ঠিক তখনই নজরুলের ট্রেন চলতে শিখেছে মাত্র। তার আগেই নজরুলকে শিখতে হয়েছে, রুটি বানানোর কাজ আর লেফট রাইট এর কাজ। সেই হিসেবে আমাদের সাহিত্যচর্চার পরিধির মান, হাতে গোনা টাকার মতই। কিন্তু সাহিত্য প্রচার-প্রচারণার বেলায় রবীন্দ্রনাথরা বেশি বেশি সুযোগ পেয়েছেন।
সাহিত্য চর্চার জন্য মেধা, চিন্তা ও প্রবল অনুভূতি যেমন দরকার। তেমনি দরকার প্রচার ও প্রকাশ। বর্তমানে প্রকাশকের যে হাল ,মনে হয় নির্বাচনের ভোটার। ভোট চাইতে আসলেই কদর বাড়ে। আগের শুনা কথা, বলতে হয়। রবীন্দ্র যুগে নাকি প্রকাশকেরা কেউ লেখছে কিনা খবর নিত। আর এখন সবই উল্টো। প্রকাশকেরই হয়েছে এখন প্রকারন্তরে লেখক।
আর লেখককেই হতে হয় প্রকাশক।
তাইতো অনেক প্রতিভা প্রকাশ পাচ্ছে না। ভালো কিছু লিখবেন ? উপায় নেই। প্রকাশকের কঠিন সর্তকতা, হেরফের করা যাবে না। বিষয় সিলেবাস প্রকাশকের, আর লেখাটা আপনার। চিন্তার দরকার নেই , রস আর যত কম কাপড়ে লিখার পারদর্শী তাই আজ বড় সুনাম।
সুতরাং সাহিত্যচর্চা, কবিতা, উপন্যাস লেখার ভাবনা মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। নয়তো বয়সটা হারাতে হবে। রবীন্দ্রনাথের মতো সে তো দূরের কথা, শেষটাই প্রকাশকের তোষামোদিই সার।
বেকার আছি তো বেশ ভালই। বেকার থাকাটাই শ্রেয় পন্থা।অন্তত কেউ দু 'টাকা ধারের জন্য কিংবা চাঁদার রশিদ নিয়ে আসবে না। এটাও কি কম ভাগ্যের কথা ,বর্তমানের যে হাল।
এইভাবে গ্রামে কিছুদিন থাকার পর বেকারের সাথে পরগাছা বেকার উপাধি লাভ করলাম। ভাবছি এভাবে একের পর এক উপাধি নিয়ে শেষটায় বেকার উপাধিটাই হারাতে হবে। অন্য উপাধিগুলো এখানে নাইবা বললাম, আত্মসম্মানবোধ বলে তো কিছু আছে।
আজ ইন্ধন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে গেল। কাল রাত তার মা বলেছিল নদীতে মাছ ধরতে। বেশ কয়েকদিন যাবত খাওয়ার প্রতি অরুচি হচ্ছে। ইন্ধন ভোর সকালে জাল নিয়ে নিচু ঘাট থেকে আস্তে আস্তে উপরের ঘাটের দিকে জাল ফেলে আসছে। নদীতে পানি কম বলে ছোট ছোট মাছ ব্যতীত অন্য মাছ দেখা গেল না।
পূর্বের আকাশে লাল আভা চারিদিকের প্রকৃতিকে রাঙিয়ে দিল। আর যেন বেশ সুন্দর লাগছে এই ধরনী কি। কি সুন্দর না এই পৃথিবী ,কি অপরূপ!
নদীর বাঁকে বাঁকে জাল ফেলে চললো ইন্ধন। পাড়ার লোকজন নদীতে স্নান করতে নামছে। গৃহস্থের বৌ-ঝিরা হাঁড়ি বাটি নিয়ে নদীতে যার যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। কেউ গোসল করে নিচ্ছে কেউ পানি তুলছে।কেউবা আবার গলা বাড়ি*য়ে জিজ্ঞেস করছেন, কি.....হে ইন্দন মাছ পেলে?
ইচ্ছা হইলে উত্তর দিলাম , নয়তো আর চুপ করে রইলাম। মাছ পাওয়ার মৌসুম নয় বিদায় ,নদীতে তেমন মাছ পাওয়া যায়নি। তবুও মায়ের আবদার রক্ষায় হেতু নদীর এই বাঁক ঐ বাঁক জাল ফেলে চললাম।
অপরিপক্ক হাতে জাল ফেলিবার দৃশ্য দেখে নদীর কুলের লোকেরা হাসাহাসি করতে লাগলো।
প্রথমত ইন্দনের সেই দিকে নজর পড়লো না।
এক সময় যখন নারীকন্ঠের হাসাহাসি শুনতে পেল, আর ঠিক তখনই ইন্দনের জাল ফেলার কাজটি থেমে গেল। কিছুটা ইতস্তত করে ,কাল বিলম্ব না করে- ইন্দন বাড়ির পথে রওনা হল। মাছ ধরা তার এখানেই শেষ হয়ে গেল। পিছন থেকে নারী কন্ঠে কে যেন বলে উঠলো ।
কি..........হে মাছ দিয়ে গেলে না?
ইন্দন সে কথা শুনেও ফিরে তাকিয়ে দেখল না।
শেষ বিকেলে ইন্দনে বন্ধু উৎপল এসে বলল, চল দোস্ত বাসন্তী মেলায় যাই।
ভাবলাম ,কাজ তো নেই ।বেকার তো আছি ।আর এই সময়ে যাওয়াটাই কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। নয়তো বেকারের ধর্মই হারাতে হবে।
গাঁয়ের মেঠো পথ ধরে চললাম মেলার দিকে, অনেক দূর পথ। বিল কোনাকুনি মেলার উদ্দেশ্যে হাঁটতে লাগলাম। পথেই আঁধার নামে আসলো। হাঁটতে লাগলাম।
আমার পকেটে ছিল দশ টাকার একটি নোট ।আর উৎপলের কাছে টাকা বিশেক ছিল ।তাই ছিল বেকারদের সম্বল।
(চলবে)