বিপুল রায়'র গল্প উদয়কৃষ্ণর পালানাটক ০১ ।। বর্ণপ্রপাত


উদয়কৃষ্ণ, নামকরা নাট্যকার। উয়ার এক একটা পালানাটক একসমায় গরিব থাকি ধনি, শহর থাকি গ্রাম সব ধরনের মানষির মন কাড়ি নিসে। উদয়কৃষ্ণর সেই নাম-যশ এলাও চাইরোপাখে আছে। ‘আলোয়া চাউলের ভাত’, ‘যুদ্ধ কার ?’, ‘ঘুঘুর ভাসা’...এই ধরনের পালানাটকগিলা মানষির মনত এলাও বাঁচি আছে। বিশেষ করি তো বুড়া-বুড়িগিলার মুখোত সবসমায় শুনা যায় উদয়কৃষ্ণর সেই পালানাটকগিলার কথা। 

গ্রামে গ্রামে ধান কাটা শ্যাস। শীতকেনাও ভালে পড়ে। চেংরা-চেংরিগিলা তো এলা ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপ চালাইতে ব্যস্ত। কিন্তু আদাবসা-আদাবসি আর বুড়া-বুড়ি ইমিরা কি করে ! দিনাও দিনাও টিভির ওই ঘেনঘেনি-পেনপেনি সিরিয়াল দেখি আত্মার শান্তি হয় না। 

ব্যালতলীর ‘নবজীবন ক্লাব’ দুর্গাপূজার পর প্রতিবছর হয় অর্কেস্ট্রা আর নাহয় কলিকাতার ওই নামি-দামি কুনো অপেরার যাত্রাগান আনে। ভালে ভিরও জমে ফির প্রতিবছর। 

কিন্তু গ্রামের বয়স্ক মানষিগিলা ক্লাবের চেংরা সদস্যগিলাক কইল, “বাপই প্রতিবছর তো বায়রার যাত্রাপাটি আনেন আর নাহলে অল্গেস্টার। এইবার কোনেক হামারে উত্তরবঙ্গের উদয়কৃষ্ণর পালানাটক আনিলে ক্যামন হয় ?”.... চেংরাগিলাও অবশ্য এই ব্যপারে ‘না’ মত দিবার পায় নাই। উমারও জানা আছে উদয়কৃষ্ণর পালানাটকের সফলতা সম্পর্কে।

উদয়কৃষ্ণ এলা বুড়া হইসে, কিন্তু নাটক লেখার হাতটা এলাও টনটনা আছে। যতয় দিন যায় ততয় উয়ার নয়া নয়া নাটকগিলা বেশী পাকা-পুড়াড হয়। বছরের দুইখান মাস উয়ার চোখুত নিন থাকে না কইলো চলে। এটে থাকি ওটে– নাটক করি বেরাইতে ব্যস্ত থাকে। একবার উদয়কৃষ্ণ অ্যাক্সিডেন্ট হওয়াতে সেলা থাকি আর নাটক করির যায় না। তাতে দলটাও বসি গেইসে। কিন্তু উদয়কৃষ্ণ উয়ার নাটক লেখার হাতটা তার পরেও থামায় নাই।  

ব্যালতলীর দুইটা চেংরা একদিন উদয়কৃষ্ণর খোঁজত চলি আসিল উয়ার গ্রাম– নিন টুপার ডাঙা। নাটকের বাদে বায়না ধরি আসিসে বুলিয়া উদয়কৃষ্ণর আনন্দ যুনি উথুলি পড়ে। কিন্তু, ফম পড়ি গেল– “দলটা তো এলা আর নাই। যেই দক্ষ চেংরিগিলা ছিল ওইলাও তো আর কাহ নাই এলা। কার কুত্তি বিয়াও হইসে তারও ঠিক নাই। যুদিও বা উমার খোঁজ মিলে, বাড়ির লোক কি আর আসির দিবে !”... নানানখান ভাবিয়া উয়ার মনটা ভাঙি গেল। কিন্তু, চেংরাগিলাক আর বুঝির দিল না উদয়কৃষ্ণ। তাও হাসি মুখে কথা দিল চেংরাগিলাক, “ ঠিক আছে বাউ। তোমার ক্লাবোত মোর পালানাটক হবে। চিন্তা না করেন।”

উদয়কৃষ্ণ কথা দিল কারণ, অনেকদিন থাকি কুনো নাটক করা নাই। মনটা তমতমে আছে, কোটে একখান নাটকের খবর পায়। কিন্তু সমায় তো বেশি নাই– মাত্র দশ দিন। এই দশ দিনে নাটকের জইন্যে মানষি জোগাড় করা, তার উপুরা আরও রিহার্সেলও করির নাগিবে– বিশাল চাপ হয়া যাবে উদয়কৃষ্ণর। দলের আগিলা কিছু মানষি এলাও আছে যুদিও, নয়া মানষিগিলাক ধরি কোনেক কেচাল হবে।

বেটাছাওয়া মানষি আছে উদয়কৃষ্ণর, কিন্তু বেটিছাওয়া মানষি নাই। তিন-চাইরজন বেটিছাওয়া আর একটা উঁচা-লম্বা চেংরির দরকার নাটকের বাদে। দিন-আতি এক করি উদয়কৃষ্ণ মানষি খুঁজে। কিন্তু পালানাটকের কথা শুনি কাহ আর রাজী হইল না। শ্যাস-ম্যাস উয়ায় বাইধ্য হয়া পাথারুর ওটে গেল। পাথারু ক্যামেরাত সর্টফিল্ম বানায়। পাথারুও ভাল করি জানে উদয়কৃষ্ণর নাটকের সফলতার কথা। উদয়কৃষ্ণ সব কথায় খুলি কইল পাথারুক। পাথারু সেলা উয়ার সর্টফিল্মের নায়িকা ডালিয়া আর তিনজন বেটিছাওয়া– ভানুমতী, ফতিমা, গন্ধেশ্বরীক প্যাটে দিবে বুলিয়া কথা দিল উদয়কৃষ্ণক।

অনেক আশা নিয়া উদয়কৃষ্ণ বাড়ি ফির আসিল। মনের ধুকপুকিটা কোনেক কমিল। তাছাড়া সিনেমা করা মানষি, রিহার্সেল করাইতেও উয়ার খাটুনিটা কোনেক কম হবে।

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।