অদেখা নার্গিস ।। মো. সাজ্জাদ হোসেন


অভিমানী বিদ্রোহী কবির কবিতা গান ও গল্পে শোভা পেয়েছে একটি নাম নার্গিস। নার্গিস শব্দটি ফারসি শব্দ। নার্গিস একটি ফুলের নাম। প্রলয়ংকারি ঘূর্ণিঝড়ের নামও নার্গিস। বিদ্রোহী কবির হৃদয়ে প্রলয়ংকারি ঘূর্ণিঝড়ের মত কম্পন সৃষ্টি করেছিল নার্গিস। অনুভবে,শিরা উপশিরায়,কবির সমস্ত অস্তিত্বে মিশেছিল নার্গিস। বিষের বাঁশির সুরের মুগ্ধতায় বিমোহিত হয়েছিল নার্গিসের মন। বাঁধনহারা কবিকে বেঁধেছিল প্রেমের বন্ধনে। সর্বহারা মানুষকে উজাড় করে দিতে চেয়েছিল হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা।

দোলনচাঁপার তলে বসে বলেছিল হৃদয়ের কথা। বিদ্রোহীর রণক্লান্ত কবির হদয় উতলা করেছিল অগ্নি-বীণার সুরের ঝংকার। সন্ধ্যা গগনে হয়েছিল শিউলিমালার বিনিময়। সন্ধ্যামালতীর গন্ধে উতলা হত প্রেমিক হৃদয়। রিক্তের বেদন ভুলে কবি হাতে তুলে নিয়েছিল রাঙা জবা। ঘুমের ঘোরে গুল বাগিচায় কবি গেয়েছিল লাইলী মজনুর গান।

নার্গিস কবির জীবনে ছিল নতুন চাঁদ। পূবের হাওয়া ভেঙে ফেলেছিল প্রলয়-শিখা। বাদল বরিষনে নার্গিস এসেছিল মধুমালা হয়ে। কাজী নজরুলের জীবনে বিয়ে-বাড়ীর গল্প শুধুই পুতুলের বিয়ে। প্রিয় নার্গিস হতে পারেনি কবির শেষ জীবনের বাসন্তিকা। নার্গিস কবির জীবনে শুধুই একজন আলেয়া। মৃত্যু ক্ষুধার কবি ভাঙতে চেয়েছিল জিঞ্জীর। গেয়েছিল সাম্যবাদের গান। ভাঙার গান যে কবিকে গাইতেই হবে। বাঁধনহারা কবি বাধা পড়বে কেন? কুহেলিকাকে দূরে ঠেলে জ্বালাতে চেয়েছিল ঝিলিমিলি আলো।

জাতীয় কবির প্রিয় নার্গিস নামটি শোভা পাচ্ছে অসংখ্য বাঙালি রমণীর সাথে। নার্গিস তার সৌরভের মুগ্ধতা ছড়ায়। ফুলের সুগন্ধে মুগ্ধ হয় অসংখ্য নারী পুরুষ। নার্গিসের ছোঁয়া নৈসর্গিক সুখ। ফুটন্ত নার্গিসের স্নিগ্ধতা প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য। উদ্বেলিত যৌবন,আকাঙ্খাময় জীবন। সৌন্দর্য পিপাসু মন খুঁজে ফিরে বিমুগ্ধতা। ক্লান্ত,পরিশ্রান্ত হৃদয় মন ভেবে ভেবে অবিশ্রান্ত। ভাবনার জগত সৃষ্টি সুখের উল্লাস। ঋতু বৈচিত্রে প্রকৃতিতে বসন্ত বহমান। উত্তাল যৌবনে বাসন্তিহীন জীবন মরুভূমিময়। নার্গিসরা শুধু নামের সৌন্দর্যে বিমোহিত করেছে প্রেমিক হৃদয়কে। প্রেম শাশ্বত,অবি-নশ্বর,টিকে থাকবে অনন্তকাল। হাজারও রমণীর নাম হয়তবা নার্গিস। আজও চেনা হলোনা, দেখা হলোনা নার্গিস নামের রমণী। অনুভবে মিশে থাকবে শুধুই নার্গিস।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন“অনুভব-ক্রিয়া মাত্রই সুখের,যদি না তাহার সহিত কোনো গুরুতর দুঃখভয় ও স্বার্থহানি মিশ্রিত থাকে।”

যৌবনের অপর দিক-যেদিকে যৌবনের প্রতি পদক্ষেপে,সৃজনের নব নব শতদল রুপের সঙ্গে অসংখ্য জয়ধ্বনি তুলিয়া সারি বাঁধিয়া ফুটিয়া ওঠে,সে দিকের কথা বলিতে গিয়া প্রথমেই মনে পড়ে বিদ্রোহীর আত্ম-সমর্পণ-হে মোর রানি,তোমার কাছে হার মানি আজ শেষে। সযত্নে শিউলিমালা যে গলে পরিয়ে দিয়েছে সেইতো আমার নার্গিস,সে ই তো আমার হেনা। আবার সেই বিদেশিনীর সঙ্গে দেখা হ‘য়েছিল। এই দু‘বছরে কত বেশি সুন্দর হ‘য়ে গেছে সে! সে দিন সে সোজাসুজি ব‘ললে যে,(যদি আমার আপত্তি না থাকে) সে আমায়তার সঙ্গীরুপে পেতে চায়। আমি বললুম,-“না,তা হ‘তেই পারে না।” মনে মনে ব‘ললুম,-“অন্ধের লাঠি একবার হারায়। আবার। আর না যা ঘা খেয়েছি,তাইসা মলানো দায়!”


মো. সাজ্জাদ হোসেন

প্রভাষক,লাউর ফতেহ্পুর ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদ কলেজ।

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।