মায়া রাজবংশী'র গল্প খোয়াব


রকি সাহেবের জীবনে ছোট মামার অবদান ভোলবার নয়।এইযে আজকে তাঁর এতো বিষয় সম্পত্তি সব ছোট মামার দেখানো প্রকৃয়ায়।শুধু বিষয় সম্পত্তি নয়,রকি ব্যাপারী থেকে হঠাৎ করে রকি সাহেব হয়ে যাওয়ার বিষয়টিও ছোট মামার নকশা করা কায়দা কানুন থেকেই শেখা।আজ মামা বেঁচে নেই কিন্তু শৈশবে মামার সাথে নাদের আলী মাতব্বরের পুকুর থেকে মাছ চুরীর কলাকৌশল এখনো ফলো করে রকি।
রকির মনে আছে মামা কাইছাল ব্যাপারী ছিলেন গাবতলীর গরুর হাটের দালাল।উত্তরবঙ্গের যাত্রাপুর গরুর হাট থেকে ভারতীয় দেশী গরু কম মূল্যে কিনে গাবতলি হাটে বেশী দামে বিক্রি করা তার কাজ।মাঝখানে ১৫-২০ দিন গরুকে মোটাতাজাকরণ ইঞ্জেকশন দিয়ে টাঙ্গাইলে রেখে দিতেন।কিছুদিন পর দেশী খামারের গরু বলে মোটা দামে বিক্রি করতেন গাবতলিতে।রকি যখন মেট্রিক পাশ করলো তখন মামা একদিন তাকে নিয়ে গেলেন তার ব্যবসায়।বাসা থেকে কলেজ অনেক দূরে ছিল, তাছাড়া কলেজে খরচা অনেক।তাই রকির আব্বার পড়ার প্রতি এতো আগ্রহ ছিল না।রকি মামার সাথে টাঙ্গাইল আসে।প্রথম প্রথম গরুর জাবরকাটা ও গোসল করানো ছিল তার কাজ।আস্তে আস্তে মামার সাথে হাটে যাতায়াত।আস্তে আস্তে মামা তার ব্যবসা রকির হাতে তুলে দিলেন,সাথে তার আদরের একমাত্র মেয়েকেও।
সেই মামা মারা যাওয়ার পর রকি ভারতের ব্যবসায়ী পার্টনারের টাকা মেরে দিয়ে টাঙ্গাইলে ফেক্টরি দিলেন। মামার দেখানো খামার ব্যবসা দ্বিগুণ থেকে চারগুণ করলেন।মাঝে মাঝে মামার আত্নার শান্তির জন্য ওয়াজ ও ধর্মসভাগুলোতে দান করতে থাকলেন।এলাকায় তার নাম দানশীল ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রকি সাহেব হয়ে গেল।
ধীরেধীরে দানশীল রকি সাহেব আজকের জনগণের নেতা রকি চৌধুরী হয়ে গেলেন।কিন্তু মামার সেই পুকুর চুরির কায়দা কৌশল রকির মনে এখনো জ্বলজ্বল করে।জনগণের মাথায় কিভাবে কাঁঠাল ভেঙ্গে খেতে হয় সেইটা মামার কাছ থেকে সে তাবৎ শিখে নিয়েছে।রকি তার অপকর্মের জন্য বাহিনী ও সাঙ্গপাঙ্গ গঠন করে,জনগণের বরাদ্দকৃত বাজেটে ভাগ বসাতে থাকলো।তার সম্পদ দিনদিন বেড়ে গেল।এদিকে রকি চৌধুরীর ঘুম গেল উড়ে।তার বউ রেহেনা প্রায়ই বলে আমাদের একটা মাত্র সন্তান এতো সম্পদের দরকার নাই।তুমি টেনশন করো না।লোভ কমায় দাও কিন্তু রকির অন্তর-মম জুড়ে মামার সেই টাকা কামানোর নেশা,আজ তার মধ্যে ভর করেছে।রকি বউকে ধমক দিয়ে বলে আমি কোথায় লোভ করি জনগণের টাকায় আমার কোন লোভ নেই।খামার ব্যবসা দিয়েই আমার সংসার চলে।আজেবাজে বকাবকি বন্ধ করো।
আজকাল রকি চৌধুরী নিজেও একটু লোভ কমায় দেওয়ার চিন্তা করছে কিন্তু তার সাঙ্গপাঙ্গরা তাকে ছাড়ে না।জোড় করে তাকে জনগণের টাকা আৎসাত করতে বাধ্য করে।এইতো গতপরশু চৌকিদার ভজন দাস তার গোলায় ৫০০ মণ চাল ও ১০০০ লিটার তেল রেখে গেল।এগুলো গরীবের জন্য ঈদের বাজেট এসেছে।ভজন ও তার সাঙ্গরা মিলে ৩ ভাগ করে বিতরণ করে।একভাগ জনগণের,একভাগ তাদের ও একভাগ উপরমহলের সন্তুষ্টির জন্য রাখা হয়।গোডাউনে যেগুলো রেখেছে সেগুলো উপরের মহলের সন্তুষ্টির মালামাল।এদিকে পুলিশ ও র‍্যাবের কঠোর তদারকি চলছে।কালু পুলিশের বড় কর্তাকে চাল ও তেল দিয়ে খুশি করে বিদায় করেছে।

