কালু সিংহ নাম করা ডাকাইত। ‘কালু ডাকাইত’ কইলে সগায় এক ডাকে চিনে।
কালু ডাকাইত হরিনারায়ণের বেটা। হরিনারায়ণ একজন খুব গরিব মেথর। বাড়ির ভিটাকেনা বাদে কুনো সয়-সম্পত্তি নাই। মেথরের বেটা বুলি কালু স্কুলত পড়িবার সুযোগ পায় নাই। সগায় ছিঃ ছিঃ ঘিন ঘিন করিসে। কাজে সমাজের সগারে সাথে মিলামিশা হয় নাই কুনোদিন। কিন্তু কালুর বন্ধু বুধুয়া কালুর পাছ ছাড়ে নাই কুনোদিন। বুধুয়ারও আগে-পাছে কাহ নাই। বুধুয়ার বাপ-মাও-- রাতিয়া আর মঙ্গলা উড়াও বহুদিন আগতে মরিসে। সেই বুধুয়া স্কুলোত যেকিনা শিখে, উকিনায় আসিয়া কালুক চুপচুপে শিখায়।
কালুর যেলা বয়সটা দশ কি বারো হবে, সেলায় উয়ার বাপ ম্যালেরিয়া হয়া মারা গেল। একজন মেথর মরিসে বুলি গ্রামের কাহ শ্যাস দেখাটাও দেখির আসিল না। কালু, উয়ার মাও আর বুধুয়া তিনজনে হরিনারায়ণের মরা দেহাটা গতি করির বাদে পূব পাখের নদীর পার নিগাইলে গ্রামের মানষি বাধা দ্যায়। আর তাতে বেশি করি উস্কানি দ্যায়, মুখার্জি সাহেব। বাপের মরা দেহাটা ধরি ছোট্ট কালু যেলা এতদূর নদীর পার আসিসে, তাও সগায় কেনে বাধা হয়া দাঁড়াছে সেইটা বুঝির পারে নাই। কালুর মাও মুখার্জি সাহেবের আগত হাত জোর করি কান্দিলেও মুখার্জি সাহেব মরা ছুবার অধিকার দ্যায় নাই।
বাইধ্য হয়া কালু উয়ার বাপের মরা দেহাটা ধরি বাড়ি ফিরি আইসে। সগারে ঘরের দুয়োরে দুয়োরে ঘুরি বেড়ায়, বাপের মরা দেহাটা ছুবির বাদে অল্প কোনেক জমি চান্দায়। কিন্তু কাহ রাজি না হওয়াতে কালু নিরাশ হয়া চোখুর জল মুছিতে মুছিতে বাড়ি ফিরি আসি দ্যাখে উয়ার মাও মরা দেহাটা কোলাত নিয়া হুকুড়ি-ডুকুরি কান্দন জুড়িসে।
ভোর ভোর সমায়ে মরিসে কালুর বাপ, সেই মরা সইন্ধ্যা পর্যন্ত আছে। কুনো বুদ্ধি নাই-- কি করে কালু! শ্যাস-ম্যাস নিজের বাড়ির আঙিনাতে বাপের মরা দেহাটার গতি করিল।
ছোট্ট কালু সেলায় বাপের জ্বলন্ত চিতার আগত দাঁড়ে কিরা খাইসে, কি হয় হউক-- সমাজোত যাতে সগায় সমান মর্যাদা পায় তার ব্যবস্থা করিবে উয়ায়। সবকিছুর প্রতিশোধ নিবে একদিন।
সেই কালুর যেলা বয়স বাইশ বছর, সেলা লম্বায় চ্যাওরায় বিশাল একটা মানুষে পরিণত হইসে। বুধুয়ারও সাস্থ্য কম না হয়। দুইজনে নাঙ্গা কালের চাঙ্গা বন্ধু।
একবার মুখার্জি সাহেব কালুর মাক দশ সমাজের আগত অপমান করিলে কালুর মনত দুঃখ হয়। প্রতিবাদ করিলে মুখার্জি সাহেবের হয়া গ্রামের সগায় আগে আইসে। কালুর ক্ষমতা-- সমাজের আগত ধুলাত মিশি যায়। কালু উয়ার মাক ধরি বাড়ি ফিরি আইসে।
