ধারাবাহিক উপন্যাস : দিদার চৌধুরীর "হৃদয়ের কান্না" ০২


বি,এ পাস করে বসে আছি আজ চারটে বছর। গায়ে গতরে বেশ বড় হয়ে গেছি তবুও ছাত্র-ছাত্র ভাবটা শরীরে শোভা পাচ্ছে।
শীত আর বসন্ত কালের মাঝামাঝি মেলাটা বসে। এখনো ঠিক শীতের আমেজটা যায়নি ।প্রতিবারের মতোই এবারও নাটক হচ্ছিল । সুলভ মূল্যের দুখানি টিকেট নিয়ে শোভন শ্রেণীর পাশে গিয়ে বসলাম। গাঁয়ের শিক্ষিত সমাজে ,আমাদের স্থান প্রথম শ্রেণীতে পড়ে যদিও । বেকার বলে সেই সম্মানটাও পাচ্ছি না।
নাটকের আসরের ছোট খাটো দুই-একটি বিশ্লেষণ করে, উপস্থিত দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে না পারলেও বিরক্তের কারণ হয়েছি। তা অনুমানে বুঝা যায় । তবুও তাগড়া যুবক বলে কেউ বিদ্রুপ করার সাহস পায়নি।
এমনিতেই নাটক দেখার অভিপ্রায় আমার কখনো হতোই না। অভিপ্রায়টা ছিল নারীরা কোথায় বসেছে, সেখানে গিয়ে বিরক্ত করা ।তাতেই যেন এই হতভাগার তুষ্টি মাত্র।
অবশেষে রাতের ত্রি-প্রহরে নাটকের যবনিকা ঘটলো। আট আানার দুটি যক্ষাদন্ড ক্রয় করে, তাতে অগ্নিসংযোগ করে বাড়ির পথে রওনা হলাম।
মেলা থেকে আধা কিলোমিটার আসতে, পথে দেখি সাদা রংয়ের একখানা বয়স্ক মোটরগাড়ি।
গাড়ির পাশ কেটে যেতেই বুঝতে পারলাম বয়স্ক গাড়ির কোথাও গোলমাল হয়েছে।
ওরা হয়তো নাটক দেখে ফিরছিল। গাড়ির ভেতর মোট চারজন লোক দেখা যাচ্ছে। মাথায় কালো রংয়ের ক্যাপ পরা লোকটি-বুঝা যাচ্ছে তিনি ড্রাইভার। পাশেই একজন বয়স্ক লোক আর গাড়ির পিছনের সিটে দুজন মহিলা বসা। অন্ধকারে আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে ।
কি মনে করে ড্রাইভার আমাদেরকে ডাক দিলেন।
: এই যে মশাই .....একটু সাহায্য করতে পারবেন?
আর আমরাও চেয়েছিলাম তেমন একটা কিছু। গায়ে পড়ে আগে কথা বলিনি পাছে দোষ হয় ভেবে। যখন ডাক‌ই পড়ল তখন তো আর ফেলে চলে যাওয়া ঠিক হবে না।
তবুও গাড়ির কাছে এসে বললাম,
: দেখুন টাকা পয়সা চাইলে কিন্তু সাহায্য করতে পারব না ।কারণ এখনও বেকার খাতায় নাম পড়ে আছে।
গাড়ির ভিতর থেকে নরম সুরে কে যেন বলে উঠল, 
: আজ্ঞে না মশাই টাকা-টোকা নয় ।
: তবে কি সাহায্য চাই?
: আজ্ঞে বলতেও লজ্জা পাচ্ছে ,এ বলছিলাম কি আমাদের গাড়িটি বন্ধ হয়ে গেছে । তাই একটু........
: দেখুন মহাশয় ,আমরা তো গাড়ির বৈধ ন‌ই, যে গাড়ি ঠিক করে দেব ।
একজন বয়স্ক লোক গাড়িতে থেকে বের হয়ে বলল,
: বাপু এই গভীর রাত্রে দুজন মেয়ে নিয়ে বড়ই বিপদে পড়লুম। তাই আবদার করছিলুম, তোমরা যদি বাপু একটু কষ্ট করতে......
দেখলাম, ভিতরে বসে থাকা মহিলা আমার দিকে তাকিয়ে গোপনে সাহায্য কামনা করছে।
নারীর প্রতি দুর্বলতা তো আমার আজকের নয় ।তাই বললাম , সাহায্যটা কি বলুন?
ড্রাইভার বলল, সামনে গৌরীপুর ,সেখানে সাহেবের বাড়ি। মেলায় এসে ছিলুম নাটক দেখতে। লোকটি আমতা আমতা করে বলল,
: বলেছিলুম গাড়িটি কোনমতে অতদূর ঠেলে নেওয়া যায় , তো আজকের জন্য বেঁচে যাই।
: কি যে বলেন ?
এই দুই ক্রোশ পথ চারজন লোকসহ ,অতদূর ঠেলে নেওয়া কি সম্ভব?
দশাশ্ব গাড়িতে পারবে কিনা সম্ভাবনা কম।
আমাদের অসহযোগিতার ভাব দেখে,
এতক্ষণে গাড়ি থেকে একজন সুন্দরী মহিলা বের হয়ে আসলেন।
চলবে

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।