আপনারা আমাকে ডায়াসে দাঁড়িয়ে এদেশের ফুটপাতে পড়ে
থাকা একজন হাড্ডিসার ভিখারির কথা বলতে বলেছেন,
সার্কিট হাউজের পাশে ঘুমিয়ে পড়া একজন
উদ্বাস্তুর বায়োগ্রাফি লিখে তা
বক্তৃতায় তুলে আনতে
বলেছেন...
আমাকে আপনারা কবি ভেবে বারবার দেশদ্রোহীদের বিরুদ্ধে একটি
কবিতার জন্য অনুরোধ করেছেন, শহরের বুকে স্বস্তি
ফেরাতে একটি মিছিলের জন্য আমার সাথে
সমবেত হতে চেয়েছেন কার্টন বক্সে
ফেলে রাখা এক টুকরো মৃত
ভ্রুণের ওপর...
কিন্তু আমি সুবক্তা কিংবা সু-কবি নই! এই অসুখের শহরে আমার
সাথে এখন সমকাল ও ভগ্ন শরীরের প্রেসনোট থাকে,
পতিব্রতা একজন স্ত্রী’র বিবস্ত্র হওয়ার দুঃসাহসিক
খসড়া করা থাকে আমার ধমনী
শিরার রক্ত
প্রবাহে...
একসময় আপনারা
আমাকে দুঃশাসনের বিপক্ষে উঠে দাঁড়ানোর কথা বলেছিলেন,
আধুনিক সংস্কারের জন্য একটি সংগ্রামের সূচনা
করতে বলেছিলেন! রীতিমতো রক্ত দিয়ে
আঁকতে বলেছিলেন একটি
প্রতিবাদের দেয়াল
গ্রাফিতি...
আমাদের দেশ এখন মৃত্যু উপত্যকা, আমাদের দেশ এখন
শ্বাসকষ্ট রোগীর মতো একটি ইনহেলার খুঁজতে গিয়ে
মাথাকুটে মরে শাপলা চত্বর কিংবা
মধুর ক্যানটিনে...
আমি নিঃসঙ্গ বিপ্লবের স্ফুলিঙ্গ দেখতে পাই একটি
অনুচ্চারিত শব্দের মাঝে, পিতা হয়েও
সন্তানের লাশ শনাক্তে গিয়ে আমি
ভয়ে আঁতকে উঠে বুকের
ব্যথায় লুটিয়ে পড়ি
রক্তস্নাত একটি
কফিনের
ওপর...
তবে
কি আমরা ধুপকাঠি
জ্বালিয়ে গাঢ় অন্ধকারের মাঝেও রাজপথে
হাঁটতে থাকব সহস্র
শতাব্দী?
৬২’র শিক্ষা আন্দোলনে তৎকালীন পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠির পুলিশেরা
উপর্যুপরি গুলি বর্ষণে রক্তাক্ত করেছিল ছাত্রনেতা ওয়াজিল্লাহ ও
বাবুলের বুক! তাঁদের মুখের মানচিত্রে আপনারা স্বাধিকার
থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি নিবন্ধ লিখতে
বলেছিলেন, ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের
শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আপনারাও
আমার সাথে প্রাসঙ্গিক
হতে চেয়েছিলেন...
আমরা একটি পরিবর্তনের জন্য সাতচল্লিশে দেশ ভাগের মতো
খণ্ডিত হব, উত্তরাধিকার ফিরিয়ে পেতে ভেঙে
ফেলব রুগ্ণ নগরীর ঐতিহ্যবাহী
পুরোনো সবকটা
সীলমোহর...
আপনাদের জন্য শরীরে গণতন্ত্রের বার্তা লেখা যুবকটি ১৯৮৭ সালে পুলিশ-বিডিআরের
গুলিতে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে আত্মাহুতি দিয়েছিল, সামরিক শাসন
বিরোধী গণ-আন্দোলনের প্রতীকে পরিণত হওয়া নূর হোসেন
তখনকার সংবাদপত্র ও শহরের রঙচটা দেয়ালগুলোতে
বিক্ষোভ আর সংঘর্ষের গ্রাফিতি
হয়ে উঠেছিল...
আমি এখন জেনারেল এরশাদের বিতর্কিত সেই স্বৈর শাসনের কথা
বলছি, স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসে আপনাদেরকে
রক্তে ভেজা স্মারকলিপি হাতে ডায়াসের
সামনে দাঁড়িয়ে আন্দোলনের
একটি চরম মুহূর্ত
দেখার কথা
বলছি...
যারা আজ প্রতিবাদের অক্ষরগুলো ভেঙে ফেলতে চায়,
আমাদের দেশটাকে নগ্ন করে দেখতে চায় জরায়ুর
ঐশ্বর্য আমরা ওদের গ্রাসনালির প্রস্থচ্ছেদে
দেখব দুঃসাহসী
অন্তিম বৃত্তের
ভগ্নদশা...।