সেদিনে মইধ্য আতিত কালু আর বন্ধু বুধুয়া দুইজনে মিলি চলি গেইসে মুখার্জি সাহেবের বাড়ি। দুইজনে নিশে ডাকাতি করা চকচকা, ছনছনা ছোরা। মুখার্জি সাহেব ঘরের দরজা খুলিলেই হিরিস করি ঘর ঢুকে কালু আর বুধুয়া। উমাক দেখি মুখার্জি সাহেবের টুটি-মুখ শুকি গেইসে। কালু রাগে ফয়ার হয়া মুখার্জি সাহেবোক কয়, “কি দোষ করিসি হামরা মুখার্জি! হামরা মেথর কয়া তোমার এই ব্যবহার? ”
মুখার্জি সাহেবের মুখোত কুনো কথা আইসে না। আসলে কালু উয়ার গালাত ছোরা নাগে বসি আছে। এই অবস্থায় যুদি কিছু একটা ভুল শব্দ মুখ থাকি বিরায় তাহলে তো রেহাই নাই। আর সবথাকি বড়ো ভয় হইল-- মুখার্জি সাহেবের বনুসের গালাত ছোড়া নাগে বসি আছে বুধুয়া। কাজে মুখার্জি সাহেব থোতমোত হয়া কইল, “না, মানে কালু...”
“কি মানে হাঁ! কি মানে? যুদি বাঁচি থাকির চান্দাইস, তাহলে কালি সকালে উঠি গ্রামের মানষির মুখের আগত মোর মাওয়ের ঠ্যাঙ ধরি ক্ষমা চান্দে আসিবু।”
মুখার্জি সাহেব আরও কাঁপা কাঁপা গালায় কইল, “ঠ্যা ঠ্যা ঠ্যাঙ ধরি!”
“হ্যাঁ, ঠ্যাঙ ধরি। তুই জানিস না-- নারী জাত মাওয়ের জাত। আর তুই সেই নারী জাতিক অপমান করিস! মোর মাক গ্রামের এতলা মানষির মুখের আগত অপমান করিসিস, সেইটা কি তুই ঠিক করিসিস মুখার্জি? যুদি বাঁচি থাকির চান্দাইস, তাহলে হয়তো মোর কথা অমাইন্য করিবু না নিশ্চয়।”
“ঠি ঠি ঠিক আছে।”
“বুধুয়া চল রে।”
কালু আর বুধুয়া চলি গেলে মুখার্জি সাহেব আগত ঢোক্কে ঢোক্কে জল খায়। এতটা ভয়ঙ্কর রূপে আগত কুনোদিন দেখা যায় নাই কালুক। মুখার্জিও মনে মনে কইল, “কালি দিনত তোক দেখি নিম কালু।”
পরের দিন সকালে উঠি মুখার্জি সাহেব আতির ঘটনাটা গোটায় গ্রামত ফল্যাও করি দিলে গ্রামের সগায় উস্কানি পায়। সগায় মিলি দল বান্দি চলি যায় কালুর বাড়ি। গ্রামের মানষির জোটলা পাকা দল দেখি কালুর মাওয়ের হুশ খরে গেইসে। মুখার্জি সাহেব কইল, “চিত্রাঙ্গদা, তোর গুণের বেটা কোটে? কালি আতিত উয়ায় কি কান্ড করিসে জানিস? ”... তাতেই কালু আসি উপস্থিত।
“কি ব্যপার মুখার্জি সাহেব! এত সকালে ক্ষমা চান্দের আসিবু, মুইতো ফমে হারাসুং।”
“ক্ষমা! ক্ষমা না আরও কি চান্দাছোং।”... কথাটা শুনি কালুর ঠ্যাঙের রক্ত মাথাত চড়িল।
“তাহলে কি জইন্যে আইসার কথা?”
“তুই কালি যা করিসিস, তা ঠিক করিস নাই। ভবিষ্যতে গ্রামত যাতে আর এই নাখান না হয়, তোক দেখি আর বাকি ছাওয়াগিলা না শিখে তার বাদে তোক এই গ্রাম ছাড়া হবার নাগিবে।”
“গ্রাম ছাড়া!”