আজ রকি চৌধুরী একটু ফুরফুরা মেজাজে ঘুমাতে গেল।যাক বাবা অফিসারকে তাহলে কালু শেষ পর্যন্ত হাত করেই ছাড়লো,ছেলেটা আচ্ছা কাজের।দীর্ঘদিনের অঘুমের ক্লান্তিতে রকি চৌধুরী অতল ঘুমে তলিয়ে গেল।ঘুমের মধ্যেই সে স্বপ্ন দেখে মামার মতো এক্সিডেন্টে সেও মারা গেছে।তার বাসা ভর্তি মানুষজন তারা সবাই সয়াবিন তেল নিয়ে আলোচনা করছে।হঠাৎ রকি দেখে চৌকিদার ভজন দাস একটা ভ্যানে করে গোডাউনের সয়াবিন তেলগুলো সব নিয়ে আসতেছে।গরম পানি দিয়ে গোসল করানোর পরিবর্তে তাকে গোসল করানো হলো তেল দিয়ে।সয়াবিন তেল।গা একদম আঠাআঠা করে ঘিনঘিন করে উঠলো।কিছুক্ষণ পর তাকে নিয়ে যাওয়া হলো কবরস্থানে সেখানে ট্রাকে করে আগেই মজুদ করা হয়েছে চাল।তাকে কবরে শুইয়ে দেওয়া হলো।কিন্তু উপরে মাটি না দিয়ে সবাই তিন মুষ্টি করে চাল দিতে লাগলো।তার শরীরের চারিদিকে চালের পাহাড় হয়ে উঠলো।রকি চৌধুরী বুকে চাপ অনুভব করলো,সে দুই হাত দিয়ে চাল সড়াতে লাগলো।হাত পা ছোটাছুটি করাতে তার স্ত্রী রেহানা বেগমের ঘুম ভেঙ্গে গেল।সে রকি চৌধুরীকে ডেকে তুলে জিজ্ঞাসা করলো হ্যাঁ গো কি হয়েছে,এরকম হাত পা ছড়াচ্ছিলে কেন?
রকি চৌধুরী হাফাতে হাফাতে জবাব দিল কিছু না,খোয়াব দেখছিলাম।
তার পর তিনি রিমোট দিয়ে টিভি চালু করলেন,রাত ২ টার টকশো চলছে।বরিশালে চাল,রংপুরে তেলসহ ধরা পরেছে স্থানীয় নেতা।

আপনার লেখা ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, ইতিহাস-ঐতিহ্য, রম্যরচনা, ভ্রমণ কাহিনী, উপন্যাস, সাহিত্যিকের জীবনী, সাক্ষাৎকার, সাহিত্যের খবর বর্ণপ্রপাতে প্রকাশ করতে চাইলে ইমেইল করুন ju94.bd@gmail.com।


5 Comments

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

  1. জাহান ভাইয়ের এ ছদ্মবেশ কেন?

    ReplyDelete
  2. নীম নারীর তিন্তু ছবি পুরুষের৷ তিনি কি হিজড়া?

    ReplyDelete
    Replies
    1. বেয়াদব!! তুই যে হিজড়া তোর কমেন্ট দেখে বুঝা যায়। মায়া নাম ছেলের হলে তোর প্রব্লেম কি?

      Delete
  3. নাম নারীর, কিন্তু ছবি পুরুষের, হাইস্যকর৷

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাস্যকর নয় মায়া কি শুধু নারীদের জন্য?

      Delete