জন্ম যদি তব বঙ্গে ।। শিখা সেনগুপ্ত

 


পার্কস্ট্রীট সিমেট্রী। শিয়ালদহ স্টেশনের দিক দিয়ে  গেলে লোয়ার সার্কুলার রোড ধরে মৌলালী, এন্টালি মোড় পেরিয়ে জোড়া গীর্জা, মল্লিকবাজার হয়ে পার্কস্ট্রীট মোড়ের আগেই ঐ রাস্তার পরেই সিমেট্রীর গেট। বাঁ দিকে তাকালেই তাঁর আবক্ষ মুর্তি। নীচে সেই বিখ্যাত প্রয়ানলেখ, 
"দাড়াও পথিকবর, জম্ম যদি তব বঙ্গে, তিষ্ঠ ক্ষণকাল এ সমাধিস্থলে....."। 
তিনি মহাকবি মাইকেল মধুসুদন দত্ত। ভিতরে রয়েছে তাঁর সমাধি। যে জায়গাটি আপামর বাঙালির তীর্থস্বরূপ,কিছুটা না জানা বা বাঙলা ভাষা সাহিত্য গৌরবের, বাঙালি অস্মিতার, সচেতনতার অভাবে অল্পসংখ্যক মানুষের আগ্রহের শ্রদ্ধাস্থল হিসেবে রয়ে গেছে। গেটে বসা মানুষটি অন্য সব সমাধির মধ্যে তাঁর সমাধিটি সুনির্দ্দিষ্টভাবে দেখিয়ে দেবেন।1873 সালের 29 শে জুন মাইকেল  মধুসুদন দত্তের মৃত্যুর একদিন পর, কবির চিরসঙ্গী,তিনদিন আগে মৃতা, স্ত্রী হেনরিয়েটার সমাধির পাশেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয় বন্ধু গৌরদাস বসাকের চেষ্টায়। কবির স্বজাতি, বাঙালিয়ানা ইত্যাদি বিতর্কে এংলিকান চার্চের পাদ্রীরা শেষকৃত্যে আসতে চাইছিলেন না। তাঁর শেষ কবিতা, প্রয়াণলেখের আকুতিতে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় তাঁর স্বদেশ,মা বাবা, এমনকি স্বধর্মের প্রতি অনুরাগ! লিখলেন,
"জননীর কোলে শিশু লভয়ে যেমতি বিরাম, মহীর পদে মহানিদ্রাবৃত দত্তকুলোদ্ভব কবি শ্রী মধুসুদন"।
' মাইকেল' নন,  'শ্রীমধুসুদন', এটাই ছিল নিজের কাছে নিজের শেষ পরিচয়।কবিতার শেষ অংশে জন্মস্থান, পিতৃমাতৃ পরিচয় দিয়েছেন অর্থাৎ উত্তর প্রজম্ম তাঁকে যেন এইভাবে মনে রাখে।
"যশোরে সাগরদাঁড়ি, কপোতাক্ষ তীরে জম্মস্থান,জম্মদাতা রাজনারায়ন নামে, জননী জাহ্নবী"
 কবিতাটি অনেকেই জানেন কিন্তু তাঁর মৃত্যুরও বেশ কয়েক বছর পরে সেই বন্ধু গৌরদাস বসাকের চেষ্টায় এই সমাধির উপর সেই প্রয়াণলেখের ফলক বসানো হয়। কিছুটা অস্পষ্ট,ধুলোমাখা, লতাপাতা সরিয়ে, এই সমাধিস্থলে বসে সে কবিতা পড়লে যে কোন বাঙালি শিহরিত হবেন, চোখ অশ্রুসিক্ত হবে। স্ত্রী হেনরিয়েটা ছাড়া বন্ধু গৌর ও বিদ্যাসাগর মশায় মধুসুদনের শুস্ক জীবনে সজল বারিধারার মত ছিলেন। পাঁচিলের বাইরে ব্যস্ত, চলমান কলকাতা, ভিতরে নির্জন সমাধিস্থলে দুএকটি গাছ, পায়ের নীচে ঘাসের আস্তরন, কেমন উদাস করা এলোমেলো