কথায় আছে চাচীর হাতের সালুনের মজাই আলাদা।নিজের ঘরে যত সুস্বাদু রান্নাই হোক না কেন অন্য রমণীর রান্না তার চেয়েও লোভনীয়।সেই রান্না স্বাদের লোভে খেতে খেতে এক সময় রাধুনিও স্বাদের হয়ে উঠে। এমন ঘটনা সমাজে বিরল নয়।
অনেকেই পছন্দের রমণীকে হৃদায়ত্ত করার জন্য তুক তাক বশীকরণ ইত্যাদির আশ্রয় নেয়।কিন্তু হরু মণ্ডলের কাছে এ সব ফালতু ছাড়া কিছুই নয়। হরু মণ্ডল মনে করে, স্ত্রী জাতিকে বশ করার সহজ উপায় হল তার রূপের প্রশংসা করা।আর সে যা ই করুক না কেন তা ভাল বলা। বেশ্ এইটুকুই। এর ফল হয় মধুর কিন্তু ফল পুষ্ট হলে তার পরিণতি হয় কঠিন।
হরু মণ্ডল রায়ের পাড়া গ্রামের সঙ্গতিসম্পন্ন গৃহস্থের ছেলে। বাপের একমাত্র পুত্র। দেখতে রমণীমোহন না হলেও রমণীতোষণে যে লা জবাব তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ইদানীং বিশেষ স্টাইলে চুল কাটে।হাতে রুমাল নিয়ে ঘুরে।সিঁথি কাটার বাহার স্ত্রীলোককেও হার মানায়।
হরু দিঘাইর ফ্রি প্রাইমারীতে পড়ত।সে যখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে তখনই সে আলেপজান নামে সমবয়সী একটা মেয়ের প্রেমে পড়ে। এখানে একটা কথা বলে রাখা ভাল যে বিগত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে যে বয়সী ধাঙর পোলাপান পড়তো আজকের দিনের চতুর্থ শ্রেনির পোলাপানের সাথে মিলিয়ে দেখতে গেলে গল্পটির এখানেই অপমৃত্যু ঘটবে।
যা হোক, হরু মানে হারিফুর রহমান জন্মের প্রাক্কালে স্বয়ং বিধাতা তাকে আদিরসের সাগরে স্নান করিয়ে দিয়েছিলেন।তাই জন্মের পর থেকে বিদ্যাচর্চার চেয়ে শরীরচর্চায় তার আগ্রহের বাহুল্য ছিল।
হরুর বাড়ির পাশে কৈমদ্দির মেয়ে আরিফা হরুর সাথে একই স্কুলে পড়ত। ক্লাসে দুজনই একসাথে বসত। মাস্টাররা লিখতে বললে হরু আরিফার স্লেট দেখে লিখত।স্লেটটি গলা বাড়িয়ে দেখার ফাঁকে আরিফার গালে একটা চুমুও দিয়ে দিত।একদিন থার্ড মাস্টার সেটা দেখতে পেয়ে হরুর কাছে কৈফিয়ত চাইল।হরু বলল,স্যার,একটু আদর করলাম।
হরু যখন ক্লাস এইটে উঠল তখন হরুর দাদা অসুস্থ হয়ে পড়ে।দাদার ইচ্ছে মরার আগে নাত বউ দেখবে।দাদার এমন আকাঙ্ক্ষার কথা শুনে হরু আনন্দে লাফ দিয়ে উঠল।দাদার মৃত্যু চিন্তা যেন আরও প্রবল হয় এবং তার নাত বউ দেখার শখ যাতে তীব্র হয় সে জন্য হরু মসজিদে দুই টাকা দানও করে আসে।
হরুর বিয়ে হল।অনেক ধুমধাম হল। বিয়ের পর হরুর বন্ধুরা আর তার সাক্ষাৎ পায় না। স্কুলের লেখাপড়াও তার নববধুর আঁচলে বাঁধা পড়ে গেল।কী গিট্টু যে আঁচলে দিল আর কোনদিন সে গিঁট খোলা সম্ভব হল না।
এভাবে নতুন বউকে নিয়ে হরুর দিন ভালই কাটছিল।