“হ্যাঁ, গ্রাম ছাড়া হবার নাগিবে। আর এই সিন্ধান্ত হামার সগারে সিদ্ধান্ত।”
কালু এক দৌড়ে ঘর যায়া ডাকাতি করা ছনছনা ছোরাখান নিকিলি আনি ঘরের চালিত দোম্মে বসি কইল, “কার বাপের হিম্মৎ আছে, এক পাও আগে আসি আর একবার কওতো।”... কালু জানে গ্রামের মানষির স্বভাব-চরিত্র ক্যামন। সগায় দল বান্দি আসিসে ঠিকে, কিন্তু কাহরে বুকের পাট্টা নাই যে আগে যায়া আর একবার কবে। ততক্ষণে মানষিগিলার ভিরত খালি কলকলাছে, “কালু এমতন হইসে! মুই স্বপ্নেও কল্পনা করির পাং নাই।”... কালুর চন্ডাল রূপ দেখি অনেকে ভয় খায়া বাড়ি পালাইসে।
কালু ছোরাখান ধরি আগে আসিলে, এবার সগায় ভিতাভিত চম্পট। মুখার্জি সাহেব নিজেও পালাইসে।
সেদিন আতিত আরও কালু আর বুধুয়া দুই বন্ধুই চলি গেইসে মুখার্জি সাহেবের বাড়ি। সেদিন আর ডেকাডেকি করে নাই। গুড়ি গুড়ি ভাঙিসে ঘরের শক্ত দরজা। ভিতরত মুখার্জি সাহেব আর উয়ার বনুস গটগটে কাঁপির ধরিসে। এমন সমায় কালু আর বুধুয়া ছনছনা ছোরা ধরি ঘর ঢুকিলে মুখার্জি সাহেবের এমন বুকের ধুকপুকি উঠিসে যে উয়ার মুখ দেখিলেই সেই ভয় স্পস্ট বুঝা যায়। কালু মুখার্জির পাখে আগে আসিলে, মুখার্জি নিজে কালুর ঠ্যাঙ ধরি কান্দি কয়, “ভুল হয়া গেইসে কালু। মোক মাপ করি দে। মুই কালি সকালে উঠি তোর মার ঠ্যাঙ ধরি ক্ষমা চান্দে আসিম।”
“কুনো ক্ষমা নাই। তোর বিশ্বাস নাই মুখার্জি! তুই আরও এমন কান্ড করির পাইস!”
“না না কালু বিশ্বাস কর। এই দ্যাখ মুই মোর বৌয়ের মাথাত হাত দিয়া কছোং, কালি এমন ভুল আর করিম না।”
“কথাটা মনত থাকে যুনি মুখার্জি। যাঃ, আর একটা সুযোগ দিলুং।”
তার পরের দিন সকালে মুখার্জি সাহেব কালুর বাড়িত আসি হাজির। কালু দেখিয়া কয়, “কি ব্যপার মুখার্জি?”
“তোর মাক ডেকা কালু, মুই ক্ষমা চান্দে তাড়াতাড়ি চলি যাং।”
“এত তাড়াহুরার কি আছে মুখার্জি! সবুর কর। তার আগোত এক কাজ কর-- কালি য্যাংকরি গ্রামের সগাকে ধরি আসিসিস, আজিও ত্যামন কর। যাঃ...”
“অসম্ভব! এত মানষির মুখের আগত মুই তোর মাওয়ের ঠ্যাঙ ধরি ক্ষমা চান্দাইম?”