হাওয়া বয়। মন হু হু করে ওঠে,চোখের সামনে ভেসে ওঠে প্রায় দেড়শো বছর আগে 29শে জুনের আশেপাশের সময়। অতবড় মহাকবি, তিনি তাঁর কাব্যকবিতা, নাটক প্রহসনের জন্যে যথেষ্ট এবং যথার্থ অর্থমুল্য পাননি,ব্যারিস্টারীতেও সফল হন নি,অপরিমিত মদ্যপান ও অমিতব্যয়িতায় তিনি তখন কপর্দকশূন্য, রোগজর্জর,লিভার নষ্ঠ, গলা দিয়ে গিলতে পারেন না,হার্টের ব্যামো। দারিদ্র অপুষ্টিতে হেনরিয়েটাও মরণাপন্ন। দক্ষিণ  কোলকাতার সরু গলির ভাড়া বাড়ি থেকে দম্পতিকে ভর্তি করা হল আলিপুর দাতব্য হাসপাতালে! ততদিনে মহাকবির জীবনপ্রদীপ নিভু নিভু। শুনেছেন যাজকেরা অস্বীকার করছেন তার শেষকৃত্য করতে। হেনরিয়েটার মৃত্যু সংবাদ তাকে জানান হয় নি।ইতিমধ্যে লিখে ফেলেছেন তাঁর প্রয়ানলেখ,
"দাড়াও পথিকবর, জন্ম যদি তব বঙ্গে......।"
তিনি কি মূত্যুর পদধ্বনি শুনতে পেয়েছিলেন? শেষ সময়ে ছটফট করেছিলেন প্রিয়তমা পত্নীকে একবার দেখবেন বলে?

অথচ এমন তো হওয়ার কথা ছিল না।সম্পন্ন অভিজাত ঘরের সন্তান তিনি অসামান্য প্রতিভাধর। বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান অপরিমেয়। 1824 সালের 25শে জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের যশোর জেলার কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। বাবা রাজনারায়ন দত্ত কোলকাতার নামকরা উকিল।সাগরদাঁড়ি ছাড়াও কোলকাতায় তার বড় বাড়ি ছিল। মা জাহ্নবী দেবী ছিলেন জমিদার কন্যা। ছোটবেলায় মায়ের কাছেই বাংলা রামায়ন, মহাভারত পড়েন। গ্রামের পন্ডিতমশায়ের কাছে সংস্কৃত ও পাশের গ্রামের ইমাম সাহেবের কাছে আরবি ফারসি শেখেন। তের বছর বয়সে কোলকাতায় এসে স্কুল পাঠ শেষ করে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। এই সময় তিনি  বন্ধু হিসেবে পান ভূদেব মুখোপাধ্যায়, রাজনারায়ন বসু, প্যরিচরন সরকার, গৌরদাস বসাককে যারা পরে স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। এই সময় অধ্যাপক ডি এল রিচার্ডসন তার মধ্যে কাব্যানুরাগ জাগিয়ে তোলেন। মধুসুদন ইংরেজ কবি মিল্টনের অন্ধভক্ত ছিলেন। এই সময় তিনি ইউরোপীয় সভ্যতায় আকৃষ্ট হয়ে খ্রীষ্টধর্ম গ্রহন করবেন বলে মনস্থ করেন।পরবর্তীকালে যখন বাংলা সাহিত্যে কাব্যরচনায় কিছুটা স্থান করে নিয়েছেন, বন্ধু রাজনারায়ন বসুকে এক পত্রে লিখেছিলেন,
"হলফ করে বলতে পারি, আমি দেখা দেবো এক বিশাল ধুমকেতুর মত।.."
