কে তুমি মানসচারী? মো. সাজ্জাদ হোসেন

 

কল্পনার জগতে ভেসে চলে মানুষের মন। সে কল্পনার সীমা পরিসীমা নেই। মন ভেসে চলে অলীক ভাবনায়। স্বপ্ন,দুঃস্বপ্নের খেলা চলে মানুষের  মনে। কিছু স্বপ্নের  স্থায়ীত্ব ক্ষণস্থায়ী,মানসপটে উঁকি দিয়ে যায়। আবার কিছু স্বপ্ন হৃদয়ের গভীরে লুকায়িত থাকে,যাকে সামনে নিয়ে আসা যায়না, যার বহিঃপ্রকাশ নেই। স্বপ্নের মাঝে যাকে দেখা যায় তাকে শুধু অনুভবে খুঁজে পাওয়া যায়। সে কে? সে কি কোন মানসী? হয়তবা। যে মানসী তুলেছে হৃদয়ের ঝংকার। সুপ্ত আবেগে উষ্ণতার পরশ জাগায়। শয়নে স্বপনে,নিশি জাগরণে সবখানে যার ছবি। সে কি শুধু ছবির মানুষ? বাস্তবে কি তার দেখা পাওয়া যায়না। মনের অলিগলিতে যার নিত্য পদার্পণ। তাকে কেন দেখা যায়না। নাকি আমার মতিভ্রম। আমি কি তাহলে অলীক ভাবনায় নিমজ্জিত। আমি কি কল্পনায় কাউকে দেখি। কল্পনার জগতে যাকে দেখি বাস্তবে কেন তার দেখা পাওয়া যায়না। 
যাকে নিয়ে সপ্ন স্বপ্ন খেলা। স্বপ্নগুলো এক অপরের সাথে পাল্লা দিচ্ছে প্রতিদিন। তাদের নালিশের কোন কমতি নেই। একটা স্বপ্ন আর একটা স্বপ্নকে পিছনে ফেলতে সদা ব্যস্ত। তাদের প্রতিযোগীতার কাছে আমি বড্ড অসহায়। তারা আমার কাছে প্রতিনিয়ত নালিশ দেয়। আমার রায় কেউ মেনে নিতে চাইনা। বাস্তবতার কোন কিছুই তারা বোঝেনা। বাস্তবতা নামক শব্দটা তাদের কাছে অচেনা। মানুষের জীবন সর্ম্পকে তাদের কোন অভিজ্ঞতা নেই। মানুষের দুঃখ কষ্টগুলো তাদের কাছে অজানা। কিছু কিছু দুঃখের স্বপ্ন আমার কানে কানে কিছু কথা বলতে চাই। বলতে পারেনা। সুখের কিছু স্বপ্ন তাদেরকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। ধাক্কা খেয়ে গড়াগড়ি দেয়। চিৎকার করে,কান্নাকাটি করে। তাদেরকে অভিশাপ দেয়।  চিৎকার করে বলে তোরা মানুষটাকে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছিস। আমি জানি তোরা কেউ তার পাশে থাকবি না। দুঃসময়ে তোরা পালিয়ে যাবি। আমি অসহায় হয়ে তাদের দিকে চেয়ে থাকি। আমি কিছুই বলতে পারিনা। তারা আমাকে কিছু করতেও দেয়না। সুখের স্বপ্নগুলো আরও জোরে জোরে চিৎকার করে। দুঃখের স্বপ্নগুলোকে স্তব্ধ করে দেয়। প্রতিনিয়ত আমাকে সুখের রাজ্যে নিয়ে যায়। কত কিছু দেখায়। আমি নিজেও তাদের রাজ্যে প্রবেশ করে বিভোর হয়ে থাকি। আমি মাঝে মধ্যে ভুলে যায় সুখের অন্য পৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে দুঃখ। আমিও স্বার্থপরের মত চলি। মনে মনে বলি দুঃখকে আমি অলিঙ্গন করতে পারবনা। তারা যেন আমার জীবন থেকে চলে যায়। তাদেরকে আমার জীবনে