সালমার বিয়ে হয়েছে আজ পাঁচ বছর।স্বামীর সংসারে বেশ সুখে আছে তবুও কেনো জানি অভিযোগ।এত সুখের পর ও সে কেনো জানি অসুখি।স্বামীর প্রতি সন্তুষ্ট না।কারণ তার বাড়ি গাড়ি নেই।তার সই তানহা খুব সুখে আছে তার বাড়ি গাড়ি সব আছে।সুখ যেন তার সংসারে উপছে পড়ছে।এই নিয়ে প্রায় সময় স্বামী সাব্বির'র সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়।প্রায় সময় স্বামীকে খোটা দেয়,
বিবাহিতা জীবনে তুমি কিছুই দিতে পারনি।সব সময় অভাব আর অভাব।এখনো ভাড়া বাসায় থাকি।অথচ আমার সই তানহা কি সুখে আছে।তার বাড়ি গাড়ি কোন কিছুর অভাব নেই।শুধু আমার কপালটা পোড়া এখনো কিছুই করতে পারেনি।স্বামীটা হয়েছে অকর্মাঢেঁকি।পোড়া কপাল আমার।
স্বামী অনুনয়ের স্বরে বলে,
প্লিজ সালমা শান্ত হও,ধৈর্যধর সব হবে।তাছাড়া আমরাতো বেশ সুখে আছি।খাচ্ছি দাচ্ছি ঘুমাচ্ছি,এরপর ও তোমার অভিযোগ কিসের?
এর নাম সুখ না,এর নাম অশান্তি, আমি এভাবে আর থাকতে পারব না।
কেনো কী সমস্যা?
জানো না কী সমস্যা?
না জানি না।
বিয়ের পাঁচ বছর পার হলো,এখনো আমাকে এক পদ অলংকার বানিয়ে দিতে পারলে না।মাস শেষে যা মাইনে পাও বাজার সদায় আর বাড়ি ভাড়া দিলে শেষ।একটু যে শাড়ি চুড়ি কিনব,তাও পারি না।কত করে বললাম একটা প্ল্যাট কিনতে তাও পারছ না।এভাবে আর কত,আমি আর পারছি না।
সালমা বুঝতে চেষ্টা কর।আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ স্বামীর আয় বুঝে ব্যয় করা।অন্যের বউয়ের সাথে তুলোনা না করা।তোমার বাড়তি চাহিদা আমি কিভাবে মিটাব?তাছাড়া আমি চুরি ডাকাতি করতে তো পারি না।
আমি অতসত বুঝি না।আমার বাড়ি গাড়ি চাই।তা না হলে তোমার সঙ্গে থাকব না।
এই বলে সালমা ধপাস করে শুয়ে পড়লো।স্বামী অফিস থেকে ক্লান্ত হয়ে ফিরেছে।কোথাও একটু টেককেয়ার করবে,ভাত তুলে খাওয়াবে তা না।অভিযোগের পাহাড় তুলে শুয়ে পড়েছে।স্বামীর কি আর করা নিরুপায়,নিজের ভাত নিজে তুলে খেলো।তবুও স্ত্রীর প্রতি কোন অভিযোগ নেই। স্ত্রীর দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করে।অসুস্থ হলে সেবা করে।ঔষধ পথ্য সময়মতো কিনে দেয়।শাড়ি চুড়ি নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী কিনে দেয়।মোটকথা বউয়ের খুব টেককেয়ার করে।সে খুব ভালো সৎচরিত্রবান।অফিসের হিসেবে কোন গড়মিল নেই।এক টাকা ও এদিক সেদিক করেন না।খুব সতর্কতার সহিত ক্যাসিয়ারের দায়িত্ব পালন করেন।এজন্য অফিসের বস তাকে খুব পছন্দ করে।কিন্তু বউয়ের কাছে তার কোন মুল্য নেই।কারণ সে অফিসের টাকা মেরে বাড়ি গাড়ি করে না কেনো?সাব্বিরের হয়েছে যত জ্বালা।সে মন খারাপ করে বসে আছে।এমন সময় বসের আগমন।তাকে আনমনা হয়ে ভাবতে দেখে বস বলল,
সাব্বির সাহেব মন খারাপ মনে হয়?
সে স্বাভাবিক হয়ে স্যারকে সালাম দিয়ে বলল,
জ্বি না স্যার?
তো একটা সুসংবাদ?
জ্বি স্যার বলুন?
আগামী শুক্রবার আমার মেয়ের বিয়ে, আপনারা স্বপরিবারে আমন্ত্রিত।আসবেন কিন্তু।তবে একটা কথা...।
জ্বি স্যার বলুন?