“তুই বোধায় ফমে হারাসিস মুখার্জি। অপমান করির সমায় সগারে মুখের আগত করিসিস, আর চুপকরি ক্ষমা চান্দাইলে কি ব্যপারটা যুক্তি-যুক্ত হয়, তুইয়ে ক।”
“মুই যে ক্ষমা চান্দের আচ্চুং, সেইটায় বিশাল ব্যপার কালু।”
“তোর এই স্বাভিমান তোক আনে নাই মুখার্জি, তোর ভয় তোক আনিসে। এবারও যুদি ক্ষমা না চান্দেয়া যাইস, তাহলে কালিকার সূর্য দেখির পাবু বুলি মোর মনে হয় না।”... কালুর এই অমানুষিক কথা-বার্তা শুনি মুখার্জির ঝস বিরি গেইসে।
মুখার্জি গোটায় গ্রাম ঘুরি সগাকে ধরি আসি কালুর বাড়িত হাজির। সগারে মুখের আগত মুখার্জি সাহেব যেলা কালুর মাওয়ের ঠ্যাঙ ধরি ক্ষমা চান্দাছে সেলায় যুনি কালুর মাওয়েরটে গ্রামের সগারে উঁচা মাথা নিচা হয়া গেল। কালুর মাও'ও মনে মনে এতদিন ধরি এইটায় চান্দাইসে।
সেলা থাকি কালুর পরিবারক নিয়া কাহ আর কুনোদিন টু-শব্দ করির সাহস পায় না। এই সুযোগটায় কাজত নাগাইল কালু-- ভাবিল এবার জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষের একটা আসল কাজ করার দরকার।
এবারে একদিন হামলা দিল গ্রামের স্কুলোত। একেলায় না হয়, সাথে মুখার্জি সাহেব, বুধুয়া আরও যত নিচা বর্ণের মানষি আছে সগাকে একসাথে ধরি উপস্থিত। এত মানষিক একসাথে দেখি স্কুলের মাস্টার অবাক! মাস্টার মুখার্জি সাহেবক পুছিল, “কি ব্যপার মুখার্জি সাহেব?”
মুখার্জি সাহেব কালুর ভয়ে কিছু কয় নাই। ইশিরা দিয়া কালুক দ্যাখে দিল। কালু কইল, “নাম ভর্তি। এই যে এটে যতলা ছাওয়া দ্যাখেছেন, সগারে নাম ভর্তি।”
“কিন্তু...”
“কুনো কিন্তু না হয় মাস্টার।”
“যেটে মুখার্জি সাহেবের বেটা পড়ে, সেটে একসাথে...”
কালু মাস্টারোক এক দাবর দিয়া কইল, “চুপ কর। তুই মাস্টার নাকি মুখার্জি সাহেবের পুষা...! একমাত্র তোমার জইন্যে আজি এই অবস্থা!”
“আসলে গ্রাম তো মুখার্জি সাহেবের কথায় চলে। পরে যুদি কিছু কয়!”
কালু মাস্টারের মুখের আগত মুখার্জি সাহেবক পুছিল, “মুখার্জি, তোর কুনো সমস্যা?”... মুখার্জি আর কি কবে। যেটে কালু ওটে মুখার্জির মুখ দিয়া কুনো কথা বিরায় না। মাথা নটপটে কইল, “না।”
মুখার্জি যেহেতু রায় দিসে তাহলে মাস্টারের আর কি করার আছে। সগাকে নাম ভর্তি করি দিল স্কুলোত। এংকরি কালু গ্রামের পাছে যাওয়া মানষিগিলারটে ভগবানে পরিণত হছে।
পরের দিন থাকি সগারে ছাওয়া স্কুল আইসে। সেলা যুদি সোস্যাল মিডিয়া থাকিল হয়, তাহলে কালু হয়তো এতদিনে সগারে চিনা-জানা একজন নয়ক হয়া উঠিল হয়।