মাস ছয়েক পর হরুর চাচাত ভাই আবু বিয়ে করল। বিয়েতে হরু আমন্ত্রিত ছিল। মুরুব্বিদের সামনে যখন কনেকে নিয়ে এল হরু কনের মুখ দেখে আশ্চর্য হয়ে গেল।সে মনে মনে বলল, হায়!হায়! এমন সুন্দরীও আল্লাহর দুনিয়ায় আছে। মনে মনে এই সুন্দরী কনের পাশে তার বউকে সে দাঁড় করায়। না, এর পাশে তার বউকে কাজের মেয়ের মত মনে হয়। সে বুঝতে পারে,তার মত ঠকা আর কেউ ঠকে নি।
আবু র বউকে হরু ভাবী বলে ডাকে।বিশেষ করে আবু যখন বাড়িতে না থাকে তখন এই নতুন সুন্দরী ভাবীটির প্রতি হরুর আদর আহ্লাদ উথলে উঠে।
আবুর সংসারে কেবল তার বিপত্নীক বাবা।ছোট বোন দিলারাকে গেল অগ্রহায়ণ মাসে বিয়ে দিয়েছে।এখন সংসারে নতুন বউ আসায় লোক মাত্র তিনজন। আবুর বুড়ো বাবা আজকাল চোখে খুব ভাল দেখতে পায় না।কান দুটিও অনেক আগেই বিগড়ে গেছে।কারো কথাই সে আর শুনতে পায় না।
আজকাল হরু আবুর বাড়িতে ঘন ঘন যাতায়ত করে।আবুর বউকে সে ভাবী ভাবী বলে অজ্ঞান। হরু এলে বউটি পিঁড়ি এগিয়ে দিয়ে বলে দাদাভাই বস। হরু বসে।আলাপ শুরু হয় আবুর খোঁজ খবর নিয়ে।সে কোথায় গেছে,কি করছে।সংসার কেমন চলছে। নতুন বউয়ের এখানে কেমন লাগছে।কত কত কাজ কর্ম করতে হয় ইত্যাদি।
এক সময় হরুর আলাপের পাতা উল্টে গিয়ে বউয়ের রূপগুণের পরিচ্ছেদে এসে পড়ে। আহা ভাবী,আপনার মুখটা এত ঘামে কেন? জানেন ভাবী,শ্যামলা মেয়েদের মুখ যখন ঘামে তখন তাদের বেহেশতের হুরদের মত দেখা যায়।
আবু র বউ শরম পায় আবার খুশিও হয়। হরু কিন্তু রূপের বর্ণনা করতেই থাকে।এ অধ্যায় আর শেষ হয় না।যেন স্বয়ং আলাওল পদ্মাবতীর রূপ বর্ণনা করছে।
হরু বলে,জান ভাবী,তোমার বিয়ের দিন যখন মুরুব্বিরা তোমার চুল টেনে টেনে দেখছিল আমি তখন চোখ ফেরাতে পারছিলাম না।
বউ বলে, কেন গো
আবার কেন বলছেন, সুতাশঙ্খ সাপের মত কী কালো চুল।আর লম্বা কত।মাঝে মাঝে ঢেউ খেলানো।যেন রাজ্যের মেঘ এসে জড়ো হয়েছে তোমার মাথায়। আর হাতের পাঁচ পাঁচটা আঙুল কী সুন্দর চাম্পা কলার মত।আমাদের আবুর ভাগ্য।
হরু জানত,মেয়েদের রূপ আর রান্না বান্নার গুণের কথা বলে যত সহজে ভুলানো যায় বশীকরণের মন্ত্র দিয়ে ততটা ভুলানো যায় না।
এবার মুচকি হেসে আবুর বউ বলে,কেন গো দাদাভাই, তোমার বউ দেখতে কম কীসে।দেখতে সিঁদুরে আমের মত টকটকে। যেন বায়ে হেলে বাতাসে ঢোলে। নাকটা যেন পুলুট বাঁশি।কাজে কামে একেবারে বাও গুমটা বাতাস।
ধুর্।কি যে কও না ভাবী।চান্দের সাথে পেন্দের তুলনা।কই কায়েদে আযম আর কই বদ হজম। তোমার চোখ দুটা দেখলে বৈরাগীও অনুরাগী হয়ে যাবে।কি সুন্দর দাঁত।মনে হয় রূপা দিয়ে বাঁধানো।যখন হাসো মনে হয় হাঁসির খানিকটা মাটিতে ঝলসে পড়ে। আর তোমার কোমরটা মনে হয় দুহাতে বেড় আসবে। আমি যদি আগে বিয়ে না করতাম..