কোন গিফট আনবেন না।
সে কী করে হয় স্যার?আপনি আমাদের বস, আপনার মেয়ের বিয়েতে খালী হাতে যাব?
হুম যাবেন।কারণ এটা আমি পছন্দ করি না।আমার কাছে নেহায়েত এটা ছোটলোকি মনে হয়।তাছাড়া অনেকে অনেক কষ্ট করে গিফট দেয়।আমি কারো কষ্টের কারণ হতে চায় না।আল্লাহপাক আমাকে যা দিয়েছেন তা থেকে আমি কিছু মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজনকে খাওয়াব।কারণ এটা আত্মীয়-স্বজনের হক।আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় করা।কিন্তু সময়ের অভাবে তাদের সাথে তেমন একটা যোগাযোগ করতে পারি না।আজ সুযোগ এসেছে মেয়ের বিয়ের উছিলায় এই হক আদায় করতে চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
সাব্বির মনে মনে বলে স্যারের মতো ভালো মানুষ হয় না।আজকাল বিয়েতো নয় যেন ব্যবসা...।
দাওয়াত খাওয়ানোর বিনিময়ে ব্যবসা করে চলেছেন প্রতিনিয়ত সবাই।এইতো সেদিন এমপি সাহেবের ছেলের বিয়েতে শুনলাম,উপহার পড়েছে খাসী গরু,মহিষ,তিন থেকে চারশত,আর অলংকার পড়েছে,পঞ্চাশ থেকে ষাট ভরি।দাওয়াত খাওয়ানোর নামে চলছে চাঁদাবাজি।এভাবে চলছে সমাজে বড়বড় পরিবারের বিয়েগুলো।আজ এক ব্যতিক্রমধর্মী বিয়ে হতে চলেছে। এতে সবাই খুশি।
সাব্বির তার বউকে নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলো।বিয়ের পর থেকে বউয়ের প্রতি নির্দেশ পর্দা করে বাইরে বের হবে। যাক বউ তা পালন করে চলেছে।আজ ও অনুরুপ সালমা পর্দা মানে বোরকা পরে হিজাব করে বিয়ের অনুষ্ঠানে এসেছে।কিন্তু আজকাল বিয়ের অনুষ্ঠান নয়, যেন নারী প্রদর্শনী,সবাই পার্লার থেকে সেজে গুজে বেপর্দায় আসে।লোকের বাহাবা পাওয়ার জন্য।আজ বসের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে সেই অবস্থা।সব মহিলা বেপর্দা, একমাত্র সাব্বিরের স্ত্রী সাধারণ পোশাকে বোরকা পরে এসেছে।আর এই নিয়ে অনেকে হাসি ঠাট্টা করেছে।শুধু তাই নয় ক্ষ্যাত বলেও সম্বোধন করেছে।আর তা সালমার গায়ে লেগেছে।সালমা রেগে বোম।বাসায় ফিরে শুরু করেছে যুদ্ধ...।
এই হতছাড়া আমি আর তোর সংসার করব না।
কেনো?
আজ এতবড় অপমান সইতে হলো আমাকে। শুধু তোর জন্য,আমার যদি দামী শাড়ি চুড়ি গহনা থাকত,তাহলে লোকে আমাকে অপমান করে কথা বলতো না।আমি বোরকা পরেছি বলে আমাকে ক্ষ্যাত বলে অপমান করলো।এত অপমান, আমি আর থাকব না,তোর সংসারে।
প্লিজ সালমা শান্ত হও।কোথাকার কে,কী বলেছে না বলেছে এই নিয়ে সংসার ভেঙ্গে ফেলবে তা কী করে হয়।একটা প্রবাদ আছে,পাঁচে লোকে কিছু বলে।এই সব পাঁচে লোকের কথায় কান দিতে নেই।তাছাড়া বোরকা হলো নারীর সৌন্দর্য।বোরকা পরলে নারীর সৌন্দর্য ফুটে উঠে।আর না পরলে বিশ্রী লাগে।বখাটেরা ক্ষেপায়,টিস করে,নোংরা কথাবার্তা বলে।
এসব তোমার কথা আর কারো না।
ঠিক বলেছে,আমি তোমার স্বামী আমি ছাড়া তোমাকে নিয়ে কথা বলার কারো অধিকার নেই।
এইসব বলে আমার মন ভুলাতে পারবে না।আমি এবার সত্যি...।
চলে যাবে এইতো।
ঠিক তাই।
