র তখন সবার সমান অধিকার ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে পারেনা। 

উগ্রতা ব্যক্তি থেকে সমাজে,সমাজ থেকে নিজস্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পরে। দলাদলি,গোষ্ঠী স্বার্থ ও ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে উগ্রবাদী ব্যক্তি এক নিমিষেই তার অশুভ চক্রান্তের কৌশল ছড়িয়ে দিতে পারে। অশুভ চক্রান্তে রক্তাক্ত হয় শুধু সাধারণ মানুষ। ভ্রান্ত ধারণায় বিশ্বাসী ব্যক্তি খুব সহজেই অপরাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয়। উদ্ভট,উশৃঙ্খল,অন্ধত্ববাদ ও কুসংস্কারে বিশ্বাসী ব্যক্তি শুধু নিজের ক্ষতিই করেনা। সাধারণ নাগরিকের পাশাপাশি রক্তাক্ত করে পুরো দেশ ও জাতিকে। ছাত্র ও তরুণ সমাজের মাঝে উগ্রতা ছড়িয়ে পড়লে সমাজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যেতে পারে। মাদক ও বখাটেপনার মতই উগ্রতা ছাত্র ও তরুণ সমাজের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। উগ্রতা থেকে ছাত্র ও তরুণ সমাজকে রক্ষা করাও সমাজের দায়িত্ব। উগ্রতার কারণে ঝরে যায় অনেক প্রাণ।

উগ্রবাদ যদিও কোন মতাদর্শ নয় তবুও উগ্রতা প্রতিরোধের জন্য রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের সমানভাবে ভূমিকা রাখা দরকার। উগ্রবাদ যদি মতাদর্শে পরিণত হয়ে যায় সেটা ক্যানসারের মত মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। ক্যানসার যেমন মানব দেহের সমস্ত কোষকে আকার্যকর করে দিতে পারে তেমন ভাবে উগ্রবাদ সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতিকে খুব সহজেই নষ্ট করে দিতে পারে। উগ্র জাতীয়তাবাদ দেশের সুনাম নষ্ট করে দেয়। সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষার জন্য প্রগতির চর্চা খুব জরুরী দরকার। সর্বক্ষেত্রে প্রগতির চর্চা ছাড়া সম্প্রীতির চিন্তা অবাস্তব। প্রগতির শিক্ষা সফল হতে পারে একমাত্র মাতৃভাষায়। মা,মাটি ও মায়ের ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তি উগ্রতায় লিপ্ত হতে পারেনা। মাতৃভাষা শিক্ষার মাধ্যমেই জাতিসত্তার পরিপূর্ণতা লাভ করে। নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে ভাতৃত্ববন্ধন আরও দৃঢ় হতে পারে। নিজের জাতিসত্তার সন্ধান করতে হলে ফিরে আসতে হবে মাতৃভূমির কাছে। ফিরিয়ে আনতে হবে বাঙালি জাতির অতীত ঐতিহ্যকে।  
আবুল ফজল বলেছেন “ মানুষ প্রগতিশীল। চিন্তার রাজ্যে প্রগতি না এলে কর্মের রাজ্যে কখনো প্রগতি আসতে পারেনা। আর চিন্তার বাহন হচ্ছে ভাষা ও সাহিত্য।”

মো. সাজ্জাদ হোসেন
প্রভাষক
লাউর ফতেহপুর ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদ কলেজ
নবীনগর,ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।