স্থান দিতে চাইনা। সুখের স্বপ্নগুলো আমার জীবনে কাকে কাকে নিয়ে আসতে চাই আমি নিজেও বুঝে উঠতে পারিনা। তারা মনে হয় আমাকে সম্মোহিত করে রাখতে চাই। আমাকে উন্মাদ করে দেয়। আমার অন্তরে ভালোবাসার পরশ জাগায়। আঘাত পেলে স্নেহের পরশে আমাকে শান্ত করে। সুখের গান শোনায়। আমাকে রোমাঞ্চিত করে। আমার হৃদয়টা পুলকিত হয়। বিশ্বাসটাকে দৃঢ় করতে চাই। তবে পুরোপুরি অস্থা  তৈরি করতে পারেনা। আস্থার একটা ঐতিহ্য আছে। এটা একদিনে তৈরি হয়না। সময় এবং দিনের হিসেব করে আস্থা কারও মনে স্থান করে নিতে পারেনা।
সুখের স্বপ্নগুলো দুঃখের সাথে ঝগড়া করে আমাকে আলোর পথ দেখায়। সুখের পৃথিবীর সমস্ত অলিগলিতে একনিমিষে আমাকে নিয়ে যায়। কখনও দিবালোকে কখনও ঘুমের ঘোরে। তাদেরকে প্রশ্রয় দিতে হয়। প্রশ্রয় দিতে আমি বাধ্য। আমি নিজে কখনও অন্ধকারের পথে চলতে চাইনা। অন্ধকারের পথে একা আর কত দিন চলতে পারব। আমি আলো চাই। আলো। কিন্তু অন্ধকারকে পরাস্ত করে যারা আমাকে আলোর পথ দেখাবে তারা কোথায়। তাদের কন্ঠ এত ক্ষীণ কেন? তাদের যুক্তি এত দুর্বল কেন? অন্ধকারের সাথে লড়াই করার কি ক্ষমতা তাদের নেই। আমাকে শক্তি যোগাতে তারা ব্যর্থ হচ্ছে কেন? নাকি তারা আমাকে ধোঁকা দিতে চাই। নাকি আমার শক্তি সামর্থ্য,মেধা বুদ্ধির প্রখরতা নেই। এত এত স্বপ্ন মন ছুয়ে যায় অথচ আমি তাদেরকে শক্ত করে ধরে রাখতে কেন পারিনা। স্বপ্ন মানুষকে বড় করে। জীবনে চলার পথ দেখায়। সংকীর্ণ পথটাকে বড় করে। জীবনকে উপভোগ করতে শেখায়। অতীতকে দেখা যায়। ভবিষ্যতকে দেখা যায়না। তবুও মানুষ ভবিষ্যতকে জয় করতে চাই। জয় করতে ব্যস্ত সবাই। আমি প্রকৃতির বাইরেতো যেতে পারিনা।প্রকৃতির নিয়মকে মেনে নিতেই হবে।
আলো আঁধারের মাঝে আমি কাকে যেন দেখতে পাই। আবছা অলো। কিছুটা আলো আবার কিছু অন্ধকারে যাকে দেখি তার স্ক্র্যাচ তৈরি করতে পারিনা। আমি অনুপ্রেরণা চাই। আমি মানবের ভালোবাসা চাই। ভালোবাসা তালাবদ্ধ হৃদয়ের দুয়ার খুলে দিতে পারে। আমি উৎসাহিত হতে চাই। ব্যর্থতার গ্লানিকে মুছে ফেলতে চাই। নতুন উদ্যমে পথ চলতে চাই। আমার মানসলোকে যাকে দেখতে পাচ্ছি সে তো মানসী। মানসী তুমি কে? আমার মুমূর্ষ আবেগ জাগ্রত হচ্ছে। মনের গোপন কোণে তৈরি হচ্ছে নতুন অনুভূতি। মন আমার ইচ্ছাধীন নয়। আমার মন যা চাই তার মত করে চাই। মন যারে চাই,প্রাণ যারে চাই সে কি শুধু তুমি। তুমি  আমার একমাত্র মানসচারী।

প্রভাষক,লউর ফতেহপুর ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদ কলেজ
নবীনগর,ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।