আবুর বউ বলে,তাহলে কি হত?
আবু হেসে বলে, থাক।
আবুর বউ রাতে শুয়ে শুয়ে হরুর কথাগুলো ভাবে।নিজের সৌন্দর্যের প্রতি তার বিশ্বাস জন্মে।পাশে শুয়ে থাকা কয়লা রঙের আবুকে দেখে সে মনে মনে একটু আফসোসও করে।হরুর হাসি মুখটা তার চেখের সামনে ভেসে উঠে।
এর মধ্যে হরু বলে, শোনছ গো
কি?
আমি চিন্তা ভাবনা করে দেখলাম এদিকে তো আর তেমন কাজ কাম নাই।যে আয় উপার্জন হয় তাতে সংসার চালানোই মুশকিল।তাই ভাবছি ভাটী এলাকায় ধানকাটা শুরু হয়ে গেছে।কামলার দামও বেশি।কদিনের জন্য ভাটিতে চলে যাই।কিন্তু বাবার যে অবস্থা। তাকে রেখে যাই কি করে।তাকে দেখবে কে।
বউ বলে, কেন,বাজানকে দেখার লোক নাই বুঝি? আমার উপর তোমার ভরসা হয় না?বাজান রে আমিই দেখব।তবে তুমি না থাকলে আমার খালি খালি লাগবে।
তিনদিন পর আবুর বউ উঠানের হেঁসেলে সাঁঝ বেলায় রান্না করছে। এমন সময় হরু এলো। আজ আবুর বউই প্রথম বলল, কি গো দাদাভাই, ভাবীকে ভুলে গেলে? কদিন থেকে তো তোমার কোন পাত্তাই পাই না।
হরু হেসে বলে, না গো ভাবী।তোমাকে কি কখনও ভুলতে পারি? একটু কাজে গেছলাম শহরে।আজ দুপুরেই ফিরেছি। বলেই সে হাতের পুটলাটা আবুর বউয়ের দিকে ঠেলে দেয়। বলে, ভাবী এগুলো তোমার জন্য।
-- এগুলো কি দাদা ভাই?
-- কিছু না।এই খুচরাখানা কয়টা জিনিস। স্নো পাউডার,সাবান,নারিকেলের তেল,লিপস্টিক, ক্লিপ,আয়না,চিরুনি এই সব আর কি।
_ হায়!হায়! এসব এনেছ কেন? তোমার ভাই দেখলে আমাকে জ্যান্ত মেরে ফেলবে।
-- কী যে বল না ভাবী।বলবে তোমার ভাই কিনে দিয়ে গেছে।তাছাড়া তোমার এই সুন্দর শরীর ঘষামাজা না করলে তো অঙ্গার হয়ে যাবে।
অনেকক্ষণ আলাপের পর হরু উঠে পড়ে।দু পা এগিয়ে থেমে যায়।পিছিয়ে এসে আবুর বউয়ের কাছে বসে ফিসফিস করে বলে, ভাবী, তোমার সাথে আমার একটা কথা ছিল।
আবুর বউ বলে, বলো।
এখন এখানে না।
কখন,কোথায়।
রাতে
ওমা।রাতে আবার কি কথা?
সেটা আমি এসেই বলব।
আবুর বউ রহস্যের হাসি হাসে।কথা বলে না।
মধ্যরাতে দরজায় কে যেন টোকা দেয়।আবুর বউয়ের ঘুম ভেঙে যায়।সে কান পেতে শুনতে চেষ্টা করে।আবার শব্দ হয়।আবার,আবার,আবার।
এবার বউটি আস্তে করে দরজা খোলে। হরু মৃদুস্বরে বলে, ভাবী ডরাইও না আমি হরু।
বউটি বলে, বুঝছি তো দাদা ভাই।ঘরে এসো।
হরু ঘরে ঢোকে।অন্ধকারে সে আবুর বউয়ের পাশে বসে।আবুর বউ বলে, কি কথা দাদাভাই। এতরাতে আমার ঘরে তোমাকে কেউ দেখে ফেললে কি হবে ভেবেছ?