আমার মন বলছে,তুমি আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে না।কারণ তুমি আমাকে ভালোবাসো।তাছাড়া আমাদের দুজনের মাঝে অসম্ভব রকম ভালোবাসা,যা টাকার চেয়ে মুল্যবান।একটা কথা মনে রেখো,ভালোবাসা অন্তর দিয়ে অনুভব করতে হয়।এইজন্য কোটি কোটি টাকার প্রয়োজন হয় না।আমি তোমাকে গাড়ি বাড়ি দিতে পারব না,ঠিক আছে।তবে ভালোবাসা দিয়ে সুখে রাখতে পারব ইনশাআল্লাহ।আমি তোমাকে যে রকম ভালোবাসি,আমার মনে হয় না,কোন কোটিপতি স্বামী তার স্ত্রীকে এমন ভালোবাসা দিবে।সবশেষে একটা কথা বলব,টাকা দিয়ে ভালোবাসার পরিমাপ করো না।হেরে যাবে।কবিতার ভাষায় বলছি,
ফিরে এসো সালমা
ভালোবাসি তোমায় অনেকবেশি
থাকতে পারব না তোমাকে ছাড়া।
কে শুনে কার কথা।সালমা সত্যিই চলে গেল।কিন্তু বাবার বাড়িতে না গিয়ে প্রাণপ্রিয় সই তানহার বাড়িতে গেল।যার গুনগান এতদিন সাব্বিরকে শুনিয়েছিল।তানহা তাকে দেখে অবাক।ভিতরে নিয়ে বসতে দিলো।তারপর দুজনে কুশল বিনিময় করলো।তানহার স্বামী বিরাট ব্যবসায়ী। তার বাসাভর্তি ফার্নিচার। দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়।সালমা কথার এক পর্যায়ে বলল,
তানহা তুই খুব সুখে আছিস মনে হয়।বাসা ভর্তি ফার্নিচার অনেক সুন্দর, তার উপরে সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছিস।এসব কোত্থেকে এনেছিস?
সালমা ঠিক বলেছিস।আমি খুব সুখে আছি।আমার স্বামী খুব ভালো।চাওয়ার আগে সবকিছু এনে দেয়।শোকেছের ভিতরের সবকিছু বিদেশী।বিদেশ থেকে এনেছে।
দেখেতো তাই মনে হয়।
তাদের কথোপকথনের মাঝে উপস্থিত হলো তানহার স্বামী।সে এ সময় বাসায় আসে না।অনেক রাত করে বাসায় ফিরে।কখনো কখনো ফিরেও না।মেয়ে মানুষ নিয়ে বাইরে রাত কাটায়,ফুর্তি করে।এসব নিয়ে তানহা কিছু বললে মারধর করে।অফিসের একটা ফাইল রেখে গেছে তাই নিতে এসেছে।সালমাকে দেখে পরিচয় জানতে চাইলে তানহা বলল,
তুমি ওকে চিনলে না,ওহ আমার সই সালমা।বিয়ের সময় দেখেছিলে,,,।
মনে নেই।তাছাড়া এত চিনতে হবে কেনো?
না মানে,...।
মানে মানে কর নাতো। আমার ফাইলটা দাও দেরী হয়ে যাচ্ছে।
তানহা ফাইলটা হাতে দিয়ে বলল,
রাতে বাসায় খাবে না?
না আমি বাইরে থেকে খেয়ে আসব।
কেনো?
সেই কৈফিয়ত কী তোমাকে দিতে হবে?চলি আমার ব্যাপারে কখনো নাক গলাবে না।
তানহার স্বামীর রুঢ় আচরণ শুনে সালমা বুঝে গেছে তানহা কী সুখে আছে।সে বুঝতে পারলো টাকার মাঝে সুখ নেই।সে তার ভুল বুঝতে পারলো।ফিরে গেল তার স্বামীর কাছে।তাকে দেখে সাব্বির বলল,
সালমা তুমি?
হুম আমি।
ফিরে আসলে যে।
কারণ তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না।সাব্বির তুমি ঠিক বলেছে।অসীম টাকার মাঝে সুখ নেই।যা আজ আমি নিজের চোখে দেখে এসেছি।আমার সই তানহার কোটি টাকা থাকা সত্বে সে সুখী না।কারণ তার স্বামী তাকে ভালোবাসে না।তাই আমি আমার স্বামীর সুখী সংসারে ফিরে এসেছি।আমি তোমাকে ছেড়ে আর কোথাও যাব না।শুধু তাই নয়,বাড়তি কোনকিছু দাবী করব না।আয়ের অধিক ব্যয় করব না।গাড়ি বাড়ি দাবী করব না।যা আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকব ইনশাআল্লাহ।
সত্যি বলছ?
হুম সত্যি।
দুজনের ভুল বুঝাবুঝির অবসান হলো।শুরু হলো সুখী জীবন "সুখী সংসার"।