: অনেক তো কষ্ট দিয়েছি । আরো কষ্ট দেওয়া ঠিক হবে না ।
: যদি মনে পরে আসবেন । বাবুজি কে বলে যদি একটি চাকুরির ব্যবস্থা করি ,চাকরি করবেন?
: সত্যিই বলছেন?
: সত্য বলার কি অযোগ্য ?
তারপর কি বলা হলো জানিনা ।অজ্ঞাত কোন পরশ পেলাম জানিনা ।চোখ আর মন কি করছিল জানি না ।শুধু এতোটুকু জানি দুহাতে কার যেন হাতের পরশ পেলাম।
এমন সময় উৎপল বলল,
: চল ইন্ধন, আর দেরী করা চলে না। বাড়িতে সবাই খোঁজাখুঁজি করবে।
অতঃপর শিউলীর থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হলাম।
গ্রামের ভিতর দিয়ে যখন এবাড়ি-ওবাড়ি করে বাড়িতে এসে পৌঁছলাম। তখন মায়ের বকুনি আর বোনের শাসন বেশ গাঢ় হয়ে উঠলো।
প্রথম দর্শনে সবাই অবাক হয়ে গেল।
: উৎপলের চাচাতো ভাই যে শুনেছে ,তোদেরকে নাকি মেলা থেকে পুলিশ নিয়ে গেল। এইদিকে আমরা খোঁজাখুঁজি করে থানা পর্যন্ত গিয়েছি। কিন্তু থানার বড় কর্তা বাবু বললেন, এমন কোন ব্যাক্তিকে ওরা ধরে নেননি।
: তা বলি এতক্ষন তোরা কোথায় ছিলি?
উৎপল অমনি সেলাই কলের মতো সব ঘটনা বলেই গেল । কোথায় কি হয়েছে, কোথায় ছিলাম, কেন ছিলাম সবকিছু।
কিন্তু টাকা নামক কোন কথাই তার মুখ থেকে শোনা গেল না। তাই তাকে চুপিচুপি বললাম বেশ করেছিস।
আমি তো মনে করেছিলাম টাকার কথা তুই বলে দিবি। উৎপল জ্ঞান গভীরতার ভান করে, ঘাড় ফুলিয়ে বলল,
: ধুর বোকা আমি কি অত পাগল, যে টাকার কথা সবাইকে বলে দেব।
একটানা দীর্ঘক্ষণ চেঁচামেচি করার পর সবাই শান্ত হয়ে গেল । এক ধরনের লম্বা হিতোপদেশ দেওয়ার পর সবাই যেন আত্মপ্রসাদ লাভ করল।
কিছু কিছু সময় মানুষের এমন এক ভাবনার আধিপত্য বিস্তার লাভ করে ।যা ক্ষণকাল পূর্বে কল্পনার পাত্র ও ছিল না । কালকের ইন্ধন আর আজকের এই ইন্ধনের বড়ই তফাৎ আছে। কারণ এই বৈচিত্র্যপূর্ণ সংসারে নির্জলা সত্য ও সত্যতার পরিবেষ্টিত জগতে সর্বদা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে কে না চায়?
রাতের খাওয়া শেষ করে আমার শোবার ঘরে গিয়ে বসলাম। টেবিলের উপর প্রদীপ জ্বলছে। পাশে দু'এক খন্ড গল্পের বই। বেড়ার পাশে কাপড় গুলো ঝুলে আছে। বাহিরে হালকা কুয়াশার মাঝে ও চাঁদের আলোয় স্নিগ্ধতা ছড়াচ্ছে একরাশ। দূর থেকে ভেসে আসছে, সু মধুর বাঁশির সুর। সুরে যেন মিশে আছে একরাশ বেদনার মূর্ছনা।
ভাবনার করিডোরে এসে পড়লাম।
যখনই আনন্দের কথা ভাবি, তখনই একরাশ দুশ্চিন্তা হৃদয়কে আচ্ছন্ন করে ফেলে।
পিছনে ফেলে আসা দিনগুলো দুঃখ-বেদনা , গ্লানি, আর বিরহের প্রহর গুলো মানকে আরো উদ্বেলিত করে।
জানি কুলুষ- গ্লানিকে বিসর্জন দেয়। যদি মনে ভালোবাসা ও স্বপ্নের প্রবেশ ঘটে।
মানুষ আজন্ম ভালোবাসার কাঙাল। তাই একটুখানি ভালোবাসা আন্তরিকতায় মানুষ মুগ্ধ হয়ে যায়। জীবন যাপনের স্বপ্নে নিজেকে আবিষ্ট করে শুধুই ভালোবাসায়।
তাই তো আজ ইন্দনের ক্ষনিকের নবপরিচিতা শিউলী কথা বারবার মনে পড়ছে।
তাইতো তার হৃদয়ে ফুটে উঠেছে এক কাব্যিক রূপকথা,
তুমি এসো আমার গৌরব হয়ে ,আমার আশায় বুক বাঁধতে সাহস জুগিয়ে।তোমাকে জানাই বিপুল প্রাণের নিবিড় সুস্বাগতম।আমার হাতটি ধরো ,প্রসারিত হতে।তোমার প্রসারিত বক্ষপটে যেন আমার ভালোবাসা, নব নব পুষ্প পল্লবী প্রস্ফুটিত হয়।আমারও দু'খানা হাত থাকবে তোমার সাথে।হে বন্ধু, তোমাকে কথা দিলাম, দিলাম প্রতিশ্রুতি......
কখন যে চোখ বুজে ঘুম এসে গেল নিজেও জানিনা।
চলবে