হরু বলে,হবে আর কি? আমি তো আছিই।বড়জোর আবু তোমাকে ছেড়ে দেবে।তাই বলে আমিও কি তোমাকে ফেলে দেব।
হারু আবুর বউকে জড়িয়ে ধরে। আবুর বউ কোন আপত্তি করে না।
এভাবে কতদিন চলে গেছে তা আবুর বউ আর হরু ছাড়া কেউ বলতে পারবে না। কথায় আছে, তিরিশ দিন চোরের, একদিন সাউধের।হরু আর আবুর বউয়ের ক্ষেত্রে এই প্রবচনটি সত্য হল না। আর হবেই বা কি করে। লোকে বলে না? গাই বাছুরে মিল থাকলে পুকুরেও দোহান যায়। আর স্ত্রী লোকের চালাকি না কি দেবতারও বোধের অগম্য।
পরকীয়ার ইতিহাস যদি কোন ঐতিহাসিক রচনা করে তাহলে হরুর পরকীয়াই হবে সময়ের দিক থেকে দীর্ঘতম ইতিহাস। হরুর আবুর বউয়ের প্রেমের পাঠশালাতেই হাতেখড়ি হয়েছিল।
দিন চলে যায়।বছরের পর বছর ঘুরে আসে। চাঁদ সুরুজ আর আগুনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের যেমন কোন পরিবর্তন হয় না হরুর চরিত্রও তেমনি ধ্রুপদী কাব্যের মত।সংসারে বহুবিষয়ের পরিবর্তন হলেও হরুর পরকীয়ার খাছিলত অপরিবর্তনীয়ই রয়ে যায়। হরুর বয়স এখন ছাপ্পান্ন বছর।ছেলে মেয়ে বড় হয়েছে।তাদের বিয়ে শাদীও হয়েছে। ইতোমধ্যে হরুর স্ত্রী বিয়োগে হরুও আড়াসাড়া পিছটান ছাড়া।
হরুর বাল্যসখি আলেপজানের সাথে কদ্দুস মুন্সির বিয়ে হয়েছিল। আবুর বউয়ের পাশাপাশি আলেপজান যখন বাপের বাড়ি আসত তখন তার সাথেও হরুর পরকীয়া সমতালে চলত। হরুর স্ত্রী মারা যাওয়ার মাস ছয়েক পর একদিন হঠাৎই কদ্দুস মুন্সি মারা যায়।নিঃসন্তান আলেপজান ভাইদের আশ্রয়ে চলে আসে।এতে হরুর হয় পোয়াবারো। তাদের পুরনো প্রেম নিত্য নতুন সাজে সেজে উঠে।
প্রতিদিন সকাল অথবা বিকেলে হরু আলেপজানকে দেখতে আসে।সুখ দুঃখের কথা বলে।একসাথে পান চিবোয় আর সুখময় দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করে।দুজনের চোখে চোখে অন্যরকম কথা হয়।
আলেপজান বিধবা স্ত্রীলোক।ভাইদের বাড়িতে বাইর বাড়ি লাগোয়া ঘরে থাকে।ঘরের দক্ষিণ পাশে বাঁশঝাড়।সন্ধ্যা হতেই জায়গাটা ঘোর অন্ধকারে ছেয়ে যায়।
মধ্যরাতের আগে আগে বাঁশঝাড় থেকে থেকে বিড়াল ডাকে মেঁয়াও,মেঁয়াও। বিড়ালের ডাকশুনে নির্ঘুম আলেপজান বুঝতে পারে এটা কোন হুলো বিড়ালে ডাকছে।
আলেপজান অতি সন্তর্পনে দরজা খোলে।তারপর বাঁশঝাড়ের নিচে গিয়ে সেও সাংকেতিক বিড়াল হয়ে ডাকতে থাকে মেঁয়াও। হরু বেরিয়ে আসে।দুজনে হাত-ধরাধরি করে চলে যায় সাইবালি আকন্দের আখক্ষেতে। সেখানেই দুজনে মিলে গোকুল মজিয়ে লীলায় মেতে উঠে।
নির্বিবাদে ভালই চলছিল।