 তা সেই ধুমকেতুর মতই 49 বছরের স্বল্প জীবন তিনি যাপন করেছিলেন। 1843 সালে রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দোপাধ্যায়ের হাত ধরে তিনি ওল্ড মিশন এংলিকান চার্চে খ্রিস্টধর্ম গ্রহন করেন। তার নামের আগে মাইকেল নাম বসে। বিধর্মী হওয়াতে পিতা রাজনারায়ন দত্ত তাকে ত্যাজ্যপুত্র করেন। হিন্দু কলেজে পড়াশুনার অধিকার হারান। সে সময় তিনি শিবপুরে বিশপস কলেজে লেখাপড়া চালিয়ে যান। এখানে তিনি গ্রীক ও ল্যাটিন শেখেন। পুত্র স্বধর্মে ফিরবে এই আশায় পিতা চারবছর খরচ চালিয়ে যান, পরে নিরাশ হয়ে টাকা পাঠানো বন্ধ করেন। মাইকেল মধুসুদন তখন স্বোপার্জনের আশায়  বিশপস কলেজের এক মাদ্রাজী বন্ধুর সহায়তায় মাদ্রাজ চলে যান ও সেখানে অরফান এসাইলাম স্কুলে চাকরি নেন। এরপর সেখানে সাংবাদিক হিসেবে ইউরেশিয়ান ও মাদ্রাজ হিন্দু ক্রনিকলে কাজ করেন। মাদ্রাজ স্পেকটেটর কাগজেও সহ সম্পাদকের কাজ করেন। লেখালেখি সবই চলছিল ইংরেজিতে,রিজিয়া নাটক লিখলেন ব্লাঙ্ক ভার্সে যেটিকে অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রাথমিক ধাপ বলা যায়।লিখলেন ক্যাপটিভ লেডী কাব্যগ্রন্থ। মাদ্রাজ ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি, ইতিহাস,ভুগোলও পড়িয়েছেন কিন্তু শ্বেতাঙ্গ না হওয়ায় মাইনে পেতেন সামান্য।ক্যাপটিভ লেডি পাঠালেন তখনকার রাজধানী কোলকাতায়।দুএকজন প্রশাংসা করলেও সমালোচনায় বিদ্ধ করলেন অনেকে। শিক্ষাবিদ বেথুন সাহেব তাকে বাংলায় লিখতে পরামর্শ দিলেন। 1856 সালে ফিরে এলেন কোলকাতায়। গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থা করতে চাকরি নিলেন পুলিশ কোর্টে কমার্শিয়াল ক্লার্ক হিসেবে, মাইনে 125 টাকা। এই সময় বাংলায় লেখা শর্মিষ্ঠা নাটক(1859) আলোড়ন ফেলে দিল। তিনি উৎসাহ পেয়ে গেলেন।একের পর এক লিখে গেলেন ব্রজাঙ্গনা কাব্য(1860),বীরাঙ্গনা কাব্য(1860)। অমিত্রাক্ষর ছন্দে লিখলেন তিলোত্তমা সম্ভব কাব্য। প্রহসন নাটক 'একেই কি বলে সভ্যতা?'(1860) ও 'বুড়ো শালিকের ঘারে রো'(1860)। 'পদ্মাবতী' নাটকও লিখলেন অমিত্রাক্ষর ছন্দে।ইতিমধ্যে তার  সারাজীবনের সঙ্গী  ফরাসি স্ত্রী হেনরিয়েটা এসেছেন জীবনে যিনি সুখে দুঃখে এই মহাকবিকে আগলে রেখেছিলেন।মহা প্রতিভাধর কবি খুব  অল্প সময়ের মধ্যেই এগুলি রচনা করেছিলেন। বাংলার সাহিত্য জগতে একটা সাড়া পড়ে গেল।কৃতজ্ঞতাস্বরূপ  বঙ্গভাষাকে মাতৃরূপে সম্বোধন করে তিনি লিখলেন,
"হে বঙ্গ, ভান্ডারে তব বিবিধ রতন
তা সবে(অবোধ আমি!)অবহেলা করি
পরধন লোভে মত্ত করিনু ভ্রমণ................
স্বপ্নে তব কুললক্ষী কয়ে দিলা পরে
'ওরে বাছা, মাতৃকোষে রতনের রাজি
এ ভিখারি দশা তবে কেন তোর আজি?
