নুসরাত জাহান'র গ্রন্থ আলোচনা


উপন্যাস: মা
লেখক: আনিসুল হক

গ্রন্থ আলোচনা
পৃথিবীর মধ্যে এক অক্ষরের সবচেয়ে সুন্দর শব্দটি হল মা। মা, মাতৃভূমিকে স্বাধীন করতে ১৯৭১ সালে অসংখ্য মানুষ মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের বাস্তবিক প্রেক্ষাপটে এত মানুষের যুদ্ধে যোগ দেওয়ার অনুপ্রেরণা, তৎকালীন পরিস্থিতি এবং সন্তানের প্রতি একজন মায়ের নিঃস্বার্থ ভালবাসার নিদর্শন রচিত হয়েছে আনিসুল হকের 'মা' বইটিতে।

আজাদ মায়ের একমাত্র সন্তান। তিনি আজাদের বাবার ২য় বিয়ে মানতে না পেরে, নিজের আত্মসম্মানকে বাঁচিয়ে, আজাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ধনী স্বামী এবং বিলাসবহুল জীবন ছেড়েছেন অনেক আগেই। স্বপ্ন একটাই আজাদকে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তুলবেন।

মায়ের স্বপ্ন তখন পূরণের পথে। আজাদ এমএ পাশ করেছে। চাকুরী অথবা ব্যবসা শুরু করবে। এমন সময় দেশের পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে। আজাদের আবদারে মা সাফিয়া বেগমও তাঁর বন্ধুদের গেরিলা যুদ্ধের অস্ত্র সহ নিজের ঘরে স্থান দেন। তাদের যত্নকরে রান্না করে খাওয়ান। সার্বিক বিবেচনায় আজাদকেও যুদ্ধে যাবার অনুমতি এবং উৎসাহ দেন।
যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এসে আজাদ ধরা পরে পাকবাহিনীর হাতে। তার উপর চলে ভয়াবহ নির্যাতন। কিন্তু তাঁর মা ঘরে বসে থাকতে পারে না। একসময় ছেলের সাথে দেখাও হয়ে যায়। দেখেন ছেলের কোন বিছানা নাই, মেঝেতে ঘুমায়। ভাল কোন খাবার নাই, শুকনো রুটি খেতে দেয়। আজাদ মায়ের কাছে ভাত খেতে চায়। মা বাড়ি ফিরে ছেলের পছন্দের সব খাবার রান্না করে নিয়ে যায় পরেরদিন। কিন্তু ছেলেকে আর খুঁজে পায় না দিশেহারা মা। যুদ্ধ শেষ হয়, দেশ স্বাধীন হয় কিন্তু আজাদ ফিরে আসে না। ১৪ বছর প্রতীক্ষায় থাকতে থাকতে শেষ অবধি মা-ই চলে যান ছেলের কাছে, না ফেরার দেশে।

যতদিন বেঁচে ছিলেন মা বিছানায় শোয় নি, মেঝেতে শুয়েছেন। রুটি খেয়েছে, এক মুঠো ভাত মুখে তোলেনি। মৃত্যুর পর কবরের পাশে তাঁর নিজের নাম লেখা হয়নি, তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী লেখা হয়েছে "শহীদ আজাদের মা"।

সব মিলিয়ে আত্মত্যাগ আর দেশপ্রেমের এক করুণ চিত্র রচিত হয়েছে বইটিতে।

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।