সারপ্রাইজ ।। এস এম নওশের


আজ সিমি আর রাতুলের বিয়ে।সেই ভার্সিটির লাইফ থেকেই প্রেম।সাধারনত ছেলেরা মেয়েদের প্রেমে পড়ে।তারাই প্রপোজ করে কিন্তু সিমি রাতুলের বেলায় হয়েছে উলটা।
তার উপরে রাতুল হল সিমির জুনিয়র।সিমি পড়ত জেনেটিক্স নিয়ে আর রাতুল বাংলায়।সিমি বরাবর ই তুখোড় ছাত্রী আর রাতুল হল অনেক টা গড় পড়তা। সিমি হল একেবারেই যাকে বলে এক্সট্রভার্ট টাইপ
সুন্দরি বুদ্ধিমতি তুখোড় ছাত্রী।সবাই এক নামে চিনত।
সিমির সামনে একটা সেমিস্টার ফাইনাল।তার লাইব্রেরি তে পড়া শেষ করে একটু রাত হয়ে গেছিল।রিকশায় করে বাসায় যাচ্ছিল।কার্জন হলের সামনের রাস্তাটা একটু নির্জন ছিল।ছিনতাই কারি হঠাত করে বাইক নিয়ে এসে এমন হ্যাচকা টান দিয়ে তার পার্স টা নিয়ে গেল সিমি একেবারে ছিটকে রাস্তায় পড়ে মাথায় আঘাত পেল।রক্তে ভেসে যাচ্ছিল।রাতুল অদিক দিয়ে হেটে যাচ্ছিল।সে এসে সিমিকে দ্রুত নিয়ে যায় ঢাকা মেডিক্যালের ইমার্জেন্সি তে।সিমির প্রচন্ড রক্ত ক্ষরন হয়।রাতুলের সাথে ব্লাড গ্রুপ মিলে যাওয়ায় সে নিজেই এক ব্যাগ রক্ত দেয়।তার বন্ধুদের খবর দেয়।সিমির বাড়িতেও খবর দেয়।অসুধ পত্র দৌড়াদৌড়ি সব সে একাই করে।
বেশ ক দিন সিমি কে হাসপাতালে  থাকতে হয়।রাতুল প্রতিদিন দেখতে আসত।সিমি সুস্থ হয়ে বাড়ি গেল।
মাঝ খানে চলে গেল বেশ ক দিন।একদিন সিমি এসে বাংলা ডিপার্টমেন্ট  এসে রাতুল কে খুজে বের করল।
কি সেই যে হাসপাতালে গেলে আর ত খোজ নিলে না
রাতুল অপ্রস্তুত।মাথা চুলকাচ্ছিল।
ফুচকা খাবে?? আমি খাওয়াব।সিমির দুস্টুমি হাসি
আচ্ছা চলুন আপু।
আরে আপনি নয়।তুমি আমাকে তুমি করেই  বলবে।আর আপু নয়।আমাকে সিমি নামে ডাকলেই আমি খুশি হব।
এভাবেই শুরু হল ওদের মধ্যে বন্ধুত্ব।তারপরে হৃদয়ের দেয়া নেয়া।
এদের বিয়ে নিয়েও বেশ ঝামেলা হল।যেহেতু সিমি বড় তাই তার পরিবার মানতে চায়নি।রাতুলের পরিবারের ও ঘোর আপত্তি ছিল।সিমি আগেই পাশ করে বেরিয়ে গেছে কিন্তু রাতুল তখনো ছাত্র।সিমির বাড়ি থেকে বার বার বিয়ের জন্যে চাপ দিচ্ছিল।সিমি একটা এন জি ও র চাকরি নিয়ে পরিবার থেকে দূরে থাকতে  ইচ্ছে করেই  দুরে পোস্টিং নিয়ে ঢাকার বাইরে  চলে গেল।
রাতুল পাস টাস করে বেরিয়ে কদিন বেকার থেকে একটা চাকরিতে ঢুকল।
এবার দুজনের বিয়ে।
সিমি রাতুল কে বলেছিল তোমার জন্যে একটা সারপ্রাইজ গিফট আছে যেটা আমি তোমাকে  বাসর রাতে দিব।
আজ সেই বাসর রাত।সিমি কে লাগছে একদম।পরির মত। রাতুল কেও দারুন লাগছে।সারা ক্ষন খুচা খুচা দাড়ি গুলা সুন্দর করে ট্রিম করে ফেলেছে।এলোমেলো বড় বড় চুল গুলা সুন্দর হেয়ার স্টাইলে কেটেছে।ওরা দুজন ই একসাথে কালার ম্যাচিং করে বিয়ের শাড়ি আর শেরওয়ানি কিনেছে।
হুম অবশেষে কপোত কপোতির মিলন তাইনা।রাতুল দুস্টমি ভরা কন্ঠে বলল।
কই এবার গিফট কই আমার দাও।
অ মা গো মশাই এর যেন তর সইছে না।
রুনি ঠিক ই বলেছিল বিয়ের রাতে ছেলে গুলা বড্ড হ্যাংলা হয়ে যায়।
রুনি হল সিমির বান্ধবি। একটু ফচকে ও।
আমি হ্যাংলা?  না? আচ্ছা যাও তুমি তাহলে একাই ঘুমাও।আমি চললাম।
রাতুলের কপট রাগ।
বাপরে রাগ ও দেখাচ্ছে।আচ্ছা দাড়াও  দাড়াও দিচ্ছি।ছেলেটার একদম ধৈর্য্য নেই
বালিশের নীচ থেকে বের করল একটা প্যাকেট।সুন্দর র‍্যাপিং পেপার মোড়ানো।
কি এটা? রাতুলের এক রাশ কৌতুহল
আরে খুলেই দেখো না।
এসো তাহলে দুজনে মিলেই খুলি।
র‍্যাপিং পেপার খোলা হল
বের হল একটা বই।বই তে রাতুলের নিজের নাম দেখে চমকে উঠল।
এবারে সিমি বলল তুমি এত বছর আমাকে  নিয়ে যেসব কবিতা  এস এম এস করে পাঠাতে আমি সব একটা ডায়েরি  তে লিখে রাখতাম।বিয়ের আগেই ঠিক করেছিলাম এগুলার সব গুলো নিয়ে বই বের করে তোমাকে বিয়ের রাতে সারপ্রাইজ দিব।এটার কভার ডিজাইন মেকাপ গেটাপ সব আমি।নিজে করেছি।এখন তোমার কাজ আমাকে সারা রাত এখান থেকে একটা একটা কবিতা আবৃত্তি করে শোনাবে
রাতুলের অট্ট হাসি বাড়ির বাইরে থেকেও শুনতে পেল অনেকেই


এস এম নওশের

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।