কাহ কুনোদিন বুঝির পারে নাই কালু আর বুধুয়া ডাকাতিও করে। গ্রামের কাহরে যাতে কুনো সমস্যা না হয় তারবাদে দূর-দূরন্তে ডাকাতি করির যায়। ডাকাতি করা য্যামন কালুর পেশা, ত্যামনে মানষিক সাহাইয্য করাও উয়ার নিশা। কালু ডাকাতি করে, আর জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে গ্রামের গরিব-দুঃখিয়া মানষিগিলাকও সাহাইয্য করে। মানষি কালুর সাহাইয্য নিতে অস্বীকার করিলে কালু কয়, “আগত বাঁচো, জাতি-ধর্মের বিচার পাছত করেন। আজি মুখার্জি সাহেব যে এত বড়োলোক, কাহকো কুনোদিন একটা নাল পাইসা দিয়াও কি সাহইয্য করিসে?”... কালুর এমন কথা শুনি মানষি আর কিছু কয় না। আসলে গ্রামের মানষি কালুক এলা মনে-প্রাণে চান্দায়।
কথায় কয়, “দশ দিন চোরের একদিন সাজা!”... কালু আর বুধুয়াও ডাকাতি করিতে একদিন ধরা পড়িল। মানষি কি আর ছাড়ি কথা কয়। গছত বান্দি মাইর মারি, পুলিশোক খবর দিসে।... কালুর কুনো উদিস-খবর নাই দেখি উয়ার মাও তন্ন তন্ন করি খুঁজি বেড়ায়। একদিন খবর আসিল কালু আর বুধুয়া জেলোত আছে। ডাকাতি করিতে ধরা পড়িসে। কালু যে ডাকাতি করে, এই খবরটা মুহুর্তেই হাল্লা হয়া গেল। আসলে খবরটা নয়া না হয়, কালু আর বুধুয়া যে ডাকাইত-- যায় জানিবার তায় আগের থাকি জানে।
বহুদিন হয়া গেল। কালু জেল থাকি ছাড়া পায়া উয়ার মাক চিঠি লেখিল। সেই চিঠিখান পায়া উয়ার মাওয়ের মনটা খুশিতে ভড়ি গেল।
কয়েকদিন পর কালু বাড়ি ফিরি আসিলে, মানষির মুখোত ফাসার-ফুসুর শুরু হয় কালু ডাকাইতোক নিয়া। কালুর তাতে কিছু যায় আইসে না। উয়ায় জানে , যেলা উমুরা অসহায় ছিল-- কাহ পাত্তা দ্যায় নাই। সগায় ছিঃ ছিঃ ঘিন ঘিন করিসে। কাজে মানষি পাঁচগোতরে কি কয় কউক উয়ায় হুলা কথাত কান দ্যায় না।
হঠাৎ একদিন কালুর মাও'ও মারা গেল। উয়ার একমাত্র সম্বল বুড়ি মাওটায়। তায়ও ছাড়ি গেল। এবারে কষ্ট হলেও বুকোত পাথর চাপা দিয়া নইল। কারণ মাও-বাপ না থাকিল তে কি হইল, এলাও তো বুধুয়া আছে। আর আছে গ্রামের মানষির ভালোবাসা।
কালু উয়ার মাওয়ের দেহাটাকও বাপের চিতাতে মুখাগ্নি দিল। যেলা কালুর বাপ মরিসে সেলা গ্রামের একটা মানষিও দেখির আইসে নাই। আজি কালুর মাক চিতাত অঠে দিবার বাদে গ্রামের অনেকে আগে আসিসে।
মাওয়ের শ্যাস কর্ম করিয়া কালু, চিতার বগলোত বসি কান্দি কান্দি জোর গালায় কয়, “তুইও মোক ছাড়ি গেলু মা! মুই যে হেরি যাইম মা! মুই একেলায় কি করিম!”
বুধুয়া কালুর বগলোত বসি কয়, “কায় কোছে তুই হিরিবু! তুই তো জিতি গিছিছ কালু, তুই জিতি গিছিছ। এই দেখ, মুই আছোং তোর ছাথে, দেখ আরও কোতো জন আছে তোর লগত।”... কালু চোখুর জল মুছিতে মুছিতে মাথা অঠে দেখিল সগায় উয়ার দুঃখের দিনত বগোল আসি খারা হইসে। হয়তো এইটা উয়ার পাওনা। মাওয়ের জ্বলজ্বলা চিতাটার পাখে দেখি কালু মনে মনে ভাবেছে, “নিজের অধিকার আদায় করির গ্যালে কুনোসমায় বুদ্ধির সাথে সাথে বলও প্রয়োগ করির নাগে। না হলে সমাজ থাকি মুছি যায় নিজের নাম-নিশান।”
তারিখ: ২৫.০৬.২০২০