লাল জামা ।। এস এম নওশের


মেয়ে কে নিয়ে  মার্কেটে এলেন ফিরোজ।মেয়ে ইরা  ক্লাস ফোরে পড়ছে।কিন্তু ভীষন চুজি।এই দোকান সেই দোকান দেখছে কিন্তু কোন জামাই তার পছন্দ হয়না।শেষে একটা দোকানে ডলে পড়ানো লাল রং এর জামা টা দেখেই ইরা হাত তালি দিয়ে বলল আব্বু আমি এটাই নিব।এরকম জামা মিতু তিয়া নোরা কারোর নেই।আমি এটাই নিব।

দোকানদারের নজর এড়ায়নি।দাম চাইল সাড়ে ছ হাজার টাকা।
এতো দাম!!! ভাই কিছু কম রাখেন
বলে ইরার বাবা
সরি স্যার আমাদের ফিক্স প্রাইজ।
নিস্পৃহ  জবাব দোকানদারের।

অগত্যা কি আর করা।মেয়ের পছন্দ বলে কথা।
দিন প্যাক করে দিন।
পেমেনট করল ক্রেডিট কার্ডে।

বাসায় নিয়ে ইরা জামাটা আলমারি তে রেখে দিল।

ইরার মা বলে 
কীরে একটু পড়ে দেখা না।দেখি।কেমন।লাগে তোকে?
নাহ।একবারে ইদের দিন ই পড়ব। এখন পড়লে তো পুরোনো হয়ে যাবে।
কিন্তু প্রতিদিন একবার করে জামাটা নামিয়ে দেখত ইরা।

ইরার বাবা অফিসে কাজ করছিলেন এমন সময় ইরার মায়ের ফোন
জলদি এসো ইরা প্রচনড পেটে ব্যাথায় কাদছে।আমি কি করব কিছু বুঝতে পারছিনা।ইরার বাবা দ্রুত চলে এলেন বাসায়।অবস্থা দেখে ফোন দিলেন তার ডাক্তার বন্ধু কে।উনি বললেন
কেস টা তো একিউট এপেন্ডিসাইটিস মনে হচ্ছে।তুই দেরি না করে শিজ্ঞির আমার হাসপাতালে নিয়ে আয়।
ইরা কে আনা হল হাসপাতালে।ব্যথা কমানোর ইঞ্জেকশন দিয়ে একটা ইমার্জেন্সি আল্ট্রা সাউন্ড করতে  দিলেন ডাক্তার।
দ্রুত রিপোর্ট এল।
রিপোর্ট  দেখে ইরার বাবার ডাক্তার বন্ধুর।মুখ গম্ভির।
বন্ধু যা ভেবেছিলাম তা ই।
ওর ইমিডিয়েট অপারেশন লাগবে যদি বাচাতে চাস।
তোদের সিদ্ধান্ত পেলে আমি সার্জন কল দিব।
ইরার বাবা মা রাজি হল অপারেশন করাতে।
ইরা কে নেয়া হল অপারেশন টেবিলে।
বাইরে উদবিগ্ন বাবা মা।কত সময় পেরিয়ে গেল।অপারেশন যেন শেষ ই হয় না।
দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেল।এক সময় বেরিয়ে এলেন সার্জন। পেছন পেছন ইরার বাবা বন্ধু।দুজনের ই মুখ ভার
সার্জন বললেন " ফিরোজ সাহেব আমরা আপ্রান চেস্টা করেছি। কিন্তু পারলাম না আপনার মেয়ে কে বাচাতে।"
পুরো পৃথিবী  টা যেন দুলে উঠল ইরার বাবার।পেছন থেকে ধরল তার ডাক্তার বন্ধু।
আকাশ বাতাস ভারি ইরার বাবা মার কান্নায়।

**** *****- ******* ******

আজ ইদের দিন
ইরা চলে গেছে দুসপ্তাহ হল।চারদিকে ইদের আনন্দ।হই হুল্লোড়।ফিরোজ দম্পতির মনে আনন্দ নেই। মেয়েটা প্রতি ইদেই আববু আম্মু কে সালাম করে বলত দাও সালামি দাও।আব্বু সাথে সাথেই মেয়ের দু গালে চুমু দিয়ে কড় কড়া নতুন পাচশ টাকার নোট ধরিয়ে দিতেন।

তারা এসেছেন আজিম পুর কবরস্তানে ইরার কবর জিয়ারত করতে।হাতে একটা প্যাকেট।ইরার সেই লালজামা।ওর বাবার ইচ্ছে এটা ইরার কবরে রেখে আসবে।ইরার আত্মা শান্তি পাবে।

স্যার দশটা ট্যহা দিবেন।
ধুলি মলিন চেহারায় বিষন্ন একটা মেয়ে।ইরার সমান ই হবে। ছিন্ন ছেড়া জামা।
ইরার মা মেয়েটির মাথায় হাত রাখলেন।ইরার বাবার দিকে তাকিয়ে বললেন দাও তো প্যাকেট টা।
এটা তোমার মা
মেয়েটা অবাক বিস্ময়ে হতবাক।
ইরার বাবা মানিব্যাগ থেকে একটা পাচ শ টাকার নোট বের করে  বাচ্চা টা কে দিল।
তোর যা মন চায় কিছু খেয়ে নিস
এবার মেয়েটা খুশি তে কেদে দিল।টিপ করে দুজন কে সালাম করল।

ইরার বাবা মা এগিয়ে যাচ্ছে ইরার কবরের দিকে।দুজনের মন ভারি হালকা।তাদের ইরামনি যেন কবর থেকে হাসছে


ডা এস এম নওশের
বারডেম মহিলা ও শিশু
সেগুন বাগিচা ঢাকা

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।