পলাশীর সিরাজ || আশরাফ রাসেল



১৬০০ খ্রিষ্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী রানি এলিজাবেথের কাছ থেকে ভারতে একচেটিয়া ব্যবসার অধিকার পায়। অতঃপর ১৬৬৮ সালে ঢাকা শহরে কুঠি স্থাপন করে এবং ১৬৯৮ সালে কোলকাতায় কোম্পানীর কাজ শুরু করে।  বিনাশুল্কে কোম্পানির কর্মচারীদের বেআইনি ব্যক্তিগত ব্যবসা বন্ধ করে দিতে নবাব সিরাজউদ্দৌলার দৃঢ় সংকল্পের সম্মুখীন হয়ে ইংরেজরা বানিজ্যে প্রচণ্ড মার খাচ্ছিল। অথচ এই ব্যক্তিগত ব্যবসা করে বড়লোক হয়ে দেশে ফিরবে বলেই ইংরেজ কর্মচারীরা সাত সমুদ্র পেরিয়ে এদেশে আসত।

হায়দার আকবর খান রনো'র বর্ণনায়,সম্রাট শাহ জাহানের আমলে বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বিনা শুল্কে বানিজ্য করার অধিকার লাভ করে। এবং জোড় করে কম দামে জিনিস ক্রয় করে তথা দস্যুবৃত্তি চালায়। (পলাশী থেকে মুক্তিযুদ্ধ, প্রথমখন্ড; পৃ:৩১) যে লুঠের সীমানাকে সাক্ষ্য দেয় ইতিহাসের সেরা দূর্ভিক্ষ 'ছিয়াত্ত্বরের মন্বত্তর (১৭৭০-৭১)।  কোম্পানীর কর্মচারীরা রাজ ফরমান দেখিয়ে তুড়ি মেরে মহাসুখে বানিজ্য চালিয়ে যেতে থাকলে নবাব সিরাজ এটাকে রিতিমত দুর্নীতি হিসেবে আখ্যয়িত করেন। যার ফলে নবাব সিরাজের সাথে কোম্পানীর বিরোধ শুরু হয়,যার সাক্ষী এবং পরিণতি পলাশীর প্রান্তর এবং পলাশীর যুদ্ধ। আজকের ২৩ শে জুন (১৭৫৭)। যদিও নিখিলচন্দ্র রায় তার 'মুশির্দাবাদ কাহিনী'তে এটাকে পুরোপুরি যুদ্ধ বলতে দ্বিধা করেছেন। সুত্রের বরাত দিয়ে তিনি লিখেছেন," বাস্তবিক ফল বিষয়ে পলাশীর ন্যায় বিজয়লাভ আর কখনও হয় নাই। কিন্তু যুদ্ধের কথা ভাবিলে তাহাতে গৌরবের বিষয় কিছুই নাই। প্রথমতঃ সে যুদ্ধ ন্যায়সঙ্গত হয় নাই। সিরাজউদ্দৌলার তিন জন প্রধান সেনাপতি যদি বিশ্বাসঘাতকতা না করিত, তা হইলে, পলাশীযুদ্ধে কখনই জয়লাভ হইত না।..."

সুশীল চৌধুরী তার 'পলাশীর অজানা কাহিনী' গ্রন্থে পলাশী যুদ্ধের এবং বৃটিশদের বাংলা শাসনের রহস্য উন্মোচনে বানিজ্য বিস্তারের বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেই সাথে পরাজয়ের পিছনে বিশ্বাসঘাতকতা এবং তার ভয়াবহ ফলাফলকেও বর্ননা করেছেন।
তীর্থংকর রায় তার 'ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ও ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাস' বইটিতে ব্যবসা  থেকে কীভাবে সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতে কোম্পানির বাণিজ্যের ফলে অর্থনীতির পরিবর্তন হয়েছে তা আলোচনা করেছেন।
নবার সিরাজের নয়, সেদিন পরাজয় হয়ে দেশপ্রেমের, এক স্বদেশপ্রেমী মহানায়কের, পরাজয় ঘটেছে সততার, সরলতা ও বিশ্বাসের। জয় হয়েছে কিছু লুঠেরাজদের,, বাঙলার ভাগ্যকে দূর্ভাগ্যের কালি লেপে দিতে যারা উঠে পরে লেগেছিল তাদের, বিশ্বাসঘাতকদের। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে জয়ী সৎ ও স্বদেশপ্রেমী নবাব সিরাজ, তার সততার কাছে। এতসব লুঠেরাজদের সামনে যিনি আঙ্গুল তুলতে দ্বিধা করেন নি কখনও। ভিক্টোর হুগো বলেছেন," সততার সৌন্দর্য আছে।" সত্যিই, সেই চির উজ্জ্বল সৌন্দর্য সিরাজকে আজও উজ্জ্বল করে রেখেছে বাংলার উজ্জ্বল ইতিহাসে।

সুতরাং সকল বিতর্কের উর্ধে এই স্লোগান হোক ,নবাব সিরাজের পতন মানে সত্য ও সততার জয়, নবাব সিরাজ মানে  বাংলার এক অদম্য প্রেমিক, রুখে দাঁড়াবার সাহস সহসায়।

নবাব সিরাজের প্রতি বিনম্রশ্রদ্ধা।

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।