যা ফিরি অজ্ঞান তুই যা রে ফিরি ঘরে
পালিলাম আজ্ঞা সুখে, পাইলাম কালে
মাতৃভাষা রূপ খনি পুর্ণ মনিজালে।"
এ কবিতায় যেমন তার হৃদয় ঊৎসারিত আবেগের প্রকাশ হয়েছে তেমনই বাংলা  কবিতাকে একটানে অনেকটা আধুনিক পর্যায়ে নিয়ে এলেন। সেই 1856 সালের সিপাহী বিদ্রোহের টালমাটাল সময়, এরই মধ্যে বিদ্যাসাগর মশায়ের উদ্যোগে বিধবা বিবাহ আইন পাস হল, নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে দীনবন্ধু মিত্র লিখলেন 'নীলদর্পণ' নাটক। সরকার সে নাটক নিষিদ্ধ ঘোষনা করল। আগুনের ফুলকির মত নীলদর্পন বাংলার আনাচে কানাচে অভিনীত হতে থাকল।বলা হয় জেমস লঙ সাহেব মাইকেল মধুসুদন দত্তকে অনুরোধ করে রাতারাতি এই নাটকের ইংরেজি অনুবাদ করিয়েছিলেন এবং তাকে সরকারের রোষ থেকে বাঁচাতে অনুবাদক হিসেবে নিজের নাম দিয়েছিলেন। তবে মধুসুদনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি 'মেঘনাদবধ কাব্য'। একমাত্র এই কাব্যটি তিনি পুরো বছর ধরে রচনা করেছিলেন। অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখা এই কাব্যে অপুর্ব শব্দচয়নে যে সৃষ্টি তিনি করেছিলেন সেখানে রাবনকে দেশপ্রেমিক, স্নেহময় পিতা ইত্যাদি নানা মহত্বে ভূষিত  করেছেন।অন্য দিকে রামকে পররাজ্যলোভী অধম নর হিসাবে লিখেছেন। প্রায় 160 বছর আগে এমন বিশ্লেষণ যথেষ্ট সাহসিকতার দাবী রাখে।তাছাড়া এ কাব্যে সংস্কৃত শব্দ তৎসম শব্দে সরাসরি প্রয়োগ করে বাংলা শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ করেছেন। কাব্যের গাম্ভীর্য বজায় রইল আবার  শ্রুতিমধুরও হল। জ্যেষ্ঠ্য পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুর পরে রাবনের বিলাপের প্রথম লাইন,
"সম্মুখ সমরে পড়ি বীরচূড়ামনি বীরবাহু চলি যবে গেলা অস্তাচলে....."
বা প্রবাদ হয়ে যাওয়া সেই বাক্য, 'একে একে নিবিছে দেউটি' রাবনের পিতৃহৃদয়ের হাহাকার প্রকাশ করে। ইন্দ্রজিতের যজ্ঞগৃহে লক্ষণকে পথ দেখিয়ে যখন বিভীষণ নিয়ে যান, বাসববিজয়ী মেঘনাদ পিতৃব্যকে বাক্যবাণে তীব্র ধিক্কার জানান।মহাকবি মাইকেল মধুসুদন দত্ত এখানে যে অপুর্ব শ্রুতিমধুর উপমা দিয়েছেন তা স্মর্তব্য।
"স্বচ্ছ সরোবরে করে কেলি রাজহংস পঙ্কজ কাননে
যায় কি সে কভু, প্রভু, পঙ্কিল সলিলে শৈবাল দলের ধাম?
মৃগেন্দ্রকেশরী কবে, হে বীর কেশরী, সম্ভাসে শৃগালে মিত্রভাষে?......."