এরই মাঝে একদিন আলেপজানের ভাই গোলাপ মিয়া যাত্রাগান শোনে বাড়ি ফিরছিল। ঘন অন্ধকারে বাড়ির উঠানে উঠার আগে সে বিড়ালের মেঁয়াও ডাক শুনতে পেল। এতরাতে বাঁশঝাড়ে বিড়ালের ডাক শোনে সে হাতের চার ব্যাটারিওয়ালা টর্চলাইটটি বাঁশঝাড়ের দিকে ফোকাস করল। আলাতে সে স্পষ্ট দেখতে পেল দ্বিপদবিশিষ্ট শ্মশ্রধারী এক প্রবীণ বিড়াল মুখ ঢেকে দ্রুত কেটে পড়ছে। গোলাপ মিয়ার বুঝতে বাকি রইল না যে ব্যাপারটা কি।কিন্তু সে বিষয়টি কাউকে বুঝতে দিল না।দিনে সাক্ষাৎ হলে হরুকে সে স্বাভাবিক ভাবেই সালাম দেয়।কুশল বিনিময় করে। গোলাপ মিয়ার ব্যবহারে হরু নিশ্চিত হয় যে,সে রাতে গোলাপ মিয়া তাকে চিনতে পারে নি।
গোলাপ মিয়া গোপনে তার অন্য দুই ভাইয়ের সাথে পরামর্শ করে। হরুর এই ব্যভিচারের সমুচিত শাস্তি দিতে হবে। তিন ভাই তক্কে তক্কে থাকে।
সপ্তাহখানেক পর একরাতে বাঁশঝাড় থেকে বিড়ালের মেঁয়াও শুনতে পেল গোলাপ মিয়া।সে আস্তে আস্তে দুভাইকে ডেকে তুলল।তারপর তিন ভাই গিয়ে বাঁশঝাড় বেড় দিয়ে দাঁড়াল।
গোলাপ মিয়া টর্চের আলো ফেলতেই হরু পালানোর চেষ্টা করল।কিন্তু উত্তর দিকে বাড়ির বেড়া।দক্ষিণ পশ্চিমে সাক্ষাৎ তিন যম দাঁড়ানো। তিন ভাই সহজেই হরুকে ধরে ফেলল।
হরুকে টেনে হিঁচড়ে আখ খেতে নিয়ে গেল ওরা।হরু বাবারা,আমাকে মাফ করে দাও আমি কিছু করি নি।আলেপজানই আমাকে আসতে বলেছিল।তোমরা যা চাও তাই দিব।আমাকে তোমরা ছেড়ে দাও।
গোলাপের বড়ভাই গিয়াস বলল,না না,তোমাকে কিচ্ছু করব না। এ জীবনে তুমি যত অপকর্ম করেছ তাতে তো তোমার খাৎনা ছুটে গেছে। আমরা আজ তোমাকে নতুন করে খাৎনা দিয়ে সাচ্চা মুসলমান বানাব।
হরু কাতর স্বরে অনুনয় বিনয় করে দুহাতে কান ধরে বলে, বাবারা,এই আমি কান ধরে তওবা করছি।এহেন বদকামে আমি আর জীবনেও যাব না।
গিয়াস বলে, বেশ। তওবা করলে আল্লাহ মাফ করে।কিন্তু পরে যে আবার শখ মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে?
তিনভাই গামছা দিয়ে হরুর মুখ বেঁধে মাটিতে শুইয়ে দেয়।পা দুটো বেশি বেয়াদবি করায় পা ও বেঁধে ফেলে।তারপর গিয়াস বলে, গোলাপ! ছুরি দে।
যে উপাঙ্গের তাড়নায় সারাজীবন এই কুলাঙ্গার মেয়ে মানুষের সর্বনাশ করেছে আজ তার পুরোটাই কেটে ছানী খাৎনা করে দেব।
হরুর মুখ বাঁধা। সে জবাই করা গরুর মত গোঙায়।রক্তে লুঙ্গি ভিজে গেছে।
পরদিন সকালে হরুর ছেলেরা হরুকে আখ খেত থেকে উদ্ধার করে। হরুর অবস্থার কথা কাউকে জানায় না।
না জানালেই কি আর গোপন থাকে।কথায় বলে, রাজার মা শামুকের মধ্যে ভাত রেঁধে খায় সে কথাও রাষ্ট্র হয়ে যায়।
সেই থেকে হরু সমাজে নতুন বিশেষণে বিভূষিত হল। লোকজন তাকে দেখলেই মজা করে বলত কোন হরু গো।অন্যেরা হাসতে হাতে বলত, আরে খাইস্যে হরু।
১৭/১০/২০২২
ময়মনসিংহ।