 1861 সালে পাঁচটি সর্গ নিয়ে যখন 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের প্রথম খন্ড প্রকাশিত হয়, দেশজুড়ে সাহিত্যিক মহলে উচ্চ প্রশংসিত হয়। কেউ কেউ তাকে ইংরেজি সাহিত্যের মিলটনের সাথে তুলনা করেন। তার হাত ধরেই বাংলায়  অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তন হয়। 1866 সালে প্রকাশিত তার 'চতুর্দশপদী কবিতাবলি' বাংলা সনেটের প্রকৃষ্ট উদাহারন। মাতৃ হৃদয়ের আকুলতা বোঝাতে সনেটে তিনি লিখলেন, 'যেওনা নবমী নিশি লয়ে তারাদলে/  গেলে তুমি দয়াময়ী এ পরাণ যাবে'...। সমস্ত মান যশ সরিয়ে 1861 সালে তিনি ইংল্যাণ্ডে ব্যারিস্টারি পড়তে যান। ইতিমধ্যে তার পিতৃমাতৃবিয়োগ হয়েছিল। মধুসুদন একমাত্র পুত্র।এস্টেটের কর্মচারীরা কিছুদিন টাকা পাঠিয়ে আর টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিলেন। আত্মীয় স্বজনেরা মিথ্যা মামলা করে তার সব সম্পত্তি গ্রাস করে। এই সময়ে মধুসুদনের জীবনে এমন দুরবস্থা যে ব্যারিস্টারি পড়া তো দুরস্থান, স্ত্রী সন্তান নিয়ে অনাহারে মারা যেতে হবে। এই সংকট থেকে উদ্ধার করেন ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর মশায়। তিনি রত্ন চিনতেন।মধুসুদনের করুণ আবেদনে সাড়া দিয়ে তিনি টানা অর্থসাহায্য করে গেছেন, এমনকি জমি বন্ধক দিয়ে, ব্যাংক থেকে ধার নিয়েও, যতদিন না মাইকেল ব্যারিষ্টারি পাশ করে দেশে ফিরে আসেন। প্রবাস থেকে বিগলিত মধুসুদন লিখলেন,
 'বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভুবনে
করুণার সাগর তুমি সেই জানে মনে
দীন যে, দীনের বন্ধু!'
 বিদেশে থেকে তিনি আরও দুটি বিখ্যাত কবিতা লিখেছিলেন। তখন তিনি ফ্রান্সের ভার্সাই শহরে রয়েছেন। জন্মভূমির পাশে বয়ে চলা নদীকে মনে করে লিখলেন, 'কপোতাক্ষ নদ' কবিতাটি।
'সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে
সতত তোমারই কথা ভাবি এ বিরলে
সতত যেমতি লোক নিশার শ্রবনে
শোনে মায়াযন্ত্রধ্বনি, তব  কলকলে.....'। 
অমরত্বের আকাঙ্খা নিয়ে বঙ্গমাতার কাছে তার সেই আকুল নিবেদনের কবিতাটি যেটি অমর, অক্ষয় হয়ে আছে,
"রেখো মা দাসেরে মনে
এ মিনতি করি পদে
সাধিতে মনের সাধ
ঘটে যদি পরমাদ
 মধুহীন করোনা গো তব মন কোকনদে
প্রবাসে দৈবের বশে
জীবতারা যদি খসে
এ দেহ আকাশ হতে নাহি খেদ তায়
জম্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে
 চিরস্থির কবে নীর হায়রে জীবন নদে"
দেশে ফিরে বিদ্যাসাগর মশায়ের শংসাপত্র পেশ করেও ব্যরিষ্টারি জমল না। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। বিলাসিতা, অমিতব্যয়িতার কারনে ধারে ডুবে গেলেন।অতিরিক্ত  মদ্যপানের ফলে স্বাস্থ্য দ্রুত ভেঙে পড়তে লাগল।উঠে দাড়ানোর জন্য মামলার কারনে ঢাকা গেলেন। সেখানে কবি হিসেবে অভ্যর্থনা পেলেন কিন্তু আইনের পেশায় অর্থাগম হল না উপরন্তু ম্যালেরিয়ায় শয্যাশায়ী হয়ে গেলেন। মামলা ছেড়ে কোলকাতায় ফিরলেন। মৃত্যুর একবছর আগে মানভূমে(বর্তমান পুরুলিয়া) সিংদেও রাজপরিবারের আইনি উপদেষ্টা হিসেবে গেলেন কিন্তু সেখানেও মামলা হেরে, প্রাপ্য টাকা না পেয়ে একপ্রকার পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। নিঃস্ব কপর্দকশূন্য অবস্থায় রোগজর্জর মহাকবির মাত্র 49 বছর বয়সে 1873 সালের 29 শে জুন আলিপুরের দাতব্য হাসপাতালে জীবনপ্রদীপ নির্বাপিত